বদনজরী ঃ পর্ব - ২৭
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২৯ মার্চ, ২০১৪, ১২:০৫:০০ দুপুর
৪১। হযরত হুযায়ফা (রাঃ) এর বোন থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে খুৎবা দেয়ার সময় বললেন ঃ হে নারী সমাজ! তোমরা কি রৌপ্য দ্বারা অলঙ্কার বানাতে পার না? দেখো, তোমাদের মধ্যে যে নারী সোনার অলঙ্কার বানিয়ে তা পরে তা পর পুরুষকে দেখায়, এ জন্য তাকে শাসি- দেয়া হবে। (নাসাঈ)
৪২। হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ যে মহিলা স্বর্ণের হার ব্যবহার করে পর পুরুষকে দেখাবার জন্য তার গলায় কিয়ামতের দিন ঐরূপ আগুনের হার পরিয়ে দেয়া হবে। আর যে নারী এভাবে কানে সোনার রিং পরে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘য়ালা তার কানে ঐরূপ আগুনের রিং পরাবেন। (নাসাঈ)
৪৩। রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর মুক্ত ক্রীতদাস আওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট উপসি'ত হলেন, তখন তার হাতে ছিল মোটা চওড়া আংটি। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তার হাতে আঘাত করতে আরম্ভ করলেন। এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কন্যা হযরত ফাতিমা যোহ্রার (রাঃ) নিকট উপসি'ত হলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সঃ) তার সাথে যে ব্যবহার করেন, তার উল্লেখ করলেন। তা শুনে হযরত ফাতিমা (রাঃ) তাঁর গলা থেকে স্বর্ণের হার খুলে বললেন, হাসানের পিতা (আলী) ইহা আমাকে দিয়াছেন। এমতাবস'ায় রাসুলুল্লাহ (সঃ) সেখানে আসলেন। তখন ফাতিমা (রাঃ) এর হার তাঁর হাতে ছিল। তিনি বললেন, ফাতিমা! তুমি কী পছন্দ করো যে, লোক বলাবলি করবে যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কন্যা, তাঁর হাতে আগুনের হার রয়েছে? এ কথা বলে তিনি বের হয়ে গেলেন। ফাতিমা (রাঃ) তখনই হারখানা খুলে বাজারে পাঠিয়ে তা বিক্রি করালেন এবং তা দ্বারা একজন ক্রীতদাসকে ক্রয় করে তাকে আযাদ করে দিলেন। এ খবর শুনে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, আল্লাহর শোকর, যিনি ফাতিমাকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করলেন। (নাসাঈ)
৪৪। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে সোনার নুপুর পায়ে পরা অবস'ায় দেখে বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম জিনিসের খবর দেব না? তুমি ইহা খুলে ফেল এবং রূপার নুপুর বানিয়ে নাও এবং তাতে জাফরান দ্বারা রং করে নাও, তা হলে এই দু‘টি ঐ দু‘টি অপেক্ষা উত্তম হবে। আল্লাহ সম্যক অবগত। (নাসাঈ)
৪৫। হযরত মুহাম্মদ ইবনে জাহশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সঃ) মা‘মার ইবনে আবদুল্লাহ এর নিকট দিয়ে যাবার কালে দেখলেন তার উভয় রান উন্মুক্ত রয়েছে। তিনি বললেন, মা‘মার! তোমার রান ঢেকে নাও। কেননা রান ঢেকে রাখার অঙ্গ। (শরহে সুন্নাহ, মেশকাত)
৪৬। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) যখন ফজরের নামায আদায়ের জন্য যেতেন তখন তাঁর সাথে কিছু ঈমানদার মহিলারাও যথাযথভাবে পর্দা করেই নামাজ আদায়ের জন্য যেতেন। নামাজ শেষে আবার বাড়িতে ফিরে আসতেন কিন' কেউ তাঁদেরকে চিনতে পারতো না। শাইখ ইবনে উসমান (রঃ) এ হাদীসের তাফসীরে বলেন, এ হাদীসের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে মহিলাদের জন্য ইসলামী পোষাকের বিধান হলো সম্পূর্ণ শরীর এমনভাবে ঢাকতে হবে যেন হাত ও মুখমন্ডল খোলা না থাকে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও পবিত্র জামাত হলো সাহাবায়ে কেরামের জামাত, তাঁদের বুঝ এবং চর্চাই তাঁদেরকে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দিয়েছে। (বুখারী)
৪৭। সাবিত ইবনে কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন উম্মে খাল্লাদ নামে এক মহিলা বোরকা পড়া অবস'ায় রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট এলেন। তিনি তাঁর ছেলের খোঁজ করতে এসেছিলেন যে যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সঙ্গীদের মধ্যে থেকে একজন ঐ মহিলাকে বলল, তুমি তোমার মুখমন্ডল ঢেকে রেখে তোমার ছেলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ? তখন ঐ মহিলা জবাব দিলেন, যদি আমি ছেলে হারানোর যন্ত্রণায় ছট্ফট্ও করতে থাকি তবু আমি আমার শালীনতাকে নষ্ট হতে দিব না। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেন, তুমি তোমার ছেলের জন্য দু‘জন শহীদের সওয়াব পাবে। (আবু দাউদ)
৪৮। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ যদি বেহেশত্ থেকে একজন নারী পৃথিবীর দিকে তাকায়, তাহলে বেহেশত্ এবং পৃথিবীর মাঝখানের এ বিশাল স'ান আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে ও সুগন্ধিতে ভরে যাবে এবং তার পরনে যে বোরকা থাকবে তা সমস- পৃথিবী এবং এর ভেতরে যা কিছু আছে তারচেয়ে সুন্দর ও উন্নত হবে। (বুখারী)
৪৯। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক অনুষ্ঠানে একজন মুসলিম নারী রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে একটি চিঠি দিলেন এবং সেটা তিনি দিলেন পর্দার আড়াল থেকে। (আবু দাউদ, মেশকাত, নাসাঈ)
৫০। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ আল্লাহ তা‘আলা কোন সাবালিকা মেয়ের নামাজ কবুল করবেন না যতক্ষণ পর্যন- না সে পর্দা করবে। (আবু দাউদ)
৫১। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুজুর পাক (সঃ) বলেছেন ঃ তোমাদের কেউ যদি গোপনে দেখার উদ্দেশ্যে তোমার ঘরে উঁকি মারে, তবে পাথর নিক্ষেপ করে তুমি তার চোখ নষ্ট করে দাও। এতে তোমার কোন অপরাধ হবে না। (বুখারী)
উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে এ কথা প্রমাণিত হয়ে যে, বদ নজরী অত্যন- খারাপ একটি রোগ। এ রোগ মানুষের ঈমান-আমল সব কিছু নষ্ট করে দেয়। কাজেই এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে ইসলামের ফরজ বিধান পর্দা মানতে হবে পুরুষ-মহিলা সকলকেই।
যাঁরা দেশের সুশীল সমাজ, সমাজের নেতৃস'ানীয় কিংবা বুদ্ধিজীবী তাঁরা যদি প্রকৃতপক্ষেই মানবতাবাদী হয়ে থাকেন তবে কোনো রকম যুক্তি তর্কে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট না করে দ্বিধাহীন মনে আল্লাহর দেয়া বিধান মেনে নিন।
মনে রাখবেন, সাধারণ মানুষ নিজেদের আমলের জন্য দায়ী হবেন কিন' আপনাদের যাঁদেরকে আল্লাহ বড় ধরণের ইজ্জত দিয়েছেন, সম্মান দিয়েছেন, যাঁদের কথা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ শোনে এবং বিশ্বাস করে, আপনাদের কোনো ভুল নির্দেশনার কারণে যদি ঐ সমস- সাধারণ মানুষ বিভ্রান- হয়, বিপথগামী হয় তাহলে তাদের কৃতকর্মের দায়ও আপনাদের ওপর চাপবে।
কিয়ামতের সেই কঠিন ময়দানে যখন আমলনামা হাতে তুলে দেয়া হবে তখন পাপের বোঝা বিশাল দেখে হতভম্ব হলেও জানবেন এগুলো আপনারই কামাইয়ের ফসল।
আমাদের সকলকেই একদিন কঠিন জবাবদিহী করতে হবে। সেই দিন যেন আমরা সকলে আমাদের নেক আমল গুণে নাজাত পেতে পারি, জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেতে পারি আল্লাহ আমাদেরকে সেই সব আমল বেশির থেকেও বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
(সমাপ্ত)
বিষয়: বিবিধ
১৮১৯ বার পঠিত, ৪৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আবারো অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা করে তাঁর আরশে আযীমের নিচে স্থান করে দিন এ দোয়া মনে প্রাণে করি।
ভালো লাগ্লো...
এ পর্বে শুধুমাত্র কিছু হাদিস ও উপসংহার পড়েছেন। অন্য পর্বগুলো পড়লে জানতে পারবেন, পর্দা না করলে নারী-পুরুৃষ উভয়ের কি ক্ষতি হকে পারে এবং খারাপ নজরের ফলাফল কী?
অনুরোধ রইল অন্যগুলো পড়ার।
স্বাগতম অনেক ধন্যবাদ
আমার লেখার উৎসাহ আরো বেড়ে গেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন