বদনজরী ঃ পর্ব - ১২
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২০ মার্চ, ২০১৪, ০৫:০৪:১২ বিকাল
পর্দা না করলে কী হবে
সাধারণ মানুষের মনে এ প্রশ্ন জাগাও অস্বাভাবিক নয় যে, পর্দা করলে কী লাভ হবে। কেননা, চারদিকে বিজাতীয় আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে বাতাস এতটাই বিরূপ আকার ধারণ করেছে যে, ঐতিহ্যগত ভাবধারা, মূল্যবোধ আজ প্রশ্নের সম্মুখীন।
কাজেই সবচেয়ে জরুরী বিষয় হলো, লাভের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া। কারণ পাগলেও নাকি নিজের লাভ বোঝে।
যাঁরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী তাঁরা বিশ্বাস করেন কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে যে বিধান এসেছে তা আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত। মালিকের হুকুম মানার মধ্যে দিয়েই তাঁর সন'ষ্টিলাভের আশা করা যেতে পারে, বিরোধীতা করে নয়। কাজেই যাঁরা তাঁর হুকুম যথাযথভাবে পালন করবেন তাঁরাই পরকালে কামিয়াবী হবেন।
কিন' আমাদের জাগতিক মন জাগতিক লাভ-লোকসানের হিসাব করতেই বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আর এটাকে একেবারে অমূলক বলে চালিয়ে দেয়াটাও যুক্তিযুক্ত হবে না। কারণ আসলেই কী আল্লাহ সব বিনিময় পরকালে দিবেন?
ইসলামী কিতাব যতটুকু পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে তাতে এটুকু অন-তপক্ষে জেনেছি যে, ভালো মন্দের ফলাফল আমরা ইহকালেও ভোগ করব। আর পরকালের অন-হীন জীবন সেখানে তো কর্ম অনুযায়ী ফল পাবই। ইহকালে আমরা যে কষ্ট ও দূর্ভোগের মুখোমুখি হই তা কোনো না কোনো ভাবে আমাদের নিজের হাতের কামাই। চলার পথে নানা রকম ভুল-ভ্রানি- থেকেই আমরা বিপদের মুখোমুখি হই।
আল্লাহ আমাদেরকে কষ্ট দেন এটা ঠিক না। তিনি ভালোবেসে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কষ্ট দেবার জন্য নয়। বরং আমরা যেন কষ্টে না পড়ি সেজন্য তিনি বহু ভাবে সতর্ক করেছেন। আমরা সেটা জেনেও যদি ভুল করি তার জন্য তাঁকে দায়ী করা কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ সেটা ভেবে দেখা দরকার। আগুনের ধর্ম হলো জ্বালানো-পোড়ানো। আমরা জানি আগুনে হাত দিলে হাত পুড়বে। এরপরও যদি কেউ আগুনে হাত দিয়ে হাত পোড়ে তাহলে তার মূর্খতার জন্য আল্লাহকে দায়ী করা ঠিক হবে কি?
চলুন, এবার আমরা দেখার চেষ্টা করি যে, পর্দা না মানলে কি ক্ষতি হতে পারে।
প্রখ্যাত জাপানী বিজ্ঞানী ড. মাসারু ইমোতো দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, শব্দের একটা প্রভাব আছে। তিনি পানি এবং ভাতের ওপর বিভিন্ন ভাবে শব্দের প্রভাব পরীক্ষা করে দেখেছেন। একেক রকম শব্দে পানির মৌলিক কাঠামোতে একেক ধরণের পরিবর্তন হয়। ভারী মেটাল মিউজিক এ পানির মৌলিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। পানির সামনে যখন বলা হয়, ‘তুমি খুব ভালো, আমি তোমাকে ভালোবাসি’ তখন এর মৌলিক কাঠামো হয় সুবিন্যস- অলংকারের মতো। আবার যখন বলা হয়, ‘তুমি ক্ষতিকর, আমি তোমাকে খুন করব’ তখন এর গঠন পরিবর্তিত হয়ে ভয়ংকর একটা রূপ ধারণ করে। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন, শব্দ দ্বারা পানি প্রভাবিত হয়। শুধু পানি নয় সব কিছুই শব্দ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
মানুষের শরীরের শতকরা ৭২ ভাগই পানি। কাজেই আমাদের শরীরও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। তিনি আরো প্রমাণ করেছেন, যে কোনো কিছু খাওয়ার শুরুতে প্রার্থনা করলে তার একটা ভালো প্রতিক্রিয়া আমাদের শরীরে হয়।
এ পরীক্ষারও বহু আগে থেকেই মানুষ জানে যে, একজন মানুষ আরেকজনকে খারাপ কথা বললে কিংবা গালি দিলে অপর ব্যক্তিটি প্রতিক্রিয়া দেখায় অর্থাৎ কথার দ্বারা প্রভাবিত হয়। আবার ভালো কথা বললে কিংবা প্রশংসা করলে ঐ ব্যক্তি খুশি হয়।
আমেরিকার একজন কোষ বিজ্ঞানী ড. ব্রুস লিপটন আবিষ্কার করেছেন মানব দেহে ৫০০ কোটি কোষ আছে যার প্রত্যেকটির আলাদা সূক্ষ্ম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে যা মানুষেরও আছে। প্রতিটি কোষের ভেতরেই আছে স্মৃতিভান্ডার যা আমাদেরকে কোনো কিছু মনে রাখতে সাহায্য করে।
আমরা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দ্বারা যা কিছু গ্রহণ করি অর্থাৎ, আমরা যা বলি, শুনি, দেখি, ঘ্রাণ লাভ করি, স্পর্শ দ্বারা অনুভব করি কিংবা যা কিছু চিন-া করি তার সবটাই আমাদের
মসি-ষ্কে রক্ষিত থাকে। আর মানব মসি-ষ্কে যা একবার রেকর্ড হয় তা কখনো মুছে ফেলা যায় না।
যে রেকর্ড যত বেশি গাঢ় হয় আমাদের শরীরও সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। আমাদের চিন-া-ভাবনাগুলো আমাদের সমস- কোষে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, প্রতিটি কোষ
তা-ই পর্যবেক্ষণ করে যা আমরা করি। মন থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা অনুযায়ী তারা হয় বৃদ্ধি লাভ করে নতুবা কোন কিছু প্রতিরোধ করার জন্য তৈরি হয়।
সব শেষে তিনি এভাবে সিদ্ধানে- উপনীত হন যে, মন ব্রেইনকে গাইড করে আর ব্রেইন গাইড করে শরীরকে। শুধু তা-ই নয় বরং আমাদের চিন-া-ভাবনা এবং কথা অন্য মানুষের ব্রেইন এবং শরীরকেও প্রভাবিত করতে পারে।
মানুষের প্রধান সম্পদ দুইটি। একটি হলো দেহ এবং অন্যটি মন। এই দেহ ও মনের সমন্বয়ে তৈরি এটি এমন একটি মেশিন যা ইথার থেকে যে কোন এনার্জি রিসিভ করতে পারে আবার এনার্জি ট্রান্সমিটও করতে পারে। আমরা কখনো তা বুঝতে না পারলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এটা ঘটে থাকে। ড. ইমোতো’র পরীক্ষায় এমন কিছু ঘটেছিল যা এ জাগতিক চোখে দেখা যায় না। অর্থাৎ, তাঁর কথা এবং সর্বোপরি, তিনি এ ব্যাপারে যা চিন-া করেছিলেন তা তাঁর সেই মেশিন নামক দেহ কোন না কোন ভাবে ট্রান্সমিট করেছিল এবং যাকে নিয়ে চিন-া করা হয়েছিল সেই গ্লাসের পানি তা রিসিভ করতে পেরেছিল। আর পানি যখন সেটা রিসিভ করেছিল তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। ভাতের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটেছিল।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১০৮৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন