বদনজরী ঃ পর্ব - ১১

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২০ মার্চ, ২০১৪, ০২:৩৫:১৫ দুপুর

আবার কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি পর্দা হলো মনের ব্যাপার। আমার মন পরিষ্কার আছে, স্বচ্ছ আছে। আমার মনে কোন কালিমা নেই কিংবা পাপবোধও নেই। কাজেই পর্দা করা আমার জন্য জরুরী নয়। অনেক বোরকা পড়া মহিলার মনে জটিলতা আছে, পর্দা করেও মানুষের সাথে শত্রুতা করে, কূটিলতা করে কিংবা বোরকা পড়ার পরও তার শরীরের সব ভাঁজ দৃশ্যমান থাকে ইত্যাদি। অর্থাৎ, পর্দা না মানার জন্য শয়তান কত রকমের যুক্তিই না তাঁদের সামনে তুলে ধরে। এ সমস- মা বোনদের জন্য বলছি, আপনারা যার উদাহরণ দিচ্ছেন, তিনি কোন অনুসরণীয় ব্যক্তি নন, এমন কী আদর্শ চরিত্রও নন। তিনি যদি সত্যিই সে ধরণের পর্দা করে থাকেন তার জন্য তাঁকেই জবাবদিহী করতে হবে এবং কঠিন শাসি- পেতে হবে। পর্দা হলো আল্লাহর দেয়া বিধান, কোন মানুষের দেয়া নয়। আর শরীয়তের সবগুলি বিধান মানাই জরুরী বিশেষ করে যেগুলি ফরজ, সেগুলি তো অবশ্যই পালন করতে হবে। নতুবা কঠিন জবাবদিহী করতে হবে। আর এর জন্য কঠিন শাসি- রয়েছে ইহকাল ও পরকাল দু‘জায়গাতেই। কাজেই আপনার জবাব দেবার জন্য আপনি প্রস'ত তো?

এ জাতীয় চিন-া ও যুক্তি যাঁরা মনে মনে লালন করেন তাঁদের উদ্দেশ্যে আরো বলতে চাই, আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে একাধিক জায়গায় তাঁর রাসুল (সঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদেরকে পর্দা করতে নির্দেশ দিন। মন ঠিক থাকলেই যদি পর্দা করার প্রয়োজন না হতো তবে তো রাসুল (সঃ) এর স্ত্রী-কন্যাদেরকে উদ্দেশ্য করে এ রকম আয়াত অবতীর্ণ হতো না। তাঁরা নিশ্চয়ই মনের দিক দিয়ে আপনাদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত ছিলেন। কিংবা আপনারা কী নিজেদেরকে মুমিন নারী হিসেবে আল্লাহর দরবারে উপস'াপন করতে চান না?

পর্দা পালনের শর্ত

পর্দা বা হিজাবের শর্ত প্রধানত ৬টি। প্রথম শর্তটি পুরুষ ও নারীর জন্য পৃথক এবং পরবর্তী পাঁচটি শর্ত উভয়ের জন্য একই রকম।

(১) হুদুদ সীমারেখা - শরীরের নির্দিষ্ট স'ান অবশ্যই আবৃত রাখতে হবে। পুরুষ এবং নারীর জন্য এর সীমা ভিন্ন। পুরুষের জন্য নাভীর উপর থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন- এবং নারীর জন্য মাথাসহ সারা শরীর আবৃত রাখতে হবে। নারীর মুখমন্ডল ও কব্জি পর্যন- হাত ছাড়া সমস- শরীর পর্দার সীমার

অন-র্ভুক্ত। যদি সে চায় তাহলে ঐ স'ানগুলিও ঢেকে রাখতে পারে। তবে অনেক আলেমের মতে ঐ স'ানগুলিও অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। এ অভিমতই শ্রেয়। কেননা মুখমন্ডলই মানুষের আয়না।

(২) পরিহিত পোষাক ঢিলে ঢালা হবে - পোশাক এমন আঁটো সাঁটো হওয়া যাবে না যাতে শরীরের কাঠামো দেখা যায় বা বুঝা যায়। যেমন ঃ পুরুষদের স্কীন টাইট জিনস্ পরার অনুমতি নেই। নারীদের তো প্রশ্নই আসে না।

(৩) পরিহিত পোশাক স্বচ্ছ বা পাতলা না হওয়া - পোশাক এমন স্বচ্ছ বা পাতলা হওয়া যাবে না যাতে শরীরের ভেতরের অংশ দেখা যায়। যেমন ঃ অনেক পুরুষ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে পাতলা সুতী কাপড়ের পাঞ্জাবী পরেন। ভেতরে কোন গেঞ্জীও পরেন না যার ফলে ভেতরে শরীর দেখা যায়। আবার অনেক নারী জর্জেট বা এ ধরণের কোন কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক পরেন যাতে শরীরের অনেকখানি অংশ অনাবৃত থাকে। এটা সর্বতো ভাবেই হারাম।

(৪) পোশাক দৃষ্টি আকর্ষণকারী না হওয়া - এমন পোশাক পরা যাবে না যা বিপরীত লিঙ্গের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। অর্থাৎ, পোশাকের রং বা ডিজাইন এমন চাকচিক্যময় হওয়া যাবে না যা সহজেই অপর লিঙ্গকে আকৃষ্ট করে। যেমন ঃ অনেক নারী পর্দার নামে চক্চকে রংয়ের বোরকা পরেন যা এ শর্তকে ভঙ্গ করে। কাজেই উভয়ের জন্যই সাধারণ পোশাকই উত্তম।

(৫) স্বজাতীয় পোশাক হওয়া বাঞ্ছনীয় - এমন পোশাক পরা যাবে না যা বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের মতো। অর্থাৎ, পুরুষেরা পুরুষালী পোশাক এবং নারী নারীর পোশাক পরিধান করবে। যেমন ঃ বর্তমানে অনেক নারীকে জিন্সের প্যান্ট, শার্ট কিংবা গেঞ্জী পরতে দেখা যায়। আবার অনেক পুরুষও ফ্যাশনের নামে মেয়েদের মত লম্বা চুল রাখে, মাথায় ব্যান্ড লাগায়, কানে দুল পরে কিংবা বাহারী পাঞ্জাবীর সাথে বাহারী ওড়না পরে। এ সবের কোনটাই ইসলামী শরীয়া সমর্থন করে না বরং তা রীতিমত হারাম।

(৬) পরিহিত পোশাক যেন ইসলামী পোশাক হয় - ভিন্ন জাতি সমপ্রদায়ের পোশাকের সাথে যেন সাদৃশ্য না থাকে। পোশাক দেখে যেন ভিন্ন সমপ্রদায়ের বলে মনে না হয়।

পোশাকের জন্য উপরিউক্ত ছয়টি শর্ত ছাড়াও পোশাক পরিধানকারীর সমগ্র আবরণের চারিত্রিক কর্ম এবং ধারাও দৃষ্ট হবে। কাজেই এরূপ নিয়তেই পোশাক তৈরি ও পরিধান করতে হবে। যদি কেউ পোশাকের মাধ্যমে শুধু পর্দার শর্ত পূরণ করে, তাহলে সে শুধু সীমারেখার মধ্যেই আমল করল। পোশাকের পর্দার সঙ্গে চোখের পর্দা, মনের পর্দা, চিন-ার পর্দা, নিয়ত এবং আমলের পর্দাও প্রয়োজন। পোশাকের সঙ্গে পরিধানকারীর চলা, বলা কিংবা যে কোন কাজ করা সহ সমগ্র বিষয়ই সংযুক্ত থাকে।

উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রঃ) পর্দাকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা ঃ

১। সর্বনিম্ন পর্দা - মুখমন্ডল এবং হাতের কব্জি ব্যতীত নারীর সমুদয় দেহ পর্দাবৃত রাখা। ভিন্ন মতে টাখ্নুর গিরা পর্যন- পায়ের পাতা ব্যতীত গোটা দেহ আবৃত রাখা ফরয।

২। মাধ্যমিক স-র - মুখমন্ডল, হাত এবং পা সহ সবকিছুই বোরকা দ্বারা আবৃত রাখা।

৩। উচ্চ স-র - মহিলার শরীর পর্দায় আবৃত করার সাথে সাথে তার পরিধেয় বস্ত্রও আবৃত রাখা। এটা হলো পর্দার সর্বোচ্চ স-র।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১৪১৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

195213
২০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৭
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : মাশাল্লাহ বেশ ভালো লাগলো পড়ে সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করবো। আর পোষ্ট সরাসরি প্রিয়তে গেলো
২০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:০০
145589
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে ভালো লাগার জন্য। তবে শুধু ভালো লাগলেই চলবে না। আমল করুন এবং অন্যকে সতর্ক্ করুন।
195219
২০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:০২
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : পর্দা করা ফরজ। এতে কোনো ছাড় নেই। নিজে যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করি। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোষ্ট উপহার দেয়ার জন্য।
২০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:০৩
145590
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে। চলুন আমরা সকলে আল্লাহর দেয়া বিধান মেনে চলি এবং অন্য ভাই বোনদেরকেও সতর্ক করি।
195278
২০ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১২
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আসাদুল ইসলাম লিখেছেন : ভাই,এভাবে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে এগিয়ে চলেন। আল্লাহ আপনাকে ও আমাকে সফল করবেন।
সুরা নাবা(আয়াত ৩১)---
"নিশ্চয়ই মুত্তাকিগনের জন্য রয়েছে সফলতা"
সুরা তাওবা(আয়াত ০৪)---
"নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালবাসেন।"
২০ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
145628
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : ভাই মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আসাদুল ইসলাম, আল্লাহ আপনার এ দোয়া কবুল করুন। সত্যিই যেনো আমরা মুত্তাকীদের দলে দলভুক্ত হতে পারি।
195317
২০ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৭
ফেরারী মন লিখেছেন : ভালো লাগল অপূর্ব সুন্দর একটি পোষ্ট পড়লাম। বাস্তব জীবনে কাজে লাগাবো ইনশাল্লাহ
২০ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৮
145633
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারলে আমিও খুশি হবো। মনে করব আমার চেস্টা সার্থক হয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File