বদনজরী ঃ পর্ব - ৯
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ১৯ মার্চ, ২০১৪, ০৩:৫১:৩৬ দুপুর
বিখ্যাত আমেরিকান ইতিহাসবিদ উইল ডিউরান্ট বলেন, যদি কোন ইহুদী মহিলা তাদের আইন লঙ্ঘন করে মাথা না ঢেকে বাড়ির বাইরে বা কোন পুরুষের সামনে যায় অথবা তার কন্ঠ যদি কোন পুরুষ বা তার প্রতিবেশী শুনতে পায় তবে তার স্বামীর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে তাকে যৌতুক বাবদ কোন টাকা না দিয়েই তাকে তালাক দেয়ার।
খ্রীষ্টান ও ইহুদীদের ধর্মীয় অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, ওল্ড টেষ্টামেন্টে পর্দা করার কথা বল হয়েছে। (জেনেসিস ২৪ ঃ ৬৫, নাম্বারস্ ৫ ঃ ১৮, ঈসাইয়াহ্ ৪৭ ঃ ২) শুরুর দিকে বিভিন্ন চার্চের ফাদারগণও পর্দা প্রথার কথা বলেছিলেন এবং এ ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন হার্মাস, ক্লিমেন্ট অব আলেক্সজান্দ্রিয়া, জেরোমী, অগাস্টিন অব হিপ্পো এবং টারটুলিয়ান। প্রাচীন খ্রীষ্টীয়, গ্রীক এবং আরো হাজার হাজার বছরের পুরানো বিভিন্ন সভ্যতায় তাদের বিভিন্ন আটর্, ড্রইং, ছবি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোতেও নারীকে পর্দা পড়া অবস'ায় দেখা যায়।
প্রটেষ্ট্যান্ট সংস্কারকদের মধ্যে মার্টিন লুথার এর স্ত্রী ক্যাথেরিন মাথা ঢেকে চলতেন এবং জন নক্স ও জন ক্যালভিন উভয়ই নারীদেরকে পর্দা করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়াও যারা নারীদেরকে পর্দা করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ম্যাথিউ হেনরী, এ আর ফসেট, এ টি রবার্টসন, হ্যারি এ আয়রনসাইড এবং চার্লস্ ক্যাডওয়েল রাইরি অন্যতম।
শিখদের ধর্মে নারী পুরুষ উভয়ের পর্দা করার বিধান রয়েছে। পুরুষেরা তাদের চুলকে পেঁচিয়ে মাথায় পাগড়ী বাঁধে আর নারীরা পড়ে লম্বা ধরণের স্কার্ফ, যাকে চুন্নি বলে। তারা নিজেদের পবিত্রতা এবং ধর্মীয় স্বকীয়তা প্রমাণের জন্য এভাবে পর্দা করে থাকে। বলা হয়েছে, মেয়েদেরকে সব সময় তাদের মাথা ঢেকে রাখতে হবে। ছোট মেয়েদেরকে এমনি এমনি রাখলে চলবে না, তাদেরকে শুরু থেকেই চুন্নি ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে এবং এটা বাঁধা শিখাতে হবে যেন বড় হবার পর কোন সমস্যা না হয়। যখন তারা সাবালকত্বে পৌঁছবে তখন তাদের নারীত্বের শোভা ও বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য সব সময় চুন্নি বেঁধে রাখতে হবে। (ঈঁষঃঁৎব ধহফ জবষরমরড়হ ড়ভ ঝযরশযরংস) আবার সনাতন হিন্দু ধর্মেও পর্দা করতে দেখা যায়। তাদের সবচেয়ে পবিত্র যে ধর্মগ্রন' বেধ - সেখানেও পর্দা করার কথা বলা হয়েছে। অপরিচিত পুরুষের সাথে দেখা তো দূরের ব্যাপার, কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে। পুরুষের পোশাক নারীদের এবং নারীর পোশাক পুরুষদেরকে পড়তে বারণ করা হয়েছে। ভারতের গ্রামাঞ্চলে এখনও মহিলাদেরকে পর্দা করতে দেখা যায়। স'ানীয় ভাষায় তাদের এ পর্দাকে বলে ‘ঘুঙ্ঘুট’।
যা হোক, পর্দা প্রথা যে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মেরই বিধান নয় বরং অন্য ধর্মেও এ সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে তা বুঝানোর জন্য এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলো। যদিও সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, কুরআন ব্যতীত অন্য সব ধর্মগ্রন'ই বিকৃত হয়েছে। কুরআন-হাদীসের আলোকে পর্দা সম্পর্কে শরীয়তের বিধান থেকে অনুমান করা যায় ইসলামে পর্দার গুরুত্ব কত ব্যাপক। মূলতঃ কোন পুরুষ যখন কোন নারীর প্রতি তাকায়, তার সৌন্দর্য অবলোকন করে এবং তার শরীরের কামোত্তেজক অঙ্গগুলো প্রত্যক্ষ করে তখন সেই পুরুষের হৃদয়ে জ্বলে ওঠে কামনার প্রাকৃতিক বহ্নিশিখা। সে শিখার দহনে অবিরাম দগ্ধিভূত হতে থাকে সে। নিরাশায় ভাবতে থাকে কল্পনার স্বচ্ছ দর্পনে অঙ্কিত সেই নারীর দেহ সৌন্দর্য নিয়ে। কত ঘুম তার নষ্ট হয় সেই ভাবনার আঘাতে। কত রজনী কাটে বিনিদ্র কল্পনার জাল বুনতে বুনতে। কল্পনার সেই ছোট ছোট ঢেউ এক সময় বিক্ষুব্ধ তরঙ্গের সৃষ্টি করে তার যৌবন দরিয়ায়। সে তরঙ্গে অনাথের মতো হারিয়ে যায় সমাজ সভ্যতা নামের সকল বেড়ি বন্ধন। স্বপ্নের নীল আকাশে সে তখন উড়তে থাকে কল্পনার পাখায় গা এলিয়ে বিলাসী বিহঙ্গের মতো। তার স্বপ্নের নারীকে একানে- পাবার ক্ষীপ্র বাসনায় ক্ষুধার্ত বাঘের মতো হিংস্র হয়ে ওঠে সে। তারপর যা ঘটে তা আমরা নিয়মিত প্রত্যক্ষ করি চোখের সামনে। প্রতিদিন সকালে পত্রিকায় চোখ বুলালেই আমরা দেখতে পাই এ ধরণের কত ঘটনা। কিন' আমরা কখনো ভেবে দেখি না এর উৎসটা কোথায়? আর উৎস জানা না থাকলে সে সমস্যার সমাধান কখনোই করা সম্ভব নয়।
ইসলামী শরীয়ত ব্যবস'া সে উৎসটাই সমূলে উপড়ে ফেলতে চায়। যে কামময় দেহদর্শন শত অনিষ্টের জননী শরীয়ত আমাদের কল্যাণের জন্যই সে দেহ সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখতে হুকুম করেছে; কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। শরীয়ত সমর্থিত প্রয়োজন ছাড়া নারী ঘরের বাইরেই যেতে পারবে না। যখন যাবার যথাযথ প্রয়োজন দেখা দেবে তখন তাকে প্রকৃত পর্দার হুকুম পালন করেই যেতে হবে যেন তার গমনকালে তার কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখে কোন পুরুষের মনে ঝড় না ওঠে। বলা বাহুল্য, নারীর সতীত্ব, সম্ভ্রম ও নাজুক মর্যাদার সুরক্ষায় পর্দা বিকল্প আশ্রয়। ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই এর গুরুত্ব অপরিসীম, বাস-বসিদ্ধ ও প্রশ্নাতীত।
তার মানে এই নয় যে, ইসলাম মানুষের যৌন কামনাকে অস্বীকার করে বরং এ সম্পর্কের ব্যাপারে পোষণ করে অত্যন- স্বচ্ছ, পবিত্র ও সুশৃঙ্খল ধারণা। ইসলাম এমন এক ধর্মের নাম যা বিশ্বাস করে এবং স্বীকৃতি দেয় মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব। কাজেই তার যৌন ক্ষুধা নিবারণ পদ্ধতি ও যৌন সম্পর্ক সহ সকল কিছুই হবে অন্য সকল প্রাণী থেকে আলাদা এবং উন্নত বৈশিষ্ট্যের। যার মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক যৌন ক্ষুধাও নিবারণ হবে আবার সভ্যতাও ভুলুন্ঠিত হবে না।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১১৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন