কোয়ান্টাম মেথডের ভাঁওতাবাজি দেখুন ঃ পর্ব - ১

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২৪ জুন, ২০১৪, ১০:৫৮:১৬ রাত

কোয়ান্টাম মেথড বাংলাদেশে অত্যন্ত পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান। এরা মেডিটেশন এর কোর্স করায়। তারা দাবী করে দীর্ঘদিন গবেষণা করে তারা এ মেথড আবিষ্কার করেছে।

মূল বিষয় হলো, কোয়ান্টাম এর গুরু (গরু) মহাজাতক (মহাঘাতক) ব্যক্তি জীবনে একজন পামিস্ট বা হস্তরেখাবিদ ছিলেন। যাঁদের মনে আছে, তাঁরা বলতে পারবেন ৯০ দশকের আগে সম্ভবত 'সাপ্তাহিক বিচিত্রা' পত্রিকায় প্রতি বছরের শুরুতে তিনি রাশিফল লিখতেন।

মাহী কাজী নামে একজন ব্যক্তি ১৯৯০ সালে পাক ভারত উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো মেডিটেশন তথা 'মাইন্ড সাইন্স' কোর্স সিলভা মেথড প্রবর্তন করেন, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের অধিবাসী মি. হোঁজে সিলভা। তিনি দীর্ঘ ২২ বছরের গবেষণার পর ১৯৬৬ সালে এ কোর্স শুরু করেছিলেন।

এরপর মহাজাতক ১৯৯২ সালে এসে মাহী কাজীর কাছে এ কোর্স সম্পন্ন করেন এবং গুরুভক্তি দেখিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠতা লাভ করেন। তখন মাহী কাজী ইংল্যান্ড থেকে এসে এ কোর্স করাতেন তারপর আবার চলে যেতেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি বাংলাদেশে কোর্স আয়োজনের দায়িত্ব লাভ করেন। এক সময় তিনি কোর্সের প্রশিক্ষক ম্যানুয়াল হাতিয়ে নিয়ে চলে যান।

এরপর তিনি সেই ম্যানুয়ালকে কিছু কিছু রদবদল করে নিজের নামে চালু করেন। কারণ তিনি জানতেন, সিলভা মেথড কোর্সের যেহেতু ইনটেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রেজিষ্টার্ড করা তাই তিনি হুবহু চালু করলে ফেঁসে যাবেন। সুতরাং, তিনি ইচ্ছা মতো পরিবর্তন করলেন যাতে কপিরাইট আইনে বিপদে পড়তে না হয়। এ কাজে তাঁর অতীত জীবনের কর্ম অভিজ্ঞতাও কিছু কাজে লেগেছিল বৈকি।

তিনি অত্যন্ত কৌশলে মানুষকে হিপনোটাইজ করার টেকনিক সংযোজন করলেন তাঁর কোয়ান্টাম মেথডে। সিলভা মেথডের কোর্স যেখানে সম্পূর্ণ আলোকিত এসি রুমে করা হতো সেখানে তিনি আলে আঁধারি রুমে একটা ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করে শুরু করলেন। এমন একটা ভাবে শুরু হলো যা দেখে শুরুতেই প্রশিক্ষণার্থীরা বিরাট একটা ধাক্কা খেয়ে ভাবতে শুরু করলেন, এটা বিশেষ কোনো একটা কোর্স এবং তিনি অনেক বড় মাপের আধ্যাত্মিক গুরু।

এরপর পর্যায়ক্রমে ৪দিন ধরে তাদের মগজ এমনভাবে ধোলাই করা হতে লাগল যার ফলে এ কোর্স করার পর সকলেই 'কোয়ান্টাম' বলতেই এক সকম পাগল। তারা জানতেও পারল না যে তাদের অগোচরে তাদের কতবড় সর্বনাশ করা হয়েছে। এ দলে আছেন দেশের বহু নামী, দামী ও গুণী মানুষজন।

এ ব্যাপারে তাদেরকে প্রশ্ন করা হলে তারা সঠিক কোনো জবাব না দিয়ে ঘোরের মতো এক ধরণের প্রলাপ বকে যেন। তারা সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে না "কেন মাটির ব্যাংক" এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উঠানো হয়, এ টাকা কোন কাজে ব্যয় হয় ইত্যাদি।

কিছুদিন আগে ডিসকোভারী চ্যানেলে এ সম্পর্কিত একটি ডকুমেন্টারী প্রচারিত হয়। আমেরিকা, বৃটেন এবং ভারতের একদল বিজ্ঞানী দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, মানুষের ব্রেইনকে প্রোগ্রাম করা সম্ভব। অর্থাৎ হিপনোটাইজের মাধ্যমে একজন ভালো মানুষকে দিয়েও খুন করানো সম্ভব। সবচেয়ে অবাক করা ফলাফল হলো, চাইলে খুনীর ব্রেইন থেকে সেই অপরাধের স্মৃতি মুছে দেয়াও সম্ভব। তার মানে সে খুন করবে কিন্তু জানবে না যে সে খুন করেছে। কত বড় মারাত্মক কথা, একবার কল্পনা করে দেখুন তো।

এদের ভাঁওতাবাজী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকগুলোতে যেতে পারেন।

লিংক নং - ১

লিংক নং - ২

লিংক নং - ৩

লিংক নং - ৪

(চলবে ঃ ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন তথ্য নিয়ে আসার ইচ্ছা রইল)

বিষয়: বিবিধ

৪৯৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File