চাঁদে সাঈদী সাহেবের ছবি দেখা এবং তার ভক্তকুল।

লিখেছেন লিখেছেন উসামা ইউসুফ ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০১:৪৫:০৫ রাত

কিছুদিন আগে চাঁদে আল্লামা সাঈদির ছবি দেখা নিয়ে বেশ বিতর্ক হল। একদল বলল দেখেছি আরেকদল বলল চাঁদে সাঈদির ছবি দেখা অসম্ভব। এই নিয়ে আমার কিছু চিন্তা এখানে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

যে রাতে চাঁদে সাঈদীর ছবি দেখা গেছে বলে কিছু লোক দাবি করছে সেদিন রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তাই এ ব্যাপারে আমার কোন অভিজ্ঞতা নাই। ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে আমার এক চাচাত ভাইএর কাছে প্রথম এই কথা শুনে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম সে নিজে দেখেছে কিনা, উত্তরে সে বলল সেও আমার মত ঘুমিয়ে ছিল তাই তার দেখা হয়নি বলে আফসোস করল। আমি ভেবে নিলাম এটা স্রেফ একটি গুজব। কিন্তু যেই বেলা বাড়তে থাকল এমন লোকের সাথে আমার কথা হতে থাকল যারা দাবী করলো যে তারা নিজ চোখে দেখেছে। এদের মধ্যে কিছু লোককে আমি খুব একটা বিশ্বাস করতাম না, তবে এত লোকের স্বচক্ষে দেখার দাবীকে অস্বীকার করতেও পারলাম না। যারা ওই রাতে ঘুমিয়ে ছিল তাদের কেউ কেউ আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলো যে এটা সম্ভব কিনা। আমি কেবল এতটুকু বলেছিলাম যে অসম্ভব নয় কারন আল্লাহ্‌র ক্ষমতা অসীম এবং তিনি সাঈদী সাহেব কে কতটা পছন্দ করেন তা আমরা জানি না, তবে এটুকু জানি যে সাঈদী সাহেবের মাধ্যমে বহু অমুসলিম ইসলামের স্বাদ পেয়েছে এবং বহু নাম মাত্র মুসলিম ভাল মুসলিম হয়েছে। তাই আল্লাহ যদি সাঈদীকে তার অলির মর্যাদা দিয়ে থাকেন তবে সব কিছুই সম্ভব। আমি যখন সিধান্ত নিতে পারছিলাম না পুরপুরি এ ব্যাপারে তখন জানলাম এমন এক জনের নাম যে কিনা বলেছে সে দেখেছে সাঈদী সাহেবের মত একটি মুখ চাদের গায়ে। আসলে সেই লোকটি আমার চাচাত ভায়ের মামা যার মুখে আমাদের গ্রামে কেউ কখন মিথ্যা কথা শুনেনি এবং যার বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগ কখনই ছিল না এবং এখন ও নাই। তিনি বললেন যে তিনি সাঈদী সাহেবের মত মুখ চাদের গায়ে দেখেছেন রাতে কয়েক বার এবং এখাধিক লোকের সাথে। আসলে এমন লোকের কথা অবিশ্বাস করার ক্ষমতা আমার সহ অত্র এলাকার কারই নাই। আসলে আমি তাদেরকে বলতে পারিনি যে তোমার দেখনি কারন এত গুলি লোক যা দেখেছে, আর আমি যখন তা দেখিনি আমার ঘুমের কারনে তাই আমি আমার বিদ্যা বুদ্ধির জোর এতটা হয়নি যে এত গুলি লোকের দেখা জিনিসকে আমি অস্বীকার করব এই কারনে যে তা আমার বুদ্ধিতে আসে না।

একজন আমাকে বলল এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে ঘটার কোন সুযোগ আছে কিনা। আমি তাকে বললাম বৃষ্টি আল্লাহ্‌ বর্ষায় এটা সে বিশ্বাস করে কিনা? সে বলল হ্যাঁ। তার পর আমি বললামঃ আসলে বৃষ্টি কিভাবে হয় তার সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা আমরা জানি। প্রথমে ভূপৃষ্ঠ হতে পানি জলীয় বাস্পের আকারে উপরে উঠে যায়, এক সময় যখন তা ঘনীভূত হয়ে তখন বাতাস আর ভর বহন করতে পারে না বলে তা মাটিতে পড়ে বৃষ্টি হিসাবে। আপাত দৃষ্টিতে এখানে আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব চোখে পড়ে না। কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় কে এই সায়েন্টিফিক প্রসেস তৈরি করেছে, কে তাপ, বায়ু ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করছে আরও অনেক সায়েন্টিফিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যার কারনে বৃষ্টি হচ্ছে? উত্তর, আল্লাহ্‌। ঠিক একই ভাবে আল্লাহ্‌র পক্ষে এটাও সম্ভব পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, মেঘমালা, চাঁদের পাহাড় পর্বতের বিন্যাস পরিবর্তন করে এমন এক রঙের বিন্যাস তৈরি করা যার সমষ্টি মানুষের মুখের মত দেখায়। এটা আল্লাহ্‌র জন্য খুবি সহজ।

কেউ কেউ বলছে সাঈদী কি নবী নাকি যে তার ছবি আল্লাহ্‌ চাঁদে দেখাবেন? আমার উত্তর হল না, তবে তিনি আল্লাহের অলি কিনা তা আমরা জানি না আর আল্লাহ্‌ তার অলি কে নিয়ে অনেক কিছুই করতে পারে যা আমার মত পাপিষ্ঠ কে নিয়ে করে না, যার প্রমান অলিদের জীবনী থেকে অহরহ পাওয়া যায়। আর যার কাছে কয়েকশো মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে ( প্রায় ৬৫০, একটি বই অনুসারে তবে এই মুহূর্তে বইএর নামটি মনে করেতে পারছি না, যদি কারো দরকার হয় তবে জানাতে পারব) সেই লোকের দাম কি আল্লাহ্‌র কাছে আমার মত যার কথা শুনে কোন বেনামাজী মুসলমান কখন নামাজ -ই ধরে নি?

আসলে আমি তাদের বলতে পারিনা যে তোমারা যে দেখেছ তা ভুল যখন আমি নিজেই সেখানে ছিলাম না। আমিও যদি চাঁদের দিকে তাকাতাম কিন্তু যদি দেখতে না পেতাম তবে বলতে পারতাম তোমরাও দেখনি। আবার যদি একজন বলতো দেখেছি তবে বলতে পারতাম তোমার দৃষ্টি ভ্রম হয়েছিল। কিন্তু যারা বলছে যে তারা দেখেছি তেমন লোক তো অনেক! কিভাবে আমার পক্ষে তাদের স্বচক্ষে দেখাকে অস্বীকার করা সম্ভব? যদি জামায়েত ইসলামির লোকরা এটা প্রচার করে থাকে, তবে আমার প্রশ্ন আমি যদি গোলাকার চাঁদ আপনাকে দেখিয়ে বলে যে এটা কাঁচির মত আপনি কি মেনে নেবেন যখন আপনি নিজেই দেখতে পাচ্ছেন যে চাঁদ গোলাকার?

যারা বলছে যে সব কিছই গুজব ( অবশ্য তারা নিজে সেই রাতে চাঁদ দেখেছিল কিনা তা আমি জানি না), তাদের ব্যাপারে একটি গল্প আমি শেয়ার করছি। আমি যখন হাই স্কুলে পড়তাম আমার এক শিক্ষক নাম আব্দুল আজিজ ( কনোপাড়া হাইস্কুল, বাগমারা, রাজশাহী) একটি গল্প বলেছিলেন লাইলি মজনুর উপাখ্যান হতে। মজনু যখন লাইলীর প্রেমে পাগল হয়ে যা সামনে পায় তাকেই তার লাইলী বলে জড়িয়ে ধরছিল, সেই সময় একদিন সে দূরে একটি খেজুর গাছ দেখে তাকেই লাইলী বলে জড়িয়ে ধরার জন্য প্রার্থনারত এক দরবেশের গায়ের উপর পা দিয়ে খেজুরের গাছের কাছে গিয়ে গাছকে লাইলী বলে জড়িয়ে ধরে। দরবেশের উপর পা পড়ায় দরবেশের ধ্যান ভেংগে যায় এবং মজনুকে বলতে থাকে "তুমি আমার এতদিনের ধ্যান ভেঙ্গে দিলে?" মজনু উত্তরে বলে আমি সামান্য এক মানবীর প্রেমে পাগল হওয়ায় তোমার গায়ের উপর পা দিয়ে চলে এলাম অথচ তোমার উপস্থিতি বুঝতেই পারলাম না কিন্তু তোমার মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ্‌র প্রতি প্রেম ভেঙ্গে গেল? মহান আল্লাহ্‌র প্রতি তোমার প্রেম এত ঠুনকো?

আসলে মানুষ যাকে ভালবাসে তার উপস্থিতি সে সব জায়গায় অনুভব করে। যদি কেউ বলে যে চাঁদে সাঈদী সাহেবের ছবি দেখাটা মিথ্যা, তবে তার কাছে আমার প্রশ্ন আমার গ্রাম সহ বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক যে চাঁদেও আল্লামা সাঈদীর ছবি দেখেছে বলছে তা কি ওই সব লোকের মাওলানা সাঈদীর প্রতি অক্রিত্তিম প্রেম নয়? তাদের অবস্থাটা কি লাইলীর প্রেমে পাগল মজনুর মত নয় যে সব জায়গায় তার প্রিয়তম ধর্মীয় শিক্ষক আল্লামা সাঈদীর ছবি দেখতে পাচ্ছে তাকে অনেক দিন কুর'আনের মাহফিলে না দেখে?

বিষয়: বিবিধ

৩৮৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File