'৭১ পরবর্তী প্রজন্ম সমীপেঃ
লিখেছেন লিখেছেন উসামা ইউসুফ ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:৪২:১৫ সন্ধ্যা
'৭১ এ কে কতটুকু দায়ী ছিল তা আবার ভেবে দেখুন নিজের বিশ্লেষণী ক্ষমতা দিয়েঃ
সময় নিয়ে পড়ুন, চিন্তার খোরাক পাবেন ইন শা আল্লাহ্।
আমরা প্রত্যেকেই বিচারক আমাদের সীমানার মধ্যে। প্রত্যেক মুহূর্তেই আমাদের বিচার করতে হয় কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা। যে সব ঘটনাই আমরা উপস্থিত থাকি সেসব ক্ষেত্রে কোনটা সত্য তা বিচার করতে কষ্ট তেমন হয় না, যেমন আমার সামনেই যদি দুইজন ব্যাক্তি কথা কাটা কাটি থেকে মারা মারি শুরু করে দেই তবে কে প্রকৃত অপরাধী তা বের করা কঠিন কাজ নয়; কিন্তু যা আমাদের অসাক্ষাতে হয় সেই ক্ষেত্রে সত্য মিথ্যা বিচার টা খুব কঠিন হয়ে যায়। ধরুন আপনার দুই ছোট ছেলে কাদতে কাঁদতে এসে আপনাকে বলল যে আপনার বড় ছেলে তাকে মেরেছে এবং তার গালে আপনি দাগও দেখতে পেলেন সঙ্গে সঙ্গে আপনি আপনার বড় ছেলেকে ডেকে আপনি দুই চড় মেরে দিলেন; অতঃপর আপনার বড় ছেলে আপনাকে বলল যে আপনার ছোট ছেলে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়েছে। তাহলে কি দাঁড়ালো? আপনি অবিচার করলেন।
তাই যা আমাদের সামনে ঘটেনি সে বিষয়ে কে ঠিক আর কে বেঠিক তা সে বিষয়ে সিধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই আমাদের উচিৎ বিবাদমান উভয় পক্ষের সাথে কথা বলা। অন্যথায়, অবিচার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
'৭১ এর যুদ্ধও এমন একটি বিষয়, যা কিনা আমাদের (তরুন প্রজন্মের) সামনে ঘটেনি। আমরা ছোট কাল থেকেই আমাদের চারিপাশের মানুষদের কাছ থেকে অথবা বই পড়ে জেনেছি মুক্তি যুদ্ধের পটভূমি, যুদ্ধকালীন সময়, এবং এর পরবর্তী ঘটনা সমূহ। এক বার খেয়াল করে দেখুন যাদের কাছে থেকে আমরা এই ইতিহাস শুনেছি বা যাদের লেখা ইতিহাস আমরা পড়েছি সবায় কিন্তু ওই যুদ্ধের একই দলের। আর এই ইতিহাস পড়েই পাকিস্থান খারাপ, রাজকার খারাপ, মুক্তিযোদ্ধারা ফেরেস্তার মত, শেখ মুজিব জাতির পিতা ইত্যাদি বিষয় ওহীর মত বিশ্বাস করে আছি। অর্থাৎ আমরা বিচার করলাম পাকিস্তান স্প্লিটিং এর যারা পক্ষে ছিল তারা ভালো কাজ করেছিলেন এবং তারা জাতির সূর্য সন্তান; ওপর পক্ষে যারা পাকিস্তানের ভাঙ্গনের বিরোধিতা করেছিলেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সশস্ত্র ভূমিকা পালন করেছিলেন তারা নর্দমার কিট। কিন্তু একটু খেয়াল করুন আমরা কি কখনো বিবাদমান দ্বিতীয় পক্ষ অর্থাৎ যারা পাকিস্তান এর অখণ্ডতার পক্ষে ছিলেন তাদের সাথে কি কখনো কথা বলেছি? কখনো কি জানতে চেয়েছি কি এমন কারণ ছিল যার জন্য তারা নিজের ভাইদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল? কেন তারা সাহায্য করেছিল তাদের যারা কিনা ১২০০ মেইল দূরে থাকে? না, কক্ষনো নয়, আমরা কখনোই এই কাজ করি নাই। অর্থাৎ আমরা কেবল এক পক্ষের কথা শুনেই বিচার করে ফেলেছি কে ভালো আর কে মন্দ। অথচ এক পক্ষের কথা শুনে রায় দেওয়া পৃথিবীর সকল আদালত, নীতি শাস্ত্ররই পরিপন্থী। আরও মজার বিষয় আমরা কেবল তাদের লেখা ইতিহাসই পড়েছি যারা বিজয়ী ওই যুদ্ধে। আর কেউ ইতিহাস লেখার সময় নিজেকে অপরাধী হিসাবে উপস্থাপন করে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জার্মান তথ্যমন্ত্রী (যদি ভুলে না করে থাকি) গয়েবলসের একটি কথা যা প্রায় তত্ত্ব হয়ে গেছে তা হোল ‘একটি মিথ্যা একশ বার বললে তা সত্যে পরিনত হয়’। আসলে এর প্রকৃত অর্থ হোল একটি মিথ্যা অনেকদিন বলা হলে বা অনেক মানুষ বললে তাকে মানুষ সত্য হিসাবে ধরে নেয়। কিন্তু ইসলাম ই বলুন আর যুক্তিতেই বলুন কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা তা কত জন বলল বা কত দিন থেকে মানুষ বলছে তার উপর নির্ভর করে না। সমাজে একটি মিথ্যা হাজার বছর ধরে বলা হলেই তা সত্য পরিনত হয় না, মিথ্যা মিথ্যাই থাকে।
বাংলাদেশের মানুষের সততার গড় লেভেলটা একটু খেয়াল করুন , তাহলেই পেয়ে যাবেন এই লোকগুলোর লেখা ইতিহাস কতটা নিরপেক্ষ হতে পারে। আমাদের ‘বুদ্ধিজীবী’ সমাজই বা কেমন নৈতিকতা সম্পন্ন সেটাও তো আজ দিবালোকের মত স্পস্ট, তাই তাদের লেখা বই পড়েই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক জেনে ফেলেছি ভেবে নেওয়াটা ঠিক হবে না।
প্রকৃত সত্যপন্থি, মুমিনদের দায়িত্ব হোল যারা পাকিস্তান ভাগের বিপক্ষে ছিল এবং যারা পক্ষে ছিল প্রত্যেকের সাথে কথা বলে, প্রত্যেকের দলেরই লেখা বই পড়ে, সিধান্ত নেয়া কে কতটা ভালো এবং কে কতটা খারাপ। এক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয় জানা দরকার যেমন বিদেশীরা কিভাবে দেখেছে ’৭১ এর যুদ্ধকে, তাদের লেখায় কিভাবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস। এই সকল কিছু থেকে তথ্য নিয়েই আসলে প্রকৃত সত্য কে বের করার জন্য আমাদের বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো উচিৎ। অতঃপর নির্ধারণ করা উচিৎ কে সঠিক আর কে বেঠিক; কে কতটা ভালো ও কে কতটা খারাপ।
পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষের বই আমরা ছোট কাল থেকেই পড়ে আসছি, এবং হাত বাড়ালেই সেই বইগুলো আমরা পাই। তাই এখানে সেই বই গুলোর নাম উল্লেখ করা হচ্ছে যেগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশ সৃষ্টির বিপক্ষে যারা কাজ করেছিল তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও তৃতীয় পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি, তাদের কৈফিয়ত।
১, ডেড রেকনিং---লেখক ডঃ শরমিলা বশু
২, একাত্তরের সৃতি--- ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন
৩, দি লাস্ট ডেইজ অফ ইউনাইটেড পাকিস্তান--- জি ডাব্লিউ চৌধুরী
৪, দি ওয়েস্টস অফ টাইম--- ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন
৫, দি বিট্রেয়াল অফ ইস্ট পাকিস্তান--- লে জে এ এ কে নিয়াজি
৬, বিহাইন্ড দি মিথ অফ থ্রি মিলিয়ন---ডঃ এম আব্দুল মু’মিন চৌধুরী
৭, পাট্রিয়ট-ট্রেইটর কোয়েসচেনঃ বাংলাদেশ সিন্ড্রম ---এম টি হোসেন
৮, ব্লাড এন্ড টেয়ারস ---কুতুবুদ্দিন আজিজ
উভয় পক্ষের বই পড়ুন, নিজে এনালাইস করুন, তার পর সিধান্ত নিন কে কত বড় অপরাধী, আর কে কতটা ভালো।
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন