আদর্শিক দন্দ, একজন মাহমুদুর রহমান এবং একটি কথোপকথন
লিখেছেন লিখেছেন উসামা ইউসুফ ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৪৬:৪৭ দুপুর
আমার ফেইসবুক প্রোফাইল পিকচারে মাহমুদুর রহমানের ছবি দিয়েছি; এটা দেখে আমার এক জুনিয়র ভাই, নাম দিলাম শিশির, আমাকে এ ব্যাপার অভিযোগ করলো ম্যাসেজ অপসানে; অতঃপর তার সাথে আমার কিছু যুক্তি তর্ক হয় যা এখানে তুলে ধরা হয়। এতে কিছু বিশ্লেষণ আছে যা অনেকেরই জানা দরকার, তাই শেয়ার করলামঃ
শিশিরঃ vaiya apni aita kar photo profile pic a disen???
উত্তরঃ Mahmudur Raham, the acting editor of the Daily Amardesh.
শিশিরঃ setai vabsilam....
uni to mittha songbad prochare prothom alor cheo ek dhap egiye... to ekta mitthabadi lok er photo apnar profile a keno???
Uni to Kabagrihe gilaf poriborton er photo dia o mittha prochar koresen......
উত্তরঃ হুম, রিপোর্টটি ভুল ছিল। ওটা ছাপা হয়েছিল আমারদেশের প্রবাস পাতায়, যেখানে প্রবসিদের সম্পর্কে রিপোর্ট, প্রবাসিদের পাঠানো অভিজ্ঞতা, ইত্যাদি ছাপা হয়। ওই ছবিটি পাঠিয়েছিল একজন প্রবাসী। ওই পত্রিকার ভুল ছিল তারা সেটা যাচাই না করেই পাবলিশ করে দিয়েছিল, অবশ্য তথ্যটি ও ফোটোটি মিথ্যা জানার সাথে সাথেই সেটি অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলা হয় এবং পরের দিন হার্ড কপিতে ভুল সংশোধন করা হয়। যে কোন পত্রিকাতেই এটা ঘটতেই পারে; যেমনটি ঘটেছিল '৯১ এর ইলেশনে খালেদা করতিক পাকিস্থান এর গয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে টাকা নেওার ব্যাপারটি। প্রায় সকল পত্রিকায় সেটা ছেপেছিল, পরে যখন পাকিস্থানি কোর্টের পুরাঙ্গ রায় প্রকাস হোল তখন দেখা গেল রিপোর্টটি ভুল ছিল। আমার জানা মতে ডেইলি স্টার ছাড়া অন্য কোন পত্রিকায় পরে ভুল সংশোধন করে নি। এটা সব নিউজ মিডিয়ারই হয়। মাঝে মাঝে তারা ভুল তথ্য পায়, অনেক ক্ষেত্রে যাচায় বাছায় না করেই ছাপিয়ে দেয়, পরে ভুল সংশোধন করে; কখনো কখনো সেটাও করা হয় না, যেমনটি খালেদা জিয়ার ব্যাপারে ঘটেছিলো।
শিশিরঃ ok... bujhlam... uni khub mohan manus.. ta vaiya Kader Molla'r fasir adesh hoa mone hoy thik hoyni...naki?? (apnar ekta post dekhe to tai mone hosse)... grihojuddho badhai den... mone rakhben Rajjo purle Debaloy rokkha payna.....
উত্তরঃ আমার কোন পোস্ট দেখে কি মনে হয়েছে যে আমি গৃহ যুদ্ধ বাঁধানোর পাইতারা করছি? সেকুলারদের যেমন মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, তেমনই আছে যারা সেকুলার নয় তাদের।
আর মাহ মুদুর রহমান কে আমি ভালো মানুষ হিসাবে কোথাও উল্লেখ করিনি, কেবল তোমার অভিযোগ সম্পর্কে আমার মতামত তুলে ধরেছি। কেউ যদি বলে যে তুমি কাউকে আঘাত করেছ, আর আমার কাছে যদি সেই দাবী কে অন্যায্য মনে হয় তবে তার দাবীর বিরোধিতা করার অর্থ এই নয় যে আমি শিশিরকে ভালো মানুষ হিসাবে সার্টিফাই করছি। এর অর্থ হোল আমি জোর দিচ্ছি যে শিশির ওই ব্যাক্তিকে আঘাত করে নি, অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে সে নির্দোষ, তবে তার অন্য অপরাধ থাকতে পারে।
ঠিক একই ভাবে মাহমুদুর রহমান সম্পর্কে আমি বলি, কাবা শরিফ সম্পর্কিত রিপোর্টটি একটি ভুল ছিল যা উনি পরবর্তীতে সংশোধন করে নিয়েছিলেন; আর এই ভুলটি সব পত্রিকারই হয় যেমনটি আমি উদাহরণ দিয়েছি।
শিশিরঃ tobe unar photo ke profile pic bananor moto mohan lok uni non... apni jevabe Islam ke valobasen tate to ekjon dari sara lok apnar pro pic a thaka uchit na... Musolman er porichoy dari....
Jamat Shibir koren valo kotha..[আমার ফেইসবুকে আমার লেখা পড়ে তার এই ধারণা] tai bole Mahmudur ke keno pro pic a dite hobe????
উত্তরঃ "Musolman er porichoy dari" এটা কোথায় পেলে আমি জানি না; তাহলে তো তুমি মুসলিম না, কিন্তু মনমোহন সিং মুসলিম; যায় হোক দাড়ি রাখাটা হোল একটি সুন্নাহ, যা না রাখলে পাপ হয়; কিন্তু সে পাপ এমন পাপ নয় যার ক্ষমা নাই, যেমন কবিরা গুনাহ।
মাহমুদুর রহমান এমন লোক ও নয় যে তার ছবি প্রোফাইল পিকচার করলে জাত চলে যাবে। তোমাকে অনুরধ করছি মাহমুদুর রহমানের দোষ গুলি আমাকে ধরিয়ে দিয়ে, আমার প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করতে সাহায্য করো।
দেখ কমিউনিস্ট লেলিন কিছু লোকের কাছে হিরো, আবার কিছু লোকের কাছে ভিলেন। আসলে এটা নির্ভর করে ব্যাক্তিগত আদর্শের ভিত্তিতে। যে কমিউনিজম কে আদর্শ হিসাবে মানে তার কাছে লেলিন হিরো, কিন্তু যে ইসলাম অথবা পুজিবাদে বিশ্বাস করে তার কাছে লেলিন, কার্ল মার্কস ভিলেন। এটা আদর্শের দন্দ, এটাকে সেভাবেই দেখতে হবে। কোন লোকের কাছে লেলিন ভিলেন হওয়ার অর্থ এই নয় যে ওই লোক লেলিন কে চোর, বাটপার, ভণ্ড বলে মনে করে। এর কারণ হোল ওই লোক টি লেলিন এর আদর্শ কে দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর মনে করে, তাই লেলিনের কাজ কে সে পছন্দ করে না।
ঠিক একই ভাবে প্রফেসর জাফর ইকবালের সেকুলারিজম কে আমি সহ্য করতে পারি না, যেহেতু এটা আমার আদর্শের সাথে সাঙ্ঘরসিক তাই তার সেই সব কাজের সমালোচনা করি যা এই আদর্শ প্রচারে কাজে লাগে; কিন্তু তার গনিত অলিম্পিয়াডের বিরোধী আমি নয়। আমার আদর্শ ( ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যাবস্থা) জানলে, প্রফেসর ইকবাল আমাকে পছন্দ করবে না এটা কোন সন্দেহ নেই; এতে আমার দুঃখ বোধও নেই।
এবার আসি মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গে। উনাকে আমার কাছে একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী(যে আদর্শের উপর ভিত্তি করে ভারত বর্ষ বিভক্ত হয়েছিল) মনে হয়, অবশ্য এই আদর্শের সাথে ইসলামের কিছুটা পার্থক্য আছে, কিন্তু মিল আছে অনেক। এই কারনে আমি তাকে পছন্দ করি। ঠিক একই কারনে যারা সেকুলার বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে তারা আবার মাহমুদুর রহমান কে ঘৃণা করে। শাহবাগ এ যারা জড়ো হয়েছিল তাদের সাথে মুসলিম জাতীয়তার ব্যাপক বিরোধ থাকায়, তারা মাহমুদুর রহমান কে পছন্দ করে না, এই জন্য কিন্তু আমি তাদের দোষ দেই না। কেননা এটা আদর্শিক দন্দ। যেমন মনে করো
তুমি কাপড় কিনতে গিয়েছ, তুমি যদি কাপড় কেজি তে পরিমাপ কর তবে রিডিং খুবই কম পাবে, কিন্তু ফুট বা মিটারে পরিমাপ করলে রিডিং অনেক বেশি পাবে। এখানে পার্থক্য হোল স্কেলে। তোমার রিডিং নির্ভর করছে স্কেলের উপর।
তুমি যদি কমিউনিস্ট হও তবে, লেলিন খুব ভালো মানুষ; আর যদি হও ইস্লামিস্ট তবে লেলিন বিশ্বের জন্য হুমকি। ঠিক একই ভাবে মাহ মুদুর রহমানকে বিচার করো। তুমি যদি সেকুলার হও তবে মাহ মুদুর রহমান হবে জঘন্য এক সাম্প্রদাইক মানুষ, কিন্তু তুমি যদি মুসলিম জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হও তাহলে মাহমুদুর রহমান হবে হিরো। আর ইস্লামিস্টদের কাছে মাহ মুদুর রহমান হিরো নয়, তবে অনেক ভালো মানুষ।
ফৌজদারি মামলার(চুরি, খুন, ডাকাতি, রেপ ইত্যাদির মামলা) আসামি সবার কাছে ঘৃণিত হয়; কিন্তু রাজনৈতিক মামলার আসামির ক্ষেত্রে তেমনটি হয় না। মাহমুদুর রহমান তো ফৌজদারি মামলার আসামি নয় যে সে সবার কাছে খারাপ হবে। তোমার কাছে সে খারাপ হলে সে যে আমার কাছে ভালো হতে পারবে না এমনটি কিন্তু নয়। আশা করি বোঝাতে পেরেছি।
(উল্লেখ্য, আমার সাথে যে তোমাকে এক মত হতেই হবে এমন কোন কারণ নেই, দুই জনের চিন্তার ফসল দুই ধরনের হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়)
[এরপর শিশির আর প্রশ্ন করে নাই]
বিষয়: বিবিধ
২১৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন