হয়ত স্ববিরোধী বাঙ্গালী মুসলিম জাতি আশরাফুলের উপর কঠোর শাস্তিই আরোপ করবে। ইতিহাস সে দিকেই ইঙ্গিত দেয়।
লিখেছেন লিখেছেন উসামা ইউসুফ ০৭ জুন, ২০১৩, ০৪:৫৮:২৪ বিকাল
আশরাফুল এই নামটি আমাদের কাছে একটি গর্বের নাম। কিন্তু এই ভাইটি লোভের ফাদে পড়ে ভুল করে ফেলায়, অনেকেই তার সমালোচনায় মুখর, কেউ কেউ পাড়লে আশরাফুলের মুন্ডুটাই চিবিয়ে খাই। কলেজে পড়ার সময় "দি প্যাট্রিয়ট" নামে একটি কবিতা পড়েছিলাম। তাতে একজন লোক তার দেশের লোকরা হত্যা করার জন্য বধ্যভূমিতে নিয়ে যাচ্ছিল, অথচ একবছর আগে তাকেই বরণ করার জন্য দেশে সাজ সাজ রব উঠেছিল। আমারদের ছোট ভাইয়ের মত আশরাফুলের ঠিক একই অবস্থা। আজ সে ক্রন্দনরত মুখে আমাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছে, আর আমরা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি এবং শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। অথচ ব্যাপারটি এমন হওয়াটা উচিৎ ছিল না। আমারা সাধারণত যা করি তা হল, আমার ভাই যদি আমার সাথে অন্যায় করে তবে যদি বিচারের ভার আমার উপর থাকে তবে আমি ক্ষমা করে দিব, কিন্তু যদি অন্য কেউ যদি হয় বিচারক এবং আমার ক্ষমা করার সুযোগ না থাকে তবে আল্লাহ্ কাছে দুয়া করব ভাই যেন নির্দোষ প্রমাণিত হয় বা সাজা যেন কম হয়। আশরাফুল আমাদের (বাংলাদেশীদের) কাছে ভাইয়ের মতই। কতদিন যে সে আমাদের আনন্দ দিয়েছে তার হিসাব নাই, তার ঋণ আমরা পরিশদ করব কিভাবে? সেই ভাই সম আশরাফুল যদি একদিন ভুল করেই বসে তবে কি তাকে আমাদের উচিৎ নয় তার গৌরবময় অতিত যা আমাদেরকে তার কাছে ঋণী করেছে তার জন্য ক্ষমা করে দেওয়া? আমাদের সেটাই করা উচিৎ যদি আমরা মহৎ হয়ে থাকি। তবে যেহেতু আন্তর্জাতিক আইন হিসাবে তার বিচার হবেই, তাই দুয়া করি সে যেন নির্দোষ প্রমাণিত হয় বা খুবই কম শাস্তি পায়। শেখ সাহেবের ভাষায় বলি " বাঙ্গালী জাতি যে ক্ষমা করতে পারে, তার নিদর্শন স্বরূপ আমরা আশরাফুলকে ক্ষমা করে দিলাম" কেননা সে আমাদেরই একজন। যদিও আমারা (বাংলাদেশিরা) কিছুটা স্ববিরোধী টাইপের। বাঙ্গালী জাতি ক্ষমা করতে পারে বলে খুনি ভিনদেশিদের (পাকিস্থানিদের) ক্ষমা করে দিতে পারি, কিন্তু সেই খুনিদের উদ্দেশ্যকে সমর্থন কারী আমাদের ভাইদের ফাঁসির নির্দেশ দেই । হাউ সেলুকাস! এই দেশে সবই সম্ভব। তাই আমার ভয় হয়, হয়ত বাংলাদেশিরা আশরাফুলের উপর কঠোর শাস্তিই আরোপ করবে, যদিও ভারতীয় বি এস এফ যারা প্রতিনিয়ত আমাদের ভাইদেরকে সীমান্ত এলাকাই হত্যা করছে, তাদের ব্যাপারে কিছু বলিত নাই-ই, বরঞ্চ যাদের হাত আমাদের ভাইদের রক্তে রঞ্জিত তাদেরকে আমাদের চরম বন্ধু বলে সম্বোধন করে সেই বন্ধুত্তের পুরস্কার দেওয়ার জন্য সদা ব্যাস্ত থাকি।
এমন আরও অনেক উদাহরণই দেওয়া যায়। কিছুদিন আগে এক কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি লাল রঙের ডিজিটাল ব্যানারে ভরে গেছে, যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কি মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে তার ছবি ও বন্দনায় পরিপূর্ণ। ভাবলে অবাক হতে হয় এই রবীন্দ্রনাথই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথই বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে বাঙ্গালী মুসলিমদের সারাজীবন হিন্দুদের পদাবনত করে রাখার জন্য আন্দোলনের রসদ যুগিয়েছিলেন। অথচ স্বাধীন বাঙ্গালী মুসলিমদের ভূমিতে বাঙ্গালী মুসলিমরাই রবীন্দ্রনাথের প্রসংসায় পঞ্চমুখ। এই দেশেরই প্রধানমন্ত্রি আবার বাংলাদেশকে এর জন্মের বিরধিতাকারির আদর্শে পরিচালনা করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আমারা স্ববিরোধীতায় সর্ব শ্রেষ্ঠ। আমারা প্রথম স্বাধীন হয়েছিলাম ১৯৪৭ সালে, যেটাকে বাঙ্গালী মুসলিমদের জন্য পৃথক দেশ তৈরির সবচেয়ে বড় ধাপ হিসাবে ধরা হয় কেননা এই অঞ্চলের অনগ্রসর মুসলিমরা কোন মতেই বিশাল ভারত থেকে পৃথক হতে পারত না একাকি। সেই বিশাল পদক্ষেপের স্বপ্নদ্রষ্টা, আধ্যাত্মিক গুরু ও বলা জেতে পারে, যেই ব্যাক্তি তাকে আমারা ভুলে গিয়েছি, শুধু তাই নয় ঘৃণাও করি বটে যে কারনে তার নামকে বাংলাদেশ থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। সেই বিসৃত ব্যাক্তির নাম আল্লাম ইকবাল। যে কারনে পাকিস্থানিদের ঘৃণা করা হয় তা হল ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, অথচ এই মুসলিমদের পৃথক ভূমির স্বপ্নদ্রষ্টা ইহলোক ত্যাগ করেন তার স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ার আগেই, ১৯৩৮ এ। এটাই বাঙ্গালী মুসলিম জাতির ট্রাজেডি, সে মনে রাখতে পারে না কে তার আপান আর কে তার পর, সে জানে না তার পরিচয়। কাকে যে সে কখন আপন করে বুকে টেনে নেই আবার কখন যে তাকে ছুড়ে ফেলে তা সে নিজেও জানে না।
বিষয়: বিবিধ
১০১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন