দরবেশ বাবা জেগে উঠলে........
লিখেছেন লিখেছেন ক্যরিয়ার স্পেশালিস্ট ১৫ মে, ২০১৪, ১২:৫৯:৫৫ দুপুর
সৌম্য দর্শন, নূরানী চেহারা আর শুভ্রতার সমুদ্র এই দরবেশ বাবার সাথে কি আপনাদের পরিচয় আছে? সাক্ষাৎ মুরিদ না হয়ে থাকলে আসুন পরিচিত হই এবং জানার চেষ্টা করি অজানা অনেক কিছু। আগেই বলে নেই, এ বাবা কিন্তু সে বাবা নন যার দরবার হতে কিছুদিন আগে র্যাব নামের কিলিং মেশিন দুই কোটি টাকা লুটে নিয়েছিল। রুশ ভাষায় একটা প্রবাদ চালু আছে, ’ইয়েছলি মোখামদ নিয়ে ইদয়ত ক গোরে, তো গোরা ইদয়ত ক মোখামেদু’। অর্থাৎ, মোহাম্মদ যদি পাহাড়ের কাছে না যায়, পাহাড় চলে আসে মোহাম্মদের কাছে‘। এই দরবেশ বাবা অনেকটা গল্পের মোহাম্মদের মত। কোন কিছু চাইতে উনাকে কোথাও যেতে হয়না, বরং চাওয়া মাত্র সবকিছু চলে আসে। এই যেমন ব্যাংকের ৫ হাজার কোটি টাকা! একটু দেরী করে আসছি সে প্রসঙ্গে।
ঢাকাস্থ ধানমন্ডির দুই নাম্বার রোডে বাবা যেদিন দরবার শরীফের গোড়া পত্তন করেন কেউ কি কল্পনা করেছিল একদিন এরই বগলের তলায় ন্যাংটা হয়ে নাচবে বাংলাদেশ নামের গোটা একটা দেশ? টাকায় যদি দেশ নাচানো যায় বাংলাদেশ হচ্ছে সেই দেশ যাকে নাচিয়ে সুরার তালে সাকি নাচানোর মাস্তি নিচ্ছেন এই বাবা। কথা চালু আছে রাজনীতির পুরুষ পতিতা হোসেন মোহম্মদ ইরাশাদ ক্ষমতার ভরা যৌবনে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে গোটা দুয়েক বাবার সাথে দেখা করতেন। আশির্বাদের পাশাপাশি তাদের কাছে জানতে চাইতেন সিদ্ধান্তের ভবিষ্যৎ। বাবারা নাকি চোখ বুজলেই দেখতে পেতেন পতিতার ইহকাল আর পরকাল। সবকিছু দেখা সম্ভব হলেও পতিতার পতিত পর্বটা নাকি দেখার তৌফিক হয়নি লেনাদেনার কারণে। দরবেশ বাবাদের লেনাদেনার ধরনটাই অন্যরকম, ক্লিন এন্ড ইনভিজিবল। ছবির নূরানী বাবার শুরুটা বোধকরি ১৯৭২ সালের কোন এক সুন্দর সকালে। বাংলাদেশ আমদানী-রফতানী কোম্পানীর ছায়াতলে যে শিশুর জন্ম আজ তার টার্নওভার মার্কিন ডলারে ৮৩৪ মিলিয়ন, বাংলাদেশি টাকায় ৬২ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন = ১ হাজার মিলিয়ন = ১০০ কোটি)। ৪০,০০০ কর্মচারী কর্মকর্তা নিয়ে এই বাবা ও তার সাগরেদ মুরিদের দল এ পর্যন্ত যে সম্পদ আহরণ করেছেন তার আনুমানিক মূল্য ১.৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বেক্সিমকো ফার্মা, বেক্সটেক্স, সাইনপুকুর সিরামিকস, জিএমজি এয়ারলাইনস,দ্যা ইনডিপেনডেন্ট, দ্যা ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন সহ দেশের ফার্মাসিউটিক্যালস্, টেক্সটাইল, সিরামিক, জুট, এভিয়েশন, মিডিয়া, ফাইন্যান্স, রিয়েল এস্টেট, নির্মান, এনার্জি সহ এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে বাবাজিরা বিনিয়োগ করেননি। অনেকে বলবেন পুঁজিবাদী সমাজে এমনটাই তো স্বাভাবিক; বাবাদের মত কেউ একজন ডালপালা বিস্তার করবেন, আর তার ছায়ার নীচে জীবন গড়ে তুলবে আমাদের মত ম্যাঙ্গোর দল। গররাজি হওয়ার মত কিছু নেই। আজকের পুঁজিবাদী বিশ্ব অন্যদের তুলনায় এভাবেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করে চলছে। তা হলে বাংলাদেশে এ নিয়ে কেন প্রশ্ন উঠবে? সমমায়িক বিশ্বের অর্থনৈতিক সাফল্যের ভিত্তি নিয়ে আমার মত খুদে ওয়াচডগেরই বা কেন চুলকানি হবে?
এবার আসা যাক ৫ হাজার কোটি টাকা প্রসঙ্গে। ব্যাপারটা আমার আপনার মত ম্যাঙ্গোদের মগজে সহজে হজম হওয়ার কথা নয়। সূক্ষ্ন, তীক্ষ্ন জটিল বুদ্ধি, সাথে মাথার উপর সীমাহীন আসমান না থাকলে এসব কাজকর্মে হাত দেয়া সম্ভব নয়। লেটার অব ক্রেডিট সম্পর্কে যাদের ধারণা সীমিত তাদের জন্যে সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তবে এ লাইনে আমিও যে এন এক্সপার্ট হেডমাস্টার তা নয়। ধরুন ভারত হতে কেউ একজন ১০০০ বোতল ফেন্সি আমদানী করার ইচ্ছা করল। প্রতিবেশি দেশে গিয়ে পণ্য নগদ মূল্যে ক্রয় করে তা সাথে করে নিয়ে আসার নাম সিরিয়াস ব্যবসা নয়, এক কথায় চোরাইকারবারি। যেমনটা করে থাকে গরু ব্যবসায়ীরা। সিরিয়াস ব্যবসার জন্যে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে হবে। ফ্যান্সী কোম্পানীর লেটার অব ইনটেন্ট নিয়ে স্থানীয় ব্যাংক যেতে হবে। ভাল সম্পর্ক থাকলে ব্যাংক লো মার্জিনে এলসি খোলায় রাজী হবে। ধরে নিলাম ব্যাংক ২০%'এ রাজী। অর্থাৎ ২০ হাজার টাকা জমা করলে স্থানীয় ব্যাংক ভারতীয় কোম্পানিকে মাল পাঠানোর তাগাদা দেবে। ফেন্সী কোম্পানী বাংলাদেশের ধ্বজভঙ্গ ব্যাংককে বিশ্বাস না করলে আর্ন্তজাতিক কোন ব্যাংককে গ্যারান্টি দিতে হবে মাল পাঠানো সম্পূর্ণ হলে বকেয়ার সব অংক ফেরত পাওয়ার যাবে। ভারতীয় কোম্পানী মাল পাঠাবে, স্থানীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সে মাল কাস্টম ক্লিয়ারেন্স হবে এবং বাকি ৮০ হাজার সুদে আসলে জমা করার পর স্থানীয় ব্যাংক মালামাল গ্রাহকে বুঝিয়ে দেবে। সিম্পল এজ দ্যাট। যদিও ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে দেশ হতে টাকা সরানোর গোপন মন্ত্রটাও এই এলসি ব্যবসার অলিগলিতে ওৎ পাতে থাকে। এলসি সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা পেয়ে থাকলে এবার আসুন দরবেশ বাবার ৫ হাজার কোটি টাকার ধান্ধায় আসি।
লোকাল এলসির চেহারা প্রায় সবটাই ফেন্সী এলসির মত। পার্থক্য শুধু ক্রেতা ও বিক্রেতা দুজনেই বাংলাদেশি এবং জড়িত ব্যাংক গুলোও স্থানীয়। দরবেশ বাবার দুই কোম্পানী নিজেদের ভেতর বুঝা পরার মাধ্যমে লোকাল এলসির ধান্ধায় ফেলে বাংলাদেশের ৫ ব্যাংক হতে ৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিক্রেতা বেক্সটেক্স আর ক্রেতা বেক্সিমকো লিমিটেড। বেক্সটেক্সের ব্যাংক সোনালী আর বেক্সিমকোর জনতা, রূপালী, অগ্রনী আর বেসরকারী ব্যাংক এক্সিমকো ব্যাংক। এক কোম্পানী অন্য কোম্পানীর কাছ হতে সূতা কেনা বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার লোকাল এলসি খুলে। সোনালী ব্যাংক টাকা দেয় এবং বাকি ব্যাংক এর নিশ্চয়তা দেয়। ৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ বেক্সটেক্সের একাউন্টে জমা হয়, কাগজে কলমে মাল হাতবদল হয়, কিন্তু এলসির বাকি টাকা (হয়ত ০ % মার্জিনে খোলা হয়েছিল) পরিশোধ করতে অস্বীকার করে বেক্সিমকো লিমিটেড। সরকারী ব্যাংক গুলো এ নিয়ে নিজেদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে, যার সবটাই ছিল মেকি ও সাজানো। এরা একে অপরের যোগসাজোশে এ টাকা অপহরণ করেছে, এবং বিনিয়োগ করেছে শেয়ার মার্কেটে। এই সেই শেয়ার বাজার যার জরায়ুতে দরবেশ বাবার জন্ম। এই সেই বাজার যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ম্যানিপুলেশন নামক ফটকাবাজির মাধ্যমে আমার আপনার মত ম্যাঙ্গো পিপলদের রাস্তায় বসাচ্ছে। এতকিছুর পরও দরবেশ বাবাদের দরবার শরীফের শানশওকত কেন সরকারের নজরে আসে না, কেনই বা এদের ক্রসফায়ারের বধ্যভূমিতে নেয়া হয়না সে রহস্য উন্মোচন করতে আসুন কিছুটা পরিশ্রম করি এবং চলে যাই বাবাদের দরবারে।
রাজনীতি করতে টাকা লাগে। কোটি কোটি টাকা। কোত্থেকে আসে এসব টাকা আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি? সাধারণ সদস্যদের সল্প অংকের নিয়মিত চাঁদায় বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি যে সম্ভব নয় তা আমার মত ইতর ম্যঙ্গোরও বুঝতে অসুবিধা হয়না। অন্য কোন সোর্স হতে যোগান দেয়া হয় প্রয়োজনীয় অর্থ। এবার আসুন দরবেশ বাবার শুভ্র দাড়ি গুলো একটা একটা করে উপড়ে ফেলি। পরনের আলখেল্লা ছুড়ে ফেলে নেংটা করি সৌম্য কান্তি চেহারার এই অতিমানবকে। কেবল তখনই জ্বল জ্বল করে উঠবে বাবার আসল চেহারা। এক কথায় বাংলাদেশি রাজনীতির আসল চেহারা। বাবার দরবারে কেবল সোনালী, রূপালী, অগ্রনী আর সোনালী ব্যাংক নামক লুটেরাদের আনাগোনা হয়না, এখানে আনাগোনা হয় আরও অতিমানবদের। কেবল ৫ হাজার কোটি নয় এখানে লুট হয় বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা। আর এর সাথে জড়িত লুটেরাদের পায়েই আমাদের দিতে হয় দেশপ্রেমের পুজা, মুক্তিযুদ্ধের পুজা, গণতন্ত্রের পুজা।
বিষয়: বিবিধ
২৭৬৭ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন