বসকে যেভাবে তেল দেবেন ; ; ; ; (((সফলতার উৎকৃষ্ট পন্থা )))
লিখেছেন লিখেছেন ক্যরিয়ার স্পেশালিস্ট ২০ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:১৫:১৯ দুপুর
তেল শব্দটি আপত্তিজনক। আসলে কার্টেসিকেই আমরা তেল বলে এর নান্দনিকতা খর্ব করি। যাইহোক আলোচনার সুবিধার্থে তেল শব্দটিই ব্যবহার করবো। পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে তেল পছন্দ করে না। আপনি আমি নিজেও তেল পছন্দ করি। কাজেই বসের তেল প্রত্যাশা দোষের কিছু নয়।
আপনার বস একটু গম্ভীর হবে। ভদ্রলোক হলে শীতল হাসি হাসবে, ইতর হলে মুখটি কনস্টিপেটেড করে রাখবে; কিন্তু আপনি জানেন দুজনেই তেল পছন্দ করে। একজন সূক্ষতেল অন্যজন স্থূলতেল।
বসকে দেখে যতই সফল মনে হোকনা কেন; তার একটি লুকানো দুঃখ আছে। এই দুঃখের কারণ খুঁজে বের করলেই তেলের মাত্রা নির্ধারণ সহজ হয়। বস যদি আঁতেল হয় তাহলে বসের দুঃখ একটাই, কেন খ্যাতিমান হতে পারলেন না। বস যদি সহজ সরল হয় বুঝবেন, তার দুঃখ তিনি কেন আঁতেল হতে পারলেন না। আঁতেল বসের বক্তৃতার প্রশংসা করে আপনি তার মন জিতে নিতে পারেন। অ-আঁতেল বসের ক্ষেত্রে খাটুনী একটু বেশী, তাকে বক্তৃতাটাই লিখে দিতে হবে। বস পশ্চিমা হলে পরিশ্রম আরো বেশী। তার সঙ্গে সাইক্লিং বা হাইকিং-এ বের হতে হবে। কোন প্রশংসা করার দরকার নাই। আপনি তরুণ বয়েসেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন আর বসের চেহারায় ক্লান্তির ছাপ নাই, এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করলেই সাদার মন ভিজে কাদা হয়ে যাবে।
বস যদি আরো জটিল কেস হয়; যেমন রাতে ঘুমোতে পারেনা, স্ত্রীর বকাঝকায় অতিষ্ট, ছেলের ইয়াবা সেবনে আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত; তাহলে সকালের দিকে উনার ধারে কাছে না যাওয়াই ভালো। লাঞ্চের পর উনি যখন ঝিমুচ্ছেন, তখন হুমায়ূন আহমেদের হিমু সিরিজের একটা উপন্যাস দিয়ে এলে; পরদিন থেকে বস আপনার উপর মানসিক ভাবে নির্ভরশীল হয়ে উঠবে। কথা বলতে চাইবে। নিজের কোন দুঃখ না থাকলেও গল্প বানিয়ে বসের চেয়েও নিজেকে দুঃখী হিসেবে তুলে ধরতে হবে। আপনাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হবে না। বার্ষিক মূল্যায়নপত্রে ১০০তে ৯৯ পেতে থাকবেন নিয়মিত।
এখন বাস্তব উদাহরণে চলে আসি। বস যদি শেখ হাসিনা হন; তাহলে আপনি কী করবেন? কিছুইনা উনি যখন কাঁদবেন; আপনাকেও তখন কাঁদতে হবে। উনি যখন খালেদাকে নিয়ে রসিকতা করবেন, আপনাকে তখন হাসতে হাসতে চোখের পানি বের করে ফেলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী মুখস্ত থাকলে আর জয়ের শিক্ষাদীক্ষার প্রশংসা সূক্ষ্মভাবে করতে পারলে, আর কোন সমস্যা নাই।
শেখ হাশিনা বস হলে কী করবেন? কঠিন ব্যাপার। ঐখানে হাসি-কান্নার দাম নাই। আপনাকে শখের ফটোগ্রাফার হয়ে যেতে হবে। বেশ কিছু ভালো পোট্রেট ছবি তুলে দিতে পারেন; উনার মন পাওয়া সহজ হবে। আর সুযোগ পেলে উনার নাতনীদের রেজাল্টের প্রশংসা করলে; আপনি প্রত্যেকদিন একটু দেরী করে অফিসে আসতে পারবেন। ভুল করেও তারেক ভাইয়ার প্রশংসা করতে যাবেন না। উনি হাতেনাতে ধরে ফেলবেন।
জয় আপনার বস হলে আপনার পরিশ্রম কম। ফেসবুকে উনার বাণী শেয়ার করলেই উনি খুশী। শুধু বলবেন, আমার কাছে তথ্য নাই; আপনার কাছে কী আছে ভাই?
কিন্তু বস তারেক ভাইয়ার মন পেতে আপনাকে লন্ডনে যেতে হবে। উনার বোরিং লেকচার শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকাতে হবে। উনার কিন্ডারগার্টেন প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিতে হবে। উনি পছন্দ করে ফেললে পরদিন সকালে উনার সঙ্গে বাজারে যেতে হবে। শপিং মলে নেমেই উনি মেরুদন্ডে ব্যথা অনুভব করছেন এমন একটি ভাব করবেন। তখন আপনাকেই ট্রলি ঠেলে চাল-ডাল-আটা গাড়ীতে তুলতে হবে, এপার্টমেন্টে পৌঁছে দিতে হবে।
আপনার বস অধ্যাপক ইউনুস হলে বুকের ছাতি ফুলিয়ে হাঁটবেন। জানিয়ে দেবেন উনি নোবেল পাওয়ার পর থেকেই আপনার এই অবস্থা।
তো মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া গেলো বসকে তেল দেবার উত্তরাধুনিক কিছু প্রক্রিয়ার। এই আলোচনাকে ঋদ্ধ করার জন্য ড মাহফুজুর রহমান, সালমান এফ রহমান বা আপনার পরিচিত কোন বসকে কোন প্রক্রিয়ায় তেল দেয়া যায় তা মন্তব্যের ঘরে লিখুন। তৈল-শিল্পের উতকর্ষ সাধনে আপনার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগান। আপনার কর্মজীবন আনন্দমুখর হোক।
বিষয়: বিবিধ
২১৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন