ডাকসু’র জিএস থেকে জামায়াতের আমির..... "সংক্ষিপ্ত জীবনবৃতান্ত"

লিখেছেন লিখেছেন ক্যরিয়ার স্পেশালিস্ট ১৬ জুলাই, ২০১৩, ০৪:২১:৪৩ বিকাল







গোলাম আযমের জন্ম ১৯২২ সালের ৭ই নভেম্বর ঢাকার পুরনো অংশে লক্ষ্মীবাজার এলাকায় নানার বাড়িতে। তার দাদার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও গ্রামে।তার ছেলে আব্দুল্লাহ-হিল আমান আজমী জানিয়েছেন, তার বাবার শিক্ষাজীবনের বড় অংশ কেটেছে ঢাকায়।

তবে গোলাম আযম অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামের স্কুলে পড়ার পর ঢাকায় এসে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্সে ভর্তি হলেও তা শেষ করতে পারেননি।আজমী বলেছেন, ‘গোলাম আযম তখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং ডাকসু’র জিএস থাকার কারণে অনার্স শেষ করতে না পেরে ডিগ্রি পাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন’।

গোলাম আযম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু’র জিএস ছিলেন ১৯৪৯ সালে। তখন ডাকসু’র ভিপি ছিলেন অরবিন্দ বোস।

সে সময় ছাত্রদের পক্ষ থেকে ঢাকা সফররত পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বাংলা ভাষার দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন গোলাম আযম। তার এই ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে।

সে সেময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় বামপন্থী রাজনীতিক বদরউদ্দিন উমর পরে এ নিয়ে গবেষণাও করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘হিন্দু কোনো ছাত্রকে দিয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছের স্মারকলিপি পেশ করা হলে ,তার ভিন্ন ব্যাখ্যা হতে পারে। সে কারণে তখন ডাকসু’র ভিপি অরবিন্দ বোসকে বাদ দিয়ে জিএস গোলাম আযমকে দিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছিল’।

কয়েক বছরের কর্মজীবন

গোলাম আযম কর্মজীবনের শুরু ১৯৫১ সালে, রংপুরের কারমাইকেল কলেজে শিক্ষক হিসেবে।

সেই সময়ের তার ছাত্র আনিসুল হক, রংপুরের অন্য একটি কলেজের সাবেক শিক্ষক। হক বলেছেন, শিক্ষক থাকার সময় গোলাম আযম ক্লাসের বাইরে ছাত্রদের তেমন সম্পর্ক রাখতেন না।

তখন রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন না। কিন্তু তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে বক্তব্য তুলে ধরতেন।

তাবলীগ জামাত থেকে রাজনীতিতে

তবে শিক্ষকতা করার সময়ই এক পর্যায়ে গোলাম আযম, সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন ১৯৫৪ সালে।

আর ১৯৫৬ সালে চাকরি ছেড়ে সরাসরি জামায়াতের রাজনীতিতে নেমে পড়েন।দলটির সমমনা একজন ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আব্দুল হান্নান বলছিলেন, গোলাম আযম প্রথমে তমুদ্দন মজলিশের সাথে জড়িত ছিলেন এবং পরে তাবলীগ জামাতে সক্রিয় হয়েছিলেন।

অবশ্য জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ সম্পাদক হয়ে মূল নেতৃত্বে এসেছিলেন। গোলাম আযম প্রথম, জামায়াতের আমির হয়েছিলেন ৬৯ সালে।

পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযম ৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে ২২ নভেম্বর ঢাকা ছেড়ে পাকিস্তান যান।

১৯৭৮ সালে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে ঢাকায় আসেন অসুস্থ মাকে দেখার কথা বলে। তবে তিনি আর ফিরে যাননি।

প্রায় এক দশক পর ৯১ সালের ২৯শে ডিসেম্বর যখন গোলাম আযমকে জামায়াতের প্রকাশ্য আমির ঘোষণা করা হয়, তখন জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে বড় ধরণের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।

সেই আন্দোলনের অন্যতম একজন নেতা শাহরিয়ার কবির বলছিলেন, ৯২ সালের ২৬শে মার্চ গণআদালত করে গোলাম আযমসহ কয়েকজনের প্রতীকী বিচারও করা হয়েছিল।

আন্দোলনের মুখে নাগরিকত্বের প্রশ্নে গোলাম আযমকে জেলে যেতে হয়েছিল।

জেনারেল এরশাদের পতনের পর ৯১’র নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য অন্য দলের সমর্থন প্রয়োজন ছিল, আর সমর্থনের বিনিময়ে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব দেয়ার ব্যাপারে এক অনানুষ্ঠানিক সমঝোতা হয়।

আব্দুল্লাহ-হিল আমান আজমী বলেছেন, ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হয়ে ৯২ সালে মার্চ মাসে গোলাম আযমকে গ্রেফতার করেছিল। সেই গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বিদেশী নাগরিক হয়ে দেশের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল’।

আজমী আরো জানিয়েছেন, নাগরিকত্বের প্রশ্নে হাইকোর্টে জামায়াত রিট মামলা করে এর পক্ষে রায় পেয়েছিল।

কিন্তু তখন সরকার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়েছিল।

সুপ্রিমকোর্টে আপিল বিভাগ থেকে নাগরিকত্ব ফিরে পেয়ে ১৬ মাস জেল খাটার পর গোলাম আযম বেরিয়ে এসেছিলেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে গোপনে এবং প্রকাশ্যে জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব পালন করে গোলাম আযম অবসর যান ২০০০ সালে।

এখন ৯১ বছর বয়সে এসে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি হয়ে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে তিনি গ্রেফতার রয়েছেন।





গোলাম আযমের জন্ম ১৯২২ সালের ৭ই নভেম্বর ঢাকার পুরনো অংশে লক্ষ্মীবাজার এলাকায় নানার বাড়িতে। তার দাদার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও গ্রামে।তার ছেলে আব্দুল্লাহ-হিল আমান আজমী জানিয়েছেন, তার বাবার শিক্ষাজীবনের বড় অংশ কেটেছে ঢাকায়।

তবে গোলাম আযম অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামের স্কুলে পড়ার পর ঢাকায় এসে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্সে ভর্তি হলেও তা শেষ করতে পারেননি।আজমী বলেছেন, ‘গোলাম আযম তখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং ডাকসু’র জিএস থাকার কারণে অনার্স শেষ করতে না পেরে ডিগ্রি পাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন’।

গোলাম আযম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু’র জিএস ছিলেন ১৯৪৯ সালে। তখন ডাকসু’র ভিপি ছিলেন অরবিন্দ বোস।

সে সময় ছাত্রদের পক্ষ থেকে ঢাকা সফররত পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বাংলা ভাষার দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন গোলাম আযম। তার এই ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে।

সে সেময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় বামপন্থী রাজনীতিক বদরউদ্দিন উমর পরে এ নিয়ে গবেষণাও করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘হিন্দু কোনো ছাত্রকে দিয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছের স্মারকলিপি পেশ করা হলে ,তার ভিন্ন ব্যাখ্যা হতে পারে। সে কারণে তখন ডাকসু’র ভিপি অরবিন্দ বোসকে বাদ দিয়ে জিএস গোলাম আযমকে দিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছিল’।

কয়েক বছরের কর্মজীবন

গোলাম আযম কর্মজীবনের শুরু ১৯৫১ সালে, রংপুরের কারমাইকেল কলেজে শিক্ষক হিসেবে।

সেই সময়ের তার ছাত্র আনিসুল হক, রংপুরের অন্য একটি কলেজের সাবেক শিক্ষক। হক বলেছেন, শিক্ষক থাকার সময় গোলাম আযম ক্লাসের বাইরে ছাত্রদের তেমন সম্পর্ক রাখতেন না।

তখন রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন না। কিন্তু তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে বক্তব্য তুলে ধরতেন।

তাবলীগ জামাত থেকে রাজনীতিতে

তবে শিক্ষকতা করার সময়ই এক পর্যায়ে গোলাম আযম, সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন ১৯৫৪ সালে।

আর ১৯৫৬ সালে চাকরি ছেড়ে সরাসরি জামায়াতের রাজনীতিতে নেমে পড়েন।দলটির সমমনা একজন ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আব্দুল হান্নান বলছিলেন, গোলাম আযম প্রথমে তমুদ্দন মজলিশের সাথে জড়িত ছিলেন এবং পরে তাবলীগ জামাতে সক্রিয় হয়েছিলেন।

অবশ্য জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ সম্পাদক হয়ে মূল নেতৃত্বে এসেছিলেন। গোলাম আযম প্রথম, জামায়াতের আমির হয়েছিলেন ৬৯ সালে।

পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযম ৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে ২২ নভেম্বর ঢাকা ছেড়ে পাকিস্তান যান।

১৯৭৮ সালে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে ঢাকায় আসেন অসুস্থ মাকে দেখার কথা বলে। তবে তিনি আর ফিরে যাননি।

প্রায় এক দশক পর ৯১ সালের ২৯শে ডিসেম্বর যখন গোলাম আযমকে জামায়াতের প্রকাশ্য আমির ঘোষণা করা হয়, তখন জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে বড় ধরণের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।

সেই আন্দোলনের অন্যতম একজন নেতা শাহরিয়ার কবির বলছিলেন, ৯২ সালের ২৬শে মার্চ গণআদালত করে গোলাম আযমসহ কয়েকজনের প্রতীকী বিচারও করা হয়েছিল।

আন্দোলনের মুখে নাগরিকত্বের প্রশ্নে গোলাম আযমকে জেলে যেতে হয়েছিল।

জেনারেল এরশাদের পতনের পর ৯১’র নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য অন্য দলের সমর্থন প্রয়োজন ছিল, আর সমর্থনের বিনিময়ে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব দেয়ার ব্যাপারে এক অনানুষ্ঠানিক সমঝোতা হয়।

আব্দুল্লাহ-হিল আমান আজমী বলেছেন, ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হয়ে ৯২ সালে মার্চ মাসে গোলাম আযমকে গ্রেফতার করেছিল। সেই গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বিদেশী নাগরিক হয়ে দেশের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল’।

আজমী আরো জানিয়েছেন, নাগরিকত্বের প্রশ্নে হাইকোর্টে জামায়াত রিট মামলা করে এর পক্ষে রায় পেয়েছিল।

কিন্তু তখন সরকার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়েছিল।

সুপ্রিমকোর্টে আপিল বিভাগ থেকে নাগরিকত্ব ফিরে পেয়ে ১৬ মাস জেল খাটার পর গোলাম আযম বেরিয়ে এসেছিলেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে গোপনে এবং প্রকাশ্যে জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব পালন করে গোলাম আযম অবসর যান ২০০০ সালে।

এখন ৯১ বছর বয়সে এসে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি হয়ে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে তিনি গ্রেফতার রয়েছেন।

বিষয়: বিবিধ

২১৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File