কানাডার রাষ্ট্রীয় টিভির প্রতিবেদন ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি

লিখেছেন লিখেছেন ক্যরিয়ার স্পেশালিস্ট ২৪ মে, ২০১৩, ০৪:০৭:২৫ বিকাল



অলিউল্লাহ নোমানঃ প্রিয় মাতৃভূমি নিয়ে আজ সবাই উদ্বিগ্ন। প্রিয় মাতৃভূমির ভবিষ্যত্ রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেবে সে হিসাব-নিকাশ করছেন সবাই। আগামী নির্বাচন কি আদৌ সব দলের অংশগ্রহণে হবে? এ প্রশ্নটি সবার মনে উঁকি দেয়। নাকি আবার একতরফা নির্বাচনে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে যাবে, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে সবার মধ্যেই। আর এটা একেবারেই স্বাভাবিক। সরকার এই মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসেও বিরোধী দলের ওপর কঠোর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। সর্বশেষ সবচেয়ে নিরীহ কর্মসূচি মানববন্ধনও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এখন শুধু বাকি রইল প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অফিসে তালা দেয়া। জামায়াতে ইসালামীর অফিসে আরও দুই বছর আগেই তালা দেয়া হয়েছে। বিএনপির অফিসে তালা দিতে পারলেই হলো। সরকার চাইলে যে কোনো সময় দিতে পারবে। এটা প্রতিরোধ করার মত ক্ষমতাও এখন আর বিরোধী দলের নেই।

বিরোধী দলের অফিসে তালা দিলে সরকার বিরোধী কথা বলার আর কোনো জায়গা থাকবে না। সবাই নীরবে ঘরে বসে বসে শুধু ভাববেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা একরকম ঘরে বসেই গেছেন। জনসভা ছাড়া আর গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয় ছাড়া রাজপথে নেতাদের তেমন দেখা যায় না। হরতাল ডাকলে কেউ ঘর থেকে বের হন না। নেতারা বের না হলে কর্মীরা তো আর বের হওয়ার কথা নয়। কর্মীরা যখন দেখে নেতা মাঠে নেই তখন হতাশ হন। হতাশার আগুন জ্বলে কর্মীদের মনে। কর্মীদের মনে তখন প্রশ্ন জাগে, নেতা এমপি হবেন, মন্ত্রী হবেন তিনিই যখন রাজপথে নেই আমরা কেন থাকব! শুধু তাই নয়, কোনো কোনো জেলা ও উপজেলা সভাপতি রয়েছেন যারা হরতাল-অবরোধে কর্মীদের সতর্ক করে দেন রাস্তায় যাতে না নামেন। ওই উপজেলা ও জেলা সভাপতির অধীনস্থ নেতা-কর্মীদের বলে দেয়া হয় এখানে রাস্তায় মিটিং-মিছিল করলে সরকারের পতন হবে না। সুতরাং এখানে কেউ রাস্তায় নামার দরকার নেই।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারে যেমন কঠোর, রাজনীতিতেও সরব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে প্রতিদিনই বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে বিরোধী দলের আন্দোলন, ৪ মে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার আলটিমেটামকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। বিরোধীদলীয় নেতা সেদিন মতিঝিলের জনসভা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এই ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে আরও অনেক আগেই। এর মধ্যে হরতাল ডেকেও আবার প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে আর কোনো কর্মসূচি নেই। এজন্যই হয়তো ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামকে খোঁচা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখছেন। বিরোধী দলের কোনো পর্যায় থেকে প্রধানমন্ত্রীর এসব খোঁচার রাজনৈতিক জবাব দেয়া হচ্ছে না। বিরোধী দলের চরিত্রেও এটা নেই। বিরোধী দলের সব কথাই বলতে হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। আওয়ামী লীগের সুবিধা হচ্ছে শেখ হাসিনা যেই বক্তব্য দেন, দলের সব পর্যায় থেকে তার প্রতিধ্বনী করা হয়। কিন্তু বিরোধী দলের সেই রেওয়াজ নেই। বিরোধী দলের প্রত্যেক নেতাই যেন নিজস্ব রাজনীতি করেন। বক্তব্য দেন নিজের মতো করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও কথায় কথায় বিরোধীদলীয় নেতার সন্তানদের কটাক্ষ করেন। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনকে আক্রমণ করে কথা বলেন। কিন্তু সরকারের প্রায় সাড়ে চার বছরে হাওয়া ভবনের কোনো দুর্নীতি কিন্তু প্রমাণ করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লগি-বৈঠার আন্দোলনের ফসল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের জরুরি অবস্থার সরকারও হাওয়া ভবনকে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু এতসব আক্রমণের পরও কার্যকর কোনো রেজাল্ট জাতি এখনও দেখতে পায়নি। জাতির সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি এই হচ্ছে হাওয়া ভবনের দুর্নীতি। আঙুল দিয়ে দেখানোর মতো কোনো নজির নেই হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। তারপরও শেখ হাসিনা এখনও সুযোগ পেলেই হাওয়া ভবন এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সন্তানদের আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। আর এই বক্তব্যের সানাই বাজান আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদাহরণ টানেন মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের জরুরি অবস্থার সরকারের। বলার চেষ্টা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়েছিলেন। তার দুই সন্তানকে পাঠিয়েছেন নির্বাসনে। উত্তম-মাধ্যম দিয়ে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বলা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল ছিল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার। কিন্তু তাকেই জরুরি অবস্থার সরকার রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ব্যক্তি হিসেবে প্রেসনোট জারি করা হয়েছিল। জরুরি অবস্থার জারির পর শেখ হাসিনা নিজে গর্ব করে বলেছিলেন, এটা তার আন্দোলনের ফসল। রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ব্যক্তি হিসেবে প্রেসনোট জারি করা হলেও শেখ হাসিনার সঙ্গেই তারা আঁতাত করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। এই সরকারের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমেই তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। আরও বলে থাকেন ৮ জনকে ডিঙ্গিয়ে মইনউদ্দিনকে সেনাপ্রধান করেছিলেন খালেদা জিয়া। ফখরুদ্দীনকে বিশ্বব্যাংকে থেকে এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বানিয়েছিলেন। তবে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে শেখ হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন সেটা প্রধানমন্ত্রী বলেন না।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের দুর্নীতির বিষয় ধরা পড়েছে কানাডা সরকারের হাতে। এই দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্ প্রকল্প পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ করা ঋণ বাতিল করেছে। এতে পদ্মা সেতু আর হচ্ছে না। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত্কার নেয়া হয়। যদিও এই সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারের দুর্নীতির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং অস্বীকার করেছেন। তবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানসহ অন্যরা কীভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। সৈয়দ আবুল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রীর অলিখিত ক্যাশিয়ার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।

এখানে প্রশ্ন রাখতে চাই, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে কী এরকম কোনো দুর্নীতির একটি প্রমাণও রয়েছে? বা সিকি পরিমাণ দুর্নীতির কোনো প্রমাণ গত সাড়ে ৬ বছরে জরুরি অবস্থার সরকার এবং বর্তমান সরকার মিলে বের করতে পেরেছে? তারপরও হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে এখনও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্নীতির প্রমাণ হাজির করার পরও কিন্তু সেরকম কোনো প্রচারণা নেই। পদ্মা সেতুর এই দুর্নীতির মতো যদি হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে সামান্য পরিমাণ প্রমাণ থাকত তাহলে কী পরিমাণ আওয়াজ উঠত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে! তখন হয়তো বিএনপির পক্ষে আর একদিনও ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হতো না। আওয়ামী লগি- বৈঠার তাণ্ডবে এবং আওয়ামী মিডিয়াগুলোর প্রচারণায় একদিনও ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হতো না বিএনপির। দুর্নীতির প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও হাওয়া ভবনকে দুর্নীতির খুঁটি হিসেবে জাতির সামনে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের কায়দায় প্রচারণার মাধ্যমে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বাম জোটের এ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী পরিবারের এতবড় দুর্নীতির পরও তারা বড় গলায় কথা বলছেন। আওয়ামী মিডিয়াগুলো এসব বিষয়ে নীরব।

বিএনপির অফিস থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে ১৫৮ জনকে এক সঙ্গে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে কত লোক নিহত হয়েছেন এবং কত লোক আহত হয়েছেন সেটা নিয়ে গোজবের শেষ নেই। শুধু ফেবু্রয়ারি মাসে ১৭৮ জনকে পুলিশ রাজপথে গুলি করে হত্যা করেছে। পুলিশের রিমান্ডে নির্যাতনের রেকর্ড অতিক্রম হয়েছে আরও বহু আগে। গুম করা হয়েছে ইলিয়াস আলীর মতো রাজনৈতিক নেতাসহ আরও অনেক রাজনীতিককে। ক্ষমতায় আসার পরপরই পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৫৭ জন সেনা অফিসার। এত রক্তের দাগ এই সরকারের হাতে, বিশ্ব রেকর্ড করা দুর্নীতির অভিযোগ এই সরকারের বিরুদ্ধে। তার পরও ক্ষমতার শেষ বছরে এসে গোটা জাতিকে একেবারে জিম্মি করে ফেলেছে। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই গ্রেফতার, রিমান্ডে নির্যাতন। জামিন পেলেও জেল গেট থেকে আবারও গ্রেফতার। এই নিবন্ধ লিখতে বসার আগে পত্রিকাগুলোর ওয়েবসাইট সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে ৫৩ জনকে জেল গেট থেকে ধরে নিয়ে গেছে সাদা পোশাকধারী পুলিশ। আইনকানুনের কোনো বালাই নেই। ধরে নিয়ে যেতে পারলেই হলো। আদালতে হাজির করলেই রিমান্ড পাওয়া যায়। এত সবের লক্ষ্য একটাই—যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় সরকার। যে কোনো ছুতা-নাতায় জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার গুজবও বাতাসে ভাসছে। এর উদাহরণ রয়েছে নিকট অতীতে। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের জরুরি অবস্থার সরকার কোনো সাংবিধানিক সরকার ছিল না। তারা গায়ের জোরে দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার যদি আরও কয়েক বছর জরুরি অবস্থার মধ্যে ক্ষমতায় থেকে যায় অসুবিধা কোথায়! এখন যেভাবে রাজপথে কর্মসূচি নিষিদ্ধ করেছে, ভবিষ্যতেও এরকম নিষিদ্ধ থাকবে। এখন যে রকম করে বিরোধী দলের নেতারা রাস্তায় বের হচ্ছেন না, তখনও বের হবেন না। বর্তমান লক্ষণে বোঝা যায় ভবিষ্যতে আরও নির্বিঘ্নে ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারবে তারা।

সরকারের অনেক দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেয়ায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে দৈনিক আমার দেশ-এর ছাপাখানায়। মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানে রাতের আঁধারে ঘুমন্ত এবং নামাজ-জিকিররত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযানের গণহত্যার চিত্র ধারণ করায় বন্ধ করা হয়েছে দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন চ্যানেল। সরকারের দুর্নীতি এবং হত্যাযজ্ঞ নিয়ে নীরব আওয়ামী মিডিয়াগুলো। নীরব কথায় কথায় যেই হাইকোর্টে মানুষদের তলব করে অপমান করা হতো সেই উচ্চ আদালত। সবাই যেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী-বাম জোটের তল্পিবাহক হয়ে গেছেন।

গত কয়েক বছর থেকে সুপ্রিমকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে সরকারবিরোধী আইনজীবী প্যানেল বিজয়ী হচ্ছেন। বার কাউন্সিলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন সরকারবিরোধী আইনজীবী প্যানেল। তাতে কী কোনো লাভ আছে? আদালতের অনিয়ম ও সরকারের ভাষায় কথা বলার বিরুদ্ধে কি কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছেন তারা! নামের সঙ্গে পদবী ব্যবহার করছেন। বিজয়ের সাফল্য এতটুকুই। শুধু তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যায়। আমরা সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে ও বার কাউন্সিলে বিজয়ী হয়েছি। যারা বিজয়ী হন তারা নামের সঙ্গে পদবী ব্যবহার করেন। নিজের বায়োডাটায় পদবী যোগ হয়। অথচ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তারা উচ্চ আদালতে আন্দোলনের নামে কি-না করেছেন। প্রধান বিচারপতির এজলাস থেকে শুরু করে ভাংচুর করা হয়েছে আদালত ভবন। শেখ হাসিনার দুর্নীতির মামলা শুনানি করতে গেলে আদালতে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে হট্টগোল করা হয়েছে। এখন খুনের মামলার প্রধান আসামিকে বিচারপতি করা হয়, বিদেশে টাকা পাচারের জন্য অভিযোগ ওঠার পরও ৫০ জনকে ডিঙ্গিয়ে আপিল বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। তারপরও কার্যকর কোনো প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে না। এখানেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির পার্থক্য।

পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারের পর দুদকের দুজনকে কানাডায় পাঠানো হয়েছে। আমার এ লেখা প্রকাশের সময় তারা হয়তোবা কানাডায় থাকবেন। যাদের কানাডায় পাঠানো হয়েছে তারা দুজনই হলেন কট্টর আওয়ামী লীগার। এদের একজন হলেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। আরেকজন হলেন দুদকের আওয়ামী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। আনিসুল হক কখনও কখনও শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার হিসেবে ভূমিকা রাখেন সুপ্রিমকোর্টে। দুদকের যেই কর্মকর্তা তার সঙ্গে কানাডায় গেছেন তিনিও আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচিত। তাদের দ্বারা কি কখনও সম্ভব হবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচানো যায় সেটাই বরং দুদকের কৌশল! তাদের বিপোর্টের ভিত্তিতে হয়তো এমন একটি প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে প্রকাশ করা হবে, যেখানে বলা হবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের কেউ জড়িত নন। যেভাবে প্রথমে আবুল হোসেন সম্পর্কে বলা হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গত মঙ্গলবার প্রচারিত পদ্মা সেতু বিষয়ক দুর্নীতির অভিযোগের একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। উচ্চপর্যায়ের কোনো প্রফেশনাল ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি দিয়ে এই তদন্ত হতে পারে। তথাকথিত নিরপেক্ষ ব্যক্তি নয়, প্রফেশনাল এবং বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত যারা করবেন তাদের মাধ্যমে এই তদন্ত করলেই কেবল জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিতঅলিউল্লাহ নোমানঃ প্রিয় মাতৃভূমি নিয়ে আজ সবাই উদ্বিগ্ন। প্রিয় মাতৃভূমির ভবিষ্যত্ রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেবে সে হিসাব-নিকাশ করছেন সবাই। আগামী নির্বাচন কি আদৌ সব দলের অংশগ্রহণে হবে? এ প্রশ্নটি সবার মনে উঁকি দেয়। নাকি আবার একতরফা নির্বাচনে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে যাবে, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে সবার মধ্যেই। আর এটা একেবারেই স্বাভাবিক। সরকার এই মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসেও বিরোধী দলের ওপর কঠোর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। সর্বশেষ সবচেয়ে নিরীহ কর্মসূচি মানববন্ধনও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এখন শুধু বাকি রইল প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অফিসে তালা দেয়া। জামায়াতে ইসালামীর অফিসে আরও দুই বছর আগেই তালা দেয়া হয়েছে। বিএনপির অফিসে তালা দিতে পারলেই হলো। সরকার চাইলে যে কোনো সময় দিতে পারবে। এটা প্রতিরোধ করার মত ক্ষমতাও এখন আর বিরোধী দলের নেই।

বিরোধী দলের অফিসে তালা দিলে সরকার বিরোধী কথা বলার আর কোনো জায়গা থাকবে না। সবাই নীরবে ঘরে বসে বসে শুধু ভাববেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা একরকম ঘরে বসেই গেছেন। জনসভা ছাড়া আর গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয় ছাড়া রাজপথে নেতাদের তেমন দেখা যায় না। হরতাল ডাকলে কেউ ঘর থেকে বের হন না। নেতারা বের না হলে কর্মীরা তো আর বের হওয়ার কথা নয়। কর্মীরা যখন দেখে নেতা মাঠে নেই তখন হতাশ হন। হতাশার আগুন জ্বলে কর্মীদের মনে। কর্মীদের মনে তখন প্রশ্ন জাগে, নেতা এমপি হবেন, মন্ত্রী হবেন তিনিই যখন রাজপথে নেই আমরা কেন থাকব! শুধু তাই নয়, কোনো কোনো জেলা ও উপজেলা সভাপতি রয়েছেন যারা হরতাল-অবরোধে কর্মীদের সতর্ক করে দেন রাস্তায় যাতে না নামেন। ওই উপজেলা ও জেলা সভাপতির অধীনস্থ নেতা-কর্মীদের বলে দেয়া হয় এখানে রাস্তায় মিটিং-মিছিল করলে সরকারের পতন হবে না। সুতরাং এখানে কেউ রাস্তায় নামার দরকার নেই।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারে যেমন কঠোর, রাজনীতিতেও সরব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে প্রতিদিনই বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে বিরোধী দলের আন্দোলন, ৪ মে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার আলটিমেটামকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। বিরোধীদলীয় নেতা সেদিন মতিঝিলের জনসভা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এই ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে আরও অনেক আগেই। এর মধ্যে হরতাল ডেকেও আবার প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে আর কোনো কর্মসূচি নেই। এজন্যই হয়তো ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামকে খোঁচা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখছেন। বিরোধী দলের কোনো পর্যায় থেকে প্রধানমন্ত্রীর এসব খোঁচার রাজনৈতিক জবাব দেয়া হচ্ছে না। বিরোধী দলের চরিত্রেও এটা নেই। বিরোধী দলের সব কথাই বলতে হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। আওয়ামী লীগের সুবিধা হচ্ছে শেখ হাসিনা যেই বক্তব্য দেন, দলের সব পর্যায় থেকে তার প্রতিধ্বনী করা হয়। কিন্তু বিরোধী দলের সেই রেওয়াজ নেই। বিরোধী দলের প্রত্যেক নেতাই যেন নিজস্ব রাজনীতি করেন। বক্তব্য দেন নিজের মতো করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও কথায় কথায় বিরোধীদলীয় নেতার সন্তানদের কটাক্ষ করেন। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনকে আক্রমণ করে কথা বলেন। কিন্তু সরকারের প্রায় সাড়ে চার বছরে হাওয়া ভবনের কোনো দুর্নীতি কিন্তু প্রমাণ করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লগি-বৈঠার আন্দোলনের ফসল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের জরুরি অবস্থার সরকারও হাওয়া ভবনকে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু এতসব আক্রমণের পরও কার্যকর কোনো রেজাল্ট জাতি এখনও দেখতে পায়নি। জাতির সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি এই হচ্ছে হাওয়া ভবনের দুর্নীতি। আঙুল দিয়ে দেখানোর মতো কোনো নজির নেই হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। তারপরও শেখ হাসিনা এখনও সুযোগ পেলেই হাওয়া ভবন এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সন্তানদের আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। আর এই বক্তব্যের সানাই বাজান আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদাহরণ টানেন মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের জরুরি অবস্থার সরকারের। বলার চেষ্টা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়েছিলেন। তার দুই সন্তানকে পাঠিয়েছেন নির্বাসনে। উত্তম-মাধ্যম দিয়ে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বলা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল ছিল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার। কিন্তু তাকেই জরুরি অবস্থার সরকার রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ব্যক্তি হিসেবে প্রেসনোট জারি করা হয়েছিল। জরুরি অবস্থার জারির পর শেখ হাসিনা নিজে গর্ব করে বলেছিলেন, এটা তার আন্দোলনের ফসল। রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ব্যক্তি হিসেবে প্রেসনোট জারি করা হলেও শেখ হাসিনার সঙ্গেই তারা আঁতাত করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। এই সরকারের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমেই তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। আরও বলে থাকেন ৮ জনকে ডিঙ্গিয়ে মইনউদ্দিনকে সেনাপ্রধান করেছিলেন খালেদা জিয়া। ফখরুদ্দীনকে বিশ্বব্যাংকে থেকে এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বানিয়েছিলেন। তবে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে শেখ হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন সেটা প্রধানমন্ত্রী বলেন না।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের দুর্নীতির বিষয় ধরা পড়েছে কানাডা সরকারের হাতে। এই দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্ প্রকল্প পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ করা ঋণ বাতিল করেছে। এতে পদ্মা সেতু আর হচ্ছে না। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত্কার নেয়া হয়। যদিও এই সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারের দুর্নীতির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং অস্বীকার করেছেন। তবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানসহ অন্যরা কীভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। সৈয়দ আবুল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রীর অলিখিত ক্যাশিয়ার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।

এখানে প্রশ্ন রাখতে চাই, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে কী এরকম কোনো দুর্নীতির একটি প্রমাণও রয়েছে? বা সিকি পরিমাণ দুর্নীতির কোনো প্রমাণ গত সাড়ে ৬ বছরে জরুরি অবস্থার সরকার এবং বর্তমান সরকার মিলে বের করতে পেরেছে? তারপরও হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে এখনও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্নীতির প্রমাণ হাজির করার পরও কিন্তু সেরকম কোনো প্রচারণা নেই। পদ্মা সেতুর এই দুর্নীতির মতো যদি হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে সামান্য পরিমাণ প্রমাণ থাকত তাহলে কী পরিমাণ আওয়াজ উঠত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে! তখন হয়তো বিএনপির পক্ষে আর একদিনও ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হতো না। আওয়ামী লগি- বৈঠার তাণ্ডবে এবং আওয়ামী মিডিয়াগুলোর প্রচারণায় একদিনও ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হতো না বিএনপির। দুর্নীতির প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও হাওয়া ভবনকে দুর্নীতির খুঁটি হিসেবে জাতির সামনে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের কায়দায় প্রচারণার মাধ্যমে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বাম জোটের এ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী পরিবারের এতবড় দুর্নীতির পরও তারা বড় গলায় কথা বলছেন। আওয়ামী মিডিয়াগুলো এসব বিষয়ে নীরব।

বিএনপির অফিস থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে ১৫৮ জনকে এক সঙ্গে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে কত লোক নিহত হয়েছেন এবং কত লোক আহত হয়েছেন সেটা নিয়ে গোজবের শেষ নেই। শুধু ফেবু্রয়ারি মাসে ১৭৮ জনকে পুলিশ রাজপথে গুলি করে হত্যা করেছে। পুলিশের রিমান্ডে নির্যাতনের রেকর্ড অতিক্রম হয়েছে আরও বহু আগে। গুম করা হয়েছে ইলিয়াস আলীর মতো রাজনৈতিক নেতাসহ আরও অনেক রাজনীতিককে। ক্ষমতায় আসার পরপরই পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৫৭ জন সেনা অফিসার। এত রক্তের দাগ এই সরকারের হাতে, বিশ্ব রেকর্ড করা দুর্নীতির অভিযোগ এই সরকারের বিরুদ্ধে। তার পরও ক্ষমতার শেষ বছরে এসে গোটা জাতিকে একেবারে জিম্মি করে ফেলেছে। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই গ্রেফতার, রিমান্ডে নির্যাতন। জামিন পেলেও জেল গেট থেকে আবারও গ্রেফতার। এই নিবন্ধ লিখতে বসার আগে পত্রিকাগুলোর ওয়েবসাইট সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে ৫৩ জনকে জেল গেট থেকে ধরে নিয়ে গেছে সাদা পোশাকধারী পুলিশ। আইনকানুনের কোনো বালাই নেই। ধরে নিয়ে যেতে পারলেই হলো। আদালতে হাজির করলেই রিমান্ড পাওয়া যায়। এত সবের লক্ষ্য একটাই—যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় সরকার। যে কোনো ছুতা-নাতায় জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার গুজবও বাতাসে ভাসছে। এর উদাহরণ রয়েছে নিকট অতীতে। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের জরুরি অবস্থার সরকার কোনো সাংবিধানিক সরকার ছিল না। তারা গায়ের জোরে দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার যদি আরও কয়েক বছর জরুরি অবস্থার মধ্যে ক্ষমতায় থেকে যায় অসুবিধা কোথায়! এখন যেভাবে রাজপথে কর্মসূচি নিষিদ্ধ করেছে, ভবিষ্যতেও এরকম নিষিদ্ধ থাকবে। এখন যে রকম করে বিরোধী দলের নেতারা রাস্তায় বের হচ্ছেন না, তখনও বের হবেন না। বর্তমান লক্ষণে বোঝা যায় ভবিষ্যতে আরও নির্বিঘ্নে ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারবে তারা।

সরকারের অনেক দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেয়ায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে দৈনিক আমার দেশ-এর ছাপাখানায়। মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানে রাতের আঁধারে ঘুমন্ত এবং নামাজ-জিকিররত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযানের গণহত্যার চিত্র ধারণ করায় বন্ধ করা হয়েছে দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন চ্যানেল। সরকারের দুর্নীতি এবং হত্যাযজ্ঞ নিয়ে নীরব আওয়ামী মিডিয়াগুলো। নীরব কথায় কথায় যেই হাইকোর্টে মানুষদের তলব করে অপমান করা হতো সেই উচ্চ আদালত। সবাই যেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী-বাম জোটের তল্পিবাহক হয়ে গেছেন।

গত কয়েক বছর থেকে সুপ্রিমকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে সরকারবিরোধী আইনজীবী প্যানেল বিজয়ী হচ্ছেন। বার কাউন্সিলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন সরকারবিরোধী আইনজীবী প্যানেল। তাতে কী কোনো লাভ আছে? আদালতের অনিয়ম ও সরকারের ভাষায় কথা বলার বিরুদ্ধে কি কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছেন তারা! নামের সঙ্গে পদবী ব্যবহার করছেন। বিজয়ের সাফল্য এতটুকুই। শুধু তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যায়। আমরা সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে ও বার কাউন্সিলে বিজয়ী হয়েছি। যারা বিজয়ী হন তারা নামের সঙ্গে পদবী ব্যবহার করেন। নিজের বায়োডাটায় পদবী যোগ হয়। অথচ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তারা উচ্চ আদালতে আন্দোলনের নামে কি-না করেছেন। প্রধান বিচারপতির এজলাস থেকে শুরু করে ভাংচুর করা হয়েছে আদালত ভবন। শেখ হাসিনার দুর্নীতির মামলা শুনানি করতে গেলে আদালতে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে হট্টগোল করা হয়েছে। এখন খুনের মামলার প্রধান আসামিকে বিচারপতি করা হয়, বিদেশে টাকা পাচারের জন্য অভিযোগ ওঠার পরও ৫০ জনকে ডিঙ্গিয়ে আপিল বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। তারপরও কার্যকর কোনো প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে না। এখানেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির পার্থক্য।

পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারের পর দুদকের দুজনকে কানাডায় পাঠানো হয়েছে। আমার এ লেখা প্রকাশের সময় তারা হয়তোবা কানাডায় থাকবেন। যাদের কানাডায় পাঠানো হয়েছে তারা দুজনই হলেন কট্টর আওয়ামী লীগার। এদের একজন হলেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। আরেকজন হলেন দুদকের আওয়ামী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। আনিসুল হক কখনও কখনও শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার হিসেবে ভূমিকা রাখেন সুপ্রিমকোর্টে। দুদকের যেই কর্মকর্তা তার সঙ্গে কানাডায় গেছেন তিনিও আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচিত। তাদের দ্বারা কি কখনও সম্ভব হবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচানো যায় সেটাই বরং দুদকের কৌশল! তাদের বিপোর্টের ভিত্তিতে হয়তো এমন একটি প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে প্রকাশ করা হবে, যেখানে বলা হবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের কেউ জড়িত নন। যেভাবে প্রথমে আবুল হোসেন সম্পর্কে বলা হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গত মঙ্গলবার প্রচারিত পদ্মা সেতু বিষয়ক দুর্নীতির অভিযোগের একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। উচ্চপর্যায়ের কোনো প্রফেশনাল ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি দিয়ে এই তদন্ত হতে পারে। তথাকথিত নিরপেক্ষ ব্যক্তি নয়, প্রফেশনাল এবং বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত যারা করবেন তাদের মাধ্যমে এই তদন্ত করলেই কেবল জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File