ফটিকছড়ির প্রতিরোধ (বিস্তারিত)

লিখেছেন লিখেছেন ক্যরিয়ার স্পেশালিস্ট ১২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:৪১:৪৬ বিকাল



যারা যারা ফটিকছড়ির নিউজের ব্যাপারে বিন্তারিত জানতে চাইছেন বা যতটুকু খবর কানে এসেছে সেটুকু অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে তারা এইটা পড়েন:

ফটিকছড়ির ভুজপুরে মাদ্রাসা ছাত্র, গ্রামবাসী এবং হরতাল বিরোধী মিছিলকারীদের মধ্যে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ৫ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ, বিজিবি এবং দমকল বাহিনীর সদস্যসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। দশ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছে মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও জিপসহ দুই শতাধিক গাড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভুজপুরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। মাদ্রাসায় নাস্তিকদের হামলা, বড় হুজুরসহ মাদ্রাসা ছাত্রদের মারধর, ডাকাতি এবং মসজিদ পোড়ানোর গুজব রটিয়ে হরতাল বিরোধী একটি মিছিলে হামলা চালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ ঘটে। আচমকা হামলায় দিশেহারা আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ঘেরাও করে দা চুরি এবং কিরিচ দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করেও অল্পক্ষণের মধ্যে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ এই হামলার জন্য জামায়াত শিবির, হেফাজতে ইসলাম এবং বিএনপির ক্যাডারদের দায়ী করেছে। পুলিশ দুইশ’ রাউন্ডেরও বেশি গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি এবং র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় পুলিশী অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ গতরাতে অভিযান চালিয়ে থানা জামাতের আমীর এবং ভুজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল আলম নুরীকে গ্রেপ্তার করেছে। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুরো অভিযানটি মনিটরিং করছেন বলে রাতে শেষ খবরে জানা গেছে।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গতকাল হরতাল চলাকালে ফটিকছড়ির দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফটিকছড়ির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় এক হাজার মোটর সাইকেলসহ অন্যান্য গাড়ির একটি বহর নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনসমূহের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা ‘হরতাল, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য প্রতিরোধে ও যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল চেষ্টার প্রতিবাদে’ এক বিশাল মিছিল বের করেন। মিছিলটি জাফতনগর, আজাদী বাজার, নানুপুর, মাইজভান্ডার শরীফ, নাজিরহাট, বিবিরহাট সদর অতিক্রম করে কাজীর হাট বাজারে পৌঁছে ভূজপুর থানার সামনে থেকে ঘুরে পুনরায় ফটিকছড়ি সদরের দিকে ফিরে আসতে থাকে। আসার সময় কাজীর হাট বাজারে অবস্থানরত জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিছিলটি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়ে। এই সময় মিছিলে ইট পাটকেল মারার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় কাজীর হাট এমদাদুল উলুম বড় মাদ্রাসার ছাত্ররা হামলা শুরু করে। মসজিদ এবং মাদ্রাসার মাইক থেকে ঘোষণা করা হয় যে, নাস্তিকেরা আমাদের মাদ্রাসায় হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণ ফটিকছড়ির ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বড় মাদ্রাসায় হামলা করে বুড়া হুজুরকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। মাদ্রাসার শিক্ষক এবং ছাত্রদের মারধর করছে। নাস্তিকেরা মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছে। এলাকাবাসীকে যার হাতে যা আছে তা নিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং জামাতের থানা আমীর শফিউল আলম নুরী মাইকে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

কাজীর হাট এলাকাটি জামাত শিবির এবং হেফাজতে ইসলামের দুর্গ হিসেবে চিহ্নিত। প্রায় প্রতিটি ঘরেই এই দুইটি সংগঠনের নেতাকর্মী রয়েছে। মাদ্রাসা এবং মসজিদের মাইক থেকে নাস্তিক এবং ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলার খবর রটানো হলে গ্রামের শত শত নারী পুরুষ দা কিরিচ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পিঁপড়ার মতো ছুটে আসে গ্রামের নারী পুরুষ। সকলের হাতে ছিল দা কিরিচ ও ছুরি। হামলাকারীদের এলোপাতাড়ি কোপে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের মিছিল। গ্রামবাসী এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের সম্মিলিত হামলার মুখে যে দিকে পারে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু অত্যন্ত সরু রাস্তায় এত লোকের এক সাথে পালানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। তাছাড়া সামনের মোটর সাইকেল পড়ে গিয়ে পেছনের মোটর সাইকেলের পথ রোধ হয়ে যাচ্ছিল। গতিরোধ করা হয়েছিল মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার এবং জিপ গাড়ির। হামলাকারীরা সামনে যাকে পেয়েছে তাকে কুপিয়েছে। একের পর এক গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছে অসংখ্য মোটরসাইকেলসহ দুই শতাধিক গাড়ি। দুপুর ২ টা থেকে বেলা পাঁচটা পর্যন্ত এক কিলোমিটারের মতো এলাকায় তাণ্ডব চলে। হামলাকারী নারী পুরুষেরা খুঁজে খুঁজে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কুপিয়েছে। একদল মানুষকে যে এভাবে কোপানো যায় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টকর বলেও পুলিশের পদস্থ একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনীতিতো মানুষের জন্য, কিন্তু গতকাল মানুষ রাজনীতির জন্য হয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্বাসে অন্ধ একদল মানুষ নিরস্ত্র মানুষদের উপর হামলা চালিয়ে ভয়াবহ রকমের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। মাত্র এক কিলোমিটার জায়গার মধ্যে প্রায় দুইশ’ মোটর সাইকেল পুড়ে পড়ে রয়েছে। পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে অনেক গাড়ি। মাইক্রোবাস, পাজেরো জিপ, প্রিমিও প্রাইভেট কার এবং জিপ গাড়িসহ দুই শতাধিক গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই সময় দমকল বাহিনীর একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়িতে দেয়া আগুন নিভানোর চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তাদের উপরও চড়াও হয়। দমকল বাহিনীর গাড়িটি তারা পুড়িয়ে দেয়। দমকলবাহিনীর কর্মীদের স্থানীয় স্কুলের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।

সূত্রঃঃঃ

http://www.dainikazadi.org/index1.php

বিষয়: রাজনীতি

১৪৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File