আলোর সন্ধানী

লিখেছেন লিখেছেন আবুল বাশার ২৬ মার্চ, ২০১৩, ০১:২৪:৪৮ দুপুর

বানিজ্য কাফেলা গিয়ে থামলো এক বিশাল বাজারে।তাই দূর-দুরান্ত থেকে লোক জন আসছে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্যে। কাফেলা সাথে এসেছে সতের বছরের কিশোর তালহা (রাঃ)। সে এসেছে সুদূর মক্কা থেকে।কাফেলার সবাই উট ঘোড়া বেঁধে ঢুকলো বাজারে। কিশোর তালহা (রাঃ) বাজারের এক গলিপথ দিয়ে হাটছিলেন।হঠাৎ যেন কোথা থেকে তার কানে কারো ভাষনের আওয়াজ ভেসে আসলো।তিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন খানিকটা দূরে একটু উচুঁ স্থানে দাঁড়িয়ে এক জন লোক হাত নেড়ে কিছু একটা বলছে। হযরত তালহা (রাঃ) এগিয়ে গেলেন তিনি শুনলেন লোকটি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলছে,হে আমার ভাইয়েরা এখানে কি মক্কার কেউ আছে ? তোমরা কি কোন মক্কাবাসীর সন্ধান দিতে পার ? হযরত তালহা (রাঃ) তার কথা শুনে আৎকে উঠলেন।হঠাৎ এই লোকটি কেন কোন মক্কাবাসীকে খুজছেন ? লোকটি কি কোন সমস্যায় পড়লো নাকি সে কারো খোঁজ নিতে মক্কার লোক খুজছেন? হযরত তালহা (রাঃ) ভাবতে ভাবতে কয়েক কদম এগিয়ে গেলেন। তারপর হাত উচুঁ করে বললেন হ্যাঁ আমি আসি।আমি মক্কাবাসী।আমি কুরাইশ বংশের লোক। তুমি চাইলে আমাকে বলতে পার। হযরত তালহা (রাঃ) এর কথা শুনে লোকটার মুখ উজ্জল হয়ে উঠল।তার চোখেমুখে যেন স্বস্থির আলোর আভা ফুটে উঠলো।মনে হলো লোকটি যেন বহু দিন পর এক জন মক্কাবাসীর খোঁজ পেয়েছেন।তাই আর অপেক্ষা না করে লোকটি হযরত তালহা (রাঃ) এর দিকে ছুটে এসে বললেন, তুমি মক্কা থেকে এসেছ?

আচ্ছা তুমি কি বলতে পার, তোমাদের দেশে আহমাদ নামে কি কেউ আসছে? কথা শুনে হযরত তালহা (রাঃ) চিনÍায় পড়ে গেলেন।বারবার ভালো করে লোকটির দিকে তাকান লোকটাকে পাগল বলে মনে হয় না।তার মধ্যে অস্বাভাবিক পাগলামীর কিছু লক্ষ করা যার না।লোকটার শরীরে পাদরীর পোশাক,তার মানে লোকটি ধর্মে খ্রিষ্টান। হযরত তালহা (রাঃ) উৎসুক হয়ে উঠলেন,তিনি এগিয়ে গিয়ে লোকটাকে প্রশ্ন করলেন,

আচ্ছা জনাব.আহমাদের কথা কেন জানতে চাইলেন?সে কার ছেলে?কী তার পরিচয়?

তাহলে শুনো বলছি।আবদুল্লাহর পুত্র আহমাদ।তিনি এ মাসেই মক্কায় আত্বপ্রকাশ করেছেন।তিনি শেষ নবী হয়ে এসেছেন।

আবদুল্লার পুত্র আহমাদ।কই এ নামে কাউকে তো চিনি না।এমন করও নাম তো শুনিনি ? নবী হবার এমন দাবির কথাও আমি জানি না।

আচ্ছা,তুমি এসব জানলে কিভাবে ?

তা হলে মন দিয়ে শোন :আজ থেকে সারে পাঁচশত বছর আগের কথা।পৃথিবীতে এসেছিলেন একজন নবী ঈসা (আঃ) আমরা তাকে যীশু বলে ডাকি।তার উপর আসমানী কিতাব ইনজিল নাজিল হয়েছিল।এ কিতাবে লেখা আছে আহমাদ নাম,তার নবী হওয়ার কথা।এ রমজান মাসেই তিনি নবী হিসাবে আত্বপ্রকাশ করবে।ইনজিলে এ কথা মিথ্যা হতে পারে না।অবশ্যই আহমাদ নামে একজন নবী আসবেন”।

হযরত তালহা (রাঃ) লোকটার কথা যতই শুনছিলেন ততই যেন অবাক হচ্ছিলেন। তার আলোর সন্ধানী মনের গভীরে যেন তোলপাড় চলছিলো।তিনি কেমন যেন উতলা হয়ে উঠলেন।তার চোখেমুখে যেন আলোর আভা জ্বলজ্বল করে উঠলো। লোকটা হযরত তালহা (রাঃ) এর পরিবর্তন লক্ষ করে বললেন,

হে যুবক,ব্যবসার কথা ভূলে যাও।এখনই মক্কায় চলে যাও।আহমাদ নামের লোকটিকে খুঁজে বের কর।তার কথা শুনো এবং তার সাথেই থাক।

হযরত তালহা (রাঃ) লোকটার কথা শুনতে শুনতে এক সময় তার চৈতন্য হারিয়ে ফেলেন।তার মন চলে যায় সেই সুদূর মক্কায়।কখন যেন পাদরী তার দৃষ্টি থেকে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যান তিনি বুঝতেও পারেন না। হযরত তালহা (রাঃ) এর মন আবার উতলা হয়ে ওঠে।ব্যবসার কাজে মন বসাতে পারছেন না ।বারবার ওই পাদরীর কথা মনে উঁকিঝুকি মারছে।অবশেষে হযরত তালহা (রাঃ) কাফেলা হতে তার সাথীদের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।রাস্তায় যাকে পাচ্ছেন তাকেই বলছেন,

তুমি কি মুহাম্মাদ কে চেন ? তিনি নাকি নিজেকে নবী বলে দাবী করেছেন ? তোমরা কি জান তার ঠিকানা ? লোকজন হযরত তালহা (রাঃ) এর কথা শুনে অবাক হয়।কেউ বা বলে লোকটি পাগল নাকি? এভাবে পথ চলতে চলতে এক সময় হযরত তালহা (রাঃ) নিজ বাড়ীতে পৌছে যান।সবাই তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলতে থাকে ছেলেটির কি হলো ?

হযরত তালহা (রাঃ) বলেন আচ্ছা : তোমরা কি আহমাদ নামে কাউ কে চেন,কাউকে কি নবী দাবী করতে শুনেছ? হযরত তালহা (রাঃ) এর প্রশ্ন শুনে সবাই হতবাক।আপন জনেরা তাকে সান্তনা দেয় বিশ্রাম নিতে বলে।কিন্ত হযরত তালহা (রাঃ) এর অস্থিরতা কাটে না।এ ভাবে চলতে চলতে একদিন হঠাৎ একজন বললেন,জানতে পারলাম হাসেমি বংশের ছেলে আবদুল্লার পুত্রের নাম নাকি মুহাম্মদ তিনি নাকি নিজেকে নবী দাবি করেছে তার নিকট নাকি আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাজিল হয়।কথা শুনে চমকে উঠলেন হযরত তালহা (রাঃ)।তাহলে কি পাদরীর কথাই ঠিক। হযরত তালহা (রাঃ) বললেন আচ্ছা তিনি কবে নবী দাবি করেছেন।লোকটি বললো সে দিনের কথা তুমি ব্যবসার কাজে সিরিয়া যাওয়ার পরপরই।শুনেছি আবু কুহাফার ছেলে আবু বকর ও নাকি ইসলাম গ্রহন করেছে।মুহাম্মদ (সঃ) এর কথা শুনে তার মন আবার উতলা হয়ে উঠল। হযরত তালহা (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) কে আগে থেকেই ভালো জানতেন।তাই হযরত তালহা (রাঃ) আর অপেক্ষা না করে হযরত আবু বকর (রাঃ) নিকট ছুটে গেলেন। হযরত তালহা (রাঃ) বললেন শুনলাম মুহাম্মদ (সঃ) নবী হয়েছেন,আপনি কি এটা জানেন?

তুমি ঠিকই শুনেছ।আবদুল্লার পুত্র মুহাম্মদ (সঃ) নবী হয়েছেন।তার ওপর ওহি নাজিল হয়েছে,বললেন হযরত আবু বকর (রাঃ)।

তা হলে আপনি কি তার অনুসারী হয়েছেন ?হ্যাঁ আমি কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহন করেছি।এ কথা শুনে হযরত তালহা (রাঃ) এর মন কেপেঁ উঠলো। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর কথায় হযরত তালহা (রাঃ) এর মনের দুয়ার খুলে গেল। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন শোন তালহা মিথ্যা ও অন্যায় আর কতকাল চলবে? মিথ্যার অনুসারী হয়ে লাভ কি? মূর্তি পূজার কোনো মানে হয় না,বরং চলে এসো,এক আল্লাহর পথে।তার দরবারে মাথা নত করাই শ্রেয়। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর কথা শুনে তার মনে তোলপার খেলে যায়।যখন হযরত তালহা (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সামনে গিয়ে হাজির হলেন ,তখন সীমাহীন প্রশান্তির এক বেহেশতি আবেশ তার দেহমন ছুয়ে গেল।তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না। আর তখনই তিনি কালেমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম গ্রহন করে নিলেন। শামিল হয়ে গেলেন ইসলামের সুশিতল ছায়াতলে।

বিষয়: বিবিধ

১১৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File