হেফাজতিরা যা চেয়েছেন চাওয়াটা যৌক্তিক;তবে,গলা উঁচিয়ে বার্তাটি পরিষ্কার করতে বাধা কোথায়?

লিখেছেন লিখেছেন জহির আহমেদ ১৪ মে, ২০১৩, ১০:৩০:১১ সকাল

•'ইসলামী আন্দোলন'এটা কোন সমুদ্র জয় বা চাঁদের দেশে যাওয়া নয়। এ আন্দোলন প্রতিষ্টায় স্বয়ং রাসূলের (সঃ) ৬৩বছর লেগেছিল। এটি নিয়ে কিছু লিখার দুঃসাহস করতে হলে ৬৩ঘণ্টা স্টাডি করলেও মনে হয় এ নিয়ে কিছু লিখা আমার পক্ষে যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লবীদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে তার ২/৪টা বুলেট পয়েন্ট বের করার চেষ্টা করব।

খুব সংক্ষেপে...

•১. দৃড়তার সাথে পরিষ্কার কোন বার্তা না থাকাঃ অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে হেফাজতিরা যা চেয়েছেন তা নিজেদের মধ্যে খুব পরিষ্কার হতে পারেননি। পরিষ্কারের বিষয়টা যদিও অনেক জটিল ছিল অথবা এটাকে এভাবেও বলতে পারি হেফাজতের বার্তাটি ভুলভাবে বিরোধী পক্ষকে পৌছানো হয়েছে। রাজনৈতিক? না রাজনৈতিক না এধরনের এক ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছিল। এক কথায় চাওয়াটা যৌক্তিক হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র পরিষ্কার বার্তা না থাকার কারনে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরিষ্কার করতে কিসের এত ভয়? গলা উচিয়ে গর্বের সাথে বলতে বাধা কোথায়?

আল্লাহ বলছেন...যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলমান, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার? (৪১ঃ৩৩)

•২.সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার চরম অনুপস্থিতিঃ ভাবতে খুব অবাক লাগে এত বড় একটা বিষয় নিয়ে মাঠে নামার আগে কোন ধরনের শক্ত,কার্যকরী,কৌশলী পরিকল্পনা ছিলনা।অর্থাৎ, যোদ্ধে যথেষ্ট গুলাবারুদ থাকা সত্ত্বেও যে হারার সম্ভাবনা থাকে সে বিষয়টা মাথায়ই ছিলনা আবার বিরোধী শক্তি সম্পর্কে কোন ধারনাও নাই।

আল্লাহ কি বলছেন...

'আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়।'(১৬ঃ১২৫)

•৩. ঐক্যের ঘাটতিঃ যে কোন আন্দোলনে নিজেদের মধ্যে ঐক্য,সুশৃঙ্খলতা যে কত গুরুত্বপুর্ন সেটা অনেকাংশেই অনুপস্থিত ছিল। দেশে চলমান রাজনীতিতে অভিজ্ঞ অনেক ইসলামী দলের সাথে খুব একটা কার্যকরী যোগাযোগ ছিল বলে মনে হয়নি। উচিত ছিল সব ইসলামী দল মিলে একটা প্লাটফর্ম তৈরী করে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলা।

ঐক্যের নির্দেশে আল্লাহ বলছেন...'আর তোমরা সবে মিলে আল্লাহ্‌র রশি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, আর বিচ্ছিন্ন হয়ো না' (৩ঃ১০৩)

•৪. সঠিক নেতৃত্বের অভাবঃ এইটাই সবচেয়ে বড় কারন হতে পারে। ভাবতে অবাক লাগে এত বড় একটা দল মাত্র দু'একজন নেতা ছাড়া নেতৃত্ব দেওয়ার মত লোক নাই! এক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে ৩/৪স্তরের একটা নেতৃত্ব থাকার কথা ছিল। একটু পরিষ্কার করে বললে আমরা দেখতে পাই গত ৪ বছর থেকে যে নির্যাতন জামায়াতের উপর দিয়ে গেছে সরকার এই একটিমাত্র কারনে জামায়াতকে একচুলপর্যন্ত ঠলাতে পারেনি। ইসলামী দলের নেতৃত্ব হতে হবে এরকমই।

এই আনুগত্যের কথা কোরআন বলছে... ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্‌কে অনুসরণ করো, ও রসূলের অনুগমন করো, আর তোমাদের মধ্যে যাদের হুকুম দেবার ভার আছে।(৪ঃ৫৯)

•৫. ধৈর্য্যহীনতাঃ যোদ্ধে বলেন আর গাধা চরানোর কথা বলেন ধৈর্য্য,কঠিন মনোবল না থাকলে এই একটিমাত্র কারনে সব মাটি হয়ে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে এটা একদিনে হয়ে যাবে এমন কোন বিষয় নয়। ধৈর্য্য হারা,হতাশ হওয়ার কোন কারন নেই।

'হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন'(২ঃ১৫৩)

•৬. লক্ষ্যপানে অটুট না থাকাঃ মাঝি ছাড়া নৌকার গন্তব্য যেরকম অনিশ্চিত সেরকম লক্ষ্যপানে আল্লাহর কাছে জান-মাল বিক্রির ইস্পাত-কঠিন মনোবল এবং সর্বোপরি আল্লাহর উপর ভরসা না থাকলে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া সম্ভব না।

আল্লাহ বলছেন... মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে?তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। (৬১ঃ১০,১১)

•শেষের কথায় বলব ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস রক্তমাখা এটা বুঝতে হবে। হতাশার কোন কারন নেই। সুতরাং শহীদেরা যে আশার বীজ বপন করেছেন সে বীজ; চারা গজানো থেকে নিয়ে ফল আসা পর্যন্ত পরিচর্যার দায়িত্ব বেঁচে থাকাদের। খুব অল্প সময়েই সে পথ খুজে নিতে হবে । কি চাই খুব পরিষ্কার করে ঘোষণা আসতে হবে। ভাঙ্গতে হবে বিভক্তির সব বাঁধার প্রাচীর। চাই একদল, এক ঘোষণা!!

পরিষ্কার করলাম; আমি শহিদদের দলে, থাকব রণাঙ্গনে...বিজয়ের সুসংবাদ আশা পর্যন্ত!!

"আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং বিজয় অত্যাসন্ন। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন। (৬১ঃ১৩)

বিষয়: বিবিধ

১৭০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File