মহান বিজয় দিব।
লিখেছেন লিখেছেন জিসান এন হক ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৩:৫৫:১৫ রাত
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রাম আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা এ বিজয় লাভ করেছি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে গৌবরময় স্থান করে নিয়েছে। আমরা জানি, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভের পরও পাকিস্তানি সামরিক সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আঁকতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সেই নীলনকশার অংশ হিসেবে ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। সেই দিন শোককে শক্তিতে পরিণত করে বীর বাঙালি জাতি গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তারপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সাড়ে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসর্মপণ করতে বাধ্য হয়েছিল। ঐতিহাসিক এ সত্য আবারও প্রমাণিত হয়েছিল, কোনো স্বৈরশাসকই বন্দুকের নল আর বারুদের সিসাতপ্ত গুলির জোরে জনগণকে দাবিয়ে রাখতে পারে না। শোষণ-নিষ্পেষণ, অত্যাচার-নির্যাতন আর ভোটাধিকার হরণ করে কোনো জাতিকে চিরদিন পদানত করে রাখা যায় না।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে প্রায় অর্ধশতাব্দী হতে চলল। এ পথপরিক্রমা একবারে নাতিদীর্ঘ নয়। এ সময়ের মধ্যে আমাদের অর্জনের মূল্যায়ন করলে তাও একেবারে কম ,এমনটাও বলা যাবে না। তবে যে লক্ষ্য নিয়ে এদেশের দামাল সন্তানরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে জীবন-মরণ পণ করে যুদ্ধ করেছে, রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে, হয়েছে স্বজনহারা।তবে কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ ও রাসূল সা: অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা যাবে না কাউকে।সেই লক্ষ্য, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা কতটা সফল হয়েছি ? ভোটাধিকার হরণের যে দহনজ্বালায় গোটা বাংলাদেশ জ্বলে উঠেছিল, সেই ভোটাধিকারেরই-বা এখন কী অবস্থা, তা-ও আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে। বড় বড় ব্রিজ, রাস্তাঘাট, শিল্প-কারখানার মতো অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বাজেট, জিডিপি আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে বেসরকারি উদ্যোগ কতটা এবং সরকারের সহযোগিতার পরিসরই বা কতটুকু, তার মূল্যায়ন জরুরি বলে আমরা মনে করি।
যুদ্ধ করে বিজয় লাভ নিঃসন্দেহে গৌরবের। কিন্তু সেই বিজয়ের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠা। গণতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সবাইকে নিয়ে একসাথে পথচলা। কারণ জাতীয় সংহতি ছাড়া স্বাধীনতা সুসংহত হয় না। আর গণতান্ত্রিক চেতনা এবং উদার মানসিকতা ছাড়া জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। জাতির উন্নতি আর অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অক্ষুণ রাখতে আমাদের অবশ্যই ক্ষুদ্র মতপার্থক্য ভুলে যেতে হবে, ভুলে যেতে হবে স্বাধীন বাংলায় স্বাধীনতার পক্ষ/বিপক্ষ ভীম্রজাল, জাতীকে ঐক্যে গড়ে মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ভিন্নমতকে শুধু সহ্য নয়, গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা পরিবর্তনে জনগণ যেন নির্ভয়ে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মনে করি, এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত সফল না হব, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাধীনতার সুফল এ জাতি পাবে না। এখন যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন, তাদের এ বিষয়টি সব মোহ ভুলে উপলব্ধি করতে হবে। বিরোধী দলে যারা আছেন, তাদেরও ভুলে গেছে চলবে না, ক্ষমতা মানুষকে অনেক সময় অন্ধ করে দেয়। সেই অন্ধ চোখে আলো ফেরার দায়িত্ব তাদের। আলাপ-আলোচনা, সংলাপ, আন্দোলন-সংগ্রাম ইত্যাদি অনুষঙ্গ গুলোর যখন যা প্রয়োজন, শাসকদের সুপথে পরিচালানার জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আলোকে তা ব্যবহার করতে হবে। তবেই বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা চিরদিন মাথা উঁচু করে সামনে এগিয়ে যেতে পারব।
আসুন, আমরা সবাই মিলে আবার শপথ নেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা একটুও ছাড় দেব না। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি অক্ষুণ রেখে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করব। দেশের উন্নতি, সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য বুকের শেষ রক্তবিন্দু ঢেলে দিতে কুণ্ঠিত হব না।একটি উন্নত জাতী পারে মাথা উচু করে দাড়াতে , এখনই সময় শপথ নেয়ার।
বিষয়: বিবিধ
৭০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন