পাঠার কোন মামা বাড়ি নেই ।
লিখেছেন লিখেছেন জিসান এন হক ০৬ মে, ২০১৪, ১২:৩১:০৯ দুপুর
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে ঘুমন্ত আলেমদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার
। এখন সেই ঘটনাকে ঢাকা দেয়ার নানা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু সেই বর্বর হামলার ঘটনা ঢাকার যতই চেষ্টা করা হোক ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন ৫ মের ঘটনাও মানুষের স্মরণে থাকবে। আর যতদিন মানুষ এই ঘটনা স্মরণ করবে ততদিন আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যাত হবে।
৫ মে রাতে আওয়ামী লীগ সরকার ঘুমন্ত আলেমদের ওপর গুলী চালিয়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল।
দেশে ইসলামী তাহযীব, তামাদ্দুনের প্রচার-প্রসার,তাফসির মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন তথা ইসলামের পক্ষে কথা বলা সকল মাধ্যমকে সংকুচিত করার জন্য সরকার সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সকল মুসলমানদেরকে ক্ষীণ মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকার নাচ গান করার অনুমতি দেয় কিন্তু ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দেয় না। তারা অনেক মাহফিল নিষিদ্ধ করছে। ৫ মে জিকির ও নামাযরত অবস্থায় ১০ হাজার র্যাব ও পুলিশ আলেম ওলামা ও ছাত্র যুবকের ওপর নির্বিচারে গুলি করেছে। এর বিচার একদিন হবে। এর দায় কেউ এড়াতে পারবে না।
গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষক, পরিবেশবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
২৫ এপ্রিল রাতে বাংলাভিশনে ‘নিউজ অ্যান্ড ভিউজ’ অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন সরকার দাম্ভিক, অহংকারী এবং অত্যাচারী। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, কৃষিমন্ত্রী পার্লামেন্টে বলেছেন রানাপ্লাজা উপলে এক শত সাতাশ কোটি আটষট্টি লাখ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। তিগ্রস্তদের এই টাকা দেয়ার জন্য কেন নীতিমালা তৈরি করতে হবে? টেলিভিশন টকশোতে সরকারি দলের লোকজনকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা কোনো উত্তর দেয় না। রানাপ্লাজায় তিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছে ২২ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। অথচ বাকি ১শ’ ৫ কোটি টাকার কথা বলেননি। এ টাকা কোথায় ? বরং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাদের কাজের মধ্যে কোনো অস্বচ্ছতা নেই, প্রশ্ন করার মতো বিষয় নেই, যদি কেউ সরকারের কাজের অপপ্রচার চালায় তবে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকার ইসলামী ব্যাংকের টাকা নেয়ার পর বলেছে এটি ক্রিকেটের জন্য নেয়া হয়নি। এই সুযোগ বলার মতো অবস্থা রানাপ্লাজায় নেই। বিরোধী দলে যেসব রাজনীতিবিদ আছেন তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ফ্যাসিবাদী আ’লীগের থাবার শিকার হয়েছেন। দেশটি আওয়ামী লীগের একার নয়। এই নিপীড়ন, অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপি এককভাবে ফ্যাসিবাদী সরকারকে মোকাবেলা করতে পারবে না।
২৬ এপ্রিল রাতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার উপস্থাপনায় বাংলাভিশনের ‘নিউজ অ্যান্ড ভিউজ’ অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহফুজ উল্ল্যাহ বলেছেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের থাবা ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হচ্ছে। বিরোধী দলে যেসব রাজনীতিবিদ আছেন তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ফ্যাসিবাদী আ’লীগের থাবার শিকার হয়েছেন। দেশটি আওয়ামী লীগের একার নয়। এই নিপীড়ন, অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপি এককভাবে ফ্যাসিবাদী সরকারকে মোকাবেলা করতে পারবে না।
মাহফুজ উল্ল্যাহ বলেন, প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছুদিন পর সেই মানুষটির লাশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এটিই প্রমাণ করে দেশ ক্রমান্বয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের করতলে চলে যাচ্ছে। সরকার ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে বিরোধী দলকে দমন করার চেষ্টা করছে। তারা সম্ভবত বুঝতে পারছেন না এই ফ্যাসিবাদী কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত সরকারের বিপদ ডেকে আনবে। বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে সোচ্ছার হতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম উল্লেখ করেÑ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মতায় আসার পর থেকে রাষ্ট্রীয় যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে নির্যাতক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে একটি সরকার যখন নির্যাতক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে, তখন সেই জাতির কপালে দুঃখ ছাড়া অন্যকিছু থাকে না।
রীবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মন্তব্য করেÑ মাহফুজ উল্ল্যাহ বলেন, ’৭২ থেকে ৭৫’ সাল পর্যন্ত রীবাহিনী গঠন করা হয়েছে। সেই রীবাহিনীর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এখনকার কিছু কিছু বাহিনীর কর্মকাণ্ডের মিল আছে। রীবাহিনী কেন গঠন করা হচ্ছে সেটি লিখিত আকারে ছিল। কিন্তু এখন যেসব বাহিনী গুম-হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে, সেসব বাহিনীর কর্মকাণ্ড লিখিত নেই।
মাহফুজ উল্লাহ বলেন, তিস্তার প্রশ্নে হোক বা অন্য কোনো জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে হোক মতাসীন দলকে বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভারত অখুশি হোক এমন কোনো কাজ মতাসীন দল করবে না। বর্তমান সময়ে সুশীল সমাজ, নাগরিক, শিক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক দলসহ প্রত্যেকেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। রুখে দাঁড়ানোর জন্য ব্যাপক জনগণের ঐকমত্যের প্রয়োজন।
২৭ এপ্রিল রাতে আরটিভির রাতের টকশোতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, যেভাবে দেশে গুম, খুন বেড়েছে তাতে মনে হচ্ছে পেশাদার সন্ত্রাসীরা এই সব কাজ করে চলেছে। রাষ্ট্রীয় বাহীনিকে দেখতে হবে এটা কারা করছে। তবুও এটা রাষ্ট্রের দায়। না হলে গুম, হত্যা বন্ধ হবে না। বাংলা ভিশনের রাতের টকশোতে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবির বলেছেন, বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। এখানে সরকারের কোনো উদ্বেগ নেই। পুলিশ পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। তাহলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা আছে ? অপহরণ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের আ’লীগ এর এক প আর এক পকে দায়ী করছে।
২৮ এপ্রিল রাতের বাংলাভিশনের নিউজ এন্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আলোচকগণ বলেন, গুম-খুন সীমাহীনভাবে বাড়ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা হলে আইন আদালতের দরকার কি। বিচার বিভাগকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন। এেেত্র সরকারের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছে।
২৯ এপ্রিল বাংলা ভিশনের নিউজ এন্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে গুম-খুনের বিষয়টি সরকার কিভাবে দেখছে এ বিষয়ে ঢাবির অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেছেন, গুম-হত্যা রাজনৈতিক প্রতিপরে বিরুদ্ধে এ পদপে। গত চার বছর ধরে গুম-হত্যা বেড়েছে। দেশের সবকিছু এখন প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এক ব্যক্তির ওপর এত দায়িত্ব সামলানো কিভাবে সম্ভব। পুলিশের ওপর দলীয় প্রভাব কমাতে হবে।
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ কলাম লেখক ও অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, পুলিশের সংখ্যা কম থাকতে পারে কিন্তু র্যাবকে এ সময়ের আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে গঠন করা হয়েছে। তারা এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। ২৮০ টি গুম, অপহরণ এর ঘটনায় মাত্র ১০ শতাংশ বা ২৮ টি ঘটনারও যদি রহস্য উদঘাটিত হতো তাহলে আমরা মনে করতে পারতাম কিছুটা তো হয়েছে। কিন্তু তা হয়নি। এটা তো মেনে নেওয়া যায়না। পুলিশ এবং র্যাব ও সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অপহরণ করা হচ্ছে সে জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা থাকা উচিত। রাজনৈতিক সততা, নিষ্ঠা এবং পরিপূর্ণ নিরপেতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
শাহদীন মালিক বলেন, সরকারের যখন জনসমর্থন কমে আসে তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহীনির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরে। বর্তমান সরকারেরও জনসমর্থন কমে গিয়েছে।
আসলে যে যাই বলুক না কেন পাঠা তার খায়েশ মিটাতে যেমন কোন রিস্তা (বা জায়েজ না জায়েজ)মানে না আওয়ামীলীগ ও তেমনই।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন