ধূমপান নিয়ন্ত্রন আইন প্রয়োগ হচ্ছেনা কেনো ?

লিখেছেন লিখেছেন এমরান ইবনে আলী ২১ জুন, ২০১৩, ১২:২৩:১৭ রাত



এমদাদুল ইসলাম এমরানঃ

ধূমপান নিয়ন্ত্রণে আইন পাস হয়েছে আট বছর আগে। সম্প্রতি আইনে সংশোধনীও আনা হয়েছে। প্রকাশ্যে ধূমপানের জরিমানা ৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৩০০ টাকা। দোকানদার, ব্যবস্থাপকদেরও জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে এই আইন প্রয়োগ হচ্ছেনা কেনো, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল টোব্যাকো কন্ট্রোল সেলের কর্মকর্তারা বলেন, ২০০৫ সালে আইন প্রণয়নের পর প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা বা জরিমানা আদায় সম্পর্কে কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই।

স্বাস্থ্যসচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন স্বীকার করেছেন, আইন প্রয়োগে কিছুটা শিথিলতা আছে। তিনি বলেন, ‘প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে প্রশাসন ও পুলিশের যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার কথা। দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য প্রয়োজনে সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকেন। ধূমপান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে’।

তামাকবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টোব্যাকো ফ্রি কিডসের এ-দেশীয় পরিচালক তাইফুর রহমান বলেন, প্রকাশ্যে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে রোজ রোজ অভিযান দরকার। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন সব সময় কাজ করতে পারে, আইনে এ সুযোগ থাকা দরকার।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও ধূমপানবিরোধী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার বিভিন্ন স্তরে কথা বলে জানা গেছে, ধূমপান আইন মেনে না চলার প্রবণতা, জরিমানার পরিমাণ কম হওয়া এবং তামাক উত্পাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাপট—এসব কারণে আইন প্রয়োগে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী চার কোটি ১৩ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক সেবন করছে। তারা পরোক্ষভাবে ক্ষতি করছে প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ মানুষের। ধূমপান না করেও কেউ যেন পরোক্ষভাবে এর কুফলের শিকার না হন, এ লক্ষ্যে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়। আইনে খোলা জায়গা—পার্ক, মাঠ, বাস টার্মিনাল, স্টেশন, লঞ্চঘাট, রেস্তোরাঁ, খাওয়ার জায়গা—যেখানে মানুষ জড়ো হয়, সেখানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল জানায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ছয় মাসে বিভিন্ন জেলায় মোট ২৫৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে সরকার। দেশে ৬৪টি জেলা থাকলেও অভিযান পরিচালিত হয়েছে মাত্র ২৯টি জেলায়। জরিমানা আদায় হয় মাত্র ৩৪ হাজার ৪২২ টাকা। এর মধ্যে ঢাকায় অভিযান হয়েছে মাত্র একটি। অভিযানটি পরিচালিত হয়েছে সদরঘাটে।

জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সব ক্ষেত্রে যাঁদের আইন মেনে চলার কথা, তাঁরা আইন মানছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা আদালত চত্বরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে আইনজীবীদের রোষের শিকার হয়েছেন।

বিভিন্ন সময় ঢাকা জেলা প্রশাসনের তরফে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ছিলেন, এমন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল আমিন বলেন, জরিমানার হার এখনো অনেক কম। শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকায় আসা একটি দল একবার তাঁর সঙ্গে অভিযানে ছিলেন। ওই দেশে প্রকাশ্যে ধূমপানের জন্য পাঁচ হাজার শ্রীলঙ্কান রুপি জরিমানা দিতে হয়। পেশাভেদে দেশটির সরকার জরিমানা আদায় করে। মো. আল আমিন মনে করেন, নিয়মটি বাংলাদেশে অনুসরণ করা হলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

ঢাকার জেলা প্রশাসক ইউসুফ হারুন বলেন, প্রকাশ্যে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে আরও অনেক বেশি অভিযান পরিচালনা করা উচিত। তিনি বলেন, মানুষকে সচেতন করা না গেলে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

বিষয়: বিবিধ

১৪৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File