সিলেট সুন্দরবনে আপনাকে স্বাগতম
লিখেছেন লিখেছেন এমরান ইবনে আলী ২২ মে, ২০১৩, ০২:১৭:০৬ দুপুর
বিশাল জলাভূমির মধ্যে কোমর ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি গাছের একটি জঙ্গল। ডালে ডালে ঘুরে বেড়ায় নানা প্রজাতির পাখি আর কিছু বন্য প্রাণী। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত জলের এ বনের নাম রাতারগুল। স্থানীয়রা এটিকে সিলেট সুন্দরবন নাম দিয়েছেন । নৌকায় ঘুরে ঘুরে দেখা এ বন যেন অনেকটা সুন্দরবনের মতোই । ভেতরের দিকে জঙ্গলের গভীরতা এত বেশি যে, সূর্যের আলো গাছের পাতা ভেদ করে জল ছুঁতে পারে না। সিলেট শহর থেকে এ বনের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার।
আগেই বলা হয়েছে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় রাতারগুলের অবস্থান। সিলেট বন বিভাগের উত্তর সিলেট রেঞ্জ-২-এর অধীন প্রায় ৩০৩২৫ একর জায়গা জুড়ে এর অবস্থান। এরমধ্যে ৫০৪ একর জায়গায় মূল বন, বাকি জায়গা জলাশয় আর সামান্য কিছু উঁচু জায়গা। তবে বর্ষাকালে পুরো এলাকাটিই থাকে জলে ডুবে থাকে। শীতে প্রায় শুকিয়ে যায় রাতারগুল। তখন কেবল জল থাকে বনের ভেতরে খনন করা বড় জলাশয়গুলোতে। পুরোনো দু’টি বড় জলাশয় ছাড়াও ২০১০-১১ সালে রাতারগুল বনের ভেতরে পাখির আবাসস্থল হিসেবে ৩.৬ বর্গকিলোমািটারের একটি বড় লেক খনন করা হয়। শীতে এ জলাশয়ে বসে নানান পাখির মিলন মেলা।
রাতারগুল মূলত প্রাকৃতিক বন। এর পরেও বন বিভাগ হিজল, বরুন, করচ আর মুর্তাসহ কিছু জলবান্ধব জাতের গাছ লাগিয়ে দেয় এ বনে। এ ছাড়াও রাতারগুলের গাছপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কদম, জালি বেত, অর্জুনসহ জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির গাছপালা। সিলেটের শীতল পাটি তৈরির মূল উপাদান মুর্তার বড় একটা অংশ আসে এ বন থেকে। বাংলাদেশ বন বিভাগ ১৯৭৩ সালকে এ বনের ৫০৪ একর এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। এ বনে দেখা যায় নানা প্রজাতির পাখি। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ঘুঘু, ফিঙে, বালিহাঁস, গুঁইসাপ পানকৌড়ি ইত্যাদি। বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বানর, উদবিড়াল, কাঠবিড়ালি, বানর, মেছো বাঘ ইত্যাদি। নানান প্রজাতির সাপেরও অভায়শ্রম এ বন।
রাতারগুলের সৌন্দর্য বলে শেষ করার নয়। বনের একেবারে শুরুর দিকটায় মুর্তার বন। বর্ষায় বেশির ভাগই ডুবে থাকে এ গাছগুলো। এর পরে মূল বন। বনের যতই গহীন গাছের ঘনত্ব ততই বেশি। কোথাও কোথাও সূর্যের আলো পর্যন্ত দেখা যায় না। দু-একদিন বৃষ্টি না হলে বনের জল এত বেশি স্বচ্ছ হয় যে, বনের সবুজ প্রতিবিম্বকে মনে হয় বনের নিচে আরেকটি বন।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহরে। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট আসতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে আসা যায়। ঢাকা থেকে গ্রিন লাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস যায় সিলেটে। ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়দাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া, মামুন পরিবহন, সিলকম পরিবহন ইত্যাদি সংস্থার নন-এসি বাসও সিলেটে যায়। ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ৯৫ টাকা-৬৯৮ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টায় যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টায় উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৯০-৪৬৫ টাকা।
সিলেট শহর থেকে বিভিন্ন পথে রাতারগুল যাওয়া সম্ভব। তবে পর্যটকরা দুটি পথ ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমত সিলেট-জাফলংয়ের গাড়িতে চড়ে নামতে হবে সারিঘাট। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। সেখান থেকে সিএনজি চালিত বেবি টেক্সিতে চড়ে গোয়াইনঘাট বাজার। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে যেতে হবে রাতারগুল। ১০-১২ জনের উপযোগী সারাদিনের জন্য একটি নৌকার ভাড়া পড়বে ৮০০-১২০০ টাকা। সারি নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে এ পথটি অনুসরণ করতে পারেন। তবে খরচ আর সময়, দুটোই বেশি লাগবে এ পথে। রাতারগুলের সবচেয়ে সহজ আর সুন্দর পথটি হলো সিলেট শহরের পার্শ্ববর্তী খাদিম চা বাগান আর খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে। খুব অল্প সময়েই এ পথ ধরে রাতারগুল পৌঁছানো সম্ভব। এ পথে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা জিপ নিয়ে আসতে হবে শ্রীঙ্গি ব্রিজ। সকালে গিয়ে বিকেলের মধ্যেই বন ঘুরে ফিরে আসা সম্ভব। সারা দিনের জন্য একটি সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া পড়বে ১২০০-১৫০০ টাকা। আর সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে লোকাল সিএনজিতে গেলে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা। শ্রীঙ্গি ব্রিজ থেকে রাগারগুল জঙ্গলে ঢুকতে হবে জেলেদের ছোট নৌকায়। একটি নৌকায় ৪-৬ জন ঘুরে বেড়ানো সম্ভব। ভাড়া লাগবে ৪০০-৮০০ টাকা। রাতারগুলে যেতে যে পথই অনুসরণ করুন না কেন বনে ঢুকতে লাগবে জেলেদের ছোট নৌকা।
কোথায় থাকবেন
সিলেট শহরে রাতে অবস্থান করার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। তবে এ ভ্রমণে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য উপভোগ করতে চাইলে অবস্থান করতে পারেন শুকতারা প্রকৃতি নিবাসে। পাহাড় চূড়ায় চমত্কার আর আধুনিক কটেজ আছে শুকতারায়। শুকতারার কক্ষ ভাড়া ৫০০০-৬৫০০ টাকা। তবে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনে এ মূল্যের উপরে মিলবে ১০ ভাগ ছাড়। যোগাযোগ :শুকতারা প্রকৃতি নিবাস, উদ্দীনের টিলা, শাহপরাণ উপশহর, খাদিমনগর সিলেট। ফোন :০৮২১-২৮৭০৯৯৪-৫,০১৭৬৪৫৪৩৫৩৫। http://www.shuktararesort.com
সাবধানতা
রাতারগুল বেড়ানোর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। এ বনের চারিদিকে জলে পূর্ণ থাকে বলে ভ্রমণকালীন কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বর্ষায় বন ডুবে গেলে বেশিরভাগ সাপ আশ্রয় নেয় গাছের ডাল কিংবা শুকনো অংশে। তাই চারপাশ খেয়াল করে চলতে হবে। এ ছাড়া এ সময় জোঁকেরও উপদ্রব আছে। সাঁতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখা জরুরি। এ ছাড়া বর্ষাকাল বলে ছাতা, বর্ষাতি কিংবা পঞ্চ সঙ্গে নিতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন