ব্লগার, লং মার্চ, প্রগতিশীলতা,বাক স্বাধীনতা - আমাদের ভণ্ডামি!
লিখেছেন লিখেছেন ফয়সাল সরকার ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:২২:৫৯ রাত
সব স্বাধীনতাই দায়িত্বশীলতার সাথে ভোগ করতে হয়। আমরা সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করি - সমাজের একজন সদস্য হিসবে আমার উচিত অন্যদের কথা বিবেচনা করে কাজ করা। অর্থ উপারজন আমার অধিকার, কিন্তু সেটাও এমনভাবে করতে হবে যেন সমাজের অন্যদের ক্ষতি না হয়। সব স্বাধিনতার ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য। বাক স্বাধীনতা এর বাইরে নয়। যা ইচ্ছা তা বলা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা এক নয়। আমাদের কিছু কিছু ব্লগার এ কথা গুলো ভুলে গিয়েছেন। ধর্ম কেও পছন্দ না ই করতে পারেন, কিন্তু সেটা তাকে অধিকার দেয় না কারো ধরমানুভুতিতে আঘাত দেবার। নিজেদের নাস্তিক হিসবে প্রচার করা এসব ব্লগাররা পারতেন পরিশুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করে ধর্মের সাথে তাদের বিশ্বাসের বিরোধটাকে তুলে ধরতে। তা না করে, নিজেদের উৎকর্ষতা/উন্নততর বুদ্ধিবৃত্তি প্রমান করার তাগিদে হয়ত, তারা গালাগালির মাধ্যমে তাদের মনভাব প্রকাশ করেছেন এবং চরম দায়িত্তহিনতার পরিচয় দিয়েছেন। অনেকেই আছেন যারা ধর্ম নিয়ে দুটো গালি দিতে পারলে, বা স্রষ্টা নিয়ে একটা বাজে মন্তব্য করতে পারলে নিজেদের খুব বড় মনে করেন। এবং তাদের অনেকেই সচেষ্ট থাকেন সর্বদা প্রমান করার জন্য যে তারা ধর্ম পালনকারীদের চাইতে মন মানসিকতায় অনেক উচু দরের লোক। এই ধরনের কিছু মানুষ আজকের উদ্ভুত পরসিথিতির জন্য কি কিছুটা হলেও দায়ী নয়? উনাদের হঠকারিতার কারনে আজকে অনেকে সুযোগ পাচ্ছেন ধর্মকে ব্যবহার করে অশান্তি সৃষ্টি করার। একজন কট্টর আওামিলিগার এর সাথে দেখা - উনি বললেন যে উনি থাকবেন প্রথম সারিতে হেফাজত ইসলামির লং মারচে। আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন যদি শহিদ হয়ে যান সেই আশংকায়। এই লোক একবার আমার সাথে অনেক দিন কথা বলেননি আমি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কিছু বলেছিলাম বলে। দেশের এই চরম বিভাজনের দায় কি এইসব ব্লগাররা এড়াতে পারবেন? আমাদের কি উচিত হবে সব দোষ হেফাজত ইসলামির উপর চাপিয়ে দিয়ে খালাস হয়ে যাওয়া? দেশের সব মানুষ, যারা লং মার্চে অংশ নেবে, তারা কি সবাই জামাতে ইসলামির লোক? তারা কি সবাই যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধের রাজনীতির অংশ হিসেবে লং মারচে আসবেন?
না! তাদের অনেকের ধরমানুভুতিতে আঘাত লেগেছে বলে তারা আসছেন - তাদেরকে কিভাবে কে প্ররোচিত করেছে, সেটা অন্য ব্যপার। তাহলে কি বলা যায়না যে এটার পেছনে জামাত রাজনীতির যেমন অবদান আছে, তেমনি অবদান আছে কিছু কিছু ব্লগারদের এবং আমাদের মত লোকদের এবং মিডিয়ার? আমরা এক পক্ষের কাছ থেকে সংযম আশা করব, আর অন্যদের বলব তোমরা চালিয়ে যাও কারন বাক স্বাধীনতা তোমাদের যা ইচ্ছা বলার অধিকার দিয়েছে, তাহলে আমরা দেশে কিভাবে শান্তি আনব? এ পর্যন্ত আমি কেবলমাত্র আনু মোহাম্মাদ স্যার কে এবং আমার দুই একজন কলিগকে, যারা ধর্মের প্রতি অনুরাগি নন, দেখেছি ধর্ম নিয়ে বাজে মন্তব্বের প্রতিবাদ করতে।
আমরা, অনেক প্রগতিশীলরা, এমেরিকার বাক স্বাধিনতার কথা উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করি। এমেরিকা যা করে তার সবই কি ভালো? আর এমেরিকা কিছু করে বলে সেটা অন্য সবার নকল করতে হবে? আর এমেরিকাতেও কিছু "ঘৃণা সৃষ্টিকারী বক্তব্য" আইনত দণ্ডনীয়। পৃথিবীর অন্যান্য অনেক গনতান্ত্রিক দেশে (ভারত, জার্মানি, ফ্রান্স, নরওয়ে এবং আর অনেক) অন্যের ধর্ম, বরণ বা জাতিকে হেয় করে কথা বলা আইন বিরোধী। এধরণের বক্তব্য তাহলে এখানে নিষিদ্ধ হবে না কেন? মজার ব্যপার হল আজ যদি কোন মউলভি অন্য ধর্মের লোকদের নিয়ে অশালিন বক্তব্য দিতে শুরু করেন, তখন আমরাই (এবং প্রগতিশীল মিডিয়া) চিৎকার চেচামেচি শুরু করব, গালাগাল শুরু করব এবং করা কর্তব্য আমাদের। কিন্তু বাক স্বাধিনতার কথা তখন আমাদের মনে থাকবে না। অথচ কেও কেও যখন ধর্ম নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করবেন, আমরা সেটাকে সমর্থন দেব বাক স্বাধিনতার নামে! আমাদের এই ভণ্ডামি বিভক্তি সৃষ্টির ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। কিন্তু আমাদের সেটা মনে থাকবে না।
আর লং মারচ প্রতিহত করার জন্য যারা উঠে পরে লেগেছেন তাদের মনে রাখা উচিত এটা মানুষের অধিকার। তারা কারো বিচার চাইতে পারে - এটা তাদের অধিকার যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গনতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সন্ত্রাসের আশ্রয় না নিবে। আজ যদি অন্য কেও, এমনকি বিএনপি ও লং মারচ করত, আপনারা প্রতিহত করার কথা বলতেন? হরতাল যদি অধিকার হয় তবে লং মারচ ও। হ্যাঁ - অনেকে বলবেন যে এই লং মারচে অনেক মারমুখি লোক থাকবে এবং সম্ভাবনা আছে ভেজাল হবার। কিন্তু গনতন্ত্রের কাছে সেটা বিবেচ্য নয় - যখন তারা সন্ত্রাস করবে, তখন তাদের কে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি দিতে হবে - তার আগে নয়।
হেফাজত ইসলামির উচিত ছিল লং মার্চ না করে অন্য কোন পদ্ধতি যা সহিংসতা সৃষ্টির সুযোগ করে দেবেনা, তা ব্যবহার করা! আর দেশে যখন মাজার পুজা হয়, লং মারচের কথা তখন তাদের মাথায় আসে না কেন? পিরদের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে যখন পরে থাকে মুরিদ, তখন কোথায় থাকে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসা? দেওয়ানবাগি যখন চাঁদে নিজের চেহারা দেখা গেছে বলে দাবি করে , ইমাম শাফি তখন কোন পরদার আড়ালে থাকেন?
এই ভয়াবহ কাজগুলো ইসলামের বেশি ক্ষতি করছে, সাধারন মুসলমানদের কে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে - এসব কাজের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। তাদের উচিত ছিল ঘুষের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে অনেক আগে লং মারচ করা, ফালানি কে মেরে যখন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, তখন লং মারচ করা! তাহলে বুঝতাম আসলেই আল্লাহর/নবির(সঃ) প্রতি ভালবাসা থেকেই আজকের এই মারচ সংগঠিত করছেন তারা! কিন্তু তা তারা করেননি - কারন সেখানে রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত নেই!
বিভক্তির এই ঘোলা জলে মাঝখান থেকে কিছু সাধারন লোকের জীবন যাবে, আমাদের ব্যবসা/বানিজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে, বহির্বিশ্ব থেকে বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে - আমরা পত্রিকা পড়ে হা হুতাশ করব। তারপর আবার যেই কি সেই! প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী বুদ্ধি বেচে খাবে, আর ধর্ম ব্যবসায়ীরা খাবে ধর্ম বেচে! বিজয় হবে নোংরা লোকজনদের, নোংরা রাজনীতির আর পরাজয় হবে মানুষের, মানবতার! এখন কেও আর বিশ্বাজিতের কথা বলেনা, কেও সাগর-রুনির কথা বলেনা, পদ্মা সেতু নিয়ে কিছু হয়েছিল বলে মনে হয়না, ফালানি যে ঝুলছিল তাড়কাটার বেড়া থেকে সেটা তো কোন বিষয় ই নয়! চমৎকার!
--------------------------
এই লাইন টা যদি পড়ছেন এখন, তাহলে ধরে নেয়া যায় এই বিশাল লেখার পুরোটা পড়েছেন। অনেক ধন্যবাদ! আসলে - মনটা খুব তেঁতে আছে চারদিকে বিভিন্ন ধরনের উগ্রতার উদ্ভব দেখে! না লিখে পারলাম না!
বন্ধুরা একটু গুরে আসুন আমাদের ব্লগ এ।ক্লিক করুন eratunes
এবং সকল ব্লগার ভাইদের কে এই ব্লগ এ পোষ্ট করার জন্য আমন্ত্রন জানাচ্ছি।
এই টিউনটি যদি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তাহলে আমাদের এই eratunes এ একটা লাইক দিবেন।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন