জঙ্গিবাদ ও জঙ্গি সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন-জালাল উদ্দিন ওমর

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:১৩:০৭ রাত

আওয়ামী লীগ এবং বামপন্থী সংগঠনের নেতারা দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তারা বিএনপি-জামায়াতকে জঙ্গি এবং জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী করছেন। এসবের ধারাবাহিকতায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বলেছেন, বর্তমান সংসদ জঙ্গিমুক্ত। অর্থাত্ বর্তমান সংসদে কোনো জঙ্গি নেই। এর আরও ব্যাখ্যা হচ্ছে বর্তমান সংসদে জঙ্গি তত্পরতায় জড়িত আছে এমন কোনো সদস্য নেই। আমি মনে করি জঙ্গি এবং জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কারণ জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে, মানুষ বিভ্রান্ত হবে। আর যে কোনো বিষয়ে ভুল ধারণা কেবল বিপর্যয়ই নিয়ে আসে। সবকিছুর জন্য জঙ্গিদের দায়ী করার প্রবণতা প্রকৃত দোষীদেরকে যেমন আড়াল করবে ঠিক তেমনি সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে বার বার জঙ্গি সম্পর্কে কথা বলা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করবে। আর এটা দেশের জন্য কোনো ধরনের সুফল তো বয়ে আনবেই না বরং ভয়াবহ এক বিপদ নিয়ে আসবে। সুতরাং সর্বত্রই জঙ্গি খোঁজার এ প্রবণতা বাদ দিতে হবে এবং সত্যিকার অর্থে জঙ্গিদেরকে নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জঙ্গিদের অবস্থান যতটুকু তাদের বিরুদ্ধে প্রচারণাও ততটুকু করতে হবে। একইভাবে কোনো ঘটনার জন্য জঙ্গিরা যতটুকু দায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও ততটুকু নিতে হবে। তা না করে যদি সবকিছুর জন্য ঢালাওভাবে জঙ্গিদের দায়ী করা হয়, তাহলে এই সুযোগে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। এ সুযোগে অপরাধী আরও বেশি অপরাধে লিপ্ত হবে এবং দিন দিন আরও শক্তিশালী হবে। একইভাবে সর্বত্রই জঙ্গি খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এভাবে বাংলাদেশ যদি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হয় তাহলে জঙ্গি দমনের নামে বাংলাদেশবিরোধী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো এদেশে ঢুকে পড়ার সুযোগ খুঁজবে। এ অবস্থায় দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও বিপন্ন হতে পারে। সুতরাং সর্বত্রই জঙ্গি খোঁজার এই প্রবণতা এখনই পরিহার করতে হবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান সংসদে কোনো জঙ্গি নেই। তার মানে আগের সংসদগুলোতে জঙ্গি ছিল। আগের সংসদ আর বর্তমান সংসদের সদস্যদের পরিচয়গত পার্থক্য হচ্ছে আগের সংসদে বিএনপি, জামায়াত আর ইসলামী ঐক্যজোটের সদস্য ছিল। আর এই সংসদে বিএনপি-জামায়াত আর ইসলামী ঐক্যজোটের কোনো সদস্য নেই। তাহলে কি মন্ত্রী মহোদয় বিএনপি-জামায়াত এবং ইসলামী ঐক্যজোটকে জঙ্গি সংগঠন এবং তাদের সদস্যকে জঙ্গি বলে অভিহিত করেছেন? তিনি সরাসরি বিষযটি খোলাসা না করলেও তার বক্তব্যে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। তিনি নিশ্চয় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি অথবা মহাজোটের কোনো সংসদ সদস্যকে জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করেননি। আর তিনি যদি বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটের সদস্যদেরকে জঙ্গি হিসেবে অভিহিত না করে থাকে তাহলে সংসদে জঙ্গি বলতে কাদেরকে বুঝিয়েছেন তা পরিষ্কার করা দরকার। তাহলে জঙ্গি কারা এবং তাদের পরিচয় ও কর্মকাণ্ড কী, তা জনগণ জানতে পারবে। আমি মনে করি এটা সরকারের দায়িত্ব। শুধু তা-ই নয়, জঙ্গিবাদ কী, কোন কোন কর্মকাণ্ড জঙ্গিবাদ হিসেবে পরিচিত হবে, জঙ্গিবাদ কেন ক্ষতিকর এবং কেন কীভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে হবে তার ব্যাখ্যাও সরকারকে দিতে হবে। কিন্তু তা না করে কথায় কথায় বিপক্ষ শক্তিকে জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করা মোটেও সমীচীন নয়। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে আমরা জঙ্গি, জঙ্গিবাদ এবং এ সম্পর্কে করণীয় কি তা জানতে চাই। তা না করে জঙ্গি এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে ঢালাও মন্তব্য দেশ এবং জাতির জন্য কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ বেশি বয়ে আনবে।

জঙ্গিবাদ একটি সমস্যা, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একইভাবে দেশে বেশকিছু জঙ্গি সংগঠন তত্পর রয়েছে, এ বিষয়েও কারও দ্বিমত নেই। জামাতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং হরকাতুল জিহাদ (হুজি) এদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া আরও বেশকিছু সংগঠনের গোপন তত্পরতা রয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার মাধ্যমে জঙ্গিরা শক্তিশালীভাবে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করে। সেই হামলায় অনেক লোক নিহত হয়। পরবর্তী সময়ে সরকার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দেশব্যাপী পরিচালিত গ্রেফতার অভিযানে জেএমবি ও হুজির বহু নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়। জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও তার সহযোগী ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাইসহ সংগঠনটির অধিকাংশ নেতাই গ্রেফতার হয়। একইভাবে গ্রেফতার হয় হুজির প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানসহ অনেকে। পরবর্তী সময়ে বিচারে শায়খ আবদুর রহমান, তার ভাই আতাউর রহমান সানি, মেয়ের জামাতা আবদুল আউয়াল এবং ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাইয়ের ফাঁসি হয় এবং তা কার্যকর করা হয়। অপরদিকে অনেক নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয় এবং তারা এখন কারাগারে বন্দি। এভাবে জঙ্গি সংগঠনগুলো অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর বড় ধরনের আর কোনো জঙ্গি তত্পরতা পরিলক্ষিত হয়নি এবং জঙ্গি হামলা সংগঠিত হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই জঙ্গিরা দুর্বল হয়ে গেছে বলেই মনে হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কার হওয়ায় এবং অস্ত্রসহ জঙ্গি আটক হওয়ায় প্রমাণিত হয় জঙ্গিরা এখনও সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যায়নি। জঙ্গিরা আবার সংগঠিত হচ্ছে এবং সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সুতরাং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জঙ্গি তত্পরতাকে নির্মূল করতে হবে। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যেভাবে সবকিছুর জন্য জঙ্গিদের দায়ী করছেন এবং জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা বলছেন তাতে মনে হয় জঙ্গিরা বিশাল এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ এবং তারাই দেশে সংঘটিত সব ধরনের অপকর্মের জন্য দায়ী। কিন্তু বাস্তবে তা ঠিক নয়। কারণ দেশে আরও অনেক দুষ্টচক্র রয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, প্রশাসনে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, গুম, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য নিশ্চয় জঙ্গিরা দায়ী নয়। মাদক এবং এইডসের মরণঘাতী আক্রমণে বিশ্বজুড়ে মানব জাতির যে করুণ পরিণতি তার জন্যও নিশ্চয় জঙ্গিরা দায়ী নয়। হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি, শেয়ারবাজার লুট, ইউনিপে টু ইউ’র মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার লুটপাটের সঙ্গে নিশ্চয়ই জঙ্গিরা জড়িত নয়। একইভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা এবং কয়েক লাখ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্যও নিশ্চয় জঙ্গিরা দায়ী নয়। তাহলে জঙ্গিরা নয় বরং ভদ্রলোকেরাই তো সমাজের, রাষ্ট্রের এবং বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। আর সবকিছুর জন্য যদি জঙ্গিদের দায়ী করা হয় তাহলে এসব দুষ্টচক্রের অপকর্ম দৃষ্টির আড়াল হয়ে যাবে এবং তারা পার পেয়ে যাবে। আর এটা কিন্তু দেশের জন্য ক্ষতিকর। কারণ তখন এসব দুষ্টচক্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং তারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাদের অপকর্মে তখন দেশের শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বিপন্ন হবে। সুতরাং সবকিছুর জন্য ঢালাওভাবে জঙ্গিদের দায়ী না করাটাই ভালো। আগে তদন্ত করে দেখতে হবে এবং তদন্তে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আর যে যতটুকু দায়ী তার বিরুদ্ধে ততটুকু শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তিলকে তাল এবং তালকে তিল করা যাবে না। এটা ন্যায়বিচারের যেমন পরিপন্থী, ঠিক তেমনি শান্তির পথে বিরাট এক প্রতিবন্ধকতা। আমি জঙ্গিবাদের পক্ষে কথা বলছি না, জঙ্গিদেরকে সমর্থনও করছি না, বরং দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রকৃত সত্যকে উদঘাটনের কথা বলছি। আর তদন্তের আগেই এবং তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগেই যদি ঘটনার জন্য কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত করে বক্তব্য দেয়া হয় তাহলে তো আর তদন্তের কোনো প্রয়োজনই নেই। কারণ দোষী যখন তদন্তের আগেই চিহ্নিত, তখন দোষীকে যত দ্রুত সম্ভব শাস্তি দেয়াটাই ভালো। আর এ অবস্থায় তদন্ত করাটা সময় এবং অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং তদন্ত চলাকালীন সময়ে এবং তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগেই কাউকে অভিযুক্ত করা যাবে না এবং বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। দেশ এবং জাতির জন্য এটাই কল্যাণকর।

রাষ্ট্র পরিচালনা করে সরকার আর সরকারের ব্যক্তিরা হচ্ছে রাষ্ট্রের কর্ণধার এবং মুখপাত্র। সুতরাং সরকারের ব্যক্তিদের যে কোনো বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি প্রকাশ করে। একইভাবে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের যে কোনো কথাই দেশ-বিদেশে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয় এবং তা সত্য বলেই গৃহীত হয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যেভাবে জঙ্গিবাদের কথা বলছেন এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলে নিজেদের কৃতিত্বের কথা বলছেন, তাতে মনে হয় জঙ্গি তত্পরতা বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যা। আর এসব বক্তব্যের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি জঙ্গিকবলিত দেশ হিসেবেই পরিচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে এবং এতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হবে। অপরদিকে এর মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ তখন জঙ্গি দমনের নামে এদেশে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ হতে পারে। জঙ্গি দমনের নামে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও বহিঃশক্তির আক্রমণ হতে পারে। আর জঙ্গি দমনের নামে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা কেন বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে চাইবে, তাও বিশ্লেষণ করছি। বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ বিধায় বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এই শত্রুকে ধ্বংসের জন্য কাজ করছে। বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ভেঙে গেলে একমুখী যে বিশ্বব্যবস্থার সৃষ্টি হয়, তাতে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিপক্ষ হিসেবে কেবল মুসলমানদেরকে গণ্য করা হয়। পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক গবেষকরা আগামী দিনে পাশ্চাত্যের বিকল্প হিসেবে ইসলামকেই চিহ্নিত করে। আর ইসলামের উত্থান যেহেতু মুসলিমপ্রধান দেশগুলো থেকেই হবে, তাই মুসলিম দেশগুলোকেই তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে গণ্য করে। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর Samuel P. Huntington তার The Clash of Civilizations and the Remaking of World Order নামক বইয়ে সুস্পষ্টভাবে ইসলামের পুনর্জাগরণ ও পাশ্চাত্যের সঙ্গে অনিবার্য সংঘাতের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, ইসলামই হবে পাশ্চাত্যের প্রধান প্রতিপক্ষ। পশ্চিমা বিশ্ব এবং তার সহযোগী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলো হান্টিংটনের এই বাণীকে অনিবার্য সত্য বলেই গ্রহণ করে এবং সেই অনুসারে মুসলিম বিশ্বকে তাদের একমাত্র শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে মুসলমানদেরকে ধ্বংসের কর্মসূচি গ্রহণ করে। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মিসর, আলজেরিয়া, ফিলিস্তিনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে হত্যা করা এবং সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, জর্ডান, আরব আমিরাতসহ অসংখ্য মুসলিম দেশে রাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা তাদের সেই পরিকল্পনারই অংশ। ইরাক, আফগানিস্তান এবং ফিলিস্তিনে অবৈধ আগ্রাসন এবং দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা তারই অংশ। জঙ্গি দমনের নামে পাকিস্তানে নিয়মিতভাবে মার্কিন বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও সেই একই পরিকল্পনারই অংশ। অপরদিকে জঙ্গি হিসেবে যাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তারা সবাই কিন্তু মুসলিম, মুসলিম বংশোদ্ভূত এবং মুসলিম দেশের অধিবাসী। তারা কেউই অন্য ধর্মের অনুসারী নয়। জঙ্গিরা কেউই কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতন্ত্র বা নাস্তিকতার কথা বলে না এবং অনুসারীও নয়। বরং সবাই ইসলামের কথা বলে। কিন্তু তারা পথভ্রষ্ট। তাদের উদ্দেশ্য মহত্ হতে পারে, কিন্তু কর্মপন্থা একেবারেই ভুল। পদ্ধতিটা অগণতান্ত্রিক, অবৈধ এবং ধ্বংসাত্মক হলেও, জঙ্গিরা কিন্তু ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে। এই সুযোগে ইসলামের শত্রুরা ইসলামকে জঙ্গি ধর্ম, ইসলামের অনুসারীদের জঙ্গি এবং এদের তত্পরতাকে জঙ্গি তত্পরতা হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সুতরাং জঙ্গি দমনের নামে এবং এই ইস্যুকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের সুযোগ নিতে পারে। তখন কিন্তু একেবারেই সর্বনাশ্।

পরিশেষে যে কথাটা বলতে চাই, তা হচ্ছে জঙ্গিবাদকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে এবং তার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে সর্বদলীয় কমিটি গঠন করতে হবে এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। তবে এ নিয়ে অতিমাত্রায় কথা না বলাই ভালো। কারণ এতে সবদিক দিয়ে আমাদেরই ক্ষতি। তখন শক্তিশালী শত্রুকে মোকাবিলা করাটা কঠিন হবে। আর নিজেদের সমস্যার কথা বেশি বেশি না বলে সমস্যাটা সমাধানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করাটাই উত্তম। আর এতেই দেশ ও জাতির কল্যাণ নিহিত রয়েছে। বাংলাদেশ জঙ্গিকবলিত দেশ নয় বরং গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবেই বাংলাদেশকে পরিচিত করতে হবে। তাহলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হবে। তাই সবকিছুতেই জঙ্গি না খুঁজে এবং জঙ্গি সম্পর্কে বেশি বেশি কথা না বলে বরং জঙ্গি নির্মূলে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশকে চিরতরে জঙ্গিমুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আর জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলার আগে এবং কাউকে জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করার আগে জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গি যেন কোনো অবস্থায়ই ইসলামকে, ইসলামের অনুসারীদেরকে এবং বিপক্ষ শক্তিকে ঘায়েল করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, সেই ব্যাপারটি অবশ্য অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

মূল লিংক এখানে দেখুন

বিষয়: বিবিধ

১৪০০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

179240
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৪:৪২
সাদাচোখে লিখেছেন : আপনি যা লিখেছেন - তা সুস্থ্য ও সবল চিন্তা প্রসূত লিখা। অমন সুস্থ্য ও সবল চিন্তাভাবনা ধারন করার জন্য সুস্থ্য ও সবল মন দরকার - সর্বোপরী যাদের কাছে আপনার এ্যাপিল তাদের মধ্য জানার ও এ নিয়ে ভাবার ইচ্ছা সম্পন্ন কেউ না কেউ থাকা দরকার। কিন্তু বিষয়টা যদি এমন হয়, আমি পরিকল্পনা করলাম একটা মিথ্যা অপবাদ সৃষ্টি করবো এবং সেই অপবাদ দিয়ে আমি যাকেই আমার শত্রু জ্ঞান করবো - তাকেই বদ করবো। সে ক্ষেত্রে আপনি একাডেমিক আলোচনাকে কিভাবে তাদের মনোঃজগতে পৌছাবেন?

৯/১১ এর পর আমেরিকার এ্যাডভ্যান্সারে বের হবার প্রিপারেশান দেখে - সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা সহ জেহাদ, জেহাদী বই ইত্যাকার অনেক বিষয়ের সংজ্ঞা দাবী করেছিলেন ততকালীন বিজ্ঞ ও বিদ্বগ্ধ জনেরা - আমেরিকা ও ওয়েস্ট তাদের কোয়ারিনটিন করেছিলেন। আজকের সরকার ও তাই আপনাকে ঐ প্রশ্ন চাওয়ার জন্য কোয়ারিন্টিন করতে পারেন। আর যদি মুসলিম হয়ে থাকেন - তবে সরাসরি জংগী বলে সিল মেরে ক্রসফায়ারেও দিতে পারেন।

মোটাদাগে আমি আজকের বিশ্বে জংগী, মৌলবাদী, টেররিস্ট ইত্যাদি শব্দগুচ্ছের আভিধানিক ও ব্যবহারিক মিনিং বা অর্থ করতে পারছি এই যে - কোন মানুষ যদি সচেতন প্রাকটিসিং মুসলিম হয় - তবে সে অবশ্যই জংগী, মৌলবাদী ও টেররিস্ট। আর যদি নামে কিংবা চেহারায় কিংবা পোষাকে মুসলিম হয় - তবে সে তার চেয়ে সুপরিয়র মানুষের (বিত্ত, শরীরের রং, পদ পদবী, ভাষা শৈলী, মুসলিম বই অন্য ধর্মাধারী) কাছে সিম্পলী একজন স্লেইভ তুল্য।

ফ্যাক্টস ও ফিগার বিশ্লেষন করলে দ্বিমত করার আসলে কি কোন অবকাশ আছে?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File