অমানবিক সতীদাহ প্রথা নির্মূলীকরণে মুসলিমদের অবদান
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ২৯ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:০০:৩০ রাত
সনাতন সমাজে সব চেয়ে খারাপ এবং বর্বর প্রথা হিসেবে গণ্য হয়েছে সতীদাহ প্রথা। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে জোর পূর্বক স্বামীর সাথে চিতায় ভস্ম করা ছিল এই প্রথা। ব্রিটিশ শাসনামলে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং রাজা রাম মোহন রায়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার আইনের মাধ্যমে এ প্রথাকে রদ করে।
এখন আসা যাক এই প্রথা প্রচলনের পেছনে কি কি কারণ জড়িত ছিল। এটা নিশ্চিত, ব্রাহ্মণদের হাত ধরেই এ প্রথা এসেছে কারণ ব্রাহ্মণরাই রীতি ও নীতি নির্দেশক। তবে ব্রাহ্মণদের সাথে পারিপার্শ্বিক কিছু বিষয়ও জড়িত আছে বলে অনেক ইতিহাসবিদ মতামত ব্যক্ত করেছেন- তা না হলে হঠাত করে কেন এ প্রথা প্রকটভাবে চলে আসবে। মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন আগ্রাসী শক্তি তখন ভারত আক্রমন করে। এদের আগ্রাসনের প্রধান লক্ষ্য ছিল ধন-রত্ন লুটপাট করা। পরবর্তীতে রাজনৈতিকভাবেও এই আগ্রাসন চলতে থাকে। যেকোন যুদ্ধেই নারীরা পাশবিকতার শিকার হয়- এটা তো আমরা ৭১ এর যুদ্ধেও দেখেছি। ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় পরাজিত হওয়ার পর অন্তপুরের নারীরা শত্রুর হাতে দলিত-মথিত হওয়ার চেয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণকে বেছে নিত। এ ধরণের আত্মাহুতিকে জহর বলা হত। পৃথবীরাজ চৌহানের প্রেমিকা ও স্ত্রী সংয়ুগিতার পরিণতি থেকেও এমন ধারণা পাওয়া যায়। আগ্রাসী শক্তিগুলো সম্মুখ যুদ্ধের চেয়ে বিশ্বাসজ্ঞাতকতা বা ছলনার যুদ্ধ বেশি করত। আর এমন এক যুদ্ধে পৃথবীরাজ চৌহান পরাজিত হোন এবং পরবর্তিতে মৃত্যুবরণ করেন। শুনা যায় তাঁর স্ত্রী তাঁর মৃত্যুর পর আত্মহত্যা করেছিলেন, আবার কেউ কেউ বলেন তিনি সতী হয়েছিলেন- যাই হোক আত্মাহুতি আর আত্মহত্যা তো এখানে এক হয়ে যাচ্ছে।
অনেক ইতিহাসবিদ আগ্রাসী শক্তির আক্রমণ ও যুদ্ধপরবর্তী ফলাফলকেও দায়ী করেছেন। যুদ্ধে জয়ী হয়েই তখন চলত নারীর উপর অত্যাচার-ধর্ষণ। যুদ্ধ জয় করা নারীরা ছিল পন্যের মত। এত নিপীড়ণের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয় ছিল তাদের কাছে। আর সমাজও এমন দৃশ্য দেখার আগে নারীদের মৃত্যুর ব্যবস্থাই করে দিত। — [সজল শর্মা, প্রথম আলো ব্লগ]
সতীদাহ প্রথা নিয়ে উপরোল্লেখিত দুটি প্রতিবেদনের মূল বক্তব্যগুলো হচ্ছে:
১) হিন্দু ধর্মের সাথে সতীদাহ প্রথার কোনোই সম্পর্ক নেই,
২) সতীদাহ প্রথার প্রচলন হয়েছে ভারতে মুসলিম আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে,
৩) হাজার হাজার সতীদাহের ঘটনা মূলত মুসলিম আগ্রাসনের কারণেই ঘটেছে, এবং
৪) রাজা রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার আইনের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথাকে রদ করেছে।
তাই বাধ্য হয়ে এ বিষয়ে পড়াশুনা করে যা বুঝলাম তাতে দেখলাম সতীদাহ প্রথা বন্ধে ভারতীয় মুসলিমদের অবদান শুধু মুছেই ফেলার চেষ্টা করা হয়নি, রীতিমতো তা অস্বীকার করে উল্টোদিকে সতীদাহের দায় মুসলিমদের ঘাড়েই চাপিয়ে দেওয়ার হীন চেষ্টা করা হয়েছে। এই লেখায় সতীদাহ প্রথার উৎপত্তি, প্রকৃত ইতিহাস, ও এই প্রথা নির্মূলীকরণে মুসলিমদের অবদান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হবে।
ভারতীয় পৌত্তলিকবাদীদের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ধর্মে যেহেতু চরম অমানবিক দাস প্রথা বিদ্যমান, সেহেতু নাস্তিকতার লেবাস লাগিয়ে কিছু ধূর্ত খুব সুকৌশলে ইসলামের মধ্যেও অমানবিক দাস প্রথা গুঁজে দেবার চেষ্টা চালাচ্ছে; আব্রাহাম লিঙ্কনকে "দাস প্রথা উচ্ছেদের জনক" বানিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে "দাস প্রথা-বিরোধী মানবতাবাদী" হিসেবে দেখিয়ে মুসলিমদের সামনে 'মানবতাবাদী আত্মতৃপ্তি'র ঢেকুর তুলছে। অন্যদিকে আবার এরা সতীদাহ প্রথা নির্মূলের জন্য পুরো কৃতিত্ব দিয়ে যাচ্ছে হিন্দু সমাজ বা হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের। বলা হচ্ছে যে, ঐ সংস্কারকদের কল্যাণে হিন্দুসমাজের সতীদাহ প্রথা-সহ আরো কিছু অমানবিক প্রথা নির্মূল হবার ফলে হিন্দুসমাজ বিবর্তিত (!) হয়েছে তথা সভ্য হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিমরা এখনো অবিবর্তিত বা অসভ্যই রয়ে গেছে, যেহেতু তারা তাদের ধর্মের কোনো অমানবিক প্রথাকেই নির্মূল করেনি। কিন্তু মুসলিমরা ইসলামের কোন্ অমানবিক প্রথাকে (!) নির্মূল করবে, তা স্পষ্ট করে বলা হয় না। প্রতিহিংসাপরায়ণ বা পরশ্রীকাতর মানসিকতায় সত্যকে মেনে নিতে না পারলে যা ঘটে, সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আস্তিক-নাস্তিক-নিধর্মী নির্বিশেষে কিছু বর্ণবাদী হিন্দু ও তাদের দোসরদের শয়নে-স্বপনে-জাগরণে একটাই চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়, আর তা হচ্ছে ইসলামের নবী ও ইসলামের দর্শনকে যে কোনো প্রকারে হেয় করা এবং মুসলিমদের অবদানকে যে কোনো ভাবে অস্বীকার করা কিংবা সম্ভব হলে একেবারে মুছে ফেলা। এই ধরণের মানসিকতার প্রপাগাণ্ডিস্টদের সাথে যুক্ত হয়েছে প্রগতিশীলতার দাবিদার ও ভাদা মানসিকতার পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত মুসলিম নামধারী কিছু নাস্তিক।
এবার আমরা আমাদের আলোচনাকে কোনো পৌরাণিক কল্পকাহিনীতে না টেনে জেনে নিই সতীদাহ প্রথার উৎপত্তি, প্রকৃত ইতিহাস, এবং লালন পালন সম্পর্কে।
গুপ্ত সম্রাজ্যের (খৃষ্টাব্দ ৪০০) আগে থেকেই ভারতবর্ষে সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল। প্রচীন সতীদাহ প্রথার উদাহারণ পাওয়া যায় অন্তর্লিখিত স্মারক পাথরগুলিতে। সবচেয়ে প্রাচীন স্মারক পাথর পাওয়া যায় মধ্য প্রদেশে, কিন্তু সবথেকে বড় আকারের সংগ্রহ পাওয়া যায় রাজস্থানে। এই স্মারক পাথরগুলিকে সতী স্মারক পাথর বলা হতো যেগুলো পূজা করার বস্তু ছিল [Shakuntala Rao Shastri, Women in the Sacred Laws – The later law books (1960)]। ডায়োডরাস সিকুলাস (Diodorus Siculus) নামক গ্রীক ঐতিহাসিকের খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের পাঞ্জাব বিষয়ক লেখায়ও সতীদাহ প্রথার বিবরণ পাওয়া যায় [Doniger, Wendy (2009). The Hindus: An Alternative History. Penguin Books. p. 611]। তাছাড়া, আলেক্সান্ডারের সাথে ভারতে বেড়াতে আসা ক্যাসান্ড্রিয়ার ইতিহাসবিদ এরিস্টোবুলুসও সতীদাহ প্রথার বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। খৃষ্ট পূর্বাব্দ ৩১৬ সালের দিকে একজন ভারতীয় সেনার মৃত্যুতে তার দুই স্ত্রীই স্বপ্রণোদিত হয়ে সহমরণে যায় [Strabo 15.1.30, 62; Diodorus Siculus 19.33; "Sati Was Started For Preserving Caste" Dr. K. Jamanadas]। [সূত্র: উইকিপিডিয়া]
এ ছাড়াও আরো অনেক লেখকের অনেক ধরণের বক্তব্য আছে। কাজেই সতীদাহ প্রথাকে ভারতবর্ষে ইসলামের আগমনের সাথে মিলিয়ে ফেলা অসৎ উদ্দেশ্য ও ডাহা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। সঙ্গত কারণে সতীদাহ প্রথা হিন্দু শাস্ত্রে আছে কি নেই, তা আলোচনার বাইরে রাখা হলো।
সতীদাহ প্রথা নির্মূলীকরণে মুসলিমদের আইনানুগ অবদান
১. সতীদাহ প্রথা বন্ধের প্রথম সরকারি প্রচেষ্টা মুসলিমরা করেছিলেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলক সর্বপ্রথম এই প্রথা বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। [L. C. Nand, Women in Delhi Sultanate, Vohra Publishers and Distributors Allahabad 1989]
২. মুঘল সম্রাটদের মধ্যে যারা সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে হুমায়ূন স্থানীয় হিন্দুদের প্রতিবাদের মুখে পড়েছিলেন। [Central Sati Act – An analysis by Maja Daruwala is an advocate practising in the Delhi High Court. Courtsy: The Lawyers January 1988. The web site is called "People's Union for Civil Liberties"]
৩. অনেক সময় মুঘল প্রসাশন থেকে বিধবা মহিলাদের পেনশন বা উপহার দেওয়া হতো সতীদাহ না করার জন্য। [উপরের সূত্র দ্রষ্টব্য]
৪. শিশুদের এই প্রথা থেকে রক্ষা করা হয়েছিল। সম্রাট শাহজাহানের সময় নিয়ম ছিল কোনো অবস্থাতেই যেসব মহিলাদের সন্তান আছে তাদের দাহ হতে দেওয়া হবে না। [XVII. "Economic and Social Developments under the Mughals" from Muslim Civilization in India by S. M. Ikram edited by Ainslie T. Embree New York: Columbia University Press, 1964. This page maintained by Prof. Frances Pritchett, Columbia University]
৫. সব থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয় সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়। ১৬৬৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি রুল জারি করেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে মুঘল কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত দেশের কোথাও সতীদাহ ঘটতে সরকারি অনুমতি দেওয়া হবে না। ইউরোপীয় পর্যটকদের বর্ণনা অনুযায়ী সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলের শেষের দিকে সতীদাহ প্রথা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, শুধু রাজাদের স্ত্রীরা ব্যতীত। [XVII. "Economic and Social Developments under the Mughals" from Muslim Civilization in India by S. M. Ikram edited by Ainslie T. Embree New York: Columbia University Press, 1964. This page maintained by Prof. Frances Pritchett, Columbia University]
সতীদাহ প্রথা বন্ধে ইসলামের পরোক্ষ অবদান
ইসলামের বিভিন্ন শিক্ষা নিয়ে হিন্দু ধর্মের সংষ্কারে সৃষ্টি হয় শিখ ধর্ম যাতে সতীদাহ প্রথা একেবারে নিষিদ্ধ। তার মানে ভারতে সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের প্রথম অমুসলিম ভারতীয় পদক্ষেপটিও আসে ইসলামেরই প্রভাবে। খারাপকে খারাপ জানতে পারা অনেক বড় বিষয়, আর এই কাজটিই ভারতে ইসলাম করেছে। ইসলাম সবাইকে মুসলিম বানাতে না পারলেও ভারতের সার্বিক মূল্যবোধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সতীদাহ যে একটি অমানবিক প্রথা, নিদেনপক্ষে এটা ভারতীয়দের বুঝাতে পেরেছে – শিখ ধর্মে সতীদাহ নিষিদ্ধ হওয়া তারই একটি বাস্তব প্রতিফলন।
রাজা রামমোহন রায়ও ইসলাম সম্পর্কে গভীরভাবে পড়াশুনা করেন, কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন করেন, এবং মুতাজিলা ও সুফীবাদ দ্বারা প্রভাবিত হন। ফলে তিনি মূর্তি পূজা ছেড়ে দেন এবং একেশ্বরবাদী হয়ে যান। যার ফলশ্রুতিতে পিতার সাথে মতবিরোধের ফলে তাকে গৃহত্যাগ করতে হয় [সূত্র]। তাই একেশ্বরবাদী রাজা রামমোহনের মনন সৃষ্টিতে ইসলামের অবদান অস্বীকার করা যায় না। এজন্য তাঁর দ্বারা সনাতন ধর্মের যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, তাহলে সেই উপকারের পিছনে ইসলামের নাম রাখতেই হবে।
উপসংহার
বলা হচ্ছে হিন্দু সমাজ থেকে সতীদাহ প্রথা নির্মূল হয়েছে। এটি একেবারেই অসত্য একটি দাবি। কারণ, আধুনিক কালেও এর উদাহরণ পাওয়া যায়। তাই সঠিকভাবে বললে বলতে হবে, সময় ও পরিস্থিতির চাপে পড়ে সতীদাহ প্রথা প্রায় বন্ধ হয়েছে। কেননা আগে থেকেই ব্রাহ্মণ স্কলার ও প্রভাবশালী হিন্দুরা এই প্রথা বন্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ধর্ম দিয়ে সতীদাহ প্রথাকে সমর্থন করারও চেষ্টা করা হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, বিধবা নারীদের নির্বাণ লাভের জন্য সতীদাহ একটি পূণ্যের কাজ। [সূত্র: উইকিপিডিয়া]
বাস্তবতা হচ্ছে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রথম বারের মতো পদক্ষেপ নেন সুলতান মুহাম্মদ তুঘলক। এর পর একে একে সম্রাট হুমায়ূন, আকবর, শাহজাহান, ও আওরঙ্গজেব সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেন। [সূত্র: উইকিপিডিয়া]
কিন্তু সতীদাহ প্রথাকে যেহেতু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পূণ্যের কাজ মনে করা হয় সেহেতু এরকম একটি প্রথাকে অল্প সময়ে বা চাওয়া মাত্রই নির্মূল করা বাস্তবে সম্ভব নয়। তবে মুঘল সম্রাটরা ধাপে ধাপে এই প্রথা নির্মূলের কাজ অনেকটাই প্রশস্ত করেছিলেন। এই প্রথার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়েছিল। ইউরোপীয় পর্যটকদের বক্তব্য অনুযায়ী আওরঙ্গজেবের শাসনামলের শেষের দিকে সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত না হলেও একেবারে কমে যায়।
রাজা রামমোহন রায়ের আগ পর্যন্ত সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের কোনো রকম ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যায় না, যেখানে মুসলিম শাসক এবং ইসলামের দর্শনের সংস্পর্শে থেকে সতীদাহ প্রথা প্রায় নির্মূলের পথে এসেছিল। অথচ কয়েক বছরের আন্দোলন প্রচেষ্টার জন্য রাজা রামমোহন রায় ও বৃটিশ গভর্ণর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক-কে সতীদাহ প্রথা বন্ধের পুরো কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে যে প্রথা সমাজের মানুষের মন মগজে পূণ্যকর্ম চর্চা বলে পালিত হয়ে আসছিল সেই প্রথা মাত্র কয়েক বছরে ব্যক্তি বিশেষের প্রচেষ্টায় নির্মূল হয়ে যাবে, সে কথা জ্ঞানপাপীরা দাবি করলেও বাস্তববাদীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
প্রকৃতপক্ষে, রাজা রামমোহন রায় তাঁর এক বৌদিকে জোরপূর্বক সতী বানানোর ঘটনা দেখে ১৮১২ সালের দিকে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেন। তার আগ পর্যন্ত হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের মধ্য থেকে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে কোনো রকম আন্দোলনের কথা শোনা যায় না। ফলে রাজা রামমোহন রায়ের সাথে সাথে আপামর হিন্দু সমাজ কোনো ভাবেই এই প্রথা নির্মূলের কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না – এককভাবে তো নয়-ই। এখনো সুযোগ দেওয়া হলে বর্ণ হিন্দুদের মধ্যে সতীদাহ প্রথা আবার শুরু হবে – বিশেষ করে ভারতে – কারণ, এই প্রথার পুনঃপ্রচলনে ও একে টিকিয়ে রাখতে ভারতীয় বর্ণ হিন্দুরাই ছিল সবচেয়ে অগ্রগামী। তার প্রমাণ হচ্ছে ১৮২৯ সালের দিকে বৃটিশ শাসনামলে এই প্রথার বিরুদ্ধে পুনারায় আইন করা হলেও পরবর্তীতে সতীদাহের ঘটনার খবর পাওয়া যায়।
অতএব, হিন্দু সমাজের এই চরম বর্বর ও অমানবিক প্রথা উচ্ছেদে মুসলিমদের অবদানকে যারা পরিকল্পিত ভাবে মুছে ফেলে উল্টোদিকে মুসলিমদের উপরই এর দায় চাপাতে চায় ??Ƥাদের উচিত সঠিক ইতিহাসের দিকে পুনরায় ফিরে তাকানো। তাহলেই তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হবে যে, সতীদাহ প্রথা প্রচলনের সাথে মুসলিমদের কোনো রকম সম্পর্ক তো নেই-ই বরং এই প্রথা নির্মূলীকরণে মুসলিমদের অবদান অনস্বীকার্য |
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন