এ কোন ফাঁপড়ে পড়ল আমেরিকা
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৭:৪৯:৩৫ সন্ধ্যা
ফাঁপড়ে পড়ে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেন ওবামা। এরকম সমস্যায় পড়তে হবে তা ভাবেনওনি। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বা বিল ক্লিনটনকে কখনো এরকম মুশকিলে পড়তে হয়নি। কারণ এতদিন আমেরিকা যা করেছে তাতে অন্ধের মতো সায় দিয়ে এসেছে তাদের ঐতিহাসিক বন্ধু বৃটেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমেরিকার মিত্র শক্তি বৃটেন, ফ্রান্স সামরিক ও কূটনীতিক কৌশলে সব সময়ই আমেরিকার দোসর হয়েছে। ফলে ভিয়েতনাম থেকে নিকারাগুয়া, হালের বসনিয়া-কসোভো থেকে ইরাক বা আফগানিস্তান, যেখানেই আমেরিকা দুদ্দাড়িয়ে অভিযানে নেমেছে সেখানেই সবরকম মদত দিয়েছে বৃটেন। কিন্তু সিরিয়ার ঘটনায় হঠাৎই বদলে গেল ছবিটা। ওয়াশিংটন দেখতে পেল হঠাৎই তাদের পাশে নেই পুরনো বন্ধু লন্ডন। রাসায়ানিক অস্ত্র ব্যবহার করে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে সিরিয়ার বিতর্কিত ও স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট বাশার অল আসাদকে গদিচ্যুত করতে এবং সাদ্দাম হুসেনের মতো তার দশা করতে আদাজল খেয়ে নেমেছে সিআইএ, পেন্টাগন। সিআইএ ও পেন্টাগনের নীলনকশায় পূর্ণ অনুমোদন দিয়েছে হোয়াইট হাউস। কিন্তু এবার বিধি বাম। ইরাক, আফগানিস্তানের মতো ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারছে না আমেরিকা। বৃটেন, ফ্রান্স সহ অনেক পুরনো বন্ধু সিরিয়া ইস্যুতে আমেরিকার পাশে নেই। তারা আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এদিকে, সিরিয়া ইস্যুতে আমেরিকার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চিন ও রাশিয়া। ফলে যুদ্ধের দিকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়েও চরম ফাঁপড়ে পড়েছেন ওবামা। এই অবস্থা কূটনৈতিক দোলাচলে সাম্প্রতিককালে পড়েনি আমেরিকা।
রাসায়ানিক অস্ত্র ব্যবহার করে সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষকে খতম করে দেওয়ার যে অভিযোগ ওবামা করেছেন তা উড়িয়ে দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চ্যালেঞ্জ করেছেন, ভুলভাল কথা বলছেন ওবামা। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ কোনও রাসায়ানিক অস্ত্রই ব্যবহার করেনইনি। ওটা বিদ্রোহীবাহিনীর কাজ। এটা চক্রান্ত। আমি চ্যালেঞ্জ করছি এরকম কিছু ঘটেনি। সংবাদসংস্থা এএফপিকে পুতিন জানিয়েছেন, "আমেরিকা ননসেন্সের মতো কথা বলছে। ওদের 'কমন সেন্সটাই' নেই। গোটাটাই সিরিয়া দখলের চক্রান্ত। তাছাড়া সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার ও তা কার্যকর করার ওরা কে?" ব্লাডিভস্তক থেকে পুতিনের বার্তা, সিরিয়ায় যদি গণবিধ্বংসী রাসায়ানিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েই থাকে তাহলে তার প্রমাণ আমেরিকা রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতিনিধিদলের হাতে তুলে দিক। আমাদেরও দেখাক। কিন্তু ওদের আমরা সিরিয়ার বিরুদ্ধে একতরফা ব্যবস্থা নিতে দেব না।"
সিরিয়ার যুদ্ধে বৃটেন অংশগ্রহণ করবে কি না এই নিয়ে বৃহস্পতিবার বৃটেনের হাউস অফ কমন্সে বিতর্ক চলে আট ঘণ্টা। তারপর হয় ভোটাভুটি। আমেরিকার সমর্থনে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পক্ষে ভোট পড়ে ২৭২টি। আর কিছুতেই যুদ্ধে না যাওয়ার ও আমেরিকাকে কোনওভাবেই সমর্থন না করার পক্ষে ভোট পড়ে ২৮৫টি। ফলে ভোটাভুটি করে ওয়াশিংটনকে লন্ডনের স্পষ্ট বার্তা, আমরা তোমাদের পাশে নেই। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানিয়েছেন, "বৃটিশ জনসাধারণের মনোভাব বৃটিশ এমপিদের মাধ্যমে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে। তারা সিরিয়ায় আগ্রাসনের বিপক্ষে। তাতে প্রেসিডেন্ট আসাদ থাকল না গদিচ্যুত হল তা নিয়ে বৃটেনের নাগরিকদের কোনও মাথাব্যথা নেই। গোটা বিষয়টি সিরিয়ার জনসাধারণের উপরই আমরা ছেড়ে দিচ্ছি।"
এদিকে, পলাতক মার্কিন নিরাপত্তা ও তথ্যকর্মী এডোয়ার্ড স্নোডেনকে সরাসরি আশ্রয় দেওয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়। তিক্ততা চরমে ওঠায় পুতিন-ওবামা সাক্ষাৎ ও শীর্ষ বৈঠক পর পর দু'বার বাতিল হয়েছে। যুদ্ধবিমানবাহী দুটি মার্কিন রণতরী ও বিশাল সংখ্যক মার্কিন মেরিনস যখন সিরিয়ায় হামলা চালাতে ও সিরিয়ায় বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিতে শুধু সঙ্কেতের অপেক্ষা করছে তখন রাশিয়া তার দুটি যুদ্ধ বিমানবাহী রণতরীকে কৃষ্ণ সাগর ও আটলান্টিক থেকে ভূমধ্যসাগরের দিকে রওনা হওয়ার নির্দেশ দিযেছে। সিরিযায় মার্কিন হামলা হলে তাদেরকে তা প্রতিরোধ করার নির্দেশ দিযেছে ক্রেমলিন। স্নোডেনকাণ্ডের পর ক্রেমলিনের এহেন পায়ে পা লাগিয়ে সঙ্ঘাতে যাওয়ার ঘটনায় খুবই আশ্চর্য হোয়াইট হাউস। সিরিয়ায় আমেরিকা যাতে কোনওভাবেই হস্তক্ষেপ না করে সেজন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্যারিস ও বেজিং। কাবুল ও বাগদাদের পর দামাস্কাসেও আমেরিকা তার একজন তাঁবেদার প্রেসিডেন্ট বসাবে এটা মানতে নারাজ বেজিং, মস্কো, প্যারিস। এদিকে, আমেরিকা চাপে পড়ে যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে আসায় ফের পেশি শক্তির আস্ফালন শুরু করে দিযেছেন স্বৈরাচারী আসাদ।
ইরান সাফ জানিয়েছে, তাদের বন্ধু আসাদকে ক্ষমতা থেকে হটাতে গেলে তারা সরাসরি মার্কিন বন্ধু ইসরাইলের মাটিতে হামলা চালাবে। অর্থাৎ সাদ্দামের নীতি নিয়েছে তেহরান। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, সিরিয়াতে আমেরিকা একটি মিসাইল ছুঁড়লে বা বুলেট দাগলে তার দ্বিগুণ হামলা হবে ইসরাইলে। যদিও ইসরাইলের পালটা হুমকি, ইরানকে চরম শিক্ষা দিতে তারাও তৈরি।
শনিবার পর্যন্ত মার্কিন কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, হোয়াই হাউস চাইছে সিরিয়ায় আসাদকে হটাতে একটা ছোট মাপের, কম সময়ের কৌশলগত আঘাত হানতে। "স্মল ইনটেনসিটি স্ট্র্যাটেজিক ওয়ার" চায় ওয়াশিংটন। কারণ যুদ্ধটাকে কোনওভাবেই ইরাক বা আফগানিস্তানের মতো বড় মাপের বানাতে চায় না তারা। এতে ব্যাপক শক্তি ও অর্থ ক্ষয় হবে। দু তিন সপ্তাহের লড়াইয়ে কাজ হাসিল করতে চায় তারা। সিয়েরা লিওন, সোমালিয়ার মতো একটা ছোটখাট অপারেশন চালাতে উদ্যত পেন্টাগন। কিন্তু এবার তাতে সব শক্তি দিয়ে বাধা দিচ্ছেন পুতিন। পুতিন আমেরিকাকে চাপে ফেলেছেন। ইরান পালটা হামলার হুমকি দিচ্ছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘও পাশে নেই। তার উপর বৃটেন,ফ্রান্সও পাশে নেই। বৃটেন পাশে না থাকায় ন্যাটো জোটের কাউকেই পাশে পাচ্ছে না আমেরিকা। ফলে একা আমেরিকা সিরিয়া নিয়ে চরম ফাঁপড়ে পড়েছে। এদিকে, বিদ্রোহীবাহিনীও জমি হারাচ্ছে সিরিয়ায়। নরক সিরিয়ার দখল নিয়ে তাল ঠুকছে সব পক্ষই। ফলে ফের বারুদের স্তূপে মধ্যপ্রাচ্য।
সূত্র: ওয়েবসাইট।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন