আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যেতে চায় এই নাস্তিকের দল!! বাংলাদেশ প্রতিদিন এই লেখাটি প্রকাশ করেছে। তসলিমা নাসরিন আর বাংলাদেশ প্রতিদিন কি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়?

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ২৬ জুন, ২০১৩, ১১:৪০:২৭ সকাল

বিয়ের প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি? -তসলিমা নাসরিন

মানুষ বিয়ে করে কেন? নির্বিঘ্নে যৌনসম্পর্ক করা, সন্তান জন্ম দেওয়া-–এর জন্য বিয়ের তো দরকার নেই! মানুষ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনও প্রাণীর মধ্যে বিয়ের কোনও রীতি নেই, অথচ দিব্যি তারাএকত্রবাস করছে, সন্তান জন্ম দিচ্ছে, সন্তানকে খেটে খুটে বড় করছে। পরস্পরেররপ্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্যও বিয়েটা জরুরি নয়।

অনেক প্রাণী আছে যারা যৌবনের শুরুতে যে সঙ্গী বেছে নেয়, সেইসঙ্গী নিয়েই দিব্যিসুখে শান্তিতে বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়। অন্য কারও জন্য লোভ করে না, কাউকে নিয়ে আবার নতুন সংসার পাতার কোনও স্বপ্ন আর দেখে না। অবিশ্বাস্যরকম বিশ্বস্ত, একগামী। যত দূরেই যাক, যত সমুদ্রই পেরোক, যত বয়সই বাড়ুক, ঘরে ফিরে পুরোনো সেই সঙ্গীকেই চুমু খায়, তার বুকেই মাথাটা রাখে। পরকীয়া কাকে বলে, বহুগামিতা কাকে বলে, বিশ্বাসঘাতকতা কাকে বলে জানেই না। অ্যালবাট্রোস, রাজহাঁস, কালো শকুন, ন্যাড়া ঈগল, টার্টল পায়রা, ডিক-ডিক হরিণ, বনেটমাথা হাঙ্গর, গিবন, ফ্রেঞ্চ এঞ্জেলফিস, ছাইরঙা নেকড়ে, প্রেইরি ভোল--এদের কথা বলছি।

মানুষ তো বিয়ে করে একসঙ্গে সুখে শান্তিতে সারা জীবন কাটানোর জন্য কিন্তু ক’জন পারে, শুনি?

বেশির ভাগের বিয়েই হয় ভেঙে যায়, অথবা টিকে থাকলেও ভালোবাসাহীন টিকে থাকে। টিকিয়ে রাখতেহয় সন্তানের অসুবিধে হবে বা অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে, বা লোকে কী বলবে ভয়ে। এভাবে টিকে থাকাকে ঠিক টিকে থাকা বলে না। ঘরে স্ত্রী রেখে বা স্বামী রেখে দিব্যি অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক গড়ছে মানুষ। সেই সম্পর্কওভেঙে যায়, আবার নতুনসম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানুষ ন্যাড়া ঈগল নয়, বা কালো শকুন নয়। একগামিতা মানুষের চরিত্রে নেই। মানুষ বহুগামী।মানুষ বহুগামী, এও কিন্তু হলফ করে বলা যায় না। মানুষ আসলে জটিল এবং বিচিত্র। একগামী, বহুগামী, অসমকামী, সমকামী, উভকামী-- মানুষ অনেক কিছুই। নতুন কিছুতে অভ্যস্ত হতে, পুরোনো স্বভাব পাল্টাতেও মানুষের জুড়ি নেই।

প্রায় সব ধর্মই বিয়েকে পুরুষ আর নারীর ‘পবিত্র মিলন’ বলে ঘোষণা করেছে। ঈশ্বরই নাকি আগে থেকে সঙ্গী নির্বাচনকরে রাখেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আর যা কিছু ঘটুক, বিচ্ছেদ যেন না ঘটে, ঈশ্বর সতর্ক করে দিয়েছেন।তাতে কী! প্রচণ্ড ঈশ্বর ভক্তরাও ঈশ্বরের এই উপদেশ আজকাল আর মানেন না।

বিয়ে যদিও ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু ধরে বেঁধে একে সামাজিক করে ফেলা হয়েছে। পুরুষদের না করা হলেও মেয়েদের করা হয়েছে সামাজিক সম্পত্তি। বিয়ের আগে মেয়েটা কারও সঙ্গে প্রেম করেছে কি না, ঠিকঠাক কুমারীছিল কি না, বিয়ের পর স্বামী ছাড়া আর কারও সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছে কি না, কার সঙ্গে বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছে, কখন ফিরছে,বাইরের কোনও পুরুষলোক বাড়িতে ঢুকেছে কি না, এসব শুধু বাড়ির নয়, বাড়ির বাইরের লোকও লক্ষ রাখছে। সমাজের দশটা লোক দেখছে বলেই পান থেকে চুন খসলে মেয়েদের নিয়ে সমাজে মুখ দেখাতে পারে না বাবারা, ভাইয়েরা, কাকারা। মেয়েদের খুন করে পরিবারেরর ‘সম্মান’ রক্ষা করে। সভ্য শিক্ষিত বিশ্ব থেকে বিয়ে প্রায় উঠে যাচ্ছে। কিছু লোক অবশ্য করছে বিয়ে! এভারেস্টটা আছে বলে যেমন অনেকে এভারেস্টে চড়ে, বিয়েটা আছে বলেই অনেকে বিয়েটা করে। বিয়ের চল চলে গেলে আর করবে না।

যে প্রথাচলছে, অধিকাংশ লোক সেই প্রথাকেই চালিয়ে নিয়ে যায়।আর, যার প্রচলন নেই, তাকে চালু করতে খুব অল্প ক’জনই উদ্যোগ নেয়। অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা বিয়ে না করেও দিব্যি সংসার করছে বছরের পর বছর। বিয়ে না করেই সন্তান জন্ম দিচ্ছে। বিয়ের পিতৃতান্ত্রিক চরিত্র নিয়ে বিস্তরহাসাঠাট্টা করছে। কিন্তু ধর্ম যেমন মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ার পরও টিকে আছে,বিয়েটাও ওই ধর্মের মতোই। যুক্তিহীন, কিন্তু টিকে আছে। কুসংস্কার যেমন হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকে! তবে ওরা ধীরে ধীরে বিলুপ্তও হয়ে যায় বটে। বিয়েরও বিলুপ্তি ঘটবে।

উত্তর- ইওরোপের দেশগুলোয় বিয়ে করার পেছনে গোপন একটি কারণও অবশ্য আছে, বিয়ে করলে ট্যাক্স কম দিতে হয়,সন্তানাদি পোষার খরচসব রাষ্ট্রই দেয়। মানুষ বিয়ে করছে না,বাচ্চাকাচ্চাতেও খুবএকটা কারওর উৎসাহ নেই, বিয়ের প্রথাটি ভেঙে গেলে সন্তান উৎপাদন যে হারে কমছে,সেটি আরও কমে যাবে, উত্তর-ইওরোপীয়দের অস্বিস্ত্বই ভবিষ্যতে থাকবে না, এই ভয়ে বিয়েতে উৎসাহ দিতে জনগণের নাকের ডগায় ট্যাক্সকমানোর মুলো ঝুলিয়েছে সরকার। সুযোগ সুবিধের আশায়বিয়ে করছে বটে কিছু লোক, তবে বেশির ভাগ লোকই হয় একা থাকে, নয়তো বিনে-বিয়ে’য় একত্রবাস করে।

ষাট দশকের শেষ দিকে সমাজের বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ বেরিয়েএসেছিল পুরোনো রাজনীতি আর পুরোনো সমাজব্যবস্থা আমূল পাল্টে ফেলতে। ভালো মেয়ে হতে হলে কৌমার্য, সতীত্ব, মাতৃত্ব ইত্যাদি বজায় রাখতে হয় -- পুরোনো এই ধারণাটির গায়েও কুড়োল বসিয়েছিল।

রীতিমত বিয়ে করাই বন্ধ করে দিয়েছিল সেদিনকার হিপিরা। অনেকে একবাড়িতে বাস করতো, সবার সঙ্গে সবারই সেক্স হত, বাচ্চাকাচ্চা হলে সবাই মিলে দেখাশোনা করতো। সেই ‘কমিউন’ জীবন বেশি বছর টেকেনি। হিপিরা জয়ীহলে আজ বিয়েটা ইতিহাসের পাতায় স্থান পেতো, সমাজে নয়। অনেক কবি সাহিত্যিক দার্শনিক বিয়ে সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, বিয়েটা যে অনর্থক একটা জিনিস, তা বেশ কায়দা করে বুঝিয়েওদিয়েছেন। ‘নিজের বিয়েয় আর অন্তেষ্টিক্রিয়ায় পার্থক্য একটাই, বিয়ের ফুলগুলোর গন্ধ পেতে পারো, আর অন্তেষ্টির ফুলগুলোরপারো না’। অস্কার ওয়াল্ড বলতেন, ‘সবসময় প্রেম ভালোবাসায় ডুবে থাকা উচিত। সে কারণেই কখনও বিয়ে করা উচিত নয়’।

লিংকঃ

http://www.bd-pratidin.com/2013/06/23/2389

বিষয়: বিবিধ

২৫৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File