আমাদের জাতীয় সংসদে যে ভাষায় কথা বলেন মাননীয়(!!!) সাংসদেরা| এরাই বাংলাদেশর প্রতিনিধিত্বকারী| এদের দিয়ে কিভাবে সম্ভব বাংলাদেশের উন্নয়ন?
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ১৪ জুন, ২০১৩, ০৯:২৫:২০ সকাল
জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনায় প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক বক্তব্য ও পরস্পরবিরোধী বিষোদ্গারই প্রাধান্য পেয়েছে। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা পাল্লা দিয়ে প্রতিপক্ষকে তুলোধোনা করেছেন। জিয়া ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, লুটপাট ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে পুরো সংসদ অধিবেশনই ছিল উত্তপ্ত। সরকারি দলের সদস্যরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণাত্মক ভাষায় বক্তব্য রাখেন। এসব বক্তব্য অনেক ক্ষেত্রে রুচি ও শালীনতার সীমা অতিক্রম করে। জবাবে বিরোধীদলীয় সদস্যরাও আক্রমণাত্মক বাক্যবাণে জর্জরিত করেন শেখ মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, পুতুলসহ অন্যদের। তুমুল হৈচৈ ও হট্টগোলের মধ্যে সরকারের দুঃশাসন, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাট, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে-মেয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিদেশে অঢেল সম্পদের ফিরিস্তি দেন বিএনপির সংসদ সদস্য সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া। ছড়ায়, ছন্দে, কাব্যে ও তির্যক মন্তব্যে তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।
সরকারদলীয় এমপিরা বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে আপত্তিকর বক্তব্য ও জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করলে বিরোধীদলীয় সদস্যরা দ্বিতীয় দফায় ওয়াকআউট করেন। এর আগে আইন প্রণয়নকালে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কর্তৃক জিয়াউর রহমানকে খুনি আখ্যায়িত করায় বিরোধী দল প্রথম দফায় ওয়াকআউট করে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে পরস্পরকে ঘায়েল করার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন সরকারি দলের আবদুর রহমান, হুইপ সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি, অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আশরাফ আলী খান খসরু, ছায়েদুল হক ও বিএনপির সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া।
বিএনপির সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া বাজেটের ওপর আলোচনার তথ্যমন্ত্রীকে ‘অন্ধকার ঝোপের ঝিঁঝি পোকা’, ‘কিম্ভূতকিমাকার অদ্ভুত পেঁচা’, ‘ছাগলের ১৫ নম্বর বাচ্চা’ ইত্যাদি নেতিবাচক বিশেষণে অভিহিত করেন। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনি পদ্মা সেতুর দুর্নীতিবাজ ‘দেশপ্রেমিকের’ নেত্রী, বিশ্বজিতের হত্যাকারী ও কোরআন শরিফ পোড়ানো ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেত্রী, জনগণের নন।
আগের দিন বিএনপির সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু সম্পর্কে হুইপ আসম ফিরোজের বক্তব্যের জবাবে পাপিয়া বলেন, যারা নিষিদ্ধ পল্লীতে ঘন ঘন যান, তারাই ওই পল্লীর ভাষা ভালো জানেন। তাদের জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে ও নারায়ণগঞ্জে ট্রেনিং সেন্টার করা উচিত। কর্নেল তাহেরের হাতে যেসব সেনা ও অন্যান্য কর্মকর্তা খুন হয়েছেন তাদের তালিকা দিয়ে পাপিয়া বলেন, সেনাবাহিনী কর্মকর্তাদের হত্যার কারণে কর্নেল তাহেরকে কবর থেকে তুলে এনে মরণোত্তর বিচার করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে তিনি বলেন, তারেক রহমানের বিদেশে কোনো বাড়ি-সম্পদ, সাদা চামড়ার খ্রিস্টান-ইহুদি স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ি নেই। তাই তার বিদেশে অর্থ পাচারের কোনো প্রয়োজন নেই। জয়-পুতুল বিদেশে থাকছেন, টাকা কোথায় পাচ্ছেন? তাদের সম্পদের উত্স্য কী? যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল অর্থ ব্যয়ে সজীব ওয়াজেদ মোট ৮টি বাড়ি ক্রয় করেছেন। ওইসব বাড়ির ঠিকানা ও ক্রয়মূল্যের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে আসিফা আশরাফি পাপিয়া বলেন, দেশের জনগণের কাছে একদিন এসব হিসাব দিতে হবে। মহাজোট সরকার বিএনপি ও যুদ্ধাপরাধী আতঙ্কে ভুগছে। আওয়ামী-বাকশালিদের হরিলুটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আপ্যায়ন খরচ এখন ১০ গুণেরও বেশি বেড়ে গেছে।
পাপিয়া বলেন, বর্তমান সরকার ৯টি ব্যাংকের অনুমতি দিয়েছে। এক একটি ব্যাংকের অনুমতি দিতে বিশেষ ব্যক্তির জন্য ২০০ কোটি টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কুইক রেন্টালে লোকসান ২৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বছরে লোকসান যাচ্ছে ৭৩৫৮ কোটি টাকা। একজন মন্ত্রীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সামিট বিদ্যুতের ৫৭ ভাগ কাজ হাতিয়ে নিয়েছে।
পাপিয়া বলেন, সরকারি বেসরকারি ব্যাংকগুলো জামানত শূন্য ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। এটা ’৭২-’৭৫ সালের মতো ব্যাংক ডাকাতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শিকদার মেডিকেলের মালিক জয়নুল শিকদার মন্ত্রী-এমপিদের সুপারিশে জামানত ছাড়াই সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। জামানত ছাড়াই নূরজাহান ভেজিটেবল অয়েলকে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। দুর্নীতির দরবেশ সালমান এফ রহমান জিএমজি এয়ারলাইন্স এবং ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির বিপরীতে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। তিনি একটি টাকাও শোধ করেননি। সরকার দলীয় এমপি হামিদ রিয়েল এস্টেটের মালিকের কাছে ব্যাংকের পাওনা ১৭০ কোটি টাকা। তিনি একটি টাকাও শোধ করেননি।
পাপিয়ার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে সরকারি দলের আবদুর রহমান বলেন, বিএনপির ওই মহিলা এমপি’র বক্তব্যের জবাব দেয়ার ভাষা বা রুচি আমার নেই। তারেক রহমানের দুর্নীতি ও অপকর্মের ফিরিস্তি জনগণ ভুলে যায়নি। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ তুলে ধরে বলেন, হাওয়া ও খোয়াব ভবনে তারেক-মামুনের চাঁদাবাজি, তারেক রহমান ও সাঈদ ইস্কান্দারের ঠিকাদারি বাণিজ্য, একটি খুনের মামলা ধামাচাপা দিতে বসুন্ধরা থেকে তারেকের একশ’ কোটি টাকার চাঁদা দাবির কথা গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। পাকিস্তানের আইএসআই, সৌদি আরব নির্বাচনে ৩শ’ কোটি টাকা খালেদা জিয়াকে প্রদানের কথা আদালতে বিএনপি নেতা বাবরের স্বীকারোক্তির কথাও কি বিএনপি অস্বীকার করতে পারে। খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অর্থ পাচার, ফালুর সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে মামলার ঘটনাও অস্বীকার করতে পারে? ক্ষমতায় আসার মাত্র ২২ দিনের মাথায় তারেক রহমানের ড্যান্ডি ডাইংয়ের ৭২ কোটি টাকা সুদ মওকুফের কথাও কী জাতি ভুলে গেছে?
তিনি বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় হাভার্ডের মতো বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছে। ভারতের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ ডিগ্রি নিয়েছে। জয়ের স্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন অ্যাটর্নি। রাত জাগা পাপিয়াদের এসব কথা জানার কথা নয়।
হুইপ সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি বলেন, বিরোধী দল যেভাবে তারেক রহমানকে নিয়ে কথা বলছেন, তাতে মনে হয় তিনি একজন ‘ক্ষুদিরাম’। তিনি যদি এতই বড় নেতা হন তবে দাসখত লিখে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন কেন?
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান যখন খালেদা জিয়াকে সংসারে ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন না, তখন তিনি প্রতিদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে এসে বসে থাকতেন। বঙ্গবন্ধুকে বলতেন ‘বাবা আমাকে স্বামীর ঘর করার ব্যবস্থা করে দিন।’ একদিন শিশু জয় ‘টয়লেট’ করে দিলে খালেদা জিয়া দৌড়ে জয়কে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে তার টয়লেট পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা প্রায় আঁতকে উঠে বলেছিলেন, ‘চাচী কী করেন, কী করেন?’ তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ তারেক জিয়াকে দুর্নীতির সিল মেরে দিয়েছে। সেই স্বীকৃত চোরকেই নেতৃত্বে আনার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। এক তারেক জিয়াই বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এমিলি তার বক্তব্যে জিয়াউর রহমানকে কর্নেল তাহেরের খুনি আখ্যায়িত করে তার মরণোত্তর বিচার দাবি করলে বিরোধীদলীয় সদস্যরা তার প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেন।
সরকারি দলের অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া প্রস্তাবিত বাজেটকে যুগোপযোগী উল্লেখ করে বলেন, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতা পরিবর্তনে বিশ্বাসী বলেই জনগণের জন্য কাজ করি। আমরা বিএনপির মতো পেছনের দরজা দিয়ে কিংবা সামরিক ক্যু’র মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। বঙ্গবন্ধুর পর তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছেন। সরকারের এত উন্নয়ন দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিরোধী দল।
ভিডিও লিংকঃ https://www.facebook.com/photo.php?v=469992403095601&set=vb.495567880480176&type=2&theater
বিষয়: বিবিধ
১৩৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন