প্রশ্নঃ আমি তাকদীর তথা অদৃষ্ট সমন্ধে জানতে চাচ্ছি? উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েক

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০৯ জুন, ২০১৩, ০৫:৩৪:৪৫ সকাল



অনেকের মধ্যে তাকদীর বা অদৃষ্ট সমন্ধ্যে ধারনা হল যে, আল্লাহই সবকিছু নির্ধারণ করে দিয়েছন। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে যে, কোন চোর যদি চুরি করে তাহলে তার জন্য কে দায়ী হবে? নিশ্চয়ই তিনি যিনি চুরি করাটা তার ভাগ্যে লিখে রেখেছেন।

*যদি কারও তাকদীরে লিখা থাকে যে, সে মানুষ হত্যা করবে তাহলে সেই হত্যার জন্য ঐ ব্যাক্তি দায়ী হতে পারেনা, বরং দায়ী হবে অদৃষ্টের লেখক অর্থাৎ আল্লাহ্‌ (নাউযুবিল্লাহ)।

*এমন কি, কারও অমুসলিম হওয়াটা যদি তার ভাগ্যে লেখাই থাকে তাহলে সে দোযখে যাবে কেন?

প্রকৃতপক্ষে এখানে যে সমস্যাটা হচ্ছে তা হল কদরের অর্থ বুঝতে ভুল করা। আমাদের অদৃষ্টে বিশ্বাস করতে হবে, এটা নিয়ম। কিন্তু সাথে আমাদের এটা জেনে নিতে হবে যে অদৃষ্ট বলতে কি বুঝায়? এটাকে একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যেতে পারে।

ধরুন, একটা ক্লাসে এক’শ জন ছাত্র বসে আছে। ক্লাসটি হচ্ছে বছরের শেষ দিকে বার্ষিক পরীক্ষার আগে। ক্লাসে শিক্ষক ছাত্রদের দেখিয়ে বলছেন, তুমি হবে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট। তুমি পাবে সেকেন্ড ক্লাস আর তুমি ফেল করবে। এখন বার্ষিক পরীক্ষা হল এবং পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল প্রথমজন ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হয়েছে, দ্বিতীয় জন পেয়েছে সেকেন্ড ক্লাস এবং তৃতীয় জন ফেল করেছে।

এখন তৃতীয় জনের ফেল করেছে বিধায় কি এ কথা বলার সুযোগ আছে যে আপনি বলেছিলেন বিধায় আমি ফেল করেছি? না এ সুযোগ নেই। কারণ উক্ত শিক্ষক তাদেরকে এক বছর পড়িয়েছেন, তাই তিনি তার অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান করেছেন যে কার পরীক্ষার ফলাফল কি হতে পারে? এখানে শিক্ষকের এ অনুমান কে দোষ দেওয়র সুযোগ নেই।

ঠিক তেমনি বিশ্বজাহানের স্রষ্টা আল্লাহ্‌, তিনি শিক্ষকদের থেকেও অনেক উর্ধে্‌ব এবং তার ইলমুল গায়েব অর্থাৎ তিনি ভবিষ্যতের কথাগুলো জানেন। এগুলো তিনি একটি কিতাবে লিখে রেখেছেন।

ইসলামের আকায়েদে আছে, মানুষের ফেয়েল ও এখতিয়ার (কর্ম ও ইচ্ছা)এর মালিক মানুষ খোদ নিজেই, আল্লাহ শুধু কুউয়ত (শক্তি)এর মালিক। অর্থাৎ মানুষ যে কাজ করবে, সে কাজ করার জন্য যে শক্তি দরকার সেই শক্তি আল্লাহ প্রদেয়। মানুষ সেই শক্তি সৎ কাজে ব্যবহার করলে করতে পারে আবার মন্দ কাজেও ব্যবহার করতে পারে। কারন কর্ম ও এখতিয়ারের মালিক মানুষ খোদ নিজেই।

উদাহরণস্বরূপ মনে করি, একজন লোকের গন্তব্য যাওয়ার জন্য পাঁচটি রাস্তা সামনে আছে। আল্লাহ্‌ পূর্ব হতেই জানেন যে, লোকটি দ্বিতীয় রাস্তা বেছে নেবে। তাই তিনি সেটা লিখে রেখেছেন। এখানে লক্ষ্য রাখা দরকার যে, তিনি লিখে রেখেছেন বলেই তিনি দ্বিতীয় রাস্তা বেছে নেবে ব্যাপারটি ঠিক এমন নয়; বরং লোকটি দ্বিতীয় রাস্তা বেছে নেবে বলেই আল্লাহ্‌ সেটা লিখে রেখেছেন।

আবার ধরুন, আপনি একজন ভাল ছাত্র। ইন্টার পরীক্ষার পর আপনি পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও গণিতে এ প্লাস পেয়েছেন। এখন আপনি ডাক্তারও হতে পারেন আবার ইঞ্জিনিয়ারও হতে পারেন। আপনি ঠিক করলেন আপনি ডাক্তার হবেন। আল্লাহ্‌ জানেন আপনার পছন্দ দুটো, তবে আপনি ডাক্তার হবেন। তাই আল্লাহ্‌ তা লিখে রেখেছেন। এরপর আপনি যখন রুজি রোজগার শুরু করবেন তখন আপনি সৎ কামাই ও করতে পারেন আবার দুর্নীতি ও করতে পারেন।

ধরি আপনি রোজগার দুর্নীতির মাধ্যমে করলেন। এক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ তা পূর্বে থেকেই জানেন বলে তিনি তা লিখে রেখেছেন। এমন নয় যে, তিনি আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিধায় আপনি হারাম পথে রোজগার করবেন। এটাই হল তাকদীর তথা অদৃষ্ট।

তবে তাকদীরের কিছু জিনিস আছে নির্ধারিত যেমন কে কখন জন্মাবে কার মৃত্যু কখন হবে ইত্যাদি।

সুতরাং আমাদের অপরাধগুলোর জন্য আমরাই দায়ী। কেউ চুরি করলে সে চুরির জন্য সে নিজেই দায়ী।

একইভাবে যারা অমুসলিম তাদের এ অবস্থার জন্য দায়ী কে?

এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে যে, প্রত্যেক শিশুই প্রকৃতিগতভাবে মুসলিম হয়ে জন্মায়, পরবর্তি্তে তার গুরুজনেরা তাকে পথভ্রষ্ট করে। সুতরাং কারও অমুসলিম হওয়া আল্লাহ্‌ নির্ধারণ করে দেন নি। কারণ একজন অমুসলিম ব্যাক্তির মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুযোগ আছে যে, সে তার বুদ্ধিমত্তাকে ব্যাবহার করে কুরআন অধ্যায়ন করে মুসলিম হতে পারবে।

আর এ জন্যই হাশরের ময়দানে বিচার করা হবে মানুষের কর্মের আলোকে। যে ভাল কাজ করবে সে জান্নাত পাবে। আর যে মন্দ কাজ করবে সে হবে জাহান্নামের অধিবাসী।

বিষয়: বিবিধ

২৭৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File