ক্ষমতাসীন মহাজোটের সরকারের শেষ বাজেট। যা থাকছে বাজেটে......
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০৬ জুন, ২০১৩, ০৯:০০:০০ সকাল
আজ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে ক্ষমতাসীন মহাজোটের সরকারের শেষ বাজেট। নির্বাচনকে সামনে রেখে জনতুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আয়-ব্যয়ের সঙ্গতিহীন বিশাল ঘাটতির বাজেট পেশের জন্য এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ২০১৩- ১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। আজ বিকাল ৪টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন। আগামী অর্থবছরের ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ে বেহাশ দশার মধ্যেও এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের তুলনায় ২৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুশি রাখতে স্থায়ী পে-কমিশনের ঘোষণাও থাকছে বাজেটে। তবে বাজেটের আয় নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তা থাকলেও কর হার বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
চলতি ২০১৩-১৩ অর্থবছরের তুলনায় আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ১৬ শতাংশ বাড়িয়ে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার হচ্ছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটের আকার হচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। অন্যান্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বড় এ বাজেটের ঘাটতির পরিমাণও অনেক বেশি। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা এবং অনুদানসহ ঘাটতি ৪৮ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। জিডিপিতে ঘাটতির পরিমাণ ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি অনুদান থেকে ২১ হাজার কোটি নিয়ে এ ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি বছরের মূল বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫২ হাজার কোটি টাকা, তবে সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ হচ্ছে ৪৯ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি অর্থ জোগাড় করতে দেশের ভেতর থেকে সরকার ঋণ নেবে ৩৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকঋণ নেবে ১৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ও স্বল্পমেয়াদি থাকবে ১১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ থাকছে মোট ৭ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে চার হাজার ৯৭১ কোটি ও অন্যান্য উত্স থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বিদায়ী বছর সরকারের অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা ও ব্যাংকবহির্ভূত উত্স থেকে ১০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। বিদেশি উত্স থেকে নতুন অর্থবছর ২৩ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর মধ্যে ৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ পরিশোধের পর নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর সরকারের মোট ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।
আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি ডলার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গিয়েই বেকায়দায় পড়েছে এনবিআর। অর্থবছরের ১০ মাসের হিসেবে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট অব্যাহত থাকলে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। এছাড়া এনবিআর বহির্ভূত কর ও করবহির্ভূত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের এ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২৭ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের তুলনায় ২৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি বছরের মূল বাজেটে এ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে এ ব্যয় ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। উন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হচ্ছে ৭২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মূল বাজেটের তুলনায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি বছরের মূল বাজেটে এ খাতের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। জিডিপির আকার হচ্ছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপির আকার ছিল ১০ লাখ ৪১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা, কিন্তু সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে করা হয়েছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের বছরের ২০১৭ সাল নাগাদ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১০ করা হবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু গত সাড়ে ৪ বছরে এক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং প্রতি বছরের লক্ষ্যমাত্রাই অর্জিত হচ্ছে না। ২০১৩-১৩ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশের প্রাক্কলন করা হলেও তা ৬ শতাংশের ঘরে রয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মতে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ শতাংশের নিচে বলে জানানো হচ্ছে।
বাজেটের নানামুখী সঙ্কট সামাল দিতে সরকার শুধু ভর্তুকি কমানোর চিন্তা করছে। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের ভর্তুকি বাবদ ১৭ শতাংশ কম বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। আগামী বছরের এ খাতে ২৮ হাজার ৬৯৫ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ হচ্ছে ৩৫ হাজার ৪৫ কোটি টাকা।
তবে সরকার খাতা-কলমে হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করলেও বাস্তবে আয়-ব্যয়ের সঙ্গে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। বিশেষ করে রাজস্ব আয়ে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ঘাটতির পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা না বাড়াতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিল। এ নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বিরোধ দেখা দেয়। এনবিআরের পক্ষ থেকে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা সর্বোচ্চ এক লাখ ২৪ হাজার কোটি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা করেছে। অন্যদিকে ভোটের বছরে কর হার না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচন বছর হওয়ায় সরকার বাজেট নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে করের আওতা বাড়ানো হবে তবে কোনোভাবেই কর হার বৃদ্ধি করা হবে না। এছাড়া ভর্তুকির পরিমাণও কমানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। আগামী অর্থবছরে ৩৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ভর্তুকির পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে।
রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগও অনেক কমে গেছে। আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে আয় হয়নি। এছাড়া রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ৫২ হাজার কোটি টাকা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সরকারের আয়ের এ বেহাল দশার মধ্যে আগামী অর্থবছরের ব্যয় বাড়াতে আয় বেশি দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোন খাত থেকে কি পরিমাণ আয় সম্ভব তা স্পষ্ট করা হয়নি। বিশাল ঘাটতি পূরণ করে কীভাবে আগামী বাজেটে চাহিদা পূরণ করা হবে তারও কোনো নির্দেশনা থাকছে না বাজেটে।
অন্যদিকে নির্বাচনের জনগণকে দেখাতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বাজেটে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। আয় বাড়িয়ে নয় বরং জনস্বাস্থ্যসহ জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন খাত থেকে ব্যয় কমিয়ে এ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু বাজেটের এই টাকায় পদ্মা সেতু করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, বছর বছর বাজেটে বরাদ্দ দিয়ে পদ্মা সেতু করা সম্ভব নয়। সিপিডির দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আসন্ন বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ দিলে অন্যান্য উন্নয়ন খাতে প্রভাব পড়বে।
এদিকে নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের ঘোষণা থাকছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস’ এখনও ঠিক হয়নি। এই বাজেট বক্তৃতাতেই আমি ‘স্থায়ী পে অ্যান্ড সার্ভিস কমিশন’ গঠনের ঘোষণা দেব। স্থায়ী কমিশন গঠিত হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করে কমিশন বেতন-ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করবে। সরকার তা বাস্তবায়ন করবে। তখন আর কয়েক বছর পরপর কমিশন গঠনের প্রয়োজন হবে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী।আজ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে ক্ষমতাসীন মহাজোটের সরকারের শেষ বাজেট। নির্বাচনকে সামনে রেখে জনতুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আয়-ব্যয়ের সঙ্গতিহীন বিশাল ঘাটতির বাজেট পেশের জন্য এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ২০১৩- ১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। আজ বিকাল ৪টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন। আগামী অর্থবছরের ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ে বেহাশ দশার মধ্যেও এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের তুলনায় ২৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুশি রাখতে স্থায়ী পে-কমিশনের ঘোষণাও থাকছে বাজেটে। তবে বাজেটের আয় নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তা থাকলেও কর হার বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
চলতি ২০১৩-১৩ অর্থবছরের তুলনায় আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ১৬ শতাংশ বাড়িয়ে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার হচ্ছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটের আকার হচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। অন্যান্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বড় এ বাজেটের ঘাটতির পরিমাণও অনেক বেশি। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা এবং অনুদানসহ ঘাটতি ৪৮ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। জিডিপিতে ঘাটতির পরিমাণ ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি অনুদান থেকে ২১ হাজার কোটি নিয়ে এ ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি বছরের মূল বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫২ হাজার কোটি টাকা, তবে সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ হচ্ছে ৪৯ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি অর্থ জোগাড় করতে দেশের ভেতর থেকে সরকার ঋণ নেবে ৩৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকঋণ নেবে ১৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ও স্বল্পমেয়াদি থাকবে ১১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ থাকছে মোট ৭ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে চার হাজার ৯৭১ কোটি ও অন্যান্য উত্স থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বিদায়ী বছর সরকারের অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা ও ব্যাংকবহির্ভূত উত্স থেকে ১০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। বিদেশি উত্স থেকে নতুন অর্থবছর ২৩ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর মধ্যে ৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ পরিশোধের পর নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর সরকারের মোট ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।
আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি ডলার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গিয়েই বেকায়দায় পড়েছে এনবিআর। অর্থবছরের ১০ মাসের হিসেবে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট অব্যাহত থাকলে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। এছাড়া এনবিআর বহির্ভূত কর ও করবহির্ভূত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের এ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২৭ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের তুলনায় ২৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি বছরের মূল বাজেটে এ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে এ ব্যয় ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। উন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হচ্ছে ৭২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মূল বাজেটের তুলনায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি বছরের মূল বাজেটে এ খাতের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। জিডিপির আকার হচ্ছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপির আকার ছিল ১০ লাখ ৪১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা, কিন্তু সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে করা হয়েছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের বছরের ২০১৭ সাল নাগাদ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১০ করা হবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু গত সাড়ে ৪ বছরে এক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং প্রতি বছরের লক্ষ্যমাত্রাই অর্জিত হচ্ছে না। ২০১৩-১৩ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশের প্রাক্কলন করা হলেও তা ৬ শতাংশের ঘরে রয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মতে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ শতাংশের নিচে বলে জানানো হচ্ছে।
বাজেটের নানামুখী সঙ্কট সামাল দিতে সরকার শুধু ভর্তুকি কমানোর চিন্তা করছে। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের ভর্তুকি বাবদ ১৭ শতাংশ কম বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। আগামী বছরের এ খাতে ২৮ হাজার ৬৯৫ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ হচ্ছে ৩৫ হাজার ৪৫ কোটি টাকা।
তবে সরকার খাতা-কলমে হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করলেও বাস্তবে আয়-ব্যয়ের সঙ্গে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। বিশেষ করে রাজস্ব আয়ে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ঘাটতির পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা না বাড়াতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিল। এ নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বিরোধ দেখা দেয়। এনবিআরের পক্ষ থেকে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা সর্বোচ্চ এক লাখ ২৪ হাজার কোটি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা করেছে। অন্যদিকে ভোটের বছরে কর হার না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচন বছর হওয়ায় সরকার বাজেট নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে করের আওতা বাড়ানো হবে তবে কোনোভাবেই কর হার বৃদ্ধি করা হবে না। এছাড়া ভর্তুকির পরিমাণও কমানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। আগামী অর্থবছরে ৩৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ভর্তুকির পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে।
রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগও অনেক কমে গেছে। আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে আয় হয়নি। এছাড়া রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ৫২ হাজার কোটি টাকা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সরকারের আয়ের এ বেহাল দশার মধ্যে আগামী অর্থবছরের ব্যয় বাড়াতে আয় বেশি দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোন খাত থেকে কি পরিমাণ আয় সম্ভব তা স্পষ্ট করা হয়নি। বিশাল ঘাটতি পূরণ করে কীভাবে আগামী বাজেটে চাহিদা পূরণ করা হবে তারও কোনো নির্দেশনা থাকছে না বাজেটে।
অন্যদিকে নির্বাচনের জনগণকে দেখাতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বাজেটে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। আয় বাড়িয়ে নয় বরং জনস্বাস্থ্যসহ জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন খাত থেকে ব্যয় কমিয়ে এ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু বাজেটের এই টাকায় পদ্মা সেতু করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, বছর বছর বাজেটে বরাদ্দ দিয়ে পদ্মা সেতু করা সম্ভব নয়। সিপিডির দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আসন্ন বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ দিলে অন্যান্য উন্নয়ন খাতে প্রভাব পড়বে।
এদিকে নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের ঘোষণা থাকছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস’ এখনও ঠিক হয়নি। এই বাজেট বক্তৃতাতেই আমি ‘স্থায়ী পে অ্যান্ড সার্ভিস কমিশন’ গঠনের ঘোষণা দেব। স্থায়ী কমিশন গঠিত হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করে কমিশন বেতন-ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করবে। সরকার তা বাস্তবায়ন করবে। তখন আর কয়েক বছর পরপর কমিশন গঠনের প্রয়োজন হবে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন