ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের ২০টি বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের জবাব – পর্ব ২ - মূলঃ ডঃ জাকির নায়েক

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০১ জুন, ২০১৩, ০২:০৯:৫৮ দুপুর



শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

আগের সংখ্যার পর

২.একাধিক স্বামী

প্রশ্নঃ একজন পুরুষ যদি একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি পায়, তাহলে ইসলাম একজন নারীকে কেন একাধিক স্বামী রাখতে নিষেধ করে?

জবাব

অসংখ্য মানুষ যার মধ্যে অনেক মুসলমানও রয়েছে, প্রশ্ন করেন-মুসলিম পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি পাচ্ছে অথচ নারীর ক্ষেত্রে সে অধিকার অস্বীকার করা হচ্ছে, এর যৌক্তিকতা কি? অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে যে কথাটি প্রথমেই আমাকে বলে নিতে হবে, তা হলো ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায় বিচার ও সমতার ভিত্তির ওপরেই একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত। মানুষ হিসেবে আল্লাহ তা’আলা নারী ও পুরুষকে সমান মান দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সাথে সাথে সামর্থ ও যোগ্যতার ভিন্নতা এবং সে অনুযায়ী দায়িত্ব কর্তব্যের বিভিন্নতা দিয়ে। শারিরীক ও মানসিক ভাবে নারী ও পুরুষ সম্পূর্ন ভিন্ন। জীবনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব-কর্তব্যও বিভিন্ন। ইসলামে নারী ও পুরুষ সমান কিন্তু একই রকম নয়।

সূরায়ে নিসার ২২ থেকে ২৪ আয়াতে একটি তালিকা দেয়া হয়েছে যে, মুসলিম পুরুষ কোন কোন নারীকে বিবাহ করতে পারবে না। এর পরে ২৪ আয়াতে আলাদা করে বলা হয়েছে সেই সব নারীও (নিষিদ্ধ) যারা অন্যের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ আছে- অর্থাৎ অন্যের বউ।

ইসলামে নারীর জন্য বহু-স্বামী গ্রহণ নিষিদ্ধ কেন, নিম্নোদ্ধৃত বিষয়গুলো তা পরিষ্কার করে দেবে।

ক. একজন পুরুষের একধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তার পরিবারে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের মাতা-পিতার পরিচয় খুব সহজেই পাওয়া যায়। শিশুর পিতা কে আর মাতা কে। অপরদিকে একজন নারী যদি একাধিক স্বামী গ্রহণ করে তবে এ পরিবার জন্ম নেয়া শিশুর শুধু মায়ের পরিচয় পাওয়া যাবে-বাবার নয়। পিতা ও মাতার সুস্পষ্ট পরিচয়ের ক্ষেত্রে ইসলাম আপোসহীন। আধুনিক মনোবিজ্ঞানিরা বলেন, যে শিশু তার মাতা-পিতার পরিচয় জানে না, বিশেষ করে পিতার- সে শিশু তীব্র মানসিক জটিলতা ও হীনমন্যতায় ভোগে। এ শিশুদের শৈশব নিকৃষ্টতর এবং আনন্দহীন । দেহপসারিণী বা বেশ্যাদের সন্তানরা এর জলন্ত প্রমাণ। এদের শিশুকাল ও কৈশোর মর্মান্তিক। বহু স্বামী গ্রহণকারী পরিবারে জন্ম পাওয়া শিশুকে নিয়ে কোনো স্কুলে ভর্তী করতে গেলে যদি মাকে প্রশ্ন করা হয় শিশুর পিতার নাম? তা হলে সে মাকে দু’জন অথবা তার বেশি পুরুষের নাম বলতে হবে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি এখন জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে মাতা ও পিতা উভয়কে সনাক্ত করার কৌশল আবিষ্কার করেছে। কাজেই যে বিষয়টা অতীতে অসম্ভব ছিল বর্তমানে তা খুব সহজেই হতে পারে।

খ. প্রকৃতি প্রদত্ত যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট, বহুগামীতায় নারীর চাইতে পুরুষের বেশি।

গ. শারীরিক যোগ্যতায় একজন পুরুষের পক্ষে কয়েকজন স্ত্রীর স্বামীর দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন সহজ। একজন নারী সেই একই অবস্থানে,অর্থাৎ যার কয়েকজন স্বামী আছে, তাদের স্ত্রী হিসেবে যে দায়িত্ব ও কর্তব্য তার ওপর বর্তায় তা পালন করা তার পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। কেননা মাসিক ঋতুচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে মানসিক ও আচরণগত বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে তাকে পড়তে হয়।

ঘ. একজন নারী যার একাধিক স্বামী থাকবে-তাকে তো একই সাথে কয়েকজনের যৌন-সঙ্গী হতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সমূহ সম্ভাবনা থাকবে যৌন রোগের এবং যৌনতার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ার। উপরন্তু তার মাধ্যমেই সে সব রোগে তার স্বামীর আক্রান্ত হবে। এমনকি যদি তার স্বামীদের কারো অন্য কোনো নারীর সাথে বিবাহ বহির্র্ভূত যৌন সম্পর্ক নাও থাকে। পক্ষান্তরে একজন পুরুষ- যার একাধিক স্ত্রী রয়েছে, স্ত্রীদের কারো যদি বিবাহ বহির্ভূত অন্য কারো সাথে যৌন সম্পর্ক না থাকে তাহলে যৌনতা সংক্রান্ত কোনো রোগে আক্রান্ত হবার আদৌ কোনো সম্ভাবনা নেই।

উপরোল্লেখিত কারণগুলো এমন যা যে কারো পক্ষে চেনা এবং বুঝে নেয়া সম্ভব। এছাড়া হয়তো আরো অসংখ্য কারণ থাকতে পারে যে কারণে অন্তহীন জ্ঞানের আধার সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা নারীদের জন্য বহু স্বামী বরণ নিষিদ্ধ করেছেন।

৩.‘হিজাব’ বা নারীর পর্দা

প্রশ্নঃ ইসলাম পর্দার আড়ালে রেখে নারীদেরকে কেন অবমূল্যায়ন করেছে?

জবাব

ইসলামে নারীর মর্যাদা’- ধর্মহীন প্রচার মাধ্যমগুলোর উপর্যপুরি আক্রমণের লক্ষ্যস্থল- ‘হিজাব’ বা ইসলামী পোশাক। ইসলামী বিধি বিধানে নারী নিগ্রহের সবচাইতে বড় প্রমাণ হিসেবে যা কথায় কথায় দেখানো হয়। ধর্মীয়ভাবে নারীর জন্য রক্ষণশীল পোশাক বা পর্দা ফরয করার নেপথ্য কারণগুলো আলোচনার পূর্বে ইসলাম আগমনের পূর্বে বিশ্বসমাজে সামগ্রীকভাবে নারীর অবস্থা ও অবস্থান কি ছিল তা নিয়ে কিঞ্চিৎ পর্যালোচনা প্রয়োজন।

ক. ইসলাম-পূর্ব কালে নারীর-মর্যাদা বলতে কোনো ধারণার অস্তিত্ব ছিলনা। তারা ব্যবহৃত হতো ভোগ্য সামগ্রী হিসেবে

নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো সর্বজনমান্য বিশ্ব-ইতিহাস থেকে তুলে আনা হয়েছে। সমুদয় মিলে যে চিত্র আমাদের চোখের সামনে উঠে আসবে তাতে আমরা সুস্পষ্ট দেখতে পাবো ইসলাম-পূর্ব সভ্যতাগুলোতে নারীর ‘মর্যাদা’ বলতে কিছুই ছিলনা। হীন নীচ এমনকি নুন্যতম ‘মানুষ’হিসেবেও তারা গণ্য ছিল না।

১. ব্যাবিলনীয় সভ্যতাঃ ব্যাবিলনীয় আইনে নারীর কোনো ধরণের কোনো অধিকার স্বীকৃত ছিলনা। মূল্য-মর্যাদা কি ছিল একটি উদাহরণে তা স্পষ্ট করে দেবে। কোনো পুরুষ যদি ঘটনাক্রমে কোনো নারীকে হত্যা করে তাহলে তাকে শাস্তি দেবার পরিবর্তে তার স্ত্রীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো।

২. গ্রীক সভ্যতাঃ গ্রীক সভ্যতাকে পূর্বকালের সকল সভ্যতার শ্রেষ্ঠতম ও উজ্জ্বলতম গণ্য করা হয়। তথাকথিত এই উজ্জ্বলতম সভ্যতায় নারী ছিল সব রকম অধিকার থেকে বঞ্চিত। উপরন্তু অস্তিত্বগত ভাবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট। একারণে তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো। গ্রীক পৌরাণিক শাস্ত্রের এক কাল্পনিক নারী যার নাম “প্যানডোরা”। বিশ্ব মানবতার সকল দুর্ভাগ্যের মূল কারণ সেই নারী। তাই গ্রীকরা নারীকে ‘প্রায় মানুষ’ অর্থাৎ মানুষের মতো বটে, কিন্তু সম্পূর্ণ নয় বলে মনে করত। পুরুষের সাথে তার কোনো তুলনাই হয় না এমন। অপরদিকে নারীর সতীত্ব ছিল মহামূল্যবান কিছু এবং দেবীর মতো সম্মানও করা হতো। কিছুকাল পরেই এই গ্রীকরা আত্মঅহংকারের উত্তুঙ্গে উঠে ধরা পড়ে বিকৃত যৌনাচারের হাতে, বেশ্যালয়ে গমনাগমন সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছি।

৩. রোমান সভ্যতাঃ যখন তার বিকাশের শিখর চূড়ায় তখন একজন পুরুষ যে-কোনো সময় তার স্ত্রীকে হত্যা করার অধিকার রাখতো। নগ্ন নারী যে-কোনো আসরের সৌন্দর্য এবং বেশ্যালয় যাতায়াত পুরুষের সংস্কৃতি।

ক। মিসরীয় সভ্যতাঃ মিসরীয় সভ্যতায় নারী ‘ডাইনী’ এবং শয়তানের নিদর্শন হিসেবে গণ্য হতো।

ইসলাম পূর্ব আরবঃ ইসলাম পূর্ব আরবে নারীর অবস্থান ছিল ঘরের অন্যান্য ব্যবহারীক আসবাবপত্রের মতো। অনেক পিতা অসম্মানের হেতু হিসেবে তার শিশুকণ্যাকে জীবন্ত কবর দিত।

খ. ইসলাম নারীকে ওপরে উঠিয়েছে। দিয়েছে তাদেরকে সমতা এবং প্রত্যাশা করে- তারা তাদের মর্যাদা রক্ষা করবে।

ইসলাম নারীর মর্যাদাকে ওপরে উঠিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে। ইসলাম নারীর মর্যাদাকে সংরক্ষণ করতে চায়।

পুরুষের পর্দাঃ মানুষ সাধারণত পর্দা নিয়ে আলোচনা করে নারীদের ক্ষেত্রে। অথচ জ্যোতীর্ময় কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নারীর পর্দার আগে পুরুষের পর্দার কথা বলেছেন। সূরা নূরে বলা হয়েছে।

বলো! বিশ্বাসী পুরুষদেরকে- তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের শালীনতা রক্ষা করে। এটা তাদেরকে আরো পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন (মানসিকতার) করে তুলবে, আর আল্লাহ কিন্তু সেই সব কিছুই জানেন যা তোমরা করো। (২৪:৩০)

যে মুহুর্তে কোনো পুরুষ একজন নারীর দিকে তাকাবে- লজ্জাকর অশ্লীল চিন্তা তার মনে এসে যেতে পারে। কাজেই তার দৃষ্টি অবনত রাখাই তার জন্য কল্যাণকর।

নারীর জন্য পর্দাঃ সূরা নূরের পরবর্তী আয়াতে বলা হচ্ছেঃ

এবং বলো, বিশ্বাসী নারীদেরকে- তারা তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের সযত্ন সংরক্ষণ করে এবং তাদের দৈহীক সৌন্দর্য ও অলংকারের প্রদর্শনী না করে। তবে অনিবার্য্য ভাবে যা উন্মুক্ত থাকে। তারা যেন তাদের বক্ষের ওপরে চাদর ঝুলিয়ে দেয় এবং প্রদর্শন না করে তাদের সৌন্দর্য, তাদের স্বামী তাদের পিতা তাদের স্বামীর পিতা (শশুর) এবং সন্তানদের ছাড়া। (২৪:৩১)

গ. হিজাবের ছয়টি শর্ত

কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী হিজাব পালনের ছয়টি শর্ত।

১. মাত্রা বা পরিমাণঃ প্রথম শর্ত হলো দেহের সীমানা যা যতটুকু-অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। নারী ও পুরুষের জন্য এটা ভিন্ন ভিন্ন। পুরুষের জন্য ঢেকে রাখার বাধ্যতামূলক পরিসীমা তার দেহের নুন্যতম নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। নারীর জন্য এই পরিসীমা আরো বিস্তৃত- কব্জী পর্যন্ত হাত এবং মুখমন্ডল ছাড়া বাদবাকি শরীরের সকল অংশ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। তারা যদি চায় তাহলে তা-ও আবৃত করে নিতে পারে। ইসলামের বিশেষজ্ঞ আলেমগণের অনেকেই হাত ও মুখমন্ডলকেও বাধ্যতামূলক ঢেকে রাখার অংশ মনে করেন। বাদবাকি পাঁচটি শর্ত নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে একই রকম প্রযোজ্য।

২. পরিধেয় পোষাক ডিলেডালা হতে হবে। যেন দেহের মূল কাঠামো প্রকাশ না পায়।

৩. পরিধেয় কাপড় এতটা পাতলা ও স্বচ্ছ হতে পারবেনা যাতে ভেতরটা দেখা যায়।

৪. পোশাক এতটা আকর্শণীয় ও জাকজমকপূর্ণ হতে পারবে না যাতে বিপরীত লিঙ্গ আকর্ষিত হয়।

৫. পোশাক এমন হতে পারবে না যা বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের মতো বা সমরুপ।

৬. পোশাক এমন হতে পারবে না দেখতে অবিশ্বাসীদের মতো। তাদের এমন কোনো পোশাক পরা উচিৎ নয় যা বিশেষভাবে পরিচিত এবং চিহ্নিত অন্য ধর্মাবলম্বীদের (যারা মূলত অবিশ্বাসী)।

ঘ. অন্যান্য জিনিসের মধ্যে আচার-আচারণও হিজাবের অন্তর্ভুক্ত

ছয় ধরনের পরিচ্ছদের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ পর্দা ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র, আচার-আচারণ, অভিব্যক্তি এবং লক্ষ উদ্দেশ্যকেও একিভূত করে। একজন ব্যক্তি সে যদিও শুধু কাপড়-চোপড়ে হিজাব পালন করে তাহলে সে ‘হিজাব’ পালক করলো ন্যূনতম পর্যায়ের। পোশাকের পর্দা পালনের সাথে সাথে চোখের পর্দা, মনের পর্দা ,চিন্তা-ভাবনার পর্দা এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্যের পর্দাও থাকতে হবে। পর্দার সীমার মধ্যে আরো যা পড়ে, তা হলো- ব্যক্তির চলা, কথা বলা এবং তার সার্বিক আচরণ ইত্যাদি।

ঙ. হিজাব বা পর্দা অহেতুক উৎপীড়ন প্রতিরোধ করে

নারীকে কেন পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে কুরআন তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। সূরা অহ্যাবে বলা হয়েছেঃ

হে নবী! বলুন আপনার স্ত্রী ও কন্যাদেরকে এবং বিশ্বাসী নারীদেরকে যে, তারা যেন তাদের বহিরাবরণ পরে থাকে (যখন বাইরে যাবে)। এটা তাদের পরিচিতির অত্যন্ত উপযোগী। (তারা যেন পরিচিত হয়ে বিশ্বাসী-নারী হিসাবে) তাহলে আর অহেতুক উৎপিড়ীত হবে না। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল দয়াবান। (৩৩:৫৯)

জ্যোতীময় কুরআন বলছেঃ নারীকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে এই জন্য যে, তারা যেন রুচিশীলা পরিচ্ছন্ন নারী হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এবং এটা তাদেরকে লজ্জাকর উৎপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করবে।

চ. দু’টি জমজ বোনের উদাহরণ

ধরা যাক জমজ দু’টি বোন। উভয়ই অপূর্ব সুন্দরী। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের একজন পরেছে ইসলামী হিজাব। অর্থাৎ সম্পূর্ণ দেহ আবৃত। শুধু কব্জী পর্যন্ত হাত ও মুখমন্ডল খোলা। অন্যজন পরেছে পশ্চিমা পোশাক। শরীরের অধিকাংশ খোলা এবং প্রায় অর্ধ-উলঙ্গ। সামনেই এক মোড়ে আড্ডা দিচ্ছে এক দঙ্গল যুবক। মেয়েদেরকে দেখে হৈ-হল্লা করা, শীশ দেয়া আর বাগে পেলে উত্ত্যক্ত করাই তাদের কাজ। এখন এই দুই বোনকে যেতে দেখে তারা কাকে উদ্দেশ্য করে হল্লা করবে ? শীশ দেবে ? যে মেয়েটি নিজেকে ঢেকে রেখেছে তাকে দেখে? না যে মেয়েটি প্রায় উদোম হয়ে আছে তাকে দেখে? খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাদের চোখ যাবে যে কিনা দেখাতে চায় তার দিকে। কার্যত এ ধরনের পোশাক বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ‘ভাষাহীন নিরব আমন্ত্রণ’। যে কারণে বিপরীত লিঙ্গ উত্তেজিত হতে বাধ্য হয়। জ্যোর্তীময় কুরআন যথার্থই বলেছে- ‘হিজাব নারীদের উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করে’।

ছ. ধর্ষকের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মৃত্যুদন্ড

ইসলামের বিধান অনুযায়ী একজন পুরুষ যদি কোনো নারী ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তার শাস্তি প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড। অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন এই কঠিন বাক্য শুনে। কেউ কেউ তো বলেই বসেন, ইসলাম অত্যন্ত নিষ্ঠুর, বর্বরদের ধর্ম। শত শত অমুসলিম পুরুষের কাছে আন্তরিকভাবে জানতে চেয়েছি- ধরুন, আল্লাহ না করুন কেউ একজন আপনার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে অথবা আপনার বোন বা কন্যা। আপনাকে বিচারকের আসনে বসানো হয়েছে এবং ধর্ষণকারীকে আপনার সামনে হাজির করা হয়েছে। কি শাস্তি দেবেন তাকে? প্রত্যেকেই উত্তর একটিই-“মৃত্যুদন্ড”। কেউ বলেছেন, ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে আমার চোখের সামনে ব্রাস ফায়ার করে ঝাঝরা করে দিতে বলব। কেউ বলেছেন ওকে তিল তিল করে মৃত্যুর স্বাদ দিয়ে মারতে বলব। এই উত্তর দাতাদের কাছেই আমার প্রশ্ন,আপনার মা-বোন স্ত্রী কন্যাকে কেউ ধর্ষণ করলে তাকে ওভাবে মেরে ফেলতে চান। কিন্তু এই একই অপরাধ যদি অন্য কারো স্ত্রী-কন্যার ওপর ঘটে তখন এই আপনিই বলেন মৃত্যুদন্ড অত্যন্ত কঠোর ও নিষ্ঠুর হয়ে যায়। কেন ভাই, একই অপরাধের জন্য ক্ষেত্রভেদে দুই রকম দন্ড?

জ.নারীকে মর্যাদা দেবার পশ্চিমা সমাজের দাবি সর্বৈভ মিথ্যাচার

নারী স্বাধীনতার পশ্চিমা শ্লোগান একটি প্রকাশ্য প্রতারণা। তার দেহের সৌন্দর্যকে খুলে খুলে ব্যবসা করার একটি লোভনীয় ফাঁদ। তার আত্মার অবমাননা এবং তার সম্মান ও মর্যাদাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর প্রকাশ্য বাস্তবতা হলো তাদেরকে তাদের সম্মানিত অবস্থান থেকে নামিয়ে উপপত্নী, রক্ষিতা এবং সৌখিন সমাজের লালসা পূরনের জন্য উড়ন্ত প্রজাপতি বানিয়ে ছেড়েছে। ফলে তারা এখন বিলাসী পুরুষের নাগালের মধ্যে থাকা ভোগের পুতুল আর যৌন কারবারীদের ব্যবসায়ের সস্তা পণ্য। যা আড়াল করা হয়েছে শিল্প ও সংস্কৃতির মনোলোভা রঙিন পর্দা দিয়ে।

ঝ. নারী ধর্ষণের হার আমেরিকায় সর্বোচ্চ

উন্নত বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অবস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্য। নৈমিত্যিক সংঘটিত নারী ধর্ষণের হার সারা বিশ্বে তার রেকর্ড কেউ স্পর্শও করতে পারবে না। ১৯৯০ সালের এফবিআই-এর দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী গোটা আমেরিকা জুড়ে প্রতিদিন গড়ে ১৭৫৬ টি নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরবর্তী পর্যায়ে আরো একটি রিপোর্টে প্রকাশিত হয় যাতে প্রতিদিন সংঘটিত ধর্ষণ অপরাধে সংখ্যা ১৯০০ উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে সন উল্লেখ করা নেই তবে অনুমান করা হয় তা ১৯৯২ বা ১৯৯৩ সালের কথা। হয়তো আমেরিকানরা পরবর্তী দু’তিন বছরে আরো ‘সাহসী’ হয়ে উঠেছে।

আবার একটা কাল্পনিক দৃর্শপট পর্যবেক্ষণ করা যাক- আমেরিকান নারী সমাজ ইসলামী হিজাব পালন করছে। যখনি কোনো পুরুষ কোনো নারীর দিকে তাকাচ্ছে, কোনো অশ্লীল চিন্তা মনে এসে যেতে পারে ভাবার সাথে সাথে সে তার দৃষ্টিকে নীচে নামিয়ে নিচ্ছে। পথে ঘাটে যেখানেই কোনো নারী দৃশ্য হচ্ছে, কব্জী পর্যন্ত তার দুটি হাত আর নেহায়েত সাদামাটা সাজগোজহীন মুখমন্ডলের কিয়দাংশ ব্যাস,বাদবাকি সব ডোলাডালা হিজাবে ডাকা। তদুপুরি রাষ্ট্রীয় বিধান এমন যে, যদি কোনো পুরুষ ধর্ষণের অপরাধ করে তার জন্য নির্দিষ্ট-জনসমক্ষে প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড।

এবার আপনাকে প্রশ্ন করছি, গোটা পরিবেশটা যদি সত্যি সত্যিই এমন হয় তাহলে আমেরিকার এই নারী ধর্ষণের ভঙ্ককর হার বাড়তে থাকবে না একই অবস্থানে থাকবে? নাকি কমে যাবে এবং কমতে কমতে একদিন এই জঘন্য অপরাধ নিঃশেষ হয়ে যাবে।

ঞ. ইসলামী শরীয়তের পুর্ণাঙ্গ বিধান কার্যকর হলে ধর্ষনের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে খুব স্বাভাবিক ভাবেই।

কেননা শরীয়তের বিধান, মানুষেরই জন্য তাদের সৃষ্টিকর্তা বিধাতার নির্বাচিত বিধিবিধান যদি কার্যকর হয় তাহলে তার ফলাফল কল্যাণী অমিয় ধারা হযে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে। ইসলামী শরীয়ত যদি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় পৃথিবীর যে কোনো ভূখন্ডে- তা আমেরিকাই হোক অথবা ইউরোপ বা পৃথিবীর অন্যান্য যে কোনো দেশে। তার প্রথম প্রতিক্রিয়া হবে এই যে, সে দেশের গোটা সমাজ একসাথে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবে।

কাজেই ‘হিজাব’ নারীকে অপদস্ত করেনি বরং উপরে তুলে সম্মানের আসন দিয়েছে। আর সংরক্ষণ করেছে তার শালীনতা ও পবিত্রতা।

[চলবে]

বিষয়: বিবিধ

১৬৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File