স্মৃতিশক্তি রক্ষার উপায়, যা জানা উচিত্
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০৪ মে, ২০১৩, ১২:৩৯:০৯ রাত
ডা: ইকবাল সোলায়মান : কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের অনেকেরই স্মৃতিশক্তি নিয়ে খুব টেনশন থাকে। আর বয়স হলে স্মৃতিশক্তি নিয়ে ভাবনাটা যেন আরও বেড়ে যায়। আবার অনেকেই আছেন যিনি শেষ দিনটি পর্যন্ত মেধা আর অটুট স্মৃতিশক্তি নিয়ে কাজ করে যান মানুষের জন্য। মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার মস্তিষ্ক মানে তার মেধা যা তাকে আর সব প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ করেছে। মস্তিষ্কের তাই যত্ন নেয়া চাই। মেধা, মনন, বুদ্ধি এসবই হলো সুস্থ মস্তিষ্কের ফসল। তীক্ষ্ণ মেধা, অটুট স্মরণশক্তি মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য হলেও এগুলো অক্ষুন্ন রাখাও মানুষেরই কাজ।
স্মৃতিশক্তি কমে কেন? মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর কর্মক্ষমতা কমে গেলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। কমে যায় চিন্তা করার স্বাভাবিক ক্ষমতা। দেহের কোষগুলোতে শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এসব জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোষগুলোতে কিছু ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হয়। এ যৌগগুলো কোষের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এবং এক পর্যায়ে কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে আমরা বার্ধক্যের পথে এগিয়ে যাই। একই ব্যাপার মস্তিষ্কের কোষগুলোতেও ঘটে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোও বুড়িয়ে যায়। হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিক ক্ষমতা। আমাদের স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে। এছাড়া কোন কারণে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যায়। হ্রৎপিণ্ড থেকে শতকরা ২০ ভাগ রক্ত সরাসরি মস্তিষ্কে যায়। রক্তের কোলেস্টেরল বা অন্য কোনো কারণে ধমনীর প্রাচীর সরু হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বিঘ্নিত হয়। দেখা গেছে, যারা হ্রদরোগী তারা সাধারণত ভুলোমনা হয়ে থাকে। একই কারণে স্ট্রোক করলে মানুষের স্মরণশক্তি এবং চিন্তাশক্তিও দারুণভাবে কমে যায়। স্নায়ু কোষের জন্যে জরুরি অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ। ডায়বেটিস রোগীদের গ্লুকোজ লেভেল কমে যেয়ে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। স্নায়ু তে অক্সিজেনর কমতিতো ভয়ানক হতে পারে। অক্সিজেনের অভাবেই কিন্তু কোমা’র মতো সমস্যা তৈরি হয়। দুশ্চিন্তা বাদ দিতে হবে। দুশ্চিন্তা বা টেনশনে মানুষের অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে গ্লুকোকরটিকয়েড নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন মস্তিষ্কের কোষগুলোকে দ্রুত আক্রান্ত করে- স্নায়ুর কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ইতিবাচক চিন্তা করুন নেতিবাচক চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সন্দেহবাতিক মন মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। মনের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগটা খুব গভীর।
ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করুন ক্রোধ বা রাগ মন ও মস্তিষ্কের শত্র“। আমরা যখন রেগে যাই তখন শরীরে নিঃসৃত হয় বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মেডিটেশন করুন নিয়ম করে দিনের কিছু সময় মেডিটেশন করুন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। এ অভ্যাসগুলো মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। স্মরণশক্তি মূলত নির্ভর করে আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতার ওপর। মেডিটেশন আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন সারাক্ষণ কাজ আমাদের মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে তোলে। বুঝেশুনে খাবার খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়, হƒদযন্ত্র সচল রাখা যায় । তেমনি মগজকে শাণিত করা যায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খান। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিকর জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ক্ষতিকর যৌগগুলোকে ভেঙ্গে ফেলে। ফলে কোষগুলো থাকে কর্মক্ষম আর তারুণ্যদীপ্ত। তাছাড়া অ্যান্টঅক্সিডেন্ট শিরা-ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, হ্রদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ফলে হ্রৎপিণ্ড হয় সচল, মগজটাও থাকে টনটনে। সঠিক চিন্তা, সুস্থ জীবনাচরণ, সুষম খাবার হলো সুস্থ মস্তিষ্কের মূলমন্ত্র।
বিষয়: বিবিধ
২৬৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন