ইসলামে শ্রমিকের অধিকার

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০২ মে, ২০১৩, ১২:০৮:১৩ রাত



ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে কোন প্রকার শ্রেণী বৈষম্য, শোষণ, অত্যাচার -অনাচার জায়েজ নয় । সব মানুষের ন্যায় সঙ্গত অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে ইসলাম সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছে। কম-বেশী শ্রম জীবিকা ধারনের জন্য সব মানুষেরই প্রয়োজন। তাই পরস্পরের শ্রম আদান প্রদান ও বিনিময় গ্রহনের ও শ্রমিকের মর্যাদা সম্পর্কে সু স্পষ্ট জ্ঞান ও স্বচ্চ ধারণা ইসলাম দৃঢ়তার সঙ্গেঁ ঘোষণা করেছে। ইসলাম শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে। এমনকি সব মানুষকেই শ্রমনির্ভর বলে চিহ্নিত করেছে। আল্লাহ পাক আল কুরআরে ঘোষণা করেছেন আমি মানুষকে শ্রমনির্ভরশীল করে সৃষ্টি করেছি। (সূরা বালাদ,আয়াত ৪)

ইসলামী অর্থনীতির ক্ষেত্রে শারিরীক ও মানসিক উভয় প্রকার মেহনতই শ্রমের অন্তর্ভুক্ত। মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানতে পারি সবযুগেই শ্রেণী বৈষম্য বিদ্যমান ছিল । শ্রেণী বৈষম্যের মধ্যে প্রধান বৈষম্য হল অর্থনৈতিক বৈষম্য । অর্থাৎ ধনী গরীবের বৈষম্য। কোন ব্যক্তি কোন কিছুর বিনিময়ে নিজের শ্রমকে বিক্রও করে সে শ্রমিক আর মালিকগন বিনিময়ের মাধ্যমে সুখ ভোগ করেন। যুগে যুগে শ্রমজীবি অভাবী মানুষ নির্যাতন শোষন বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। ইসলাম এই শোষিত নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে ইসলাম কার্যকরি ভূমিকা পালন করেছে। শ্রমজীবী মানুষের ন্যায় সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলাম স্রেষ্ঠ দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে। আধুনিক শ্রেণীর শ্রমিকের আবির্ভাব হয় ১৮১৯ সালে। শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে পূজি বাদীরা শ্রমিকের অধিকার ও র্মযাদার ব্যাপারে খুবই উদাস মনোভাব পোষন করত।

শ্রমিকের পরিশ্রমের তুলনায় তাদের প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেয়া হতনা। তারা ছিল বঞ্চিত নিপিড়ীত । তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের সংগ্রামে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সমস্ত পৃথিবীতে পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমিকের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছিল। তখন মে দিবস পালিত হয়ে আসছে । আর এই মর্মে একটি প্রস্তাব পাস হয় সিন্ধান্ত নেয়া হয় ১৮৮৬ সালেনর ১ লা মে হতে শ্রমিকদের কাজ ৮ ঘন্টার বেশী হবে না। ধীরে ধীরে শ্রমজীবী মানুষ সচেতন হতে থাকে তারা তৈরি হতে থাকে সর্ব প্রকার বাধার বিরূদ্ধে রুখে দাড়াবার । সেই আন্দোলনের সূচনালগ্ন হতে অদ্যাবধি শোষিত ও অবহেলিত খেটে খাওয়া শ্রমিকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হতে দেখা যাচ্ছে না।

মালিক ও শ্রমিকদের এই বৈষম্যদূরের যত প্রচেষ্টাই চলুক না কেন বাস্তবে কোন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। কাগজে কলমে সভা সমিতিতেই শুধু সিমাবদ্ধ থাকছে। আমরা কুরআন হাদীস মোতাবেক যতদিন না চলতে চেষ্টা করব ততদিন মালিক কর্তৃক অভাবী শ্রমিক নির্যাতিত হতেই থাকবে । শ্রমিকের শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে নবী করিম (স) উপদেশ দিয়েছেন। তাদের নীচু মনের যেন মনে না করা হয়। তাদের মানবিক মর্যাদায় সমভাবে বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। নবী (স) বলেছেন, তোমাদের ক্রীতদাসগনের দেখ, তোমরা যেরূপ খাবার খাও তাদেরও তা খেতে দেবে। তোমরা যে রকম পোষাক পড়বে তাদেরও সেই রকম পোষাক পড়াও। এখানে স্পষ্ট যে হুযুর (স) দাস দাসীদের তাদের মালিকের সম মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।কোন কাজকেই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই । ছোট কাজ বড় কাজ সব কাজই মর্যাদার ও শ্রদ্ধার। তবে মুসলমান হিসাবে কাজ হালাল পথে জীবিকা অর্জন যে কোন পন্থাই ইসলামে খুব গুরুত্বপূর্ন ও মর্যাদাবান। প্রভূর মতো তোমরাও মানুষ, তাদের মন আছে সাধ আললাদ আছে, তারাও স্বপ্ন দেখে, তাই তাদেরও জীবন ধারনের গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। মালিকের ও শ্রমিকের কর্মের ভিন্নতা থাকতে পারে তাই বলে তাদের অমানুষ ভাবার কোন সুযোগ নেই। অনেক বাড়ীতে কাজের লোকদের খাওয়ার, শোবার, বসার, সব ব্যাপারে আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনা দেখা যায়। এটা অমানবিক চিন্তা ইসলাম এটা আদেশ করেনি। কোন মুসলমানের অন্য মুসলমানের সাথে এমন আচরণ করা মোটেই শোভনীয় নয়। শরীয়ত বিরোধী কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। সব বান্দার হক আদায়ের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কাউকে ঠকানো উচিr নয়।

শ্রমিকের পারিশ্রমিক শিঘ্রী প্রদান করার ব্যাপারে ইসলাম জোর তাগিদ দিয়েছে। হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে। শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকাবার পূর্বেই তার প্রাপ্য মজুরি পরিশোধ করে দাও। শ্রমিকের জন্য আল্লাহ তায়ালা তার ইবাদতকে কিছুটা শিথিল করে দিয়েছেন। এই ভাবে শ্রমিকদের সুবিধা প্রদান করেছে ইসলাম । ইসলাম শ্রমিকের শ্রমকে ইবাদতের মর্যাদা দান করেছে। হযরত নবী করিম (স) ইরশাদ করেছেন, নামাজের পরের ফরজ কাজ হল হালাল রিযিক অষণ করা। (মিশকাত) আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ঘোষনা দিয়েছেন, নামায শেষ হলে তোমরা পৃর্থিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর জীবিকা অনুসন্ধান করবে। (সূরা জুমআ – ১০) যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নামে শরীয়ত সম্মত ভাবে আন্তরীকতার সাথে শ্রম দেয় তাহলে পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালা তার এই কর্মকে ইবাদত হিসাবে কবুল করে থাকেন। হুজুর (সা) ইরশাদ করেছেন, হালাল জীবিকার সব রকম চেষ্টাই ইবাদতের সামিল। ইসলাম ভিক্ষা ও সাহায্য নেয়ার চেয়ে শ্রম দেয়াকে অতিব সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে।

সহজ কথা ইসলাম কর্মহীন, জীবিকাহীন জীবনকে ঘৃনার দৃষ্টিতে দেখে। কর্মঠ মানুষ কে ইসলাম খুব সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে । শ্রমের গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহ পাক আল কুরআনে ঘোষণা দেন। মানুষের জন্য প্রাপ্য শুধু তা, যার জন্য সে চেষ্টা ও শ্রম দান করেছে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা তাই শ্রমজীবী মানুষের সকল সমস্যার সমাধানের দিকনির্দেশ প্রদান করে, আল কুরআন ঘোষণা করেছে। কাউকে তার সামর্থের বেশী কাজের চাপদিও না। ইসলামের শান্তিপূর্ণ এই বিধান আমাদের সকলেরই মেনে চলা অপরিহার্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সে তৌফিক দান করেন। আর আমাদের অনৈসলামিক কর্মকান্ড হতে বিরত রাখুন আমিন ।

-রোজী ইসলাম

বিষয়: বিবিধ

১৩৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File