মুসলিম হিসেবে ডাঃ জাকির নায়েককে শ্রদ্ধা করা গেলে, মাওলানা মওদুদী বা নিজামীকে নয় কেন?
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:২১:০১ রাত
যে কারনে আপনি আজ মাওলানা মওদুদীকে ঘৃণা করছেন, সেই একই কারনে জাকির নায়েককে অনেকে ঘৃণা করেন। কিন্তু আপনি হয়তো তাকে পছন্দ করেন। আর আমার অবস্থা হল, আমি জাকির নায়েক বা মাওলানা মওদুদী দুইজনের চিন্তা-চেতনার উপরই কিছু স্টাডি করেছি। কিন্তু দুইজনের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনি। জাকির নায়েক আজ যা করছেন তা ৫০ বছর আগে করেছেন মাওলানা মওদুদী। জাকির নায়েকের মূল শ্রোতা যখন অমুসলিমরা, মাওলানা মওদুদীর মূল শ্রোতা ছিল তখনকার সময়ের ঈমানের ব্যাপারে দুর্বলতা চলে আসা মুসলিমরা। কিন্তু দুইজনই সুবক্তা ছিলেন আর দা’য়ী হিসেবে জাকির নায়েকের অবদান সুস্পষ্ট। কিন্তু মাওলানা মওদুদীর অবদান কেবল দা’য়ী হিসেবে নয় বরং কুরআনের তাফসীর কারক (৩০ বছর লেগেছিল যে তাফসীরটি লিখতে এবং এই তাফসীরটির কেবল ভূমিকা পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন তাঁর মত মেধাবী ও অধ্যবসায়ী মানুষের এতো সময় কেন লেগেছিল এটি লিখতে), ইসলাম ও অন্য জীবন মতবাদ গুলোর পার্থক্যের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, ইসলামের প্রতিটি বিষয়ের অন্ধ বিশ্বাস নয় বরং যুক্তিভিত্তিক ব্যাখ্যা, ইসলামী সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাসূলুল্লাহ (সা) এর জীবনী, এমন কোন ক্ষেত্র নেই যে বিষয়ে মাওলানা মওদুদী ইসলামের প্রসারের জন্য কলম চালাননি। টানা ৩০ বছর এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত তিনি লিখেছেন ইসলামের জন্য।
তাঁর লেখা 'ইসলাম পরিচিতি' - 'Towards understanding Islam' এখনো সমগ্র বিশ্বে একটি অন্যতম রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাঁর ফিলোসফির উপরে পৃথিবীতে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় আর তাঁর জীবনী ও কর্মের উপর অসংখ্য গবেষনা ও জার্নাল পেপার প্রকাশিত হয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত 'মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়' সৃষ্টি থেকে শুরু করে কারিকুলাম প্রণয়ন পর্যন্ত পরিচালনা বোর্ডের আজীবন সদস্য ছিলেন তিনি। আমি জানি না কতটুকু স্টাডি বা জানা-শুনার মাধ্যমে আপনার মনে তাঁর মত একজন ইসলামী চিন্তাবিদ সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা ঢুকেছে। তবে আপনি তাঁর সাহিত্য-কর্মগুলো দেখুন, বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ বা হুমায়ুন আহমেদ বা নজরুল বা শরৎচন্দ্রের যে অবদান, মাওলানা মওদুদীকে আল্লাহ তাআলা ইসলামী সাহিত্যের জগতে এর চাইতেও অনেক বেশী খেদমত করার তাওফীক দিয়েছিলেন। তিনি ১২০ টিরও বেশী গবেষনাধর্মী ইসলামের যুক্তিভিত্তিক বই লিখেছেন, আর ১০০০ টিরও বেশী বক্তব্য দিয়েছেন যার মধ্যে ৭০০ টিরও বেশী রেকর্ড করা হয়েছে পরবর্তীতে প্রচারের জন্য। আপনার যদি সময় থাকে তাহলে আমি বলব এমন মহান মানুষটি সম্পর্কে পড়াশোনা করুন তারপর কোন সমালোচনা থাকলে বলুন। তা না হলে আল্লাহর কাছে হয়তো আপনাকে জবাবদিহী করতে হবে।
ডাঃ জাকির নায়েক ও মাওলানা আবুল আ'লা মওদুদী সম্পর্কে যারা তুলনায় যেতে চান তাদের জন্য আরো কিছু কথাঃ
ডাঃ জাকির নায়েক এবং মাওলানা মওদুদী দুইজনই আমার কাছে পরম শ্রদ্ধেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত জাকির নায়েকের কাজ মওদুদীর কাজের একটি অংশের (দা’য়ীর দায়িত্ব) মাঝেই সীমাবদ্ধ। দুইজনই এই অংশে (বক্তব্য ও মিডিয়ায় দাওয়াতী কাজ) সফল, আলহামদুলিল্লাহ। একজন অমুসলিমদের ব্যাপারে, আরেকজন মুসলিমদের ব্যাপারে। তবে বর্তমান মিডিয়ার যুগে জাকির নায়েক সমসাময়িক কাভারেজ বেশি পেয়েছেন। তাতে করে মাওলানা মওদুদীর অবদানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
কেউ কেউ হয়তো চিন্তা করবেন জাকির নায়েক হয়তো বেশী বৈজ্ঞানিক ও প্রাক্টিক্যালিটি বজায় রেখেছেন। আমি এই ব্যপারে যতটুকু বুঝেছি তা হল, বৈজ্ঞানিক ও প্রাক্টিক্যালিটির ব্যাপারে জাকির নায়েক মওদুদীরই উত্তরসুরী। মওদুদীই তো প্রথম ইসলামের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে নতুন ফলক উম্মোচন করেছেন এই শতাব্দীতে, যার ধারা অব্যাহত রাখছেন জাকির নায়েক। যারা এটি জানেন না তারা হয়তো মওদুদীর সাহিত্য বেশী স্টাডি করেননি বা বক্তব্য শোনেননি, আর যেহেতু জাকির নায়েকের বক্তব্য মিডিয়াতে সহজে পাওয়া যাচ্ছে তাই শুনেছেন। একবার চেখে দেখুন, স্বাদ-গন্ধ সবই একই রকম, তাঁদের যারা সমালোচনা করে তারাও একই গোত্রভুক্ত। মাওলানা মওদুদীর সাহিত্য যারা পড়েছেন তারা অবলীলায় স্বীকার করবেন যে, জাকির নায়েক যা বলছেন তা তাদের শোনা কোন নতুন কথা নয়। (কোন কিছুই নতুন নয়, এমনতো আর হয় না, কিছু তথ্য নতুন থাকতে পারে বৈজ্ঞানিক ব্যাপারে এবং ধর্মগ্রন্থগুলোর ব্যাপারে) বরং তারা আনন্দ পান এই ভেবে যে, ইসলামের একজন সুমহান বক্তা এবং দায়ী জাকির নায়েকও ইসলামের সঠিক কথাটিই মানুষের মাঝে পৌছে দিচ্ছেন।
মূল লেখা- Mohammad Ahsanul Haque Arif
link: http://goo.gl/qkyTt
বিষয়: বিবিধ
৩৩৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন