একজন সোহেল রানার উত্থান বিস্ময়কর যে কারনে
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ২৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৪২:৪৪ দুপুর
হঠাত্ করেই আলোচনায় চলে এসেছেন সাভারের অভিশপ্ত রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখন তিনি ধিক্কৃত হচ্ছেন দেশের বাইরেও। প্রধানমন্ত্রীও শেখ হাসিনাও তার ব্যাপারে কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন। অনুসন্ধানে তার সম্পর্কে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সাভার থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানার উত্থান ঘটে এলাকার সন্ত্রাসী হিসেবে। ছোটবেলা থেকেই নেশাগ্রস্ত বেপরোয়া স্বাভাবের রানা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এ সুবাধে শত শত বখে যাওয়া তরুণ তার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। এ মাদকাসক্তদের দিয়েই রানা বিভিন্ন মহলে নিজের আধিপত্য ও প্রভাব খাটাত নির্বিঘ্নে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, অর্থ বৈভব ও প্রতিপত্তির কারণে সোহেল রানার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদের সাহচর্যে আসেন। তার সুনজরে পড়ে সোহেল রানা হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। একপর্যায়ে তাকে দেয়া হয় পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ। সংসদে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অস্বীকার করলেও রানা পদ লেখা লেখা পোস্টারে ছেয়ে আছে পুরো এলাকা। জাতীয় দৈনিকেও সেসব পোস্টার ছাপা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হরতালবিরোধী মিছিল, সংসদ সদস্যদের জনসভা, সরকারি সম্পদের ইজারা এসব কাজে সোহেল রানার একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে ওঠে। জমি ব্যবসার নামে নিরীহ লোকজনের জমি দখলের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। গত বুধবার ভবনধসের আগেও হরতালবিরোধী মিছিল করার জন্য লোক জড়ো করেছিলেন রানা।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে রানা প্লাজার ভেতরে গুলিতে নিহত হয় রানার প্রতিপক্ষ যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ। অভিযোগ রয়েছে তাকে মদের আসরে দাওয়াত দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়; কিন্তু এ মামলাটি টাকার জোরে অন্য খাতে প্রবাহিত করা হয়।
সাভারের আরেক সন্ত্রাসী ছাত্রদলের নেতা ভিপি হেলাল উদ্দিনের বডিগার্ড জাকিরকে অপহরণ করে ১৯৯৯ সালে নৃশংসভাবে হত্যা করে তার লাশ ঢাকা-আরিচা মহসড়কে ফেলে রাখা হয়। অভিযোগ রয়েছে, জাকির সোহেল রানার বোনকে প্রেম করে বিয়ে করেছিল। এ বিয়ে রানা ও তার পরিবার কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিল না। এ কারণে তাকে কৌশলে হত্যা করা হয়। এভাবেই সন্ত্রাসী সোহেল রানা আজকের ভুঁইফোড় ব্যবসায়ী আর যুবলীগ নেতা।
হেলালউদ্দিনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সোহেল রানা গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকায় তার বাহিনী পরিচিতি পায় ‘রানা বাহিনী’ নামে।
সন্ত্রাসী বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে সোহেল রানা গড়ে তোলেন বিভিন্ন ব্যবসা। ২০০৭ সালে তিনি নির্মাণ করেন রানা প্লাজা। ভবন নির্মাণ করার আগে বালু ফেলে ভরাট করা হয়। এর উদ্বোধন হয় ২০১০ সালে। ভবনের পেছনের অংশ রানা দখল করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে কাগজে কলমে এই রানা প্লাজার মালিক তার বাবা আবদুল খালেক।
তবে সাভারের সবাই জানেন জমি দখল থেকে শুরু করে ভবন নির্মাণ সবই করেছেন রানা। নেতাদের ক্যাডার থাকার সময় তার পরিচয় ছিল এলাকার ছিচকে সন্ত্রাসী হিসেবে। এখন বেশ কয়েকটি ভবন আর বহু সম্পত্তির মালিক এই সোহেল রানা। তার কারণেই জীবন দিতে হয়েছে শত শত শ্রমিককে।
স্থানীয়রা জানান, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মণ্ডপ গ্রামে থাকতেন রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। তার বাবার নাম আবদুল খালেক। ওই এলাকার লোকজন রানার বাবাকে ‘কলু খালেক’ হিসেবে চিনতেন। তিনি একসময় ফেরি করে তেল বিক্রি করতেন। প্রায় ৩০ বছর আগে তিনি সাভারে এসে ভাড়া বাসায় থেকে তেলের ব্যবসা করেন। একসময় তেলের ঘানি দেন। সেখান থেকে শুরু করেন খৈলের ব্যবসা। একপর্যায়ে সাভার নামাবাজারে তেলের মিল গড়ে তোলেন। এভাবেই সোহেল রানার পরিবারে অর্থনৈতিক উত্থান শুরু।
টাকা ও ক্ষমতার প্রভাবে সোহেল রানা একের পর এক দখল করে বিভিন্ন এলাকার বিরোধ আছে এমন সব জমি। স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, সাভারের বাজার বাসস্ট্যান্ড, বাজার রোডসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের রয়েছে মার্কেট, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি ও বাড়ি। এছাড়া ধামরাই এলাকায় রয়েছে ব্রিক ফিল্ডসহ একাধিক স্থাপনা। সব মিলিয়ে জীবিকার সন্ধানে শূন্য হাতে সাভারে সোহেল রানা এখন শত শত কোটি টাকার মালিক।
তথ্যসূত্রঃ আমারদেশ
বিষয়: বিবিধ
১৪৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন