দেশে কি আবার রাষ্ট্রপতিশাসন ফিরে আসছে?
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ১২ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:০৫:০৫ দুপুর
বাংলাদেশে কি আবার রাষ্ট্রপতিশাসন ফিরে আসছে? এ প্রশ্ন নিয়ে হঠাৎ আলোচনা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর এত দিন আলোচনা ছিল বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন। এখন সে আলোচনার জের ধরে কথাবার্তা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির শাসন আবার ফিরে আসছে কি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন এমন আভাস তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো থেকে পাওয়ার পর একই সূত্র এ-ও উল্লেখ করেছে যে, তিনি কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান হবেন না। শেখ হাসিনা হবেন একজন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি। তার মরহুম পিতার মতো সর্বময় ক্ষমতাধর না হলেও সংসদ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভাগাভাগিতে পাকিস্তানের মতো ক্ষমতার ঝোঁকটা হবে রাষ্ট্রপতির দিকে খানিকটা বেশি। এ ব্যাপারে সংবিধানে সংশোধনী আনার কাজটা অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে শুরুও নাকি হয়েছে। আড়াল-আবডালের এসব খবর সত্যি হলে আওয়ামী লীগের দাবির মুখে ১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরে আসার পর নতুন করে আবার পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া হবে। সরকারপদ্ধতির রূপান্তর প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ রায়ে এমন একটা ফাঁক রেখে দেয়া হয়েছে যা পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় নিষ্পত্তি করা হয়নি। অনেকের ধারণা, প্রধানমন্ত্রীর মাথায় রাষ্ট্রপতিপদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার ভাবনা রয়ে গেছে বলেই তিনি সংসদীয় পদ্ধতিতে যাওয়ার বিষয়টিকে বৈধতা না দিয়ে একধরনের শূন্যতা রেখে দিয়েছেন। সে শূন্যতা পূরণের জন্য আদালতের বেঁধে দেয়া সময় আগামী ১৩ জুনের মধ্যে। এই সময়ে এ ব্যাপারে সংবিধানে একটি সংশোধনী আনতে হবে। সেটি সংসদীয় পদ্ধতি চলমান রাখার বৈধতার পরিবর্তে হতে পারে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা আবার চালু করা।
স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরুটা অবশ্য রাষ্ট্রপতির শাসনের মধ্য দিয়েই হয়েছিল। পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তার অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ভারতের অনুকরণে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা চালু হয়। শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি থেকে হয়ে পড়েন ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী সংযোজনের পর দেশে আবার রাষ্ট্রপতিশাসন ফিরে আসে। পৃথিবীর শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবির্ভূত হন শেখ মুজিব। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহু দলের পরিবর্তে একদলীয় ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি সংসদের কর্তৃত্বকে একেবারে সীমিত করা হয়। বিচার বিভাগ তার স্বাধীনতা হারায়। নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় আদালতের এখতিয়ার কমে যায়। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে সব গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়। সংবিধানের ১১, ৬৬, ৭২, ৭৪, ৭৬, ৮০, ৯৫, ৯৮, ১০৯, ১১৬, ১১৭, ১১৯, ১২২, ১২৩, ১৪১ক, ১৪৭ ও ১৪৮ অনুচ্ছেদে মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়। পাল্টে দেয়া হয় সংবিধানের ৪৪, ৭০, ১০২, ১১৫ ও ১২৪ অনুচ্ছেদকেও। এসব পরিবর্তনের ফলে বিশ্বে অন্যতম বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক সংবিধানের চরিত্র হারায় বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে চতুর্থ সংশোধনীর বেশির ভাগ অগণতান্ত্রিক বিধানের প্রতিস্থাপন করা হয়।
দেশে রাষ্ট্রপতির শাসন ফিরে আসছে কি না সেটি জানার জন্য খুব বেশি দিন যে অপেক্ষা করতে হবে এমনটা নয়। আগামী ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন। ২১ এপ্রিল মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। এতে শেখ হাসিনা যদি মনোনয়ন পেশ করেন তাহলেই বলা যাবে দেশে রাষ্ট্রপতিশাসন ফিরে আসছে। বিদ্যমান সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন সংসদ সদস্যরা। এই সংসদে এখন দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের। ফলে রাষ্ট্রপতি হবেন কি না তার জন্য শেখ হাসিনার ইচ্ছাই যথেষ্ট। আর রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি কতটা ক্ষমতাবান হবেন তার জন্যও আপাতত যথেষ্ট তার ইচ্ছাটাই। শেখ হাসিনা যতটা ক্ষমতা চাইবেন ততটা দিয়ে সংসদ সংবিধান সংশোধন করে দিতে পারবে। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ তনয়া যদি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাতে তিনি পরবর্তী পাঁচ বছর এ পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকেন। এ জন্য জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেয়ার আগে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পিতা যখন চতুর্থ সংশোধনীর পর রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন তখন তিনি দেশের একমাত্র দলের (বাকশাল) প্রধান পদেও ছিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্বে তখনকার নিজ দেশে সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতির একজন। বঙ্গবন্ধুতনয়া রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণের পর তার ক্ষমতার পরিধি বা অবস্থান কী হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
শেখ হাসিনা যদি সত্যি সত্যিই এখন রাষ্ট্রপতি হন তাহলে তিনি মেয়াদ ফুরিয়ে আসা বর্তমান সংসদ সদস্যদের ভোটেই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান হবেন। সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কোনো সমঝোতা বা বিধান যদি সংবিধানে সন্নিবেশ করাও হয় তাহলে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার প্রয়োজন হবে না শেখ হাসিনার। রাষ্ট্রপতি ও সংসদের ক্ষমতার বিন্যাস সংবিধান সংশোধন করার মাধ্যমে তিনি করতে পারবেন। এ জন্য তিনি বর্তমান সংসদের মেয়াদ পর্যন্ত সময় পাবেন।
বেশ আগে থেকেই রাজনৈতিক মহলে একটি আলোচনা ছিল শেখ হাসিনা তার পিতার অনুসরণে সংসদীয় ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থায় পরিণত করতে পারেন। কিন্তু তার রাষ্ট্রপতি হওয়ার ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দলের পক্ষ থেকে আসেনি। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এপ্রিলের মধ্যেই বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান হয়ে যাবে বলে যে বক্তব্য রেখেছেন তার মধ্যে এর ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর বাইরে দলের একাধিক নেতা বলেছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যেও শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপতি হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।
বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রপ্রধানরূপে সংবিধান ও অন্য কোনো আইনের দ্বারা প্রদত্ত ও অর্পিত সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করার কথা বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে। তবে সংবিধানে এর পরের দফায় বলা হয়েছে, শাসনতন্ত্রের ৫৬ অনুচ্ছেদের ‘৩’ দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ নম্বর অনুচ্ছেদের ‘১’ দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া রাষ্ট্রপতি তার সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে কাজ করবেন। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে একেবারে সীমিত করা হয়েছে। সংবিধান থেকে এই অনুচ্ছেদ বাদ দেয়া অথবা সংশোধন করার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হতে পারে।
বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নবপর্যায়ের সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংবলিত ত্রয়োদশ সংশোধনী ছাড়া এরপর উল্লেখযোগ্য কোনো সংবিধান সংশোধনী ছিল না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চম, সপ্তম ও ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়ার পর সংবিধানে একধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। রায়-পরবর্তী সংবিধানের একটি সংস্করণ প্রকাশ করে বলা হয়, এটি চূড়ান্ত সংবিধান হিসেবে গণ্য করা হবে। কিন্তু সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করার পর আগের সংবিধানের সাথে নানা ধরনের সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়।
সংবিধানের একাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়া ও পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়ার বৈধতা দেয়া হয়েছিল। দ্বাদশ সংবিধান সংশোধনী আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন এবং পঞ্চম সংসদের নির্বাচন ও গঠনের বৈধতা দেয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ক্রান্তিকালীন বিধান হিসেবে সংবিধানের এই সংযোজনকে অবৈধ ঘোষণা করে। তবে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে চতুর্থ সংশোধনী (বাকশাল) বাতিল, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনসহ সামরিক ফরমানের মাধ্যমে জনস্বার্থে সংঘটিত কার্যক্রমকে মার্জনা দেন আদালত। পরে সরকারপ আপিল বিভাগের ওই রায়ের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। আদালত কিছু পর্যবেণসহ পুনর্বিবেচনার আবেদনটির নিষ্পত্তি করেন। আগের আপিল বিভাগ জনস্বার্থে যেসব বিষয় মার্জনা করেছিল, পুনর্বিবেচনার আবেদনে বর্তমান আপিল বিভাগ সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার মতা সংসদের ওপর ন্যস্ত করে এ জন্য ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। পরে সরকারের আবেদনক্রমে আপিল বিভাগ আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করে। এই সময়ের মধ্যে কোনগুলো মার্জনা করা হবে সংসদকে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু মার্জনার বিষয়টি সংসদের ওপর ছেড়ে দিলেও ১৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আদালত ক্রান্তিকাল নির্দিষ্ট করে দেয়। রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে সংবিধান প্রণয়নের আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময়কে ক্রান্তিকাল হিসেবে গণ্য করা হবে। এর বাইরে ক্রান্তিকাল হিসেবে সংবিধানে যা কিছু অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা সঠিক হয়নি। আপিল বিভাগের এ রায়ের পর ২০১১ সালের অক্টোবরে পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সর্বশেষ মুদ্রিত সংবিধান থেকে এগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী এখন আর সংবিধানের অংশ নয়। এর ফলে রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন অবৈধ হয়ে গেছে। কিন্তু এই অবৈধ শাসনপদ্ধতি এখনো কার্যকরভাবে চলে আসছে। সংবিধানের সাম্প্রতিক সংস্করণে চতুর্থ তফসিলে সংযুক্ত একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনীসহ পাঁচটি প্যারা (১৮ থেকে ২২) ফেলে দেয়ায় একধরনের অস্বচ্ছতা ও গোঁজামিলের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে শাসনতন্ত্রে। আবার বলা হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে সরকারপ্রধান সিদ্ধান্তহীন ছিলেন বলে পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় ইচ্ছা করেই সরকারপদ্ধতির বিষয়টি অনিষ্পন্ন রাখা হয়। এখন নতুন আরেক সংশোধনীর মাধ্যমে আবার রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া হতে পারে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মতাশালী রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ েেত্র রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রত্য না পরো ভোটে হবে, সেটি নতুন করে নিষ্পত্তি করা হতে পারে। তবে তার আগে যদি প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে যান তাহলে পদ্ধতি পরিবর্তনের পর প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলেও বিদ্যমান রাষ্ট্রপতির নতুন করে নির্বাচন করার প্রয়োজন হবে না। এতে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি হলেও প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয় আর থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাকশাল গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি হন। তখন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়নি, সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমেই এটি সম্পন্ন করা হয়।
বাংলাদেশে এখন যে তীব্র রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে, তার অবসান সরকারপদ্ধতির পরিবর্তনে হয়ে যাবে এমনটা আশা করা যায় না। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার যদি সাফল্যের সাথে এটি করতে পারে তাহলে সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে না পারলেও ক্ষমতার বাইরে থাকার ঝুঁকি তাদের সামনে থাকবে না। পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ পরাজিতও হয় তাহলে বিজয়ী প্রতিপক্ষ দল সরকার গঠন করবে কিন্তু ক্ষমতা কেবল তাদের হাতে থাকবে না। রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি চালু করার জন্য যতটুকু ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির জন্য নির্ধারণ করা হবে, ততটুকু ক্ষমতা আওয়ামী লীগের হাতে তথা নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির হাতে থাকবে। এরপরও একটি ঝুঁকি থেকে যায়, সেটি হলো রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশন করা। এ জন্য প্রয়োজন হয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট। সেই ঝুঁকিও কমানো যায় সংবিধান সংশোধনের সময় এই অভিসংশনকে আরো কঠিন করে দিয়ে। এসব বিষয় সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি হওয়ার চিন্তা করতেই পারেন। তবে মানুষের সব হিসাব-নিকাশ চূড়ান্তভাবে অনেক সময় কাজে আসে না। এক কালের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসকদের সব পরিকল্পনার চিরঅবসান ঘটিয়েছিল উপেক্ষার মতো কার্যকারণ। কেবলমাত্র একটি মশা পতন অনিবার্য করে দিয়েছিল প্রতাপশালী শাসকের। অজ্ঞাত শঙ্কাটি হয়তো সেখানেই।
লেখকঃ মাসুম খলিলী
বিষয়: বিবিধ
১১৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন