কিয়ামতের ছোট বড় নিদর্শন-সম্বলিত গ্রন্থ "মহা প্রলয়" পর্ব-০৪ মূল: ড. মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আরীফী
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ১১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:৩৭:৫২ সকাল
আগের সংখ্যার পর
কেয়ামতের ক্ষুদ্রতম নিদর্শন
ভূমিকা:
পূর্বে-ই আলোচিত হয়েছে যে, কেয়ামতের কিছু নিদর্শন ক্ষুদ্রতম আর কিছু বৃহত্তম। এতদুভয়ের পার্থক্য করতে গেলে বলতে হবে যে, বৃহত্তম নিদর্শনাবলী প্রকাশের পরপরই কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। ভূ-পৃষ্ঠে কেয়ামতের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। সবাই তখন তা অনুভব করতে পারবে। আর ক্ষুদ্রতম নিদর্শনাবলী কেয়ামতের যথেষ্ট দূরবর্তী কাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে। স্থানে স্থানে এগুলোর প্রকাশ ও বিকাশ ঘটছে। অনেকে টের পাচ্ছে, অনেকে অলসতার বস্ত্র গায়ে গভীর নিদ্রায় অচেতন রয়েছে।
এই পরিচ্ছেদে কোরআন-হাদিসের আলোকে ক্ষুদ্রতম নিদর্শনাবলী নিয়ে বিস্তর আলোচনা-গবেষণা হবে। পাশাপাশি হাদিসের বর্ণনা-সূত্র সবল না দুর্বল, তা নিয়েও যথেষ্ট আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
(১) নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন:
নবী করীম সা.এর ভাষ্য মতে- শেষনবী হিসেবে দুনিয়াতে তাঁর আগমন-ই কেয়ামতের প্রথম ক্ষুদ্রতম নিদর্শন।
হযরত ছাহল বিন সা’দ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি নবী করীম সা.কে দেখেছি- তিনি তর্জনী এবং মধ্যমাঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করে বলছেন- “আমার এবং কেয়ামতের মধ্যে এই দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তী ফাকা জায়গার ন্যায় ব্যবধান।”-” (বুখারী-মুসলিম)
অন্যত্র এরশাদ করেন- “কেয়ামতের প্রথম বাতাসে-ই আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।”-” (মুস্তাদরাকে হাকিম)
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন- “স্বয়ং নবীজী সা.-ই হচ্ছেন কেয়ামতের প্রথম নিদর্শন। কারণ, তিনি শেষনবী, শেষ কালের নবী। উনাকে প্রেরণের মাধ্যমে নবী আগমনের দ্বার চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। কেয়ামত অবধি আর কোন নবী পৃথিবীতে আসবেন না।
(২) নবী মুহাম্মদ সা. এর ইন্তেকাল
নবী করীম সা. এর ইন্তেকাল -কেয়ামতের প্রাথমিক ক্ষুদ্রতম নিদর্শনাবলীর অন্যতম। প্রখ্যাত সাহাবী আওফ বিন মালেক রা. এর বর্ণনায়- “তাবুক যুদ্ধ চলাকালে একদা আমি নবী করীম সা.এর কাছে আসলাম, তিনি তখন পশমের তৈরি একটি তাবুতে (বসা) ছিলেন। আমাকে দেখে বলতে লাগলেন- “ছয়টি বিষয় আঙ্গুল দিয়ে গুণে রাখ! (কেয়ামতের নিদর্শন-স্বরূপ)
১) আমার ইন্তেকাল
২) বাইতুল মাকদিস বিজয়
৩) ছাগ-ব্যাধি সদৃশ এক প্রকার মহামারীতে তোমাদের ব্যাপক প্রাণহানি
৪) ধন সম্পদ বৃদ্ধি, এমনকি একশত দিনার দিতে চাইলে-ও প্রস্তাবিত ব্যক্তি ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠবে। (অর্থাৎ মানুষের হাতে হাতে টাকা-পয়সার জয়-জয়কার হবে। একশ-দু’শ কারো চোখেই পড়বে না, সবাই লাখ-কোটির চিন্তায় মত্ত থাকবে)।
৫) এমন ফেতনা, যা আরবের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে
৬) তোমাদের এবং রূমকদের (বর্তমান ইউরোপ-আমেরিকা) মাঝে একটি শান্তিচুক্তি সাক্ষরিত হবে। অতঃপর রূমকরা চুক্তি ভঙ্গ করে আশি-টি ঝাণ্ডাতলে সমবেত হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে। প্রতিটি ঝাণ্ডার অধীনে তাদের বার হাজার করে সৈন্য থাকবে।” (বুখারী)
নবী করীম সা. এর ইন্তেকালের মাধ্যমে-ই সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি মুসলমানদের অনুভূত হয়। কেয়ামতের চিরন্তন নিদর্শন হয়ে লাখো সাহাবীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। উনার ইন্তেকালে ওহী আগমনের দ্বার চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। নানান ফেতনা মুসলমানদের গ্রাস করতে থাকে। আরবের লোকেরা ইসলাম ছেড়ে পৌত্তলিকা-য় ফিরে যায়। আল্লাহর অপার রহমতে সকল ফেতনা ও বাধার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে মুসলমানগণ আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নে সক্ষম হন।
(৩) চন্দ্র বিদারণ:
আল্লাহ তা’লা বলেন- “কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত জাদু।-” (সূরা ক্বামার ১-২)
হাফেয ইবনে কাছীর রহ. লিখেন- “সবল সূত্রে বর্ণিত একাধিক হাদিসে ঘটনাটি প্রমাণিত। সাহাবায়ে কেরাম এবং সকল ইমাম-উলামা এ ব্যাপারে একমত। ঘটনাটি নবী করীম সা. এর অলৌকিক মু’-জেযা সমূহের অন্যতম।
আনাছ বিন মালিক রা. বলেন- “মক্কাবাসী নবীজী-র দাওয়াত সত্যতা প্রমাণে কোন নিদর্শন দাবী করলে নবীজী তৎক্ষণাৎ চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করে দেখান।-” (বুখারী-মুসলিম)
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা. বলেন- “একদা আমরা নবী করীম সা. এর সাথে মিনা প্রান্তরে ছিলাম। হঠাৎ চন্দ্র দু-ভাগ হয়ে গেল। এক ভাগ পাহাড়ের পেছনে চলে গেল, অপর ভাগ ও-পাশের পাহাড়ের পেছনে চলে গেল। নবী করীম সা. আমাদের লক্ষ করে বললেন- ভাল করে দেখে নাও!” (বুখারী-মুসলিম)
ইবনে আব্বাস রা. বলেন- “একদা মক্কার মুশরেক সম্প্রদায় নবী করীম সা. এর কাছে এসে বলতে লাগল- তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে আমাদের সামনে চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখাও! এক খণ্ড আবু কুবাইস পর্বতে, অপর খণ্ড কুআইকাআন পর্বতে নিয়ে আস! রাতটি ছিল পূর্ণিমার। মুশরেকদের কথা শুনে নবীজী আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে লাগলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। এক খণ্ড আবু কুবাইস পর্বতে, অপর খণ্ড কুআইকাআন পর্বতের ওপারে গিয়ে পতিত হল। নবী করীম সা. আমাদেরকে লক্ষ্য করে বলছিলেন- “ভাল করে দেখে নাও!” (رواه أبو نعيم في دلائل النبوة)
(৪) সাহাবা যুগের অবসান:
নবীর পর সৃষ্টির সেরা মানব জাতি হচ্ছেন সাহাবায়ে কেরাম। আবূ মূছা রা. বর্ণিত হাদিসে নবী করীম সা. বলেন- “তারকারাজি -আসমানের নিরাপত্তা প্রহরী। তারাকারাজি বিলুপ্ত হলে আকাশের অন্তিম ঘনিয়ে আসবে। তদ্রূপ আমার সাথীদের জন্য আমি হলাম নিরাপত্তা প্রহরী। আমি চলে গেলে সাহাবাদের অন্তিম ঘনিয়ে আসবে। সাহাবাগণ আমার উম্মতের নিরাপত্তা প্রহরী। সাহাবা যুগের অবসান হলে উম্মতের অন্তিম ঘনিয়ে আসবে।-” (মুসলিম)
উপরোক্ত হাদিসেঃ
১) সাহাবা যুগের অবসানকে দু’টি নিদর্শনের সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে, তারকারাজি বিলুপ্ত হওয়া, উল্কা অবতীর্ণ হওয়া, নবী করীম সা.এর ইন্তেকাল।
২) অপর হাদিসে “সৎ নিষ্ঠাবান ব্যক্তিগণ একের পর এক বিদায় হয়ে যাবেন, সবশেষে দুশ্চরিত্র ব্যক্তিদের উপর কেয়ামত আপতিত হবে।”
(৫) মুসলমানদের -বাইতুল মাকদিস (জেরুজালেম) বিজয়:
নবী করীম সা.এর আগমনকালে বাইতুল মাকদিস সম্পূর্ণ রূমক খ্রিষ্টানদের অধিকারে ছিল। রূম ছিল তখনকার প্রতিষ্ঠিত পরাশক্তি। জীবদ্দশায় নবীজী মুসলমানদেরকে বাইতুল মাকদিস বিজয়ের সুসংবাদ দেন এবং একে কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন বলেও আখ্যায়িত করেন। উপরে বর্ণিত আওফ বিন মালেক রা.-এর হাদিসে নবীজী ছয়টি নিদর্শনের মধ্যে “বাইতুল মাকদিস বিজয়” কথাটিও উল্লেখ করেন।
ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা আমীরুল মুমেনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর যুগে (১৬ হিজরী-৬৩৭ ইং) বাইতুল মাকদিস বিজয় হয়। সকল নবীর প্রত্যাবর্তন-স্থল খ্যাত এ ভূমিকে মুসলমানগণ কুফুরীর নোংরামী থেকে পবিত্র করেন।
ইসলামের ইতিহাসে দু’-বার বাইতুল মাকদিস বিজয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রথমবার উমর বিন খাত্তার রা.-এর যুগে। দ্বিতীয়বার- আইয়ূবী শাসনামলে। সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহ. ৫৮৩ হিজরী - ১১৮৭ ইং সনে পুনরায় তা বিজয় করেন।
অচিরেই একদল নিষ্ঠাবান মুসলমানের নেতৃত্বে বাইতুল মাকদিস আবারো বিজয় হবে। এমনকি পাথর ও বৃক্ষকুল প্রতিটি মুসলমানকে ডেকে বলতে থাকবে- “ওহে আল্লাহর বান্দা মুসলিম! এদিকে এসো! আমার পেছনে ইহুদী লুকিয়েছে, তাকে হত্যা কর!” (মুসলিম শরীফ)
বাইতুল মাকদিস এবং ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের সর্বশেষ যুদ্ধ সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা আসবে ইনশাল্লাহ।
(৬) ছাগ-ব্যাধি সদৃশ এক মহামারীতে ব্যাপক প্রাণহানি:
প্লেগ বা মহামারী জাতিয় বড় ধরনের কোন সংক্রমণ-শীল ব্যাধি ছড়ানোর ফলে ব্যাপক প্রাণনাশ ঘটবে। দলে দলে মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হবে।
বর্ণিত আছে, ‘আমওয়াছ’-’ মহামারীতে এ-রকম ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছিল। শরীরের কোন স্থানে ফোলে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভূত হত, দেখতেই দেখতেই আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত।
‘আমওয়াছ-’ ফিলিস্তীনে জেরুজালেমের নিকটবর্তী একটি বসতির নাম।
আওফ বিন মালেক রা. বর্ণিত হাদিসে ছয়টি নিদর্শনের মধ্যে এটিও অন্যতম।
উমর বিন খাত্তাব রা.এর শাসনামলে বাইতুল মাকদিস বিজয়ের দুই বৎসর পর ১৮ হিজরীতে ‘আমওয়াছ’ মহামারীর ঘটনা ঘটে। পঞ্চাশ হাজারের মত মুসলমান সেখানে মারা যায়। মুয়ায বিন জাবাল, আবু উবাইদা, শুরাহবিল বিন হাছানা, ফযল বিন আব্বাস বিন আব্দিল মুত্তালিব রা.-এর মত উচ্চপদস্থ সাহাবী সেখানে ইন্তেকাল করেন।
ছাগলের নাক বেয়ে রক্ত বা পানির মত কিছু প্রবাহিত হওয়ার ফলে এক প্রকার রোগের সৃষ্টি হয়, এ ধরনের রোগাক্রান্ত সব ছাগলই দ্রুত মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এ জন্যই ছাগলের ঐ ব্যাধির সাথে সেই মহামারীর তুলনা করা হয়েছে। মানুষের দেহের কোথাও ফোলে গিয়ে সেখান থেকে রক্ত বা পানি জাতিয় কিছু প্রবাহিত হতে থাকে। দেখতে দেখতেই আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যু পথের যাত্রী হয়ে যায়।
(৭) নানান ফেতনার দ্রুত আবির্ভাব:
বর্তমান কালে হাজারো ফেতনা মুসলমানদেরকে ঘিরে রেখেছে। প্রতিদিন ফেতনাগুলো রঙ-বেরঙ-য়ের চেহারায় নতুন রূপ নিয়ে আভিভূত হচ্ছে।
প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, ম্যাগাজিন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ফলে চোখের ফেতনা ব্যাপক-আকার ধারণ করেছে। টেলিফোন, মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিদিন কত রকমের নিত্যনতুন ভিডিও অভাবনীয় ডিজাইনে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এহেন মুহূর্তে আল্লাহর ভয়ে যে ব্যক্তি এ সকল ফেতনা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে, অবশ্যই আল্লাহ তা’লা তার অন্তরে ঈমানের মধুরতা সৃষ্টি করে দেবেন।
ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য মালের ফেতনা। আজকাল সুদ, ঘুষ, মদ ও হারাম পণ্য ব্যাপক হওয়ার ফলে দ্রুত মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা ছড়িয়ে পড়েছে।
হারাম পণ্য বক্ষকের দোয়া আল্লাহ কখনোই কবুল করেন না। পরকালে তার জন্য কঠিন শাস্তির ধমকি রয়েছে।
পুরুষ-মহিলা আজকাল একে অপরের সাথে তাল মিলিয়ে হারাম পোশাকের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে।
প্রতিটি ঈমানদারকে এগুলো থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. এরশাদ করেন- “অন্ধকার রাত্রির ন্যায় -ফেতনা আচ্ছন্ন হওয়ার পূর্বেই তোমরা দ্রুত নেক আমল করে ফেলো। তখন মানুষ সকালে মুমিন থাকবে, বিকালে কাফের হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে। দুনিয়ার তুচ্ছ লাভের আশায় নিজের ঈমানকে সে বিক্রি করে দেবে।-” (মুসলিম)
হাদিসের মর্মার্থঃ
চন্দ্রিমা নয়; বরং অমাবস্যার অন্ধকারের ন্যায় কালো ফেতনা একের পর এক প্রকাশ হতে থাকবে। না বুঝেই মানুষ ফেতনায় পতিত হয়ে যাবে। এমন কাল আসার পূর্বেই নবীজী উম্মতকে বেশি বেশি নেক আমল করে ফেলার আদেশ দিচ্ছেন।
এ ফেতনার সবচে’ ভয়াবহ দিক হচ্ছে, মানুষ তখন সকালে মুমিন থাকবে, বিকালে কাফের হয়ে যাবে। মুহূর্তের মধ্যে মানুষ নিজের অজান্তে ধর্মহীন হয়ে পড়বে। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন)
(৮) স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আবিস্কার:
লাখো ফেতনার ধারক-বাহক হয়ে পনের হাজারের-ও বেশি টিভি চ্যানেল বর্তমানে পৃথিবীর আকাশে ঢেও খেলছে। অমাবস্যার চেয়েও আঁধার-কালো আকৃতিতে পৃথিবীতে আজ ফেতনাসমূহ বর্ষিত হচ্ছে। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বর্তমান স্যাটেলাইটের ফেতনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
হুযায়ফা রা. বলেন- “অচিরেই আকাশ থেকে অনিষ্টকর বস্তু বর্ষিত হবে, এমনকি তা জনশূন্য সুদূর মরু প্রান্তরে-ও পৌঁছবে।-”
হাদিসে ব্যবহৃত- السماء (আকাশ) বলতে মাথার উপর থেকে নিয়ে আসমান পর্যন্ত পুরো মহাশূন্যকেই বুঝায়। আরবী ডিকশনারীগুলোতে তাই উল্লেখ রয়েছে।
আকাশে স্থাপিত প্রায় অর্ধশত স্যাটেলাইট ষ্টেশন থেকে প্রতি সেকেন্ডে লাখো ফেতনা টিভির পর্দা বেয়ে পৃথিবীতে নামছে। বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার জনক ডিশ এন্টেনাকে যদি সুদূর মরু প্রান্তরে-ও বসিয়ে দেয়া হয়, সহজে-ই সেখানে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। লোকালয় তো বটেই, আজকাল জনমানবহীন মরুভূমিও ফেতনার শঙ্কামুক্ত নয়।
(৯) মুসলমানদের আভ্যন্তরীণ “সিফফীন” যুদ্ধের বাস্তব প্রতিফলন:
‘জঙ্গে সিফফীন-’ মুসলমানদের মধ্যকার সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ
কেয়ামতের নিদর্শনবাহী অনেক যুদ্ধ-বিগ্রহের ব্যাপারে নবী করীম সা. ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তন্মধ্যে এক-ই কালেমার পতাকাবাহী দু’-টি মুসলিম সেনাদলের মধ্যকার “সিফফীন” যুদ্ধের কথা একটু আলাদা করেই বলেছেন। উসমান বিন আফফান রা.-এর হত্যা-ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্বের ফলে প্রখ্যাত সাহাবীদ্বয় আলী এবং মুআবিয়া রা.-এর মধ্যে ৩৬ হিজরী সনে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়, যা কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন।
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. এরশাদ করেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না একই দাবীর প্রেক্ষিতে মুসলমানদের দু’টি বিশাল বাহিনী তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়।”-” (বুখারী-মুসলিম)
সতর্কবাণী-
সাহাবাদের পারস্পরিক সংঘাতের প্রেক্ষিতে আহলে সুন্নাত মুসলমানদের অবস্থানঃ
সাহাবায়ে কেরাম রা. সকলেই সাধারণ মানুষ ছিলেন, নবী ছিলেন না। সুতরাং অন্যান্য মানুষের মত সাহাবাদের মধ্যেও ছোটখাটো ইজতেহাদী ভূল..এমনকি সংঘাত -থাকতেই পারে।
সকল আহলে সুন্নাত উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে,
১) নবীদের পর সাহাবায়ে কেরাম হচ্ছেন সর্বোৎকৃষ্ট, সর্ব পরিশুদ্ধ এবং শেষনবীর আদর্শের সবচে’ কাছাকাছি মানব সম্প্রদায়।
২) সাহাবায়ে কেরামের পারস্পরিক মতবিরোধ এবং সংঘাত নিয়ে -আমাদের নাক গলানোর কোন অধিকার নেই। নীরবতা অবলম্বন করতে হবে। তাদের ছিদ্রান্বেষণ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
৩) সাহাবাদের প্রতি কুধারণা পোষণ বা ফেতনার আশঙ্কার দরুন জনসম্মুখে এ ব্যাপারে কথা বলা বা এ ধরনের কোন দুর্ঘটনা প্রচার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
২৬৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন