কিয়ামতের ছোট বড় নিদর্শন-সম্বলিত গ্রন্থ "মহা প্রলয়" পর্ব-০২ মূল: ড. মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আরীফী
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:৪৪:৫৮ রাত
আগের সংখ্যার পর
সংঘটিত হওয়া না হওয়ার বিবেচনায় কেয়ামতের নিদর্শনাবলীকে আমরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করতে পারিঃ
(ক) যেগুলো পরিস্কারভাবে ঘটে গেছে বলে প্রমাণিত। যেমন, নবী করীম সা. এর আবির্ভাব এবং ইন্তেকাল, মিথ্যা নবুওয়াত দাবীদারদের আত্মপ্রকাশ।
(খ) যেগুলোর সূচনা হয়েছে এবং ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন, দোকানপাট কাছাকাছি হয়ে যাওয়া, পুস্তক এবং লেখালেখি অত্যাধিক বেড়ে যাওয়া, হানাহানি-খুনাখুনি সীমাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া... ইত্যাদি।
(গ) যেগুলো এখন পর্যন্ত ঘটেনি, অচিরেই ঘটবে। যেমন, অদ্ভুত প্রাণীর আত্মপ্রকাশ, দাজ্জালের আবির্ভাব ইত্যাদি।
তৃতীয় মূলনীতিঃ কেয়ামতের নিদর্শনাবলীকে বাস্তবের সাথে মেলাতে গিয়ে ভুল ব্যাখ্যার শঙ্কা।
(১) স্বল্পজ্ঞান নিয়ে কথা বলা এবং অদৃশ্যের বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি-র পরিণাম স্মরণ।
কারণ, আপনি যখন দৃঢ়চিত্তে বলবেন যে, অমুক নিদর্শনটি তমুক সালে ঘটেছে, তবে এর পক্ষে আপনার যথাযথ শরয়ী প্রমাণ থাকা আবশ্যক। কোরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যতিরেকে একজন মুমিনের জন্য এ বিষয়ে নাক গলানো সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনুচিত।
(২) বৈধ বিষয় থেকে বিমুখ হয়ে অবৈধ বিষয়ে মনোনিবেশের আশঙ্কা।
কিছু মানুষ ইমাম মাহদী সম্পর্কে লিখিত গ্রন্থাদী পড়েছে। লেখকের ধার্যকৃত সেই ইমাম মাহদীর প্রতীক্ষায় প্রহর গুণতে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ ইমাম মাহদীর পক্ষে বৃহত্তম যুদ্ধে শরীক হতে এখন থেকেই ঘোড়া-তরবারী কিনে রেখে দিয়েছে। কেউ আবার -দাজ্জাল আবির্ভাব কাছিয়ে গেছে ভয়ে বিয়ে শাদী এবং ঘর নির্মাণের প্ল্যান মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে।
(৩) কখনো কখনো এ সকল বিষয়ে বাড়াবাড়ি -আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি মিথ্যারোপের মত জঘন্য বিষয়কে উস্কিয়ে দেয়।
মনে করুন নিশ্চিতভাবে প্রচার করা হল যে, এই লোকটি-ই ইমাম মাহদী। কিছুদিন পর দেখা গেল যে, সে মাহদী নয়। তাহলে ইমাম মাহদী সম্পর্কে হাদিসগুলোকে-ই তো এক কথায় সে অস্বীকার করে বসল।
এ সকল বিষয়ে মুখের চেয়ে চিন্তাশক্তিকে-ই আমাদের বেশি কাজে লাগাতে হবে।
কেয়ামতের নিদর্শনাবলী মানে কি?
‘নিদর্শন-’ এমন কিছু বস্তুকে বুঝায়, যা নির্ধারিত বিষয়ের আগমন-সংকেত দেয়। কেয়ামতের নিদর্শন বলতে ঐ সকল সংকেত উদ্দেশ্য, যা কেয়ামত ঘনিয়ে আসার ইঙ্গিত বহন করে।
‘কেয়ামত’-’ হচ্ছে ঐ মহাপ্রলয়, যার প্রেক্ষিতে পৃথিবীর সমাপ্তি ঘটবে এবং সমস্ত সৃষ্টজীব মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হবে।
আরবীতে কেয়ামতকে ‘-‘الساعة-’ বলা হয়, যার অর্থ- মুহূর্ত। কারণ, কেয়ামত মুহূর্তের মধ্যে সংঘটিত হয়ে যাবে। এক নিনাদে সকল কিছুর প্রাণহানি ঘটবে।
কেয়ামতের নিদর্শনাবলীর প্রকারভেদ:
কেয়ামতের নিদর্শন-সমূহ দু’-ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম ভাগঃ ক্ষুদ্রতম নিদর্শন। এটা আবার দুই প্রকারঃ
(ক) দূরবর্তী নিদর্শন।
অর্থাৎ যে সকল নিদর্শন প্রকাশ হয়ে অতিবাহিত হয়ে গেছে। কেয়ামত থেকে বহু দূরে হওয়ার দরুন এগুলো ছোট নিদর্শনের অন্তর্ভূক্ত। যেমন,
o শেষনবী হযরত মুহাম্মদ সা.এর আবির্ভাব।
o চন্দ্র বিদারণ ঘটনা।
o মদীনায় বিশাল অগ্নিকুণ্ড প্রকাশ.. ইত্যাদি।
(খ) মধ্যবর্তী নিদর্শন।
অর্থাৎ যেগুলো প্রকাশ হয়েছে এবং শেষ না হয়ে দিনদিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সংখ্যা অনেক। এগুলোও ক্ষুদ্রতম নিদর্শনের অন্তর্ভূক্ত। যেমন,
o দাসীর গর্ভ থেকে মনিবের জন্ম।
o ঘরবাড়ী (বিল্ডিং) সুউচ্চ করতে আরবদের প্রতিযোগীতা।
o প্রায় ত্রিশ-জনের মত মিথ্যা নবুওয়ত দাবীকারী-র আত্মপ্রকাশ.. ইত্যাদি।
দ্বিতীয় ভাগঃ বৃহত্তম নিদর্শন।
অর্থাৎ যেগুলো ধারাবাহিক প্রকাশ হলে পরক্ষণে-ই কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। এর সংখ্যা প্রায় দশটি।
হযরত হুযায়ফা রা. বলেনঃ “আমরা পরস্পর আলাপ-রত ছিলাম, নবী করীম সা. এসে জিজ্ঞেস করলেন- তোমরা কি আলোচনা করছিলে? সবাই বলল- কেয়ামত প্রসঙ্গে। তখন নবীজী বলতে লাগলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না তোমরা দশটি (বৃহত্তম) নিদর্শন প্রত্যক্ষ করঃ
(১) ধোঁয়া (ধূম্র)
(২) দাজ্জাল
(৩) অদ্ভুত প্রাণী
(৪) পশ্চিম দিগন্তে প্রভাতের সূর্যোদয়
(৫) মরিয়ম-তনয় ঈসা-র পৃথিবীতে প্রত্যাগমণ
(৬) ইয়াজূজ-মাজূজের উদ্ভব
তিনটি ভূমিধ্বস
(৭) প্রাচ্যে ভূমিধ্বস
(৮) পাশ্চাত্যে ভূমিধ্বস
(৯) আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস
(১০) এবং সবশেষ ইয়েমেন থেকে উত্থিত হাশরের ময়দানের দিকে তাড়নাকারী বিশাল অগ্নি।
কতিপয় বর্ণনা-য় ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ, কাবা শরীফ ধ্বংস এবং মানুষের বক্ষ থেকে কুরআনুল কারীম উঠিয়ে নেয়া-র কথাও উল্লেখ হয়েছে।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৫০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন