গাছের লতা বা মূল দিয়ে তৈরী প্রাকৃতিক ব্রীজ
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:১৫:০০ সকাল
ব্রীজ শব্দটা শুনলেই কেমন জানি চোখের সামনে ভেসে ওঠে কংক্রিট অথবা লোহার তৈরি বিশাল বড় কোন কাঠামো। কিন্তু না আজ আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব এমন ব্রীজের সাথে, যে ব্রীজ তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ন গাছ দিয়ে। কি ভাবছেন? এটা আবার নতুন কি কাঠ দিয়ে ব্রিজের কি অভাব আছে। হুম তা নেই ঠিকই কিন্তু যদি এমন হয়, সবকটি গাছই জীবিত মানে ব্রীজ গুলি হল এমন ভাবে তৈরি যে সেখানে সব কাঠ কোন না কোন জীবিত গাছের অংশ। কি অবাক হচ্ছেন। তাহলে চলুন এবার জেনে নেই এমন ব্রীজের গল্প।
ইন্ডিয়ার মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি নামক অঞ্চল, খুবই বৃষ্টি প্রবন এলাকা, এছাড়াও ঘূর্নি ঝড় এখানে প্রায় আঘাত হানে। বছরে বার মাসের মধ্যে ৫ মাসই এখানে বৃষ্টি হয়। এই বৈড়ি আবোহাওয়ার জন্য এখানে কোন প্রকার ব্রীজ তৈরি করা বেশ কঠিন কাজ আর তৈরি করলেও এখানকার স্যতস্যাতে পরিবেশ ও বাতাসে আদ্রতার পরিমান বেশী থাকার কারনে আর সাথে ঘূর্নিঝড় প্রবন এলাকা বলে তৈরি করা ব্রীজ বেশি দিন টিকিয়ে রাখাটাও অনেক কঠিন একটি কাজ। তারপরেও প্রয়োজনের খাতিরে এখানকার বাসিন্দারা এক অভিনব পদ্ধতি আবিস্কার করেছে। যে উপায়ে ঝড় বা বহু বৃষ্টি হলেও ব্রীজ গুলি অনায়াসে অনেক দিন টিকে থাকে, বলতে গেলে এরা দিনে দিনে আরো মজবুত হয়। এই এলাকায় এমন কিছু জাতের রাবার গাছ জন্মে যা অন্য কোথাও সাধারনত দেখা যায় না। আর এই রাবার গাছের মূল দিয়ে তৈরি করা হয় এই সব ব্রীজ। না এর জন্য কোন গাছের মূল কেটে আলাদা করা লাগে না বরং বাঁশের সাহায্যে এই মূল গুলোর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে এই ব্রীজ গুলি তৈরি করা হয়। এর ফলে বৃষ্টি হলে তার কোন ক্ষতি হয় না বরং আরো শক্তিশালী হয়, কেননা জীবন্ত গাছ দিয়ে বানানো ব্রীজ আর বৃষ্টির থেকে ভাল বন্ধু গাছের জন্য কে থাকতে পারে বলুন?
আগেই বলেছি বাঁশের মাধ্যমে এই সব গাছের মূলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করা হয় আর এমন ভাবেই নিয়ন্ত্রন করা হয় যেন তা এক পাড় হতে অন্য পাড়ে যেয়ে পৌছায়। গাছের মূল যত বৃদ্ধি পেতে থাকে তত বেশি বাঁশ যোগ করা হয় যাতে কোন ভাবেই এই মূলের দিক পরিবর্তন না হয় কেননা, মূল গুলি যেমন লম্বা হয় তেমনি মোটাও হতে থাকে। সব থেকে মজার বিষয় হল এই মূলের বৃদ্ধি খুবই কম হয় বলতে পারেন মাত্র কয়েক মিলি মিটার হয় প্রতি মাসে। মানে ৪০ ফিট দূরত্বের একটা ব্রীজ তৈরি করতে সময় লাগে ৪০ বছরের মত। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন ছবিতে যে ব্রীজ আছে তা তৈরি করতে কেমন সময় লেগেছে।
এখানকার আদিবাসিদের মতে (আপনারা যে ব্রিজের ছবি দেখছেন) এই ব্রীজটি তৈরি হতে সময় লেগেছে ৫০০ বছরের মত। আর এই ব্রীজে একসাথে ৯০ জন মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে কোন প্রকার ভেঙ্গে যাবার ভয় না করে। এই ব্রীজ যতই পূরাতন হচ্ছে ততই শক্তিশালী হচ্ছে। কেনন গাছ গুলির মূল প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রায় ৫০০ পূরাতন এই ব্রীজ এখানকার মূল পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। অনেক দূর দূরান্ত থেকে লোকেরা এই ব্রীজ দেখতে এখানে আসে। কেন আসবে না বলুন? এরকম ব্রীজ কে না একবার দেখতে চাবে। কালের সাক্ষি হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ব্রীজটি। এত গুলি বছর পার হয়ে গেল তার পরেও যেন বয়সের ছাপ পরে নাই ব্রীজে। যেন চির যৌবনের প্রতীক এই ব্রীজ।
তাহলে চলুন এবার দেখি এমন ব্রীজের ছবি।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন