আব্দুল কাদের মোল্লা হত্যাকান্ড, যুদ্ধাপরাধ, এবং কিছু প্রশ্ন.........

লিখেছেন লিখেছেন মুহিউদ্দীন ফাহিম ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:৫৪:৫৩ সন্ধ্যা

সময়টা ১৯৭২ সাল। এই বছর ১৭ মার্চ শহীদদের পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে পাক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঢাকার রাজপথে মিছিল বের হয়। মিছিলে পাক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করা হয়। ( আজ যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই বলে ম্যাত্‍কার করে নিজেদের pioneer ভাবছেন তথ্যটা তাদের জন্য)

১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের এক প্রেস রিলিজে বলা হয়, তদন্তের মাধ্যমে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর মধ্য থেকে ১৯৫ জনকে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, জেনেভা কনভেনশনের আর্টিকেল তিন এর লংঘন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটের অপরাধে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব রাজাকার, আলবদর, আলশামস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করেছে তাদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি "দ্য বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২" বা দালাল আইন আদেশ শিরোনামে আইন প্রণয়ন করা হয়।

১৯৭৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই আইনের আওতায় দুই হাজার ৮৮৪টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় সাজা দেওয়া হয় ৭৫২ জনকে। এদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিল। দালাল আইনের অধীনে ৩৭ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিভিন্ন আদালতে তাদের বিচার আরম্ভ হয়।"

১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর দালাল আইনে আটক যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক ৩৭ হাজারের অধিক ব্যক্তির ভেতর থেকে প্রায় ২৬ হাজার ছাড়া পায়। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও ১১ হাজারের বেশি ব্যক্তি বিভিন্ন অপরাধের দায়ে কারাগারে আটক ছিল এবং তাদের বিচার কার্যক্রম চলছিল।

সম্প্রতি আব্দুল কাদের মোল্লাকে ৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধে হত্যা করা হয়েছে। আমার কোনও আপত্তি থাকতো না যদি এই কাদের মোল্লা শীর্ষ ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর একজন হতেন। কিন্তু তিনি তা নন।

তিনি দালাল আইনে আটক হওয়া ৩৭ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ছিলেন না।

তিনি সাধারণ ক্ষমা প্রাপ্ত ২৬ হাজার ব্যক্তির মধ্যেও ছিলেন না।

তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর আটক ১১ হাজারের মধ্যে ছিলেন না,

ছিলেন না সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ জনের একজন।

তিনি "দ্য বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২ এর আওতায় হওয়া দুই হাজার ৮৮৪টি মামলার কোনও একটিরও আসামি ছিলেন না।

How possible!!!!!

তাহলে এ কোন "শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী" কাদের মোল্লাকে আমরা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাসি দিলাম!!!!

এই কাদের মোল্লা কোথায় ছিলেন মুজিবের শাসনামলে????

তিনি তো ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ রাজাকারের মতো কারও বেয়াই-তালইও ছিলেন না।

শেখ মুজিবের মতো একজন নেতা রুই-কাতলা বাদ রেখে চুনোপুঁটিদের শাস্তি দেবেন এটা কেমনে হয়!!!

এটা হয় না।

তাই এটাও হয় না যে কাদের মোল্লা যুদ্ধাপরাধী।

শুধুমাত্র রাজনৈতিক জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্য, জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার নামে যে সীমাহীন কলঙ্কে নিমজ্জিত করা হল এই দায় থেকে জাতি কবে মুক্ত হবে। ইতিহাসে যে কাল অধ্যায় আওয়ামিলীগ সৃষ্টি করে গেলো এর ঋণ শোধ করতে হয়তো অপেক্ষা লাগবে আর ৪০ বছরের।

তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে হাজার সাজানো নাটক, মিথ্যার বেসাতি, একজন নির্দোষ মানুষ হত্যার পাপবোধ আমাকে স্পর্শ করে , প্রত্যেক বিবেকবান "মানুষ" কে স্পর্শ করে। আর যখন এটি আপনাকে স্পর্শ করে না তখন বুঝবেন আপনি "মানুষ" না, আপনি হয় 'শাহবাগী", নয়তো "আওয়ামিলীগ" অথবা আপনি "শাহবাগী আওয়ামিলীগ"।

বিষয়: রাজনীতি

১৩৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File