চিটাগুড়ের গল্পঃ

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ২৫ মার্চ, ২০১৩, ০৩:১৮:২৭ দুপুর

চিটাগুড়ের গল্পঃ

পবিত্র কোরআনের দরস চলছিল । দরসদাতা বয়ান করে চলছেন- “.............সম্মানিত ভাইয়েরা, আপনারা অনেকেই চিটাগুড় চিনেন । আখের রস থেকে চিনি বা গুড় তৈরীর সময় চিটাগুড় বাই প্রোডাক্ট ( by product) হিসেবে থেকে যায়। এটি গো খাদ্য হিসাবে বহুল ব্যবহৃত । চিটাগুড় তৈরীর জন্য কেহ শিল্প কারখানা স্থাপন করেনা । চিনি বা গুড়ের কারখানা স্থাপন করলেই আপনি অযাতিতভাবে বাই প্রোডাক্ট ( by product) হিসেবে চিটাগুড় পেয়ে যাবেন ।

সম্মানিত ভাইয়েরা, মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা সফের ৯নং আয়াতে বলেন-

﴿ هُوَ الَّذِىۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰى وَدِيۡنِ الۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهٗ عَلَى الدِّيۡنِ كُلِّهٖ وَلَوۡ كَرِهَ الۡمُشۡرِكُوۡنَ‏﴾

তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত এবং ‘দীনে হক’ দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দীনকে অন্য সকল দীনের ওপর বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না কেন৷

আবার সূরা সফের ১৩নং আয়াতে বলেন-

﴿ شَرَعَ لَكُمۡ مِّنَ الدِّيۡنِ مَا وَصّٰى بِهٖ نُوۡحًا وَّالَّذِىۡۤ اَوۡحَيۡنَاۤ اِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهٖۤ اِبۡرٰهِيۡمَ وَمُوۡسٰى وَعِيۡسٰٓى اَنۡ اَقِيۡمُوۡا الدِّيۡنَ وَلَا تَتَفَرَّقُوۡا فِيۡهِ‌ؕ كَبُرَ عَلَى الۡمُشۡرِكِيۡنَ مَا تَدۡعُوۡهُمۡ اِلَيۡهِ‌ؕ اللّٰهُ يَجۡتَبِىۡۤ اِلَيۡهِ مَنۡ يَّشَآءُ وَيَهۡدِىۡۤ اِلَيۡهِ مَنۡ يُّنِيۡبُ‏﴾

তিনি তোমাদের জন্য দীনের সেই সব নিয়ম-কানুন নির্ধারিত করেছেন যার নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন এবং ( হে মুহাম্মাদ) যা এখন আমি তোমার কাছে ওহীর মাধ্যমে পাঠিয়েছি৷ আর যার আদেশ দিয়েছিলাম আমি ইবরাহীম (আ) মূসা (আ) ও ঈসা (আ)৷ তার সাথে তাগিদ করেছিলাম এই বলে যে, এ দীনকে কায়েম করো এবং এ ব্যাপারে পরস্পর ভিন্ন হয়ো না৷ (হে মুহাম্মাদ) এই কথাটিই এসব মুশরিকের কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয় যার দিকে তুমি তাদের আহবান জানাচ্ছো৷ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আপন করে নেন এবং তিনি তাদেরকেই নিজের কাছে আসার পথ দেখান যারা তাঁর প্রতি রুজু করে৷

উপরোক্ত আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, সকল নবীর উপর দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করা ফরজ ছিল । অন্য ভাবে বলতে গেলে দ্বীন কায়েমের মহান দায়িত্ব দিয়েই আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীদের দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন ।

সম্মানিত ভাইয়েরা, আপনি যখন এ দ্বীন কায়েমের পথে অগ্রসর হবেন, তখন আপনার অর্থব্যবস্থাকে ইসলামী করার জন্য ইসলামী ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠা করবেন । আপনার বাচ্চাদের সেকুলার শিক্ষা থেকে রক্ষা করার জন্য ইসলামী কিণ্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করবেন । এভাবে কর্ম সংস্থান, সচ্ছল জীবন যাত্রা ও সামাজিক প্রয়োজনে আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন । মনে রাখবেন, যেহেতু এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সমূহ ইসলামী আন্দোলনের লোকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত তাই এগুলোর আধিক্য ও অগ্রগতি, ইসলামী আন্দোলনের প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতির সাথে সমান্তরাল ভাবে চলে ।

সম্মানিত ভাইয়েরা, আগেই বলেছি চিনি শিল্পে বাই প্রোডাক্ট ( by product) হিসাবে যেমন চিটাগুড় পাওয়া যায় । তেমনি ইকামতে দ্বীনের আন্দোলনের পথে by product হিসাবে ইসলামী ব্যাংক-বীমা, ইসলামী কিণ্ডারগার্টেন থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সহ হাজারো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে । চিনি শিল্প ছাড়া যেমন চিটাগুড় পাওয়া যায়না, তেমনি যেখানে ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন নেই সেখানে বর্ণিত প্রতিষ্ঠান সমূহও ইসলামী আন্দোলনের লোকদের দ্বারা গড়ে ওঠে না । চিনি শিল্প অনেক সময় লোকসান হয় এবং তা চিটাগুড় বিক্রি করে অনেকটা পুষিয়ে নেয়া হয় । তাই বলে কেউ মূল শিল্প অর্থাৎ চিনি শিল্পকে অবহেলা করে চিটাগুড়ের মওজুদ ও বিপননে ব্যস্ত থাকেনা । বরং চিটাগুড়ের মওজুদ ও বিপননে কর্মরত ব্যক্তিগনও সর্বদা মূল শিল্পের উৎপাদনের প্রতি খেয়াল রাখেন । কারণ, মূল শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হলে by product ও ক্ষতিগ্রস্থ হতে বাধ্য ।

সম্মানিত ভাইয়েরা, মনে করুন, কোন ব্যক্তির একটি চিনির শিল্প কারখানা আছে । বন্যা বা অনুরূপ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ তার প্রতিষ্ঠানে আঘাত হানলো । এখন ব্যাপারটা কি এটাই দাঁড়াবেনা যে, চিনি ও চিটাগুড়ের মওজুদ ও বিপননে কর্মরত ব্যক্তবর্গ সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে চিনি তৈরীর মেশিনারী রক্ষায় আপ্রান চেষ্টা করবেন । নিশ্চয়ই এ সংকটময় মূহূর্তে চিনি তৈরীর মেশিনারী বিসর্জন দিয়ে দু/চার ড্রাম চিটাগুড় রক্ষায় কেউ তৎপর হবেননা ।

সম্মানিত ভাইয়েরা, লক্ষ করুন, যখনই ইকামতে দ্বীনের আন্দোলনের উপর বাতিল শক্তির আঘাত আসে, তখন ইকামতে দ্বীনের আন্দোলনের by product হিসাবে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান সমূহ পরিচালকগন ও কর্মরত ব্যক্তিগণ তাদের প্রতিষ্ঠান সমূহ বাতিল শক্তির আঘাত থেকে রক্ষার অজুহাতে ইকামতে দ্বীনের আন্দোলনের সাথে তাদের অসম্পৃক্ততা প্রমানে উঠে পড়ে লেগে যান এবং তারা নিজেরাও ইকামতে দ্বীনের আন্দোলনের তৎপরতা থেকে নিজেদের গুটিয়ে ফেলেন । তাদের এ ধরনের তৎপরতা উপরে বর্ণিত উদাহরণের মত সংকটময় মূহূর্তে চিনি তৈরীর মেশিনারী বিসর্জন দিয়ে দু/চার ড্রাম চিটাগুড় রক্ষার তৎপরতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়কি ?

প্রাকৃতিক দুর্যোগে চিনি তৈরীর মেশিনারী যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে দু/চার ড্রাম চিটাগুড় দিয়ে যেমন তা পুষিয়ে নেয়া চিন্তা করা যেমন বোকামী, তেমনি ইসলামী আন্দোলনের দুর্যোগ কালীন সময়ে ইকামতে দ্বীনের আন্দোলনের by product রক্ষার অজুহাতে ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন থেকে নিষ্ক্রিয় থেকে ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠান রক্ষার চিন্তা যারা করেন তারাও বোকার স্বর্গে বাস করেন বলেই মনে করতে হবে ।................”

তন্ময় হয়ে দরসদাতার বয়ান শুনছিলাম । মনে মনে ভাবলাম ব্যাপারটা কি আসলে তাই? আমিও তো ওই রকমের একটা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করি। ইসলামী আন্দোলনের দুর্যোগ কালীন সময়ে প্রতিষ্ঠান রক্ষার স্বার্থে আমাদেরকেও বিভিন্ন প্রোগ্রামে যেতে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় । তাহলে কি বাস্তবিকই আমরা সকলে চিটাগুড় রক্ষার তৎপরতায় নিয়োজিত আছি?

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File