পুলিশ কি না পারে?

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ২৫ মার্চ, ২০১৩, ১২:০৬:৫৮ দুপুর

পুলিশ কি না পারে?

পুলিশ এল কেমন করে_জানতে হলে অনেকটাই পেছন ফিরে তাকাতে হবে। ইংরেজিতে পুলিশ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ পোলিটিয়া থেকে। হাজার বছর আগে প্রাচীন চীনেও পুলিশের ব্যবস্থা ছিল। পুলিশ ছিল নগর-রাষ্ট্র প্রাচীন গ্রিসে এবং রোমেও। পুলিশ ছিল ইংল্যান্ডে, ছিল স্পেনে। ফ্রান্সে প্রথম পুলিশ গঠন করা হয়েছিল রাজা চতুর্দশ লুইয়ের আমলে। আমাদের সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ আছে। আমেরিকার প্রথম সিটি পুলিশ সার্ভিস গঠন করা হয়েছিল ১৭৫১ সালে ফিলাডেলফিয়াতে। রিচমন্ড ও ভার্জিনিয়াতে সিটি পুলিশ সার্ভিস গঠন করা হয় ১৮০৭ সালে এবং ১৮৪৫ সালে নিউইয়র্কে। লেবাননে প্রথম পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়েছিল ১৮৬১ সালে। আমাদের দেশে মেট্রোপলিটন পুলিশ আছে, আছে জেলার পুলিশ। থানার পুলিশ আছে, আছে ট্রাফিক পুলিশ, আর্মড পুলিশ। হাইওয়েতে হাইওয়ে পুলিশ আছে, রেলওয়েতে রেল পুলিশ। এই রেল পুলিশের জন্ম ১৮৫২ সালে, ব্রাজিলে। নির্দিষ্ট পোশাক পরা পুলিশ যেমন আছে, আছে সাদা পোশাকের পুলিশ। ডিবি পুলিশ আছে, আছে সিআইডি পুলিশ।

আমাদের দেশে পুলিশ তো সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই আছে। পুলিশের দাপট ছিল সেকালে। এখন যে নেই, নিশ্চিত করে সেটাই বা বলবে কে? তবে সে আমলে লাল পাগড়ির হাফ প্যান্ট পরা পুলিশ দেখলে গ্রাম খালি হয়ে যেত। এখন হয়তো হয় না। তবে পুলিশের ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চান না, এমন কাউকে কি পাওয়া যাবে! পুরনো সেই প্রবাদ তো আমাদের সবারই জানা_ 'পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়।' বাংলা প্রবাদের খনি থেকে আরো অনেক প্রবাদ তুলে আনা যায়। কথায় বলে, 'বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা'। কিন্তু পুলিশে ছুঁয়ে দিলে সেটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাঘের ঘরে যেমন ঘোগের বাস, তেমনি পুলিশের ঘর থানাতে থাকে পুলিশের সোর্স। 'বাঁশের চেয়ে যেমন কঞ্চি দড়' হয়, তেমনি পুলিশের চেয়ে সোর্সের ক্ষমতা অনেক সময় বেশি হয়ে দেখা দেয়। 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে' প্রচলিত এই প্রবাদটি আমরা সবাই জানি। তেমনি অঘটন ঘটে যাওয়ার পর পুলিশের আগমন ঘটবে_এটাও সবার জানা। আবার 'ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগী মৃত্যুবরণ করিল' স্কুলবেলায় এটা ছিল পরীক্ষার কমন ট্রানস্লেশন। এখন কিন্তু সবাই জানে যে, 'পুলিশ আসিবার পূর্বেই অপরাধী ভাগিয়া যাইবে।' তবু নিন্দুকেরা বলেন, 'ঘোড়ার পেছনে' এবং 'পুলিশের সামনে' পড়তে নেই। ঘোড়ার পেছনে গেলে ঘোড়া যেমন জোড়া পায়ে লাথি মারবেই, তেমনি পুলিশের সামনে গেলেও নাকি নিস্তার নেই। এরপরও সে আমলে দাদি-নানিরা 'বেঁচে থাক, দারোগা হও' বলে আশীর্বাদ করতেন।

পুলিশের কাজ কী? সেই শুরু থেকেই পুলিশের কাজটি হচ্ছে শান্তি রক্ষা করা। যেখানে অশান্তি সেখানে পুলিশ আবির্ভূত হবে শান্তির দূত হিসেবে_এটাই দস্তুর। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, পুলিশের আগমনেই অশান্তি বেড়ে যায়। আমাদের পুলিশের আবার চেহারা বদল হয়। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের হয়ে যায় পুলিশ। বিগত জোট সরকারের আমলে আমরা তার অনেক প্রমাণ দেখেছি। পুলিশের বড়কর্তা আছেন, আছেন মেজকর্তা, ছোটকর্তা। থানায় ওসি আছেন, সেকেন্ড অফিসার আছেন, আবার আছেন কনস্টেবলও। নজরুলের কবিতায় পড়া 'সার্জেন্ট যবে আর্জেন্ট মার হাতে করে আসে বাড়ায়ে'_ সেই সার্জেন্টও আছেন। থানায় পুলিশের সোর্স আছে। সোর্স ছাড়া পুলিশ ফোর্স অচল। থানার ক্যাশিয়ার আছে। আবার এলাকা ইজারা দেওয়ার পথও আছে। দেখা যাক আমাদের বাংলাদেশী পুলিশ কি পরে আর কি না পারে-

কেস ষ্টাডি-১

১২ বছর আগে মৃত ব্যক্তিদের নামে গাড়ি পোড়ানো মামলা

১২ বছর আগে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়া সাবেক বিএনপি নেতা বাবুল আহমেদ ও চার বছর আগে মৃত অপর এক বিএনপি নেতা আবদুর রহমান বাদশার বিরুদ্ধে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বাস ভাংচুরের মামলা করছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। সূত্র: আমার দেশ, ২৫.০৩.১৩

কেস ষ্টাডি-২

পুলিশ কি না পারে! কথাটি প্রমাণ করেছেন নীলফামারী সদর থানার দুই এসআই। গতকাল শহরের উকিলের মোড় এলাকার মাদকাসক্ত জিকরুল ইসলামকে তার মা পুলিশে সোপর্দ করে। এ সময় এসআই মোয়াজ্জেম হোসেন ও এসআই সাহাবুদ্দিন আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা করে জিকরুলকে বোঝাতে সক্ষম হয় মাদক জীবন ধ্বংস করে। পরে জিকরুল কান ধরে প্রতিজ্ঞা করেন আর কোনোদিন নেশা করব না। এ সময় উপস্থিত লোকজন মন্তব্য করেন, পুলিশ কি না পারে! সূত্র: দৈনিক ডেসটিনি , ০৯.০১.২০১০

কেস ষ্টাডি-৩

বাদি-স্বাক্ষী না থাকলেও মামলা

নবীনগর থানার মামলা নং-০২, তাং-০৩/১২/২০১১ইং। ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী/০৩) এর ১১(গ)। মামলায় একমাত্র আসামি ইউনুছ সরকার। এজাহারে তার বয়স দেখানো হয়েছে ৩০ বছর। কিন্তু বাদী ও সাক্ষীদের বয়স উল্লেখ নেই। উপজেলার ১নং বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বাবুল এক প্রত্যয়নপত্রে জানান, ওই মামলার বাদী ও সকল সাক্ষী নামীয় কোন ব্যক্তি তার ইউনিয়নে নেই। জালশুকা গ্রামের ইউপি সদস্য এনায়েত মোল্লা চৌকিদার(গ্রামপুলিশ) ও একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রকৃত পক্ষে এ গ্রামে এই নামে ও ঠিকানায় কোন লোকই নেই। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মডেল থানার এ এস আই মনির হোসেন ইউনুছ সরকারের বাড়িতে দৌড়ঝাপ করছেন নিয়মিত।

এ প্রসঙ্গে সদর থানার এ এস আই মনির হোসেন বলেন, নবীনগর থানা থেকে প্রেরিত কাগজপত্রের ভিত্তিতে আমি ইউনুছ সরকারের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তিনি ভাল মানুষ। তার নামে থানায় অতীতে কোন মামলা বা জিডি নেই। আমি কোন টাকা নেয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নবীনগর থানার উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাদীর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বিষয়টি তদন্ত করছি। নিয়ম মাফিক আইনানুগ ব্যবস'া নিব। বাদী বিহীন মামলার নথিভূক্তির বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভাল জানেন।

এ মামলার বাদী ও স্বাক্ষীর অস্তিত্ব না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান

সূত্র: - দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১৪.১২.১১

কেস ষ্টাডি-৪

ফরহাদাবাদ ইউপি মেম্বার আলহাজ হোসাইন মঞ্জু ও এরশাদুল হক লাজুকের সূত্রে জানা যায়, গত হরতালে হাটহাজারী থানা পুলিশ একটি মাইক্রোবাস (চট্টমেট্রো চ-১১-১১৩৫) রাতভর থানার কর্তব্য পালনের জন্য রিকুইজিশন করে। গাড়ি চালক উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ইউচুফ চৌধুরী বাড়ির আবুল বশরের পুত্র মোজাফ্‌ফর আহমদ। থানা থেকে রাতে ফজলুল কাদের পাটোয়ারী নামের এক এসআই ফোর্স নিয়ে দায়িত্ব পালনে বের হন। গাড়ি কিছুদূর যাওয়ার পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে চালক তার পাশে বসা পুলিশ কর্মকর্তাকে অবহিত করে। ত্রুটি নিয়ে গাড়িটি ফরহাদবাদ এলাকার জব্বারহাট নামক স্থানে পৌঁছলে বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও গাড়িটি আর সচল করা যাচ্ছিলনা। পুলিশ কর্মকর্তাদের গাড়ি সচল করা যাবে না বললে ওই পুলিশ কর্মকর্তা চালকের উপর ক্ষেপে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এক পর্যায়ে গাড়ি সচল না হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তারা চালককে গাড়ির সামনের বাম্পারে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে রেখে চলে আসে। সূত্রঃ ফেসবুক

কেস ষ্টাডি-৫

এলাকা চট্টগ্রামের লোহাগাড়া। সেখানে কাঠ পাচারকারী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য 'ইজারাদার' নিয়োগ দেওয়া হয়েছে_ এমন খবর গত ২ মার্চ কালের কণ্ঠে ছাপা হয়েছিল। মাসিক দেড় লাখ টাকা চুক্তিতে এই ইজারাদারের নিয়োগ লোহাগাড়া থানার পুলিশ দিয়েছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছিল।

কালের কণ্ঠে গত ১০ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে এক এসপি সাহেবের কীর্তির খবর। তিনি অনেক গ্রামবাসীর জমি দখল করেছেন। স্ত্রীর নামে ভেজাল সারের কারখানা করেছেন। সেই কারখানার ভেজাল সার জোর করে বেচতে গিয়ে এক ব্যবসায়ীকে ফাঁসিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশি হয়রানি করে তাঁর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর আত্দীয় পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়েছেন। অবশেষে তাঁর কাছ থেকে সাড়ে ২১ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এরই মধ্যে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই এসপি সাহেব এর আগে বাগেরহাটে থাকতে মোল্লারহাট এলাকায় সাধারণ মানুষের কয়েক শ বিঘা জমিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জমি দখল করে নেন। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতেনই না। এসব খবর গত ফেব্রুয়ারি মাসে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। - দৈনিক কালের কন্ঠ, ১৬.০৩.১০

কেস ষ্টাডি-৬

পুলিশ কী পারে তার কিছু সাম্প্রতিক উদাহরণ টানা যাক। ঢাকার রমনা থানার হেফাজতে কয়েকদিন আগে মারা যায় জাকির নামে এক বন্দি। মারা যাওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগের এক ঘটনা। মতিঝিল থানার পুলিশ মোটর সাইকেল আরোহী এক যুবককে ধরে থানায় নিয়ে হাজতে আটকে রাখে। তাঁর কাছে দাবি করা হয় ২৫ হাজার টাকা। অভিযোগ, যুবকের মোটর সাইকেল একটি প্রাইভেট কারকে আঘাত করে খানিকটা ক্ষতি করেছে। ওই প্রাইভেট কারটিও পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। মালিককে মামলা করতে বলে। কিন্তু মালিক পুলিশের মনোভাব আঁচ করতে পেরে মামলা না করে থানা থেকে চলে যান। যাওয়ার আগে নিছক দুর্ঘটনা মেনে নিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন মোটর সাইকেল চালককে। ভদ্রলোক চলে গেলেও পুলিশ নাছোড়বান্দা। যুবককে টাকা দিতেই হবে। দুই ঘণ্টা সময় আর শ্রম নষ্ট করেছে পুলিশের। যুবকও নাছোড়বান্দা। তিনি কোনো টাকা দেবেন না। ব্যস! চটে যান থানার সেকেন্ড অফিসারসহ তিন পুলিশ সদস্য। বেধড়ক মারধর করা হয় যুবককে। মাটিতে ফেলে বুট দিয়ে থেঁতলানো হয় শরীর। থানার ভেতরে হাজতে পুরে লাঠি দিয়ে তুলোপেটা করা হয় আরেক দফা। শেষে পুলিশের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে প্রাণভিক্ষা চান যুবক। খবর পেয়ে যুবকের এক পরিচিত পুলিশ সদস্যও থানায় আসেন। তিনি পল্টন থানার এসআই। শেষ পর্যন্ত তাঁর অনুরোধে এবং নগদ আট হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয় যুবককে।

- দৈনিক কালের কন্ঠ, ১৬.০৩.১০

কেস ষ্টাডি-৭

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশি নির্যাতনের আরেক শিকার রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ জিয়াউল হক। তিনি অভিযোগ করেছেন, নির্মম নির্যাতন চালিয়ে মতিঝিল থানার এক এসআই তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। মোটা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন। বুট দিয়ে বুকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেন। মতিঝিল থানার একটি কক্ষে চলে এ নির্যাতন। তাঁকে সহযোগিতা করেন আরো কয়েক পুলিশ। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার অজুহাতে মতিঝিল থানা পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। পরে টাকার বিনিময়ে সাদা কাগজে সই দিয়ে ছোট ভাইয়ের জিম্মায় মুক্ত হয়ে আসেন তিনি। কালের কণ্ঠে গত ১১ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে এ খবর।

- দৈনিক কালের কন্ঠ, ১৬.০৩.১০

এ ঘটনাগুলো কিছু খণ্ডচিত্র মাত্র। এ রকম ঘটনা কোন থানায় না ঘটছে! মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবমতে, প্রতিবছর পুলিশ ও কারা হেফাজতে মারা যাচ্ছে ৭০ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১০ জন। গত ২৮ জানুয়ারি শাহবাগ থানার এক বন্দি মারা যান আদালতের এজলাস কক্ষে। এর আগে কেরানীগঞ্জ থানায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্দহত্যা করেন এক রিকশাচালক। দুটি মৃত্যুর ঘটনায়ই অভিযোগ ছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। ছড়াসম্রাট সুকুমার রায় সেই কবে তাঁর ছড়ায় লিখেছেন, 'সুদ খায় মহাজনে ঘুষ খায় দারোগায়'। পুলিশ এই বিশেষ খাদ্যাভ্যাস কোনোভাবেই ত্যাগ করতে পারল না। খেয়েই চলেছে। দিন যত যাচ্ছে, খিদে তত বাড়ছে। শুধু কি ঘুষ? পুলিশ যে কি খায় না, সেটাই আজ গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। পুলিশ যে জমিও খায়, তার একটা উদাহরণ তো হালে পাওয়াই গেছে। পুলিশ পারে না কী? সব পারে। পুলিশের অসাধ্য কোনো কাজ নেই। পুলিশ জজমিয়া কেস সাজাতে পারে। পুলিশি হামলার শিকার গৃহবধূ শান্তা বিচার চাইতে গিয়েছিলেন আদালতে। তাঁকে সন্ত্রাসী সাজানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে মনি বেগম নামের এক নারীর শাড়ি খুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছিল এই পুলিশ। জাতীয় শুটিং কমপ্লেক্সে জাতীয় শুটিং দলের সদস্যদের পিটিয়েছিল এই পুলিশ। পুলিশ পারে না এমন কোনো কাজ বোধহয় নেই। এই পুলিশ কোহিনুর মিয়ার মতো এসপি উপহার দিতে পারে। এই পুলিশ সাংবাদিক পেটাতে পারে। এমনকি এই পুলিশ যে পুলিশ কমিশনারকেও 'মিসলিড' করতে পারে, তেমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে কালের কণ্ঠে। অতএব, পুলিশ পারে না_এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।

পুলিশের এই পারঙ্গমতা নিয়ে একটি জোক পাওয়া গেছে ইন্টারনেটে। সেটাই পরিবেশন করা যাক। ইংল্যান্ড, আমেরিকা আর বাংলাদেশ_ এই তিন দেশের পুলিশ একখানে গেছে প্রশিক্ষণে। মাসখানেক প্রশিক্ষণ চলার পর পরীক্ষা দিতে হবে। যারা প্রশিক্ষণ করাচ্ছিলেন, তাঁরা নিকটবর্তী বনে একটি ইঁদুর ছেড়ে দিয়ে সেটাকে খুঁজে বের করে আনতে বললেন। সময় তিন দিন। প্রথমে গেল ইংল্যান্ডের পুলিশ। তিন দিন পর এসে জানাল খুঁজে পাওয়া গেল না। এরপর গেল আমেরিকার পুলিশ। ব্যর্থ তারাও। এরপর বাংলাদেশের পুলিশের পালা। হাতে তিন দিন সময়। বাংলাদেশের পুলিশ ঢুকে গেল বনে। তিন দিন শেষে পড়ন্ত বিকেলে বন থেকে যখন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা বেরিয়ে আসছে, তাদের সঙ্গে একটি ভালুক। ভালুকটি বলছে, 'আমি ইঁদুর, হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি ইঁদুর।' যারা প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা বললেন, 'দেখাই যাচ্ছে ওটা একটা ভালুক। আর ও নিজেকে ইঁদুর বলছে কেন? তাছাড়া এই বনে ঢুকলেই তো ভালুক পাওয়া যায়। তিনদিন সময় লাগল কেন?' বাংলাদেশের পুলিশের জবাব, 'এই বিশাল বনে ছোট্ট একটা ইঁদুর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এটাকে প্রথম দিনেই পেয়েছিলাম। নিয়েছিলাম দুই দিনের রিমান্ডে। ও এখন ওয়ান সিক্সটি ফোর করছে।

সূত্র: - দৈনিক কালের কন্ঠ, ১৬.০৩.১০

,

বিষয়: বিবিধ

১৭৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File