দোয়া কীভাবে কবুল হবে?

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৮:০৭:০৮ সকাল



মানব প্রকৃতির অনিবার্য চাহিদা হলো- অর্থ-সম্পদের প্রতি টান ও ভালোবাসা। এটা মানুষের স্বভাবজাত প্রবণতা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা ধন-সম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাসো।’ -সূরা আল ফজর : ২০

ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে হালাল উপার্জন ও সৎপথে রোজগার একটি প্রশংসনীয় কাজ। আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে এর নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, হে মানবমন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ করো। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সূরা আল বাকারা : ১৬৮

অন্যদিকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিজ হাতের উপার্জিত খাবারই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতের কামাই খেতেন।’ –সহিহ বুখারি ইসলামি শরিয়তের বিধান হলো, হারাম উপার্জনকারীর কোনো আমল আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হয় না। তার দোয়া কবুল হয় না। কোনো বরকত থাকে না তার সম্পদে। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে সাদ! পবিত্র খাবার গ্রহণ করো, তাহলে তোমার দোয়া কবুল হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ; বান্দা যখন তার মুহাম্মদের প্রাণ; বান্দা যখন তার মুখে হারাম উপায়ে কোনো খাবার গ্রহণ করে, আল্লাহ ৪০ দিন তার কোনো আমল কবুল করেন না।

আর যে ব্যক্তি বেড়ে ওঠে অবৈধ সম্পদ আর হারাম উপার্জিত অর্থে, তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উত্তম।’ অসৎ ও অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের দান-সদকাও কবুল হয় না। সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি আর হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যের অর্থ-সম্পদের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য প্রত্যাশা করা যায় না। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া নামাজ আর চুরি ও আত্মসাতের সম্পদের সদকা কবুল হয় না।’ –সহিহ মুসলিম

হারাম রিজিক, হারাম খাদ্য বড় সাংঘাতিক বস্তু। হারাম খাদ্য শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় ঢুকে যায়। যার কারণে হারাম কিছু খেলে তার দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।

এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘একজন মানুষ লম্বা পথ সফর করেছে, ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। এরপর সে না ঘুমিয়ে রাতে নামাজ পড়ে এবং আল্লাহকে ডেকে ডেকে দোয়া করে- হে আল্লাহ! তুমি আমার গোনাহ মাফ করো। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, কাপড়-চোপড় হারাম। তার সবকিছুই হারাম। সুতরাং ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শরীরে, না ঘুমিয়ে সে যত মনোযোগ সহকারেই দোয়া করুক না কেন, আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে না।’ –মিশকাত দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কাপড়-চোপড়, খাওয়া-দাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছু হালাল হতে হবে।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ১০ টাকা দিয়ে একটা কাপড় কেনে, তার মধ্যে একটি টাকা হারাম হয়, তাহলে যতদিন সে তা ব্যবহার করবে, ততদিন আল্লাহতায়ালা তার নামাজ কবুল করবেন না।’ –মিশকাত

১০ টাকার এক টাকা হারাম হলে যদি নামাজ কবুল না হয়, তাহলে সব টাকা হারাম হলে কি অবস্থা হবে! নামাজ কবুল হবে কীভাবে? দোয়া কীভাবে কবুল হবে?

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র আরও বলেছেন, ‘যে শরীর হারাম খাদ্য দ্বারা লালন-পালন করা হয়েছে, সে শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ –মিশকাত তাই উপার্জনের ক্ষেত্রে আমাদের সাবধান হতে হবে। হারাম থেকে বিরত থাকতে হবে। ভাগ্যে যতটুকু আছে, তা আসবেই।

এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পৃথিবীর কোনো প্রাণী তার রিজিক শেষ করার আগ পর্যন্ত মারা যাবে না। সাবধান! সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে সৎ পথ অবলম্বন করো। তাকদিরে লেখা রিজিক আসতে বিলম্ব হলেও অসৎ পথে উপার্জন করো না। আল্লাহর আনুগত্য করেই শুধু তার কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব।’ -

বিষয়: বিবিধ

১২৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File