নহরে জোবায়দা

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ০৬ নভেম্বর, ২০১৬, ০৯:২৬:৫৩ রাত

হজ্ব সফরে মিনা আরাফতে হাজী সাহেবদের কিছু কিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনা দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার মধ্যে নহরে জোবায়দা অন্যতম ।



বাদশা হারুনুর রশীদের স্ত্রী জোবায়দা । ১৪৫ হিজরীতে জন্ম। আসল নাম আমাতুল আজীজ। শিশু জোবায়দা আর দশটি শিশুর চেয়ে একটু বেশিই সুন্দর ছিলো। আরবী ‘যাবাদ’ শব্দের অর্থ পানির উপরে জমে উঠা ফেনা। স্বচ্ছ পানির শুভ্র ফেনার মত স্বচ্ছ বর্ণের নবজাতক কন্যা সন্তানের ডাকনাম দেয়া হলো তার গায়ের রঙের সাথে মিলিয়ে।



পরিণত বয়সে বাদশা হারুনুর রশীদের সহধর্মীনী হন তিনি। এ সুবাদে তিনি জীবনের বাঁকে বাঁকে জনকল্যাণমূলক অনেক কাজই করেছেন। তার সেসব কীর্তির মধ্যে অন্যতম হলো, হাজীদের জন্য পবিত্র মক্কার পথে খাবার পানি প্রকল্প। একবার তিনি স্বামী হারুনুর রশীদের সাথে হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কায় রওনা হলেন। পথিমধ্যে হজের কষ্টকর সফরে আল্লাহ প্রেমিকদের পানির প্রয়োজনটা খুব বেশি অনুভব করলেন। ফলে তিনি মক্কা শরীফ পর্যন্ত একাধিক পানির নহর খনন করার সংকল্প করেন। হাজী সাহেবান যেন পানি সংগ্রহ করে নিজ নিজ প্রয়োজন পুরণ করতে পারেন।

হজ্ব শেষে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেন। কাজ শুরু হলো। মাঝে মধ্যে তিনি মনে মনে বলতেন- ‘যত বাধাই আসুক না কেন এ কাজ আমাকে সম্পন্ন করতেই হবে। বাগদাদ থেকে মক্কা পর্যন্ত এরকম ২০টি নহরের প্রয়োজন বোধ করছি আমি।’ প্রকল্প নির্মাণে তিনি এক কোটি সতের লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করেন। কাজ শেষ হয় ১৭৪ হিজরী সালে। এই নহর ওয়াদিয়ে নুমান থেকে আরাফা, মুযদালেফা হয়ে মিনায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তৈরী হয় একটি কূপ। যা ‘যুবাইদা কূপ’ নামে পরিচিত।





নহরগুলোর একটির সাথে আরেকটার সংযোগ ছিলো। ফলে এক নহরের পানি অপর নহরে আসা যাওয়া করতো। প্রত্যেক নহরের ডান-বাম দু’দিকেই পানি প্রবাহের জায়গা ছিলো। পরবর্তীতে প্রকৌশলীদের পরামর্শে নালা বন্ধ করে চিকন চিকন ছিদ্র করে অনেকটা বর্তমান সময়ের নলকার আকার তৈরি করা হয়। যেন হাজীগণ ওযু ইত্যাদিতেও পানি ব্যবহার করতে পারেন। খুব মজবুত করে নির্মাণ করা হয়েছিলো নহরটি। যেন প্রবল ¯্রােতের কারণে ভেঙ্গে না যায়। এ প্রকল্পটির নাম রাখা হয়, ‘আইনু জোবায়দা’ বা জোবায়দা নহর। হাজার বছর পরেও নহরটি এই মহিয়সী নারীর অবদান কীর্তি হয়ে ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। এখনো পবিত্র মক্কায় ঐতিহাসিক সেই নহরে যুবাইদার প্রত্নতাত্বিক নির্দশন বিদ্যমান।



আশ্চর্যের বিষয় হলো, নহরের কাজ শেষ হওয়ার পর দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে তলব করে প্রকল্পের সমুদয় খরচের হিসবের খাতা উপস্থিত করলেন রানী জোবায়দা। সবাই ভাবলো, নহর খননে কত টাকা ব্যয় হলো তা ঘোষণা করা হবে। কিন্তু না, সবাইকে অবাক করে দিয়ে খাতাগুলো দজলা নদীতে নিক্ষেপ করে আকাশের দিকে হাত তুলে জোবায়দা বললেন, সব হিসাব কিয়ামতের দিনের জন্য রেখে দিলাম। দুনিয়ার হিসাবের জন্য আমি এ কাজ করিনি, এ সব খরচ আমি আমার আল্লাহর জন্য করেছি।



জোবায়দা একজন মুসলিম নারী। তার মাধ্যমে সেসময়ের বাইতুল্লার পথে হাজীদের পানি পানের সর্ববৃহৎ প্রকল্প স্থাপিত হয়। বড় কথা হলো, এতবড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে তার স্বামী বাদশা হারুনুর রশীদ কোনো বাধ সাধেননি। কল্যাণকর সব কাজে স্বামীরা স্ত্রীদের পাশে থাকলে বর্তমানেও বড় বড় জনকল্যাণমূলক কাজ হওয়া সম্ভব।

বিষয়: বিবিধ

১৭০২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379527
০৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৪৮
আবু জান্নাত লিখেছেন : মা-শা আল্লাহ
দারুন লিখেছেন, উপস্থাপনাও চমৎকার।
বর্তমানে জনকল্যানমূলক কোন কাজ করতে পারলে তো মিডিয়াতে ঢোল পিটায়।
০৭ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:০২
314233
ব১কলম লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ||
379538
০৭ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমরা আজকাল ভুলে যাচ্ছি এই মহান ঐতিহ্যগুলি। আরাফার ময়দানে এমন একটি নহর বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ এর উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল।
০৭ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:০২
314234
ব১কলম লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ||
379543
০৭ নভেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:২৫
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ! সুন্দর শিক্ষনী ও উপকারি পোস্ট। আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। ভাইয়া লেখাটি দুবার হয়েছে। এডিট করে একটি করে দিন।
379545
০৭ নভেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:১৫
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ! সুন্দর শিক্ষনী ও উপকারি পোস্ট। রেফারেন্সটা দিলে আরো ভালো হতো। জাযাকুমুল্লাহ্ খাইরান।
০৭ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:০২
314232
ব১কলম লিখেছেন :
ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, শেয়ার করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ||
379556
০৭ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:২৮
আফরা লিখেছেন : খুব সুন্দর !! জাজাকাল্লাহ খায়ের !
380254
২৯ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১২:৪৬
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

"..নেকী ও আল্লাহভীতির কাজে সহযোগীতা করো এবং গুনাহ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগীতা করো না৷ আল্লাহকে ভয় করো..." এ আয়াতের উপর তাঁর দৃঢ়তা আমার কাছে খুব ঈর্ষণীয় লাগে!

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
380322
৩০ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৪২
ব১কলম লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, শেয়ার করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ||

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File