মৃতসাগরের (ডেড সি)
লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ০৫ নভেম্বর, ২০১৬, ০৮:২৯:৫১ সকাল
পৃথিবীতে সত্যিই একটি সাগরে আছে যার নাম dead sea বা মৃতসাগর।
সাগর বলা হলেও এটি মূলত একটি হ্রদ যার সর্বোচ্চ গভীরতা ৩০৪ মিটার। মধ্য প্রাচ্যে অবস্থিত এই মৃত সাগরের পূর্ব সীমান্তে রয়েছে জর্ডান এবং পশ্চিম সীমান্তে যথাক্রমে ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন। এর পৃষ্ঠভাগ ও তীরদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪২৯ মিটার নিচে অবস্থিত। তাই একে ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে নিম্নভূমি হিসেবে গণ্য করা হয়।
এখন বলি এটি বিশাল লবণাক্ত জলভূমিকে কেন সবাই মৃত সাগর বলে, এর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ প্রায় ৩৪.২%, যা সমুদ্রের পানির চেয়ে ৮.৬ গুণ বেশি লবণাক্ত। এই অত্যধিক লবণাক্ততার কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশে জলজ প্রাণীরা বসবাস ও জীবনধারণ করতে পারে না, তাই এই সাগরে কোনো প্রাণের বাস নাই বললেই চলে। এ কারণে এই জলভূমির নাম মৃতসাগর।
বলা হয়, প্রায় তিন মিলিয়ন বছর পূর্বে বর্তমান জর্দান নদী, মৃত সাগর এবং ওয়াদি আরাবাহ অঞ্চল লোহিত সাগর এর পানিতে বারবার প্লাবিত হত। এর ফলে একটি সরু উপসাগরের সৃষ্টি হয় । উপসাগরটি জেজরিল উপত্যকায় একটি সরু সংযোগের মাধ্যমে লোহিত সাগরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। প্রাকৃতিক তত্ত্ব অনুযায়ী প্রায় ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থলভাগ যথেষ্ট উচ্চতা লাভ করে। ফলে মহাসাগরের প্লাবনে এই অঞ্চলে সৃষ্ট উপসাগরটি পরিবেষ্টিত হয়ে হ্রদে পরিণত হয়।
এই সাগরে কোনো প্রাণী বাস করতে পারে তো না। কোনো মানুষ চাইলেও এর পানিতে প্রবেশ করতে পারবে না। যতই চেষ্টা করবে ডুবে যাওয়ার তুমি ভেসেই থাকবে। কেন জানো? কারণ পানির লবনাক্ততা এত বেশি হওয়ার কারণে পানির প্লবতা অনেক বেশি। তোমরা যদি না জেনে থাকো প্লবতা কী, তাহলে জেনে রাখো। প্লবতা হচ্ছে বস্তুর উপর প্রযুক্ত পানির উর্ধ্বমুখী বল। কোনো বস্তু পানিতে ডুবানো হলে বস্তুর ওজন নিচের দিকে একটা বল প্রয়োগ করে। পানিও বস্তুকে উপরের দিকে বল প্রয়োগ করে। যদি বস্তুর ওজন বেশি হয় বস্তু ডুবে যায়, আর প্লবতা বেশী হয় তবে বস্তু ভেসে থাকে। কিন্তু মৃত সাগরের পানির প্লবতা এতই বেশি যে বস্তুর ওজন অনেক বেশি হলেও বস্তুকে ঢুবানো বেশ কঠিন।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মহাসাগরের পানির তুলনায় ডেড সির পানিতে মিশে থাকা খনিজ উপাদানগুলোর পার্থক্য আছে। মৃত সাগরের পানিতে মিশে থাকা লবণে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। এই পানির ঘনত্ব ১.২৪ কেজি/লিটার। এই সকল উপাদানের কারণে ডেড সি’র পানির প্লবতা শক্তি পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের পানির চেয়ে অনেক বেশি। আর এই উচ্চ
প্লবতা শক্তির কারণে এই সাগরে কোনো কিছু ডুবে না। যে কেউ মৃত সাগরের পানিতে ভেসে থাকতে পারে। প্রাচীনকাল থেকে এই হ্রদটি মিশরের মমি তৈরির জন্য, সার উৎপাদনের জন্য পটাশসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই হ্রদ থেকে প্রাপ্ত লবণ ও খনিজ পদার্থ বিভিন্ন প্রসাধনী ও সুগন্ধি দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ডেড সি’তে কোনো মাছ নেই, কারণ এই সাগরের পানিতে কোনো মাছ বাস করতে পারে না। তেমনিভাবে এর পাশে জর্ডান নদীতেও কোনো মাছ নেই। এই সাগরের পানিতে কোন উদ্ভিদ বা মাছ বাচতে পারে না বলেই মূলত এই সাগরকে ডেড সি বা মৃত সাগর বলা হয়ে থাকে। এই সাগরের পানিতে শুধুমাত্র সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক অণুজীবের সন্ধান পাওয়া যায়। ডেড সি তীরবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে উট, খরগোশ, খেঁকশিয়াল এমনকি চিতাবাঘ দেখতে পাওয়া যায়। অতীতে জর্ডান নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে প্যাপিরাস এবং পাম গাছে সমৃদ্ধ বনভূমি ছিল। রোমান এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সময় ইক্ষু, সিকামোর এবং হেনা এ অঞ্চলের উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিল। জেরিকোতে বেলসাম গাছের রস থেকে প্রস্তুত করা হত উন্নত মানের পারফিউম এবং সুগন্ধি।
পৃথিবীর আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা হাজারো বিস্ময়ের অন্যতম একটি নাম ডেড সি বা মৃত সাগর। ডেড সি এমন একটি সাগর যে সাগরের পানিতে কেউ ডুবে না। এমনকি কেউ ডুবতে চাইলেও ডুবতে পারে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে পৃথিবীর সকল খাল, বিল, পুকুর, নদী, সাগরের পানিতে মানুষসহ যেকোনো জিনিস সহজেই ডুবে যায় কিন্তু ডেড সির পানিতে ডুবে না কেন? কি রহস্য আছে এই পানিতে?
এটি একটি অভিশপ্ত স্থান। কেননা ডেড সি’তে কোন মাছ নেই, কারণ এই সাগরের পানিতে কোনও মাছ বাস করতে পারে না। তেমনিভাবে এর পাশে জর্ডান নদীতেও কোনও মাছ নেই।
এই সাগরের পানিতে কোন উদ্ভিদ বা মাছ বাঁচতে পারে না বলেই মূলত এই সাগরকে ডেড সি বা মৃত সাগর বলা হয়ে থাকে। ইসলামের ইতিহাসে হযরত লুত (আঃ) নবীর উম্মতের সমকামিতার অপরাধে এই সাগরে তার উম্মত কে শাস্তি দিয়েছিলেন মহান আল্লাহ তাই তাকে অভিশপ্ত সাগর বলে আমরা জানি
বিষয়: বিবিধ
১২৪৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন