এটা কি সেই গজব!
লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ০৪ জুলাই, ২০১৬, ০৬:৫৩:৩৯ সন্ধ্যা
আমি নিরীহ, অবিচার হলে গজব পড়বে: সাঈদী
নিজেকে ‘নিরীহ মানুষ’ দাবি করে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখে থাকা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বলেছেন, তার প্রতি অবিচার হলে সবাই গজবে পড়বে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিলে আদালতে প্রসিকিউটরদের প্রতি ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন সাঈদী।
তিনি বলেন, “আমি একজন নিরীহ মানুষ। এই অবিচার করা হলে, আল্লাহর আরশ কাঁপবে। এরা সবাই গজবে পড়বে। আল্লাহর লানতে পড়বে। সারা পৃথিবী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে।”
“আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ করা হয়েছে, এর প্রতিটি লাইন মিথ্যা, প্রতিটি শব্দ মিথ্যা। সব মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা।”
এ সময় আদালত বলে, অভিযোগ গঠন মানে আপনি অপরাধী- বিষয়টা এমন নয়।
সাঈদীর বিরুদ্ধে একাত্তরে তিন হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, নয় জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ, বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুর এবং একশ থেকে দেড়শ হিন্দুকে ধর্মান্তরে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে। তাকে একাত্তরে তার এলাকার লোকজন ‘দেইল্লা রাজাকার’ নামে চিনতো।
তবে সোমবার অভিযোগ গঠনের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বক্তব্য জানতে চাইলে যুদ্ধাপরাধের সব অভিযোগ ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেন।
‘আমি ইংরেজিটাই বুঝেছি’
ট্রাইবুুনালে ২০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়েই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলো।
অভিযোগ গঠনের সময় মুক্তিযুদ্ধের পটভুমি ও ইতিহাস তুলে ধরে সুনির্দিষ্ট ২০টি ঘটনা উল্লেখ করে আদালত বলে, প্রতিবেদন অনুযায়ী সাঈদী রাজাকার এবং তিনি শান্তি বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের জোর করে ধর্মান্তর করানো, লুটতরাজসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অপরাধ সংঘটিত হয় বরিশাল জেলার তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমায়।
এ রকম ৩১টি অভিযোগের মধ্য থেকে ২০টির ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো।
অভিযোগগুলো ইংরেজিতে পড়া হলে সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম দাঁড়িয়ে তা বাংলায় পড়ার আবেদন করেন।
আদালত অভিযোগ বাংলায় পড়া শুরু করলে সাঈদী বলেন, বাংলায় বলা দরকার নেই। আমি ইংরেজিটাই বুঝেছি। এরপর আদালত কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সাঈদীকে প্রশ্ন করে- বলুন, আপনি দোষী নাকি নির্দোষ।
সাঈদী বলেন, “আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে চাই।”
এ পর্যায়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই জানানোর পর তিনি কিছুক্ষণ বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ চান আদালতের কাছে। আবেদন গৃহীত হলে প্রায় আট মিনিট বক্তব্য দেন সাঈদী।
‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার’
সাঈদী বলেন, এই আদালতে আমাকে প্রথম যে দিন আনা হয়, সেদিনই আমি বুঝেছি, আমি শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচারের শিকার হয়েছি। সেদিন আমার নাম বিকৃত করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হচ্ছিলো।
বিচারককে উদ্দেশ্যে করে সাঈদী বলেন, “আপনি তখন হজ করে এসেছিলেন। হজের নুরানি আভা চেহারায় তখনো নষ্ট হয়নি। আমি আশা করেছি, আপনি জিজ্ঞেস করবেন, এইটা কোথায় পেয়েছো। ওনার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট বা অন্য কোনো দলিলপত্র থেকে পেয়েছেন কি-না?”
“কিন্তু আপনি তা করলেন না। বরং অর্ডারে ওই নামে আমাকে উল্লেখ করলেন।”
“আপনি একদিন বলেছিলেন, আল্লাহ আপনাকে অনেক বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। আপনি সেই দায়িত্ব পালন করতে চান।”
“আসলেই বিচারকের দায়িত্ব অনেক বড়। হাশরের দিনে আট ধরণের মানুষ আরশের নীচে ছায়া পাবে। এর প্রথম হচ্ছে, ন্যায় বিচারক। তাই আমি আশা করি আপনি ন্যায় বিচার করবেন।”
“বিচারকের দায়বদ্ধতা আল্লাহ ও বিবেকের কাছে। তৃতীয় কোন স্থানে দায়বদ্ধতা থাকলে ন্যায় বিচার করা যায় না। বরং যেটা করা হয়, সেটা জুলুম হয়ে যায়। আর জুলুমের পরিণাম জাহান্নাম।”
‘জামায়াতে যাওয়ার পর অভিযোগের শুরু’
তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো অভিযোগ আসেনি দাবি করে সাঈদী বলেন, ১৯৮০ সালে জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্য হওয়ার পর এটা আসতে শুরু করে।
“যখনই এ ধরণের অভিযোগ এসেছে, আমি প্রতিবাদ করেছি, সংসদে বলেছি, মামলা দায়ের করেছি। যার অনেকগুলো এখনো বিচারাধীন রয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ করা তো দূরে থাক, বিগত অর্ধ শতাব্দী ধরে দেশে বিদেশে মানবতার রক্ষায় কাজ করেছি। ”
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের চার হাজার পৃষ্ঠার একটি ‘রচনা’ তৈরি করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যারা এটা রচনা করেছেন, তাদের মনে আল্লাহর ভয় ছিলো না। তাই তারা এটা করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, “সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগের বয়ান দিতে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত সংস্থাকে লিখতে হয়েছে ৪ হাজার ৭৪ পৃষ্ঠা। ১৫ খণ্ডের একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।”
“রাজাকারের কমান্ডার হওয়াতো দূরে থাক, তাদের সঙ্গে আমার কোনোই সম্পর্ক ছিলো না। আমি শাান্তিবাহিনীর সদস্য ছিলাম না, রাজাকার ছিলাম না। পাক বাহিনীর সঙ্গে আমি এক মিনিটের জন্যও বৈঠক করিনি।”
এরপর বিচারকের উদ্দেশ্যে জামায়াতের এ শীর্ষনেতা বলেন, “আমি চাই, আপনি আমাকে এই অভিযোগ থেকে আমাকে অব্যাহতি দেবেন। দিতে পারবেন।”
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা কি সেই গজব!
বিষয়: বিবিধ
১১৬০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন