বেগম খালেদা জিয়াকে লেখা শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের চিঠি

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ২১ জুন, ২০১৬, ০৪:৪৯:৪১ রাত



বেগম খালেদা জিয়াকে লেখা শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের চিঠি

ফাঁসির কক্ষ থেকে শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়েছিলেন। সেটি প্রচার করা হয়েছে, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান নামে চালিত একটি ফেসবুক পেজে।

চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

দেশনেত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রিয়নেতা শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের চিঠিঃ

১৭ জানুয়ারি ২০১৪

শ্রদ্ধেয় বেগম খালেদা জিয়া,

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। বিগত ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ সাংবাদিক সম্মেলনে আপনি যে বক্তব্য রেখেছেন তার জন্য আপনাকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা এবং অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি জানিনা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদের অর্গল ভেঙ্গে জাতীয় বিশ্বাসঘাতক ও বেঈমানদের পরাস্ত করে আপনি বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের জন্য গনতন্ত্র ও শান্তি কিভাবে ফিরিয়ে আনবেন। তবে আমার বিশ্বাস জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির ঐক্য অটুট থাকলে অবশ্যই আপনি জনগণকে সাথে নিয়ে কাংখিত বিজয়ের বন্দরে পৌছতে সক্ষম হবেন ইনশাআল্লাহ্‌। কাশিমপুর-২ কারাগারে ৪০ সেলে আটক ফাঁসির দণ্ড প্রাপ্ত (?) কয়েদী হিসাবে এই কামনাই করছি "ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার নিপাত যাক গনতন্ত্র মুক্তি পাক"

যেহেতু দীর্ঘদিন এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য দেশকে আধিপত্যবাদ ও স্বৈরাচারের আগ্রাসনমুক্ত করার জন্য একসাথে কাজ করেছি তাই একথা আপনাকে জানানো কর্তব্য মনে করি যে, তথাকথিত ট্রাইব্যুনাল যেসব অভিযোগের জন্য আমাকে দুটি মৃত্যুদণ্ড, দুটি যাবজ্জীবন ও একটি দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সেসবের সাথে আমার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা ছিলনা। তাছাড়া প্রায় আঠারো বছর বয়েসের একজন ইন্টারমেডিয়েট অর্থাৎ দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র হিসাবে দেশের জটিল রাজনীতি বুঝে কোন কিছুর নেতৃত্ব দেয়ার মত ধারনা, জ্ঞান বা যোগ্যতা কোনটাই আমার ছিলনা। আমি যদি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চারদলীয় জোট গঠনের আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন না করতাম তাহলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হতোনা। আত্মপক্ষ বা নিজের সাফাই গাওয়ার জন্য এসব লিখছিনা। বিদ্বেষমুলক ভাবে প্রতিহিংসা পরায়ন আওয়ামী লীগ আমার উপর মিথ্যা অভিযোগের কালিমা আরোপ করেছে তাই ইতিহাসের সত্য হিসাবেই আমি এসব উল্লেখ করছি। আমি তথাকথিত ট্রাইব্যুনালের সামনেও বলেছি, "আওয়ামী লীগে যোগদান করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হতোনা"

শেরপুরের জনগন জানেন যে, আমার বিরুদ্ধে আনীত একটি অভিযোগও সত্য নয়। যদি তাদের কোন অভিযোগে সত্যতা থাকতো তাহলে শেরপরের জনগন আমাকে বারবার এত বিপুল ভোট দিতেন না। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও আমি এক লাখ দশ হাজার ভোট পাই। কারসাজি করে আমার বিজয় বারবার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কোন একটি অভিযোগও তারা ট্রাইব্যুনালে প্রমান করতে পারেনি। কিন্তু দলবাজ ও পক্ষপাত দুষ্ট তথাকথিত ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে জোরপূর্বক আমাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। যে আপিল বিভাগ রায়ের পর তৈরী করা সংশোধিত আইনে আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন দণ্ড পরিবর্তন করে ফাঁসির দণ্ডের সম্পূর্ণ অন্যায় আদেশ দিয়েছে এবং সরকার সকল আইন ও বিধি লংঘন করে তড়িঘড়ি ফাঁসির আদেশ জারির করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করেছে সেই আপীল বিভাগের কাছে কোন ন্যায় বিচার আশা করা যায়না।

বিগত ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ডাইনী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করেছে মাত্র। সুতরাং তারা যে অন্যান্য মৃত্যুদণ্ডের আদেশ গুলোকেও দ্রুততার সাথে কার্যকর করবে এবং এটাকেই ইস্যু বানিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করবে এইটা স্বাভাবিক। আমার এই চিঠি আপনার হাঁতে আদৌ পৌছবে কিনা আমি তাও জানিনা।

আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে মরহুম প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই দেশের স্বার্থে আপনার দলের সাথে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে এসেছি। আমরা যদি চারদলীয় জোটে না যেতাম তাহলে হয়তোবা এই পরিস্থিতি হতো না। তবে আমি বিশ্বাস করি আমাদের হত্যা করা হলেও বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। ইসলামী আন্দোলনের যে তরুণ প্রজন্মের বিরাট কাফেলা তৈরী হয়েছে তারা ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে এদেশে একদিন ইসলামের বিজয় সুনিশ্চিত করবে ইনশাআল্লাহ্‌। আপনি দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যান। আপনার নেতৃত্বেই জাতির জন্য বিপদজনক এই সরকারের পতন ঘটবে এবং দেশ গনতন্ত্র ও শান্তির আলোয় আলোকিত হবে আল্লাহর ইচ্ছায়। কোন উপদেশ বা পরামর্শ দেয়ার দৃষ্টটা আমার নেই। আমি শুধুমাত্র আমার মনের আবেগ প্রকাশ করলাম।

আমি মৃত্যুর জন্য মোটেই শংকিত নই। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে মিথ্যা কলংকের জন্য। আল্লাহই আমার পরিবার ও সন্তানদের অভিভাবক হবেন। বিশ্বাস করি সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই। আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, "কিন্তু আমি সত্য দ্বারা আঘাত হানি মিথ্যার উপর; ফলে উহা মিথ্যাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করিয়া দেয় এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হইয়া যায়।" (সুরায়ে আম্বিয়া, আয়াত-১৮) আপনাদের দোয়া প্রার্থী।

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372688
২১ জুন ২০১৬ সকাল ০৬:৪৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ফাঁসির দণ্ডের সম্পূর্ণ অন্যায় আদেশ দিয়েছে এবং সরকার সকল আইন ও বিধি লংঘন করে তড়িঘড়ি ফাঁসির আদেশ জারি করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করেছে সেই আপীল বিভাগের কাছে কোন ন্যায় বিচার আশা করা যায়না ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২২ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:১৫
309535
ব১কলম লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ
372700
২১ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:৩৪
হতভাগা লিখেছেন : এই কামরুজ্জামানদেরকে শেল্টার দেওয়ার মজা গত প্রায় ১০ বছর ধরে ভালই চাখতেছেন খালেদা-তারেক-বিএনপি।
২২ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:১৯
309536
ব১কলম লিখেছেন : লেন্দুপদর্জিদের মতলব হাসিলে বাধা দেওয়া ছাড়া কামরুজ্জামানদেরকে আর কোন অন্যায় নেই- এ কথাটা "হতভাগা"রা আর কবে বুঝবে?
২২ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১৮
309578
হতভাগা লিখেছেন : কামারুজ্জামানরা এতটা বকলম ছিলেন না ৭১ এ । উনারা ঠিকই পাক হানাদারদের সাথে হাত মিলিয়ে নিরীহ মুসলমানদের মেরেছেন । আজ ৪৫ বছর পর এসে এর প্রাপ্য শাস্তি পাচ্ছেন । পরকালে নিহতরা ও তাদের ওয়ারিশেরা অপেক্ষা করছে তার জন্য ।
372743
২১ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
372809
২২ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:১৪
ব১কলম লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File