-ইসলামে নির্বাচন -

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ০২ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪৮:১৯ সকাল

-ইসলামে নির্বাচন -

ভূমিকাঃ

নির্বাচন মানে হল রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জনগণের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে সরকার গঠন। সরকার গঠনের প্রথম প্রক্রিয়া হল রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন।

নেতা/রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের গুরত্বঃ

মদীনায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) । যেহেতু তিনি ছিলেন আল্লাহ্ কর্তৃক মনোনীত রাসুল তাই তিনি ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান ও প্রধান বিচারপতি । তাঁর মৃত্যুর পর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একজন নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তাঁর মৃত্যুর খবরে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন । মুসলমানেরা যে এক মুহূর্তও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় নেতা বিহীন থাকতে পারেনা অর্থাৎ নেতা/রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের গুরত্ব আমরা বুঝতে পারি রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) ইন্তিকালের পর সাহাবায়ে কেরামদের (রাঃ) তৎপরতা ও গৃহীত কার্যাবলী থেকে । রাসুলুল্লাহ্রর (সঃ) ইন্তিকালের পর তাকে দাফন করার কোন পদক্ষেপ নেয়ার পূর্বেই একজন নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয় । রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) ইন্তিকাল করেন ১২ই রবিউল আউয়াল, সোমবার দুপুরের পূর্বে। প্রথম খলীফা হযরত আবুবকর (রাঃ) কে খলীফা নির্বাচন করার পরে তাঁকে দাফন করা হয় ১৪ই রবিউল আউয়াল, বুধবার, মধ্য রাতে । অর্থাৎ প্রায় ৩৬ ঘন্টা বা দেড় দিন রাসুলুল্লাহর্ (সঃ) দেহ মুবারককে সামনে রেখে খলীফা নির্বাচন করা হয় ।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার অধিকারীঃ

সুরা আন নূর এর ৫৫নং আয়াত- وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الْأَرْضِ ( তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন।) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী (রঃ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ খিলাফত ও মুলুকিয়াতে লিখেছেন- এ দ্ব্যর্থহীন আয়াতের অর্থ হল মুসলিম জামায়াতের প্রত্যেক ব্যক্তিই খেলাফতের সমান অংশীদার । কাউকে খলিফা হিসাবে নির্বাচিত করার অর্থ হল নিজের অধিকারকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করে অন্যের উপর ন্যন্ত করা ।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাঃ

সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী (রঃ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রণয়ন-এ রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাকে ২(দুই) ভাগে ভাগ করেছেন - (১) আইনি যোগ্যতা (২) বিশেষ যোগ্যতা ।

(১) আইনি যোগ্যতাঃ

(ক) মুসলমান হওয়া-যেমন সুরা আন নূর এর ৫৫নং আয়াত- وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الْأَرْضِ

(তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন।)

(খ) পুরুষ হওয়াঃ সুরা আন নেসা ৩৪নং আয়াত الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ

(পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন)

হাদীসে রাসুল (সঃ)-لن يفلح قوم و لو امرهم امرأة

(কোন জাতি তাদের নারীদের নেতা বানিয়ে কখনই কল্যাণ পেতে পারেনা ।)

(গ) সুস্থ, বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন ও বালেগ হওয়াঃ সুরা আন নেসা ৫নং আয়াত-وَلاَ تُؤْتُواْ السُّفَهَاء أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللّهُ لَكُمْ قِيَاما

(আর যে সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবনযাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিও না)

(ঘ) দারুল ইসলামের বাসিন্দা হওয়াঃ সুরা আল আনফাল ৭২নং আয়াত- وَالَّذِينَ آمَنُواْ وَلَمْ يُهَاجِرُواْ مَا لَكُم مِّن وَلاَيَتِهِم مِّن شَيْءٍ حَتَّى يُهَاجِرُوا

(আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু দেশ ত্যাগ করেনি তাদের বন্ধুত্বে তোমাদের প্রয়োজন নেই যতক্ষণ না তারা দেশত্যাগ করে।)

(২) অগ্রাধিকারমূলক যোগ্যতাঃ

(ক)আমানতদারী হওয়াঃ সুরা আন নেসা ৫৮নং আয়াত- إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤدُّواْ الأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا

(নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও।)

(খ) তাকওয়ার অধিকারী হওয়াঃ সুরা আল হুজুরাতের ২৪৭ নং আয়াত- إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ

(নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার)

(গ) রাষ্ট্র পরিচালনার জ্ঞান থাকা (ঘ) দৈহিক ভাবে যোগ্য হওয়াঃ সুরা আল বাকারার ১৩নং আয়াত-

وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ اللّهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوتَ مَلِكًا قَالُوَاْ أَنَّى يَكُونُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ أَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ قَالَ إِنَّ اللّهَ اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ وَاللّهُ يُؤْتِي مُلْكَهُ مَن يَشَاء وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

(আর তাদেরকে তাদের নবী বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলতে লাগল তা কেমন করে হয় যে, তার শাসন চলবে আমাদের উপর। অথচ রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে আমাদেরই অধিকার বেশী। আর সে সম্পদের দিক দিয়েও সচ্ছল নয়। নবী বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তাকে পছন্দ করেছেন এবং স্বাস্থ্য ও জ্ঞানের দিক দিয়ে প্রাচুর্য দান করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকেই রাজ্য দান করেন, যাকে ইচ্ছা। আর আল্লাহ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সব বিষয়ে অবগত। )

(ঙ) পদ প্রার্থী না হওয়াঃ পদের ইচ্ছা পোষন কারীকেও পদ না দেয়ার উদাহরণ- একবার তাবুক যুদ্ধের পর আবু মুসা আশয়ারী দু’জন মুসলমান নিয়ে রাসুলুল্লাহর (সঃ) খেদমতে হাজির হলেন । লোক দুটি কোন পদের জন্য আবেদন করল । রাসুলুল্লাহ (সঃ) তখন মেসওয়াক করছিরেন। তিনি মেসওয়াক বন্ধ করে আবু মুসা আশয়ারীর উপর ক্রুদ্ধ হলেন । তিনি আবু মুসা আশয়ারীকে বললেন

ان و الله لا نول عملنا هاذا احدا سأله او حوص عليه

(আল্লাহর শপথ যে ব্যাক্তি কোন পদের প্রার্থী হবে বা কোন পদের জন্য লোভ প্রদর্শন করবে তাকে আমরা কখনই উক্ত পদে নিযুক্ত করব না ।)

রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের পদ্ধতিঃ খোলাফায়ে রাশেদীনের নির্বাচনের পদ্ধতি-

1. হযরত আবুবকরের (রাঃ) খলিফা নির্বাচনঃ আগেই বলা হয়েছে যে, মদীনায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) । যেহেতু তিনি ছিলেন আল্লাহ্ কর্তৃক মনোনীত রাসুল তাই তিনি ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান । দীর্ঘ ১০ বছর ইসলামী রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেয়ার পর তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠতম বন্ধুর সান্নিধ্যে চলে গেলেন । কিন্তু তাঁর উত্তরাধিকার নির্বাচন সম্পর্কে তিনি কোন স্পষ্ট, নিশ্চিত ও নির্দিষ্ট কোন নির্দেশ দিযে যান নি । তাঁর নৈশব্দে এবং আল কোরানের বানী وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ (পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে -সুরা আশ শূরা-৩৮) সাহাবায়ে কেরাম বুঝতে পারলেন যে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করার দায়িত্ব মুসলমানদের নিজস্ব নির্বাচনের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে । এ নির্বাচন মুসলমানদের পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতেই সম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয় । তাই প্রথম খলিফা হযরত আবুবকরের নির্বাচন প্রকাশ্য জনসম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয় ।

2. হযরত ওমরের (রাঃ) খলিফা নির্বাচনঃ হযরত আবুবকরের (রাঃ) অন্তিম সময় যখন ঘনিয়ে এল তখন তিনি একে একে সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করে মুসলমানদের সম্মেলন ডেকে হযরত ওমরের (রাঃ নাম প্রস্তাব করলেন । সকলেই একবাক্যে তাঁর প্রস্তাব সমর্থন করল । এ থেকে বুঝা গেল হযরত ওমরের (রাঃ) খলিফা নিয়োগ মুসলমানদের নির্বাচনের মাধ্যমেই হয়েছিল ।

3. হযরত ওসমানের (রাঃ) খলিফা নির্বাচনঃ হযরত ওমর (রাঃ) ছুরিকাহত হয়ে যখন তিনি শাহাদাতের দিন গুনছিলেন তখন রাসুলুল্লাহ্র (সঃ) সাহাবীদের মধ্যে সর্বাধিক বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ৬জনের একটি পরিষদ গঠন করে পারস্পরিক পরামর্শক্রমে তাদের মধ্য থেকে একজনকে খলিফা নির্বাচন করার দায়িত্ব অর্পন করেন । সে সঙ্গে তিনি এও ঘোষনা করেন যে, তোমাদের মধ্যে কেহ যদি মুসলমানদের সাথে পরামর্শ না করে আমীর হয়ে বসে তবে সকলে মিলিয়া তাকে হত্যা কর । শেষ পর্যন্ত সর্ব খলিফা নির্বাচন করার দায়িত্ব আবদুর রহমান ইবনে আওফের উপর অর্পিত হয় । তিনি মদীনার অলিতে গলিতে ঘুরে সকল পুরুষ ও মহিলাদের এমন কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের ছাত্রদের এবং হজ্জ মৌসুমে আগত লোকদের মতামত গ্রহন করেন । এভাবে তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে সন্দেহমুক্ত হলেন যে, উম্মতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা আস্থাভাজন ব্যক্তি হচ্ছেন দু’জন ; হযরত ওসমান (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) । এর মধ্যে হযরত ওসমানের (রাঃ) দিকেই ঝোঁক বেশী । সর্বশেষে তাঁর পক্ষেই হয় এবং বায়াত অনুষ্ঠিত হয় ।

4. হযরত আলীর (রাঃ) খলিফা নির্বাচনঃ বিদোহীদের দ্বারা হযরত ওসমান (রাঃ) এর শাহাদাতের পর কয়েকজন সাহাবী হযরত আলীর (রাঃ) ঘরে একত্রিত হয়ে তাঁকে খেলাফতের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন । হযরত আলী (রাঃ) প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও পরে বার বার অনুরোধের প্রেক্ষিতে বললেন আপনারা যদি বাস্তবিকই চান তবে মসজিদে সমবেত হোন কারণعن رضا المسلمين - لا تكون ا لا فان بيعتى لا تكون خفيا و ‘আমার আনুগত্যের শপথ গোপনে অনুষ্ঠিত হতে পারে না এবং মুসলমানদের সাধারণ অভিমত ছাড়া তা সম্পন্নও হতে পারে না ।’

হযরত আলীর (রাঃ) ইন্তিকালের পর বংশীয় রাজতন্ত্র চালু হয় ।

খোলাফায়ে রাশেদীনের পর ওমর ইবনে আঃ অজিজের খেলাফতঃ

হিজরী ৯৯ সালে খলিফা সুলায়মান ইবনে আঃ মালেক তার ইন্তিকালের পূর্বে প্রদত্ত গোপন অসিয়ত অনুসারে ওমর ইবনে আঃ অজিজের খেলাফত লাভ করেন । খলিফা হওয়ার পর তিনি সকলকে একত্রিত করে বলেন- আমার উপর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে আমাকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে । এ ব্যাপারে না আমার মতামত নেয়া হয়েছে না মুসলমানদের পরামর্শ নেয়া হয়েছে । তোমাদের ঘাড়ে আমার আনুগত্যের যে রজ্জু পরিয়ে দেয়া হয়েছে তা আমি খুলে ফেলে দিলাম । তোমরা তোমাদের পছন্দ মত নেতা বানাতে পার । উপস্থিত জনতা তার হাতেই বায়াত হল ।

ইসলামী শুরায়ী নেযাম বনাম পাশ্চত্য গণতন্ত্রঃ

পাশ্চত্য গণতন্ত্রের মূল থিওরী হচ্ছে- Government of the people, by the people, for the people অর্থাৎ মানুষের উপর মানুষের দ্বারা পরিচালিত মানুষের প্রভুত্বভিত্তিক শাসন । এখানে জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস ।

ইসলামী শুরায়ী নেযামের মূল থিওরী হচ্ছে- أَلاَ لَهُ الْخَلْقُ وَالأَمْرُ (শুনে রেখ, সৃষ্টি যার, আদেশ করার এখতিয়ারও তাঁর) সুরা আল আরাফ-৫৪) ও إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ (আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই-সুরা আল আনয়াম-৫৭) । আল্লাহ হচ্ছেন সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস (আয়াতুল কুরসী) । আল্লাহর আইনকে চ্যালেঞ্জ করে কোন আইন প্রণয়ন করার অধিকার নেই । وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ (যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। -সুরা আল আনয়াম-৪৪)

পাশ্চত্য গণতন্ত্র ও ইসলামী শুরায়ী নেযামের মধ্যে পার্থক্য

১। বিষয় –সার্বভৌমত্বঃ

পাশ্চত্য গণতন্ত্র- Popular sovereignty or National sovereignty

ইসলামী শুরায়ী নেযামঃ Sovereignty of Allah

قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ( সুরা আল আলে ইমরান-২৬)

অর্থ-বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী

وَلَم يَكُن لَّهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ(সুরা আলে ইমরান)-১১১)

অর্থ- তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন শরীক

الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُن لَّهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ(সুরা আল-ফুরকান)

অর্থ -তিনি হলেন যাঁর রয়েছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব। তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। রাজত্বে তাঁর কোন অংশীদারনেই

يُسَبِّحُ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সুরা আত তাগাবুন

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا

(সুরা আল আহযাব-৩৬)

আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়।

৩। সংখ্যাধিক্যের মতামতঃ

পাশ্চত্য গণতন্ত্র- Majority must be guaranteed

ইসলামী শুরায়ী নেযামঃ পরামর্শ ভিত্তিক সরকার, নেতার সিদ্ধান্ত গ্রহনের এখতিয়ার । (সুরা আলে ইমরান)

কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।

৩্। নির্বাচনঃ

পাশ্চত্য গণতন্ত্রঃ প্রার্থী, প্রচারনা, অর্থ, প্রতারনা, শক্তি প্রয়োগ

ইসলামী শুরায়ী নেযামঃ প্রার্থীনেই, প্রচারনা নেই, অর্থ নেই, প্রতারনা নেই, শক্তি প্রয়োগ নেই ।

ভোট প্রদান আমানাতঃإِنَّ اللّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤدُّواْ الأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا (সুরা আন নিসা-৫৮)

খেলাফতের অধিকার ত্যাগঃ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الْأَرْضِ (সুরা আন নূর-৫৫)

৪। ভিত্তিঃ

পাশ্চত্য গণতন্ত্রঃ Might is Right

ইসলামী শুরায়ী নেযামঃ নেতার আনুগত্যঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً {59}

উপসংহারঃ

খোলাফায়ে রাশেদীনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই-

১। হযরত আবুবকর (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন – পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে (বর্তমানের ভোট প্রদান)

২। হযরত ওমর (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন – মনোনয়নের ভিত্তিতে

৩। হযরত ওসমান (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন – ৬ সদস্যের কেয়ার টেকার সরকার কর্তৃক পরিচালিত পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে (বর্তমানের ভোট প্রদান)

৪। হযরত আলী (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন – দেশে যখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে তখনকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে

অর্থাত ইসলাম নির্বাচনের জন্য কোন বিশেষ পদ্ধতিকে নির্দিষ্ট করে দেয়নি । পরিস্থিতিই আপনাকে বলে দিবে আপনি কোন পথ অবলম্বন করবেন ।

আজকে যারা “গণতন্ত্র হারাম” বলে জিগির তুলছেন তারা ইনিয়ে বিনিয়ে মূলতঃ শসস্ত্র পন্থার দিকে ইঙ্গিত করছেন এবং তারাই বর্তমান আইএসএস এর কীর্তণ গাচ্ছেন ।

বিষয়: বিবিধ

২৩৯০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

352376
০২ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:১১
শেখের পোলা লিখেছেন : ৩নং হজরত ওসমান রাঃ খলিফা হওয়ার ব্যাপারটা যেখানে লিখেছেন ঐ প্যারার ২য় লাইনটা একবা পড়ে দেখবেন৷ আমার সন্দেহ কোন শব্দ বাদ গেছে৷ আর শেষের দুলাইনের ব্যাখ্যা দিলে আরও ভাল হত৷ কারণ কথায় আছে ঘরপোড়া গরু সীঁদূরে মেঘে ভয় পায়৷ বর্তমান গনতন্ত্রে জনগন জনগনকে দণ্ডমণ্ডের অধিকর্তা বানায়৷ এটা ইসলামে অচল৷ দণ্ডমুণ্ডের মালিক আল্লাহ৷ গনতন্ত্রের সংজ্ঞায় এটা থাকলে আর কারও আপত্তি থাকবে বলে মনেকরিনা৷ সুন্দর আলোচনার জন্য ধন্যবাদ৷
352382
০২ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:৪৯
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : অসাধারন একটি পোষ্ট... অনেক ধন্যবাদ ভাই।
352386
০২ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২৮
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File