যুদ্ধাপরাধীদের (তথাকথিত) বিচারের অন্তরালে

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ১৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:৩৬:১৮ সকাল

পুণঃ প্রকাশ

লেখাটি প্রথম প্রকাশ করা হয় সামহোয়ারইন ব্লগে

২১ শে এপ্রিল, ২০০৯ সালে ।

http://www.somewhereinblog.net/blog/ba1kolom/28940822

এ ব্লগে প্রথম প্রথম প্রকাশ করা হয় ২৯ মে, ২০১৩ । ভারতীয় গোয়েন্দাদের বাংলাদেশে আগমন (http://www.bdmonitor.net/newsdetail/detail/200/99141) সেই আশংকাকেই বাস্তবে পতিনত হচ্ছে কিনা তা পাঠকদের ভেবে দেখার জন্যই পূণঃপ্রকাশ



(অখন্ড ভারত মাতার চিত্র, এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রধান বাধা ইসলামপন্থীরা)

আধিপত্যবাদী আগ্রাসী রাষ্ট্র ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের জন্য হুমকি স্বরূপ। পররাজ্যগ্রাসী ভারত জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির সাথে বৈরী আচরণ করে আসছে। অখণ্ড ভারত মাতায় বিশ্বাসী ভারতীয় নেতৃত্ব ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগকে কখনই মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহার লাল নেহেরু তার Discovery of India গ্রন্থে ‘অখণ্ড ভারত’ এর রূপরেখা প্রণয়ন করেন, যা India Doctrine নামে খ্যাত। এর মূল কথা হচ্ছে- “উপমহাদেশে ভারতই হবে মূল শক্তি, চালক বা নীতিনির্ধারক। এখানে অন্য কোন দেশই স্বাধীনভাবে ইচ্ছামত নীতিনির্ধা্‌রণ করতে পারবে না। এছাড়া অন্য কোন বহিঃশক্তি উপমহাদেশের কোন রাষ্ট্রকেই ভারতের মতামত ছাড়া কোন বিষয়েই সাহায্য সহযোগিতা বা চুক্তিভূক্ত করতে পারবে না। স্থানীয় সকল দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রকেই ভারতের মর্জি মাফিক চলতে হবে। India Doctrine হাসিলের জন্য ভারত বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

ইংরেজরা বিতাড়িত হবার পর ভারত শক্তি প্রয়োগ করে স্বাধীন দেশীয় রাজ্য হায়দারাবাদ, গোয়া, দমন, দিউ, মানভাদার, জুনাগড় দখল করে নিয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত জনপদ কাশ্মিরের উপর ভারতীয় দখলদারিত্ব এখনও অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীন পার্বত্য দেশ সৌন্দর্যের রাণী সিকিমকে বিশ্বাসঘাতক নেতৃত্বের সহযোগিতায় গ্রাস করে নিয়েছে। হিমালয় পাদদেশের জমজ কন্যা বলে খ্যাত নেপাল ও ভুটানের স্বাধীন অস্তিত্বকে ধীরে ধীরে অজগরের মত গ্রাস করতে সচেষ্ট রয়েছে। মালদ্বীপের উপর আধিপত্য বিস্তারের মানসে সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে। তামিল বিদ্রোহীদের ইন্ধন যুগিয়ে শ্রীলংকাকে অশান্ত জনপদে পরিণত করেছে। বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীনের সাথেও একটি যুদ্ধ করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত বাংলাদেশের মিত্র বা বন্ধু সেজে মূলত: পাকিস্তানের বিভক্তিকরণ ও ধ্বংস সাধনে তার কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়। এক কথায় ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহে নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য চালিয়ে যাচ্ছে বহুমুখী আগ্রাসন যুদ্ধ। ভারতের এ বহুমুখী আগ্রাসন যুদ্ধের অন্যতম টার্গেট দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারতের বাংলাদেশ বিরোধী আগ্রাসন তৎপরতা শুরু হয়। মূলত: স্বাধীনতা যুদ্ধের সমর্থন দেয়াকে পুঁজি করে স্বাধীনতার পরপরই ভারত বাংলাদেশকে অবাধ লুণ্ঠনের ক্ষেত্র বানিয়েছিল। স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানী বাহিনীর ফেলে যাওয়া প্রায় ৬০,০০০ কোটি রুপী মূল্যমানের অস্ত্র-শস্ত্র ভারত নিয়ে যায়। এ ছাড়া যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের শিল্পস্থাপনা, কলকারখানা, পুল, ব্রীজ ইত্যাদির লোহা, কল-কব্জা ও নাট-বল্টুও ভারতীয় বাহিনী লুটপাট করে নিয়ে যায়। ভারতীয় বাহিনীর এ লুটপাটে বাধা দেয়ায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর এম. এ. জলিলকে ভারতের নির্দেশে তৎকালীন সরকার গ্রেফতার করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় জেগে ওঠা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ ভারত একতরফাভাবে জোরপূর্বক দখল করে নেয়। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে ‘ইন্দিরা-মুজিব সীমান্ত চুক্তি’র মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশাল ছিটমহল বেরুবাড়ির দখল চিরতরে নিয়ে নেয়। চুক্তি ছিল বেরুবাড়ির বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশকে তিনবিঘা করিডোর হস্তান্তর করবে। কিন্তু ভারত বেরুবাড়ির দখল নিলেও অধ্যাবধি বাংলাদেশকে তিনবিঘা দেয়নি। এছাড়া ‘ইন্দিরা-মুজিব সীমান্ত চুক্তি’ কে ভারতের লোকসভা (পার্লামেন্ট) আজও পর্যন্ত অনুমোদন দেয়নি। ফলে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের মূল ভূ-খণ্ডে যাতায়াত করার জন্য ভারতের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তিনবিঘার মধ্য দিয়ে করিডোর দিলেও ভারত ঘড়ি ধরে বাংলাদেশের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করছে।

ভারতের বাংলাদেশের বিরোধী আগ্রাসন যুদ্ধের অন্যতম হলো ‘ফারাক্কা বাঁধ’ নির্মাণ। এ মরণ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে মারছে এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে শুকিয়ে মারছে। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে এবং বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ভারত মূলত: কৌশলে ‘ইন্দিরা-মুজিব’ সিমান্ত চুক্তির মাধ্যমে বেরুবাড়ি দখলের পাশাপাশি ফারাক্কা বাঁধ চালু করার অনুমতি লাভ করে। এ উদ্দেশ্যে ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল ভারত পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মোট ৪১ দিন ফারাক্কা বাঁধ খোলা রাখা হবে এবং এ সময়ের মধ্যে ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে হুগলী নদীতে ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার কিউসেক পানি নেয়া হবে। কিন্তু ৪১ দিনের সময় সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও ভারত ফিডার ক্যানেল দিয়ে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে এবং ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুমে ভ একতরফাভাবে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর ১৯৭৭ সালে এবং ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে দু’টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, কিন্তু বাংলাদেশ আজও গঙ্গার পানির ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত। গঙ্গার পানি চুক্তি কার্যত এখন অকার্যকর।

বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে অশান্ত রাখার জন্য ভারত সার্বক্ষণিকভাবে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মুজিববাদী সরকারের পতন ঘটার পর বাংলাদেশে পুনরায় ভারতীয় প্রভাবাধীন একটি সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একই বছরের ৩ b‡f¤^i (১৯৭৫) একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা চালানো হয়। এ জন্য বাঘা সিদ্দিকী খ্যাত কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১০/১৫ হাজার সদস্যের একটি কাদেরিয়া বাহিনী গঠন করা হয়। এ বাহিনী ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে হামলা চালিয়ে কয়েকশ সেনাবাহিনীর সদস্য ও বহুসংখ্যক বাংলাদেশীকে নিহত ও আহত করে। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘শান্তি বাহিনী’ গঠনের মাধ্যমে উপজাতীয় তরুণদের উষ্কিয়ে দিয়ে ভারত বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী এক অপতৎপরতার জন্ম দিয়েছে। এ শান্তি বাহিনীর হাতে এ যাবত নিরাপত্তা বাহিনী তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী নিহত ও আহত হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পেছনেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (Raw)-এর গোপন হাত ছিল বলে জানা যায়। এমনকি ১/১১ এর উত্থানের পেছনেও আধিপত্যবাদী ভারতের সুগভীর ষড়যন্ত্র নিহিত রয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল ভূ-ভাগ তথা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বৃহত্তর জেলা খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ফরিদপুর নিয়ে ‘হিন্দুল্যাণ্ড’ নামের একটি স্যাটেলাইট রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ডা. কালিদাস বৈদ্যের (প্রার্থ সামন্ত) নেতৃত্বে বঙ্গসেনা নাম দিয়ে হিন্দু তরুণদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে।

বাংলাদেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সামপ্রদায়িক অস্থিরতা, সামাজিক বিভাজন সৃষ্টির ক্ষেত্রেও ভারত (Raw)- এর মাধ্যমে অত্যন্ত নিপুণভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ( ঘাদানিক) গঠন, দেওয়ানবাগ দরবার, কাদিয়ানী ফেৎনা, হাককানী মিশন, প্রভৃতি ধর্মীয় সংঘাত ও অপচক্র সৃষ্টির পেছনে ভারতের ভূমিকা সুস্পষ্ট। গণ আদালত গঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা অমুক্তিযোদ্ধা এর বিভাজন সৃষ্টির মাধ্যমে জাতিকে বিভক্তিকরণ ও দূর্বল করার চক্রান্ত করছে ভারত। তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার, সরদার আলাউদ্দিন, হাসান ইমাম, আরজ মাতুব্বর গংদের পেছনে সুপরিকল্পিতভাবে অর্থ ব্যয় করছে ভারত।

বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সার্বক্ষণিকভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করে রেখেছে। বিনা উস্কানীতে বিএসএফ গুলি করে অসংখ্য বিডিআর ও বাংলাদেশীকে নিহত ও আহত করেছে। ভারতীয় পুলিশ বাহিনীও নিরীহ বাংলাদেশী সীমান্ত জনপদবাসীর জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। ভারতীয় পুলিশের সদস্যদের দ্বারা প্রায়ই বাংলাদেশীদের বাড়ি ঘরে চুরি-ডাকাতি নারী ধর্ষণ ও নানা ধরণের অপকর্ম সংঘঠিত হয়।

২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিএসএফ ও অরাষ্ট্রীয় গ্রুপগুলোর হাতে ৭০১ জন বাংলাদেশী প্রাণ দিয়েছে। এর মধ্যে বিএসএফ হত্যা করেছে ৬৫৩ জন, ধর্ষিত হয়েছে ১৩ জন নারী। এ সময়ের মধ্যে বিএসএফের হামলায় আহত হয়েছে ৭২৭ জন, গ্রেফতার হয়েছে ২৬২ জন এবং ৮ জন শিশুসহ ৮৯ জনকে অপহরণ করেছে। এছাড়া লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৬৪টি। বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় আগ্রাসনের সর্বশেষ ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে গত ১৮ জুলাই ২০০৮ তারিখে। এ সময় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বিষয় নিয়ে দিল্লীতে বৈঠক চলছিল। বৈঠক চলাকালেই বিএসএফ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ২ জন বিডিআর সদস্যকে হত্যা করে। এ ছাড়া পরদিন (১৯ জুলাই) যশোর জেলার চৌগাছা সীমান্তে হামলা চালিয়ে আরও দু’জন বাংলাদেশী কৃষককে হত্যা করে। এভাবে ভারত সীমান্ত সংঘর্ষকে নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত করেছে।

আধিপত্যবাদী ভারত বাংলাদেশের উপর আগ্রাসন চালিয়ে ১৯৭৪ সালে বেরুবাড়ি দখলের পর থেকে এ যাবত ৩৬ হাজার একরেরও বেশি জমি দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী যেসব এলাকার জমি ভারত দখল করে নিয়েছে তা হলো খাগড়াছড়ি জেলার আচালং সীমান্তের ১৭০০ একর জমি, পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া গোয়ালগছ, বোদা, দেবীগঞ্জ ও সদরের ২১২৭ একর জমি, তিস্তা সীমান্তবর্তী এলাকার ২০০০ একর জমি, নীলফামারী জেলার ডিমলা-ছাতনী সীমান্তের কয়েক হাজার একর জমি, যশোর জেলার শার্সা (ইছামতি কোদালা) এলাকার ৫৭০ একর জমি, সুনামগঞ্জ জেলার মাটিরাবন সাতছড়ি এলাকার ৩২৯৫ একর জমি, সিলেট জেলার গোয়াইনহাট এলাকার ৩৬৭ একর জমি, চাঁপাইনাব্‌গঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ-ভোলাহাট সীমান্তের ৬৫০০ একর জমি, কুড়িগ্রাম জেলার মশালডাঙ্গা সীমান্তের ৩০০ একর জমি, ফেনী জেলার মহুরীর চর এলাকার ২৪ একর জমি, সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণ তালপট্টির ১০,০০০ একর জমি, এছাড়া ঠাকুরগাঁও,দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার প্রায় ১০,০০০ একর জমি। অদ্যাবধি ভারতের ভূমিগ্রাসী লোলুপতা একটুও কমেনি, বরং পুরো দেশটাকেই তাদের ভূমিতে পরিণত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে পরনির্ভরশীল করে রেখেছে ভারত। স্বাধীনতা উত্তরকাল থেকেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশকে বিপুল ঘাটতির মধ্যে রেখে এসেছে। এর ফলে আজও বাংলাদেশ ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এমন কি কোন কোন অর্থ বছরে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। যেমন ২০০৩-২০০৪ অর্থ বছরে ২০০২-২০০৩ অর্থ বছরের তুলনায় ভারতে রফতানির পরিমাণ কমেছিল ২৮.৫৮ শতাংশ। এতে দেখা যায় ২০০২-২০০৩ অর্থ বছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১২৭৩ মিলিয়ন ডলার, যা ২০০৩-২০০৪ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৩০ মিলিয়ন ডলারে। এ ঘাটতির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রমাণ আমরা ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরেও দেখতে পাই। এ অর্থ বছরে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। রফতানি আয় আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়ায় ঘাটতি বেড়ে যায়। এটিই বাংলাদেশের সর্বাধিক বাণিজ্য ঘাটতি। মূলত: বাংলাদেশের বাজার এখন ভারতীয় পণ্যে সয়লাব। ভারতীয়রা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিজেদের পণ্য ঠেলে দেয়ার ব্যাপারেই বেশি উদগ্রীব। এক্ষেত্রে চোরাচালানের অবৈধ পদ্ধতিও তারা গ্রহণ করেছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ২৫টি দ্রব্য বিনা শুল্কে ভারতে প্রবেশের কথা দিয়েও ভারত তা অদ্যাবধি পালন করেনি। এভাবে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য ভারত গভীরভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

আধিপত্যবাদী ভারত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা গ্রাস করে নিতেও সচেষ্ট রয়েছে। ইতোমধ্যেই ভারত বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার অনেক ভেতরে ঢুকে পড়ে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজে হাত দিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ না করেই ভারত ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ চালাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের সমুদ্রপথ দিন দিন অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে। শুধু তেল-গ্যাস নয়, সমুদ্র তলদেশের অন্যান্য সম্পদও ভারত লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সামুদ্রিক মাছ। ভারতের জলদস্যুরা হাজার হাজার নৌকা ও ট্রলারে করে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার অভ্যন্তরে ঢুকে মাছ শিকার করছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কেননা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের মৎস্য খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্য খাত দেশের রফতানী আয়ের দ্বিতীয় প্রধান মাধ্যম। কিন্তু ভারত এ সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।

বাংলাদেশকে নানান কৌশলে পদানত করতে ভারতের অপতৎপরতার শেষ নেই। এরই অংশ হিসেবে ভারত ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশের উপর বিভিন্ন সময়ে চাপ দিয়ে আসছে। ’৯০ এর দশক থেকেই ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে ট্রানজিট আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। কিন্তু কোন রাজনৈতিক সরকারই ভারতের এ অযৌক্তিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি। তবে বর্তমান অনির্বাচিত সরকার ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার জন্য বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। গত ১৭ ও ১৮ জুলাই দিল্লীতে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ট্রানজিট বা কানেকটিভির নামে করিডোর দেয়ার একটি জল্পনা-কল্পনা চলছিল। কিন্তু দেশ প্রেমিক জনতার তীব্র প্রতিবাদের কারণে সরকার এটি নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার সাহস করেনি। মূলত: ভারত উত্তর পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টারস নামে পরিচিত সাতটি অঙ্গরাজ্যের স্বাধীনতাকামীদের দমন করার জন্যই বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর চায়। ভারতকে ট্রানজিট বা করিডোর দেয়া হলে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে তার সেনা বাহিনী ও অস্ত্র শস্ত্র আনা নেয়া করবে। এর ফলে বাংলাদেশ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীনতাকামী গেরিলা সংগঠনগুলোর রোষানলে পড়বে। তারা বাংলাদেশেও হামলা চালাতে থাকবে। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশ অন্য দেশের টার্গেটে পরিণত হবে। কেননা ভারত তখন চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পাবে এবং বন্দর দু’টি দিয়ে বাণিজ্যিক পণ্যের পাশাপাশি অস্ত্র-শস্ত্র আনা-নেয়া করবে। এমতাবস্তায় ভারতের শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা চালাবে। ফলে বাংলাদেশের আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেড়ে যাবে এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।

ভারত বাংলাদেশের শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির মেরুদণ্ড প্রয়ই ভেঙ্গে দিয়েছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর অধিকাংশই অর্থের লোভে লালায়িত হয়ে আত্মবিক্রয় করে বিদেশের দালাল শ্রেণীতে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে বসে আগ্রাসী শক্তির স্বার্থে তারা নিজেদের মেধা ও কার্যকলাপ পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে এ দেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছে। ’৭১ এর পর তাদের সকল প্রচার মিডিয়াকে বাংলাদেশের মুসলমানদের মগজ ধোলাইয়ের কাজে ব্যবহার করে এদেশের জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। ভারতীয় স্যাটেলাইটের ৬৭টি চ্যানেল দিয়ে ২৪ ঘন্টা ব্যাপী প্রচার করা হচ্ছে ব্লু-ফিল্ম জাতীয় যৌনতায় ঠাসা চলচিত্র, নাটক, নাচ ও গান। বাংলাদেশের প্রচার মাধ্যমসমূহ যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, নাট্যশালা ও নাটক, বিজ্ঞাপন শিল্প, নাট্য বিদ্যালয়, সংবাদপত্র, সাহিত্য, পাঠ্যপুস্তক, ম্যাগাজিন ইত্যাদি সব ক’টি মাধ্যমই প্রায় ভারতীয় নিয়ন্ত্রনাধীন। এসবের মাধমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও ইসলামী মূল্যবোধের আদর্শকে চুরমার করে দিচ্ছে ভারত। এছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তরুণ সমাজের জীবনীশক্তি ধ্বংসের জন্য তাদের মধ্যে ব্যাপক হারে ফেন্সিডিল, হিরোইন, মদ, গাঁজা ইত্যাদি সুপরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে ভারত।

বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য ভারত বাংলাদেশের ও বিদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিপুল অর্থায়ন ও বিনিয়োগ করে চলেছে। ভারতের বিখ্যাত ব্যবসায়ী গ্রুপ ‘দি রিলায়েন্স গ্রুপ’ এর অর্থায়নে বাংলাদেশে একটি সংবাদ পত্রের মাধ্যমে ভারত প্রকাশ্যে ইসলাম, বাংলাদেশের সেনা বাহিনী, দেশ প্রেমিক ব্যক্তি, দল, সংস্থা ও সংগঠন সমূহের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারত এ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পেছনে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করে চলেছে। যশোরে উদিচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ঢাকার পল্টনে সিপিবির সভায় বোমা হামলা, রমনার ছায়ানট অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানে কথিত বোমা বিস্ফোরণসহ সকল চক্রান্তের পেছনেই ভারত জড়িত।

মোটকথা আধিপত্যবাদী ভারত বাংলাদেশকে একটি করদরাজ্যে পরিণত করার জন্য স্বাধীনতা উত্তরকাল থেকেই তার হিংস্র আগ্রাসন বলবৎ রেখেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় জেগে ওঠা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপকে জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। তিনবিঘা করিডোর হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও অদ্যাবধি তা দেয়নি। ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করেনি, বরং দিন দিন আরও জটিল আকার ধারণ করছে। পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতীয়দের উস্কিয়ে দিয়ে অশান্ত অবস্থা জিইয়ে রেখেছে। সীমান্ত সংঘর্ষ নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অসংখ্য নীরিহ মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩৬ হাজার একরেরও বেশি জমি দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশী খেদাও এর নামে ভারতের বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের বাংলাদেশে পুশইন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অস্তিত্ব মুছে ফেলার জন্য বঙ্গভূমি আন্দোলনকারীদের অস্ত্র-শস্ত্র এবং ট্রেনিং প্রদান করছে। এদেশের উত্তরাঞ্চলকে পৃথক করার জন্য অত্যন্ত সংগোপনে গারো, খাসিয়াসহ উপজাতীদের উসকে দেয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অভ্যন্তরে ঢুকে তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন এবং মৎস্য শিকারের কাজ নির্বিঘ্নে করে যাচ্ছে। ট্রানজিট বা কানেকটিভিটির নামে করিডোর আদায়ের জন্য চাপসৃষ্টি করে আসছে। এছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তরুণ সমাজের মধ্যে ব্যাপক মাদকাশক্তি, পাপাচার, অপকর্ম, যৌনাচার ছড়িয়ে দিতে তাদের জীবনীশক্তি ও ভবিষ্যৎ ধ্বংসের জন্য তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ফেন্সিডিল, হিরোইন, মদ, গাঁজা, ব্লু-ফিল্ম ও নোংরা ম্যাগাজিন সুপরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে।

ভারতীয় এই আগ্রাসন ১৬কলায় প‌ূর্ণ করার পিছনে বাঁধা যারা দাড়াতে পারে তারা হল ভারতের চিরবৈরী ইসলামী শক্তি । তাই ইসলামী শক্তিকে চিরতরে নির্মূল করার জন্যই আজ যুদ্ধাপরাধী ইস্যু সৃষ্টি করা হয়েছে । বস্তুতঃ স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী বলতে যে কিছূ নেই তা যারা বলে তারাও জানে । তাই তো তারা বলছে ' সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব নয়' আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী শক্তিকে চিরতরে নির্মূল করই তাদের লক্ষ্য ।

তাই সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবিলায় সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি ।

বিষয়: বিবিধ

১৫৮৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

285890
১৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আগেও পড়েছি।
ভারতিয় শাসকরা হচ্ছে ব্রাম্মন্যবাদি। তারা মানুষের স্বাধিনতায় বিশ্বাস ই করেন না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File