রাসুলের (স.)মৃত্যুদণ্ড
লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ১৪ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৫:১৪ সকাল
পৃথিবীতে মানবজাতির হিদায়াতের জন্য প্রেরিত নবী ও রাসূলদের জীবনে প্রাণদণ্ড কোনো অবাস্তব বা অস্বাভাবিক বিষয় ছিল না। আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনুল কারিমে বলেছেন, ‘অনেক নবীকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছে আর কতককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।’ অন্যায়, অবিচার ও রাষ্ট্রস্বীকৃত ব্যভিচারের প্রতিবাদ করায় নবী ইয়াহিয়া আ: ও তার পিতা নবী জাকারিয়া আ:-কে তৎকালীন শাসক প্রাণদণ্ড দেয়। নবীর খণ্ডিত মস্তক ফিলিস্তিন থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সিরিয়ার দামেস্ক নগরীতে। বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা:কে হত্যা করার একাধিক প্রচেষ্টা মক্কার মুশরিক এবং মদিনার ইহুদিরা গ্রহণ করেছিল। তবে তাদের প্রতিটি পদপে ব্যর্থ হয়েছিল। আধুনিক বিশ্বে একেক দেশের পার্লামেন্টের একেক রকম পরিচিতি রয়েছে। যেমনÑ ভারতীয় পার্লামেন্টকে লোকসভা, ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে হাউজ অব কমন্স এবং কোনো দেশে পার্লামেন্টকে সিনেট কিংবা কোনো দেশে ভিন্ন কোনো নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। প্রাচীন আরবে কোরাইশদের পূর্বপুরুষ পবিত্র কাবা শরিফের মোতোয়াল্লি কুসাই ইবনে কিলাব মক্কার পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এটির নাম ছিল ‘দারুন-নদওয়া’। আরবের গোত্রপ্রধানদের নিয়ে গঠিত এ সংসদেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত এবং বাস্তবায়নের পদপে নেয়া হতো। রাসূল সা:-এর জীবন খুবই বর্ণাঢ্যময় এবং অনুসরণীয়। মক্কাবাসীরা যখন রাসূল সা:-এর দাওয়াত মোকাবেলায় ব্যর্থ হলো এবং মহানবী সা:-কে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের প্রস্তুতি গ্রহণের ইঙ্গিত আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে প্রদান করা হলো ঠিক সেই মুহূর্তে নবুওয়তের চতুর্দশ বর্ষে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে ১২ সেপ্টে¤¦র বৃহস্পতিবার মক্কার সংসদ ভবন ‘দারুন-নদওয়া’তে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই সংসদ একই সাথে আরবের সর্বোচ্চ আদালতের দায়িত্বও পালন করত। ওই অধিবেশনের প্রধান কার্যসূচি ছিল মহানবী সা:-এর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পদপে গ্রহণ। এ বৈঠকে আরবের তৎকালীন সাতটি প্রসিদ্ধ গোত্রের যেসব নেতা অংশগ্রহণ করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ১. আবু জাহল বিন হেশাম, ২. জুবায়ের বিন মুতয়েম, তুয়াইমা বিন আদি এবং হাশেম বিন আমের, ৩. শাইবাহ বিন রাবিয়াহ, উৎবা বিন রাবিয়াহ এবং আবু সুফিয়ান বিন হরব, ৪. নজর বিন হারেছ, ৫. আবুল বুখতারি বিন হেশাম, জময়া বিন আসওয়াদ ও হাকিম বিন হেজাম, ৬. মুনাব্বাহ বিন হাজ্জাজ এবং ৭. উমাইয়া বিন খালফ। আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, এতে স্বয়ং ইবলিশ মানুষের রূপ ধরে আকর্ষণীয় গাউন পরে উপস্থিত হয়। লোকেরা তাকে চিনতে না পেরে পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তার সহকর্মী জানায়, তিনি হচ্ছেন নজদের শায়খ। আপনারা চাইলে তিনি পর্যবেক হিসেবে ভালো পরামর্শ দিতে পারেন। ওই সংসদ অধিবেশনে মহানবী সা:-এর বিরুদ্ধে করণীয় নির্ধারণে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। যেমনটি বর্তমান বিশ্বের সংসদীয় দেশগুলোতে হয়ে থাকে। অধিবেশনের একপর্যায়ে সদস্য আবুল আসওয়াদ প্রস্তাব করেন যে, আমরা মহানবী সা:-এর নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে মক্কা থেকে বহিষ্কার করতে পারি। এর ফলে তার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক যখন থাকবে না, তখন সৃষ্ট সমস্যাও রইবে না। কিন্তু শায়খ নজদি খোদার কসম খেয়ে বলল, তোমরা কি দেখ না তার ভাষা ও উপস্থাপনার ধারা কত চমৎকার। তাকে বের করে দিলে সে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে তাদের মন জয় করে পুনরায় তোমাদের ওপর হামলা করতে পারে। মহানবী সা:-এর প্রতি অপোকৃত সহনশীল সদস্য আবুল বুখতারি পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বলেন, তাকে লোহার শেকল দিয়ে জেলখানায় আটকিয়ে রাখা যায়। এতে এমনিতেই সে শেষ হয়ে যাবে। যেমনটি অনেকের বেলায় হয়েছিল। সাথে সাথে শায়খ নজদি বলল, খোদার কসম তার অনুসারীরা আকস্মিক হামলা চালিয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং তোমরা অন্য কোনো সমাধানের চিন্তা করতে পারো। দু’টি প্রস্তাবই কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে গেল। তৃতীয় প্রস্তাবটি পেশ করলো মক্কার সংসদের দুর্ধর্ষ ও কুখ্যাত লিডার আবু জাহল। সে বলল, মুহাম্মদ সা: সম্পর্কে আমার একটি কার্যকর প্রস্তাব রয়েছে। সদস্যরা জানতে চাইল সেটা কী? আবু জাহল বলল, আমরা প্রতিটি গোত্র থেকে একজন করে বলিষ্ঠ যুবক মনোনীত করে চকচকে তলোয়ার দিয়ে সজ্জিত করে সঙ্ঘবদ্ধভাবে হামলা করে তার প্রাণদণ্ড কার্যকর করতে পারি। এর ফল হবে এই যে, বনু আবদে মানাফ ইচ্ছা করলেই আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে পারবে না। ফলে দিয়াত (১০০ উট) হিসেবে গ্রহণ করে আমাদের সাথে আপস করতে বাধ্য হবে। শায়খ নজদি বলল, এতণে কার্যকর প্রস্তাব উপস্থাপিত হলো এবং এটিই বহাল রইল। মক্কার সংসদে ওই জঘন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেদিনকার সভা মুলতবি হলো। কিন্তু তারা ভুলে গেলেন জীবন, মৃত্যু ও মতার প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ। ওই দিন রাতে আবু জাহলের নেতৃত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট টিম মহানবী সা:-এর বাড়ির আশপাশে মোতায়েন করা হলো ‘অপারেশন অব মার্ডার’ বাস্তবায়নের জন্য। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেল এবং ভোর রাতে মহানবী সা: মক্কা থেকে সাওর পর্বত হয়ে মদিনার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। অন্য দিকে ‘দারুন-নদওয়ার’ জরুরি মিটিং আহ্বান করা হলো এবং মহানবী সা:-কে জীবিত কিংবা মৃত এনে দেয়ার জন্য ১০০ উট বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলো। মহানবী সা: বলেছেন, ‘জান্নাতকে সুশোভিত করা হয়েছে দুনিয়ার কষ্ট-কেশের বিনিময়ে আর জাহান্নামকে সুসজ্জিত করা হয়েছে দুনিয়ার ভোগ বিলাসের পরিণামে’ (রিয়াদুস সালেহিন)। রাসূল সা:-এর জীবনের সাথে অন্য কারো তুলনা হয় না। কিন্তু চূড়ান্ত বাস্তবতা হলো যারা পৃথিবীতে নবী ও রাসূল সা:-দের অনুসরণ করবেন তাদের জীবনে এমনটি হওয়া অবাঞ্ছিত কিছু নয়। মক্কায় নবীজির জীবদ্দশায় হজরত খুবাইব রা:-কে শূলে চড়ানো হয়। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ সাকাফি কাবা শরিফের ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা:-কে মতার জন্য মক্কায় হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখেন; কিন্তু এর আগে তার মা হজরত আছমা রা: জালিমের কাছে ‘পিটিশন অব মার্সি’ করেননি। উমাইয়া শাসক মারওয়ানের আমলেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। বর্তমান বিশ্বেও মুসলিম নামধারী কোনো জালিম দ্বারা এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। শহীদের মৃত্যুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার আর কিছুই হতে পারে না। মুসা আ:-এর সময়কালীন ফেরাউনের নাম ছিল মিনার ফাত্তাহ। বর্তমান মিসরের সামরিক প্রেসিডেন্টের নাম আবুল ফাত্তাহ। কি অদ্ভুদ মিল।বাংলাদেশের সামপ্রতিক ঘটনাবলী্ ও একই সূত্রে গাঁথা । সম্প্রতি মিসরে ৫৫৯ জন ইসলামপন্থীকে গণহারে ফাঁসির রায় প্রদান করা হয়। দুনিয়ায় সত্য যেমন একদিন উদ্ভাসিত হবে পরকালেও সব বিতর্কের চূড়ান্ত সমাধান হবে ।(রাহীকুল মাখতুম ও নয়াদিগন্ত)
বিষয়: বিবিধ
১৪০৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি জানি আপনি বেশি জানেন বেশি বুঝেন তবু অত্যান্ত বিনয়ের সাথে বলছি লেখাটাকে একটু ফাকা রেখে ছোট ছোট প্যারা করে দিলে দেখতে অনেক সৌন্দর্য লাগত তখন পড়তে ভাল লাগত ।ছোট মুখে উপদেশ দেওয়ার জন্য সরি ।
সবশেষে অনেক ভাল একটা লেখা উফার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন