কুরআন পড়ার শুরুতে আউযুবিল্লাহ পড়া
লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ২৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:৫৬:৪০ সকাল
আল্লাহ বলেনঃ
﴿فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ﴾
অর্থঃ তারপর যখন তোমরা কুরআন পড়ো তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর স্মরণ নিতে থাকো , সূরা নহল-৯৮
পটভূমিঃ
শয়তান মানুষের চরম,পরম, আদী ও চিরস্থায়ী শত্রু । হযরত আদমকে আ, সিজদা করার আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করে যখন ‘আযাযীল’ ‘ইবলীসে’ পরিনত হল তখন আল্লাহর সাথে তার যে কথোপকথন হয়েছিল তা কুরআনের ভাষায়ঃ
﴿ وَلَقَدۡ خَلَقۡنٰكُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنٰكُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلٰۤٮِٕكَةِ اسۡجُدُوۡا لِاَدَمَۖ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِيۡسَؕ لَمۡ يَكُنۡ مِّنَ السّٰجِدِيۡنَ﴾
আমি তোমাদের সৃষ্টির সূচনা করলাম তারপর তোমাদের আকৃতি দান করলাম অতপর ফেরেশতাদের বললাম,আদমকে সিজদা করো৷ এ নির্দেশ অনুযায়ী সবাই সিজদা করলো৷ কিন্তু ইবলীস সিজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হলো না৷
﴿ قَالَ مَا مَنَعَكَ اَلَّا تَسۡجُدَ اِذۡ اَمَرۡتُكَؕ قَالَ اَنَا خَيۡرٌ مِّنۡهُۚ خَلَقۡتَنِىۡ مِنۡ نَّارٍ وَّخَلَقۡتَهٗ مِنۡ طِيۡنٍ﴾
আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, “আমি যখন তোকে হুকুম দিয়েছিলাম তখন সিজদা করতে তোকে বাধা দিয়েছিল কিসে”?সে জবাব দিলঃ “আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ৷ আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছো এবং ওকে সৃষ্টি করেছো মাটি থেকে”৷
﴿ قَالَ اَنۡظِرۡنِىۡۤ اِلٰى يَوۡمِ يُبۡعَثُوۡنَ﴾
সে বললঃ “আমাকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যখন এদের সবাইকে পুনর্বার ওঠানো হবে” ৷
﴿قَالَ اِنَّكَ مِنَ الۡمُنۡظَرِيۡنَ﴾
তিনি বললেনঃ “ তোকে অবকাশ দেয়া হলো”৷
﴿ قَالَ فَبِمَاۤ اَغۡوَيۡتَنِىۡ لَاَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَاطَكَ الۡمُسۡتَقِيۡمَۙ﴾
সে বললোঃ “তুমি যেমন আমাকে গোমরাহীতে নিক্ষেপ করছো তেমনি আমি ও এখন তোমার সরল-সত্য পথে এ লোকদের জন্যে ওঁত পেতে বসে থাকবো,
﴿ قَالَ فَاهۡبِطۡ مِنۡهَا فَمَا يَكُوۡنُ لَكَ اَنۡ تَتَكَبَّرَ فِيۡهَا فَاخۡرُجۡ اِنَّكَ مِنَ الصّٰغِرِيۡنَ﴾
তিনি বললেনঃ “ঠিক আছে, তুই এখান থেকে নীচে নেমে যা৷ এখানে অহংকার করার অধিকার তোর নেই৷ বের হয়ে যা৷ আসলে তুই এমন লোকদের অন্তরভুক্ত, যারা নিজেরাই নিজেদেরকে লাঞ্ছিত করতে চায়”৷
﴿ قَالَ فَبِمَاۤ اَغۡوَيۡتَنِىۡ لَاَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَاطَكَ الۡمُسۡتَقِيۡمَۙ﴾
সে বললোঃ “তুমি যেমন আমাকে গোমরাহীতে নিক্ষেপ করছো তেমনি আমি ও এখন তোমার সরল-সত্য পথে এ লোকদের জন্যে ওঁত পেতে বসে থাকবো,
﴿ ثُمَّ لَاَتِيَنَّهُمۡ مِّنۡۢ بَيۡنِ اَيۡدِيۡهِمۡ وَمِنۡ خَلۡفِهِمۡ وَعَنۡ اَيۡمَانِهِمۡ وَعَنۡ شَمَآٮِٕلِهِمۡؕ وَلَا تَجِدُ اَكۡثَرَهُمۡ شٰكِرِيۡنَ﴾
সামনে-পেছনে, ডাইনে-বাঁয়ে, সবদিক থেকে এদেরকে ঘিরে ধরবো এবং এদের অধিকাংশকে তুমি শোকর গুজার পাবে না” ৷ (সূরা আরাফ, ১১-১৭)
পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় হযরত আদম ও হযরত হাওয়া আ. কর্তৃক নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ ও দুনিয়াতে প্রেরণের প্রাক্কলে আল্লাহর হেদায়াত ছিলঃ
﴿ قُلۡنَا اهۡبِطُوۡا مِنۡهَا جَمِيۡعًاۚ فَاِمَّا يَاۡتِيَنَّكُمۡ مِّنِّىۡ هُدًى فَمَنۡ تَبِعَ هُدَاىَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُوۡنَ﴾
আমরা বললাম, “ তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও ৷ এরপর যখন আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত তোমাদের কাছে পৌছুবে তখন যারা আমার সেই হিদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোন ভয় দুঃখ বেদনা। (সূরা বাকারা-৩৮)
এর ধারাবাহিকতায়ই আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী রাসুলদের মাধ্যমে মানুষের হেদায়েতের জন্য ‘আল হুদা” বা আলোর পথ নাযিল করেছেন, যার সর্বশেষ সংস্করণ হল আল কুরআন । এই কুরআনকে যারা অনুসরন করবে তারাই তাদের আদি বাসস্থান ‘জান্নাতে’ যেতে পারবে ।
তাই যুগে যুগে মানুষ শয়তান আর জিন শয়তান মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে মানুষদের কুরআন পড়তে, বুঝতে, পালন করতে দেয়া হবেন। এর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে ।
আল্লাহর ভাষায়ঃ
﴿ وَقَالَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا لَا تَسۡمَعُوۡا لِهٰذَا الۡقُرۡاٰنِ وَالۡغَوۡا فِيۡهِ لَعَلَّكُمۡ تَغۡلِبُوۡنَ﴾
এসব কাফেররা বলে, এ কুরআন তোমরা কখনো শুনবে না৷ আর যখন তা শুনানো হবে তখন হট্রগোল বাধিয়ে দেবে৷ হয়তো এভাবে তোমরা বিজয়ী হবে৷ (সূরা হা মীম সেজদা-২৬)
একারণেই আল্লাহ বলেন হে আমার বান্দারা তোমরা যখনই কুরআন পড়তে মনস্থ করবে তখনই আমার কাছে শয়তানে শয়তানী থেকে আমার আশ্রয় প্রার্থনা কর ।
ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ কেবল এতটুকুই নয় যে, মুখে শুধুমাত্র ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানার রাযিম’ উচ্চারণ করলেই হয়ে যাবে । বরং এ সংগে কুরআন পড়ার সময় যথার্থই শয়তানের বিভ্রান্তিকর প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকার বাসনা পোষণ করতে হবে এবং কার্যত তার প্ররোচনা থেকে নিস্কৃতি লাভের প্রচেষ্টা চালাতে হবে । ভুল ও অনর্থক সন্দেহ - সংশয়ে লিপ্ত হওয়া যাবে না । কুরআনের প্রত্যেকটি কথাকে তার সঠিক আলোকে দেখতে হবে এবং নিজের মনগড়া মতবাদ বা বাইর থেকে আমদানী করা চিন্তার মিশ্রণে কুরআনের শব্দাবলীর এমন অর্থ করা যাবে না যা আল্লাহর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী । এই সংগে মানুষের মনে এ চেতনা এবং উপলব্ধিও জাগ্রত থাকতে হবে যে, মানুষ যাতে কুরআন থেকে কোন পথনির্দেশনা লাভ করতে না পারে সে জন্যই শয়তান সবচেয়ে বেশী তৎপর থাকে । এ কারণে মানুষ যখনি এ কিতাবটির দিকে ফিরে যায় তখনি শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করার এবং পথনির্দেশনা লাভ থেকে বাধা দেবার এবং তাকে ভুল চিন্তার পথে পরিচালিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগে । তাই এ কিতাবটি অধ্যয়ন করার সময় মানুষকে অত্যন্ত সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে যাতে শয়তানের প্ররোচনা ও সূক্ষ্ম অনুপ্রবেশের কারণে সে এ হেদায়াতের উৎসটির কল্যাণকারিতা থেকে বঞ্চিত না হয়ে যায় । কারণ যে ব্যক্তি এখান থেকে সঠিক পথের সন্ধান লাভ করতে পারেনি সে অন্য কোথা থেকেও সৎপথের সন্ধান পাবে না । আর যে ব্যক্তি এ কিতাব থেকে ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে দুনিয়ার অন্য কোন জিনিস তাকে বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না ।
এ আয়াতটি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে নাযিল করা হয়েছে । সে উদ্দেশ্যটি হচ্ছে এই যে, সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে এমনসব আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে যেগুলো মক্কার মুশরিকরা কুরআন মজীদের বিরুদ্ধে উত্থাপন করতো । তাই প্রথমে ভূমিকা স্বরূপ বলা হয়েছে, কুরআনকে তার যথার্য আলোকে একমাত্র সেই ব্যক্তিই দেখতে পারে যে শয়তানের বিভ্রান্তিকর প্ররোচনা থেকে সজাগ - সতর্ক থাকে এবং তা থেকে নিজেকে সংরক্ষিত রাখার জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ চায় । অন্যথায় শয়তান কখনো সোজাসুজি কুরআন ও তার বক্তব্যসমূহ অনুধাবন করার সুযোগ মানুষকে দেয় না ।
বিষয়: বিবিধ
২০২৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানার রাযিম’ এর পর
বিসমিল্লাহির রা'হমানির রা'হিম এটা পড়ার পর তেলাওয়াত শুরু করি । এভাবেই পড়ে আসছি। এটা কি ঠিক আছে ?
গত রমযানে কিছু কিছু চ্যানেলে যখন ক্বুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা হচ্ছিল সেখানে তেলাওয়াতকারী ও বিচারকগন শুধু ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানার রাযিম’ বলে তেলাওয়াত শুরু করতেন । বিসমিল্লাহির রা'হমানির রা'হিম বলতেন না ।
কোন টা সঠিক ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন