প্রিয়তম/প্রিয়তমা,২য় পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ২৪ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:৫৮:২০ রাত

রসুলের (সঃ) প্রতি ভালবাসাঃ

মুমিনের হৃদয়ে নবীর (সঃ) প্রতি ভালোবাসা কী পরিমাণ হবে—তার বিবরণও আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন।

তিনি ইরশাদ করেছেনঃ

النَّبِيُّ أَوْلَىٰ بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِم

অর্থঃ নবীর সঙ্গে ঈমানদারের প্রাণেরও অধিক সম্পর্ক। তিনি তাদের সত্তা থেকেও তাদের কাছে অগ্রগণ্য।—(সুরা আহযাব, ৬)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও মুমিনের কাছে তাঁর সর্বাধিক প্রিয় হওয়া ও তাঁর প্রতি ব্যক্তির সর্বোচ্চ ভালোবাসা পোষণের কথা বলেছেন।

حَدَّثَنَا ‏ ‏مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى ‏ ‏قَالَ حَدَّثَنَا ‏ ‏عَبْدُ الْوَهَّابِ الثَّقَفِيُّ ‏ ‏قَالَ حَدَّثَنَا ‏ ‏أَيُّوبُ ‏ ‏عَنْ ‏ ‏أَبِي قِلَابَةَ ‏ ‏عَنْ ‏ ‏أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ‏ ‏رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ‏

‏عَنْ النَّبِيِّ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏قَالَ ‏ ‏ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ ‏ ‏يُقْذَفَ ‏ ‏فِي النَّارِ ‏

মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না (র)......... আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) ইরশাদ করেনঃ তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে, সে ঈমানের স্বাদ পায়ঃ

১। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছুর থেকে প্রিয় হওয়া;

২। কাউকে খালিস আল্লাহ্‌র জন্যই মুহব্বত করা;

৩। কুফ্‌রীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা।

حَدَّثَنَا ‏ ‏يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ ‏ ‏قَالَ حَدَّثَنَا ‏ ‏ابْنُ عُلَيَّةَ ‏ ‏عَنْ ‏ ‏عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ صُهَيْبٍ ‏ ‏عَنْ ‏ ‏أَنَسٍ ‏ ‏عَنْ النَّبِيِّ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏ح ‏ ‏و حَدَّثَنَا ‏ ‏آدَمُ ‏ ‏قَالَ حَدَّثَنَا ‏ ‏شُعْبَةُ ‏ ‏عَنْ ‏ ‏قَتَادَةَ ‏ ‏عَنْ ‏ ‏أَنَسٍ ‏ ‏قَالَ ‏

‏قَالَ النَّبِيُّ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏لَا يُؤْمِنُ ‏ ‏أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ‏

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যাঁর নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন, সেই সত্তার কসম! তোমাদের কেউ (পরিপূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ আমি তার নিকট তার পিতামাতা ও সন্তান-সন্ততি থেকে অধিক প্রিয় না হই।—সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৪

অতএব মুমিনের জন্য অপরিহার্য হলো রাসুলের প্রতি তার সর্বোচ্চ ভালোবাসা। যে ভালোবাসা হবে সকল জিনিসের ঊর্ধ্বে। যে ভালোবাসা হবে ধন-সম্পদ ও দুনিয়ার সকল বস্তুর চেয়ে অধিক। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন এমনকি নিজ সত্তা থেকেও তা হবে সর্বাধিক।

রাসুলের প্রতি সাহাবীদের ভালোবাসাঃ

আজ দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ’ বছর পর হয়তো রাসুলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও তাঁর পূর্ণ অনুসরণ আমাদের কাছে অসম্ভব মনে হয়। অথচ এটাই বাস্তব যে, ইতিহাসের যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয়পাত্র ও আল্লাহপ্রেমিকদের কাছে আল্লাহর রাসুল ছিলেন সর্বাধিক প্রিয়। নিজের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতীয় সব অঙ্গনে তারা ছিলেন রাসুলের পূর্ণ অনুসারী। এখানে শুধু সাহাবাদের মনে রাসুলের ভালোবাসার কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছি।

حَدَّثَنَا ‏ ‏يَحْيَى بْنُ سُلَيْمَانَ ‏ ‏قَالَ حَدَّثَنِي ‏ ‏ابْنُ وَهْبٍ ‏ ‏قَالَ أَخْبَرَنِي ‏ ‏حَيْوَةُ ‏ ‏قَالَ حَدَّثَنِي ‏ ‏أَبُو عَقِيلٍ زُهْرَةُ بْنُ مَعْبَدٍ ‏ ‏أَنَّهُ سَمِعَ ‏ ‏جَدَّهُ ‏ ‏عَبْدَ اللَّهِ بْنَ هِشَامٍ ‏ ‏قَالَ ‏

‏كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏وَهُوَ آخِذٌ بِيَدِ ‏ ‏عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ‏ ‏فَقَالَ لَهُ ‏ ‏عُمَرُ ‏ ‏يَا رَسُولَ اللَّهِ لَأَنْتَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ إِلَّا مِنْ نَفْسِي فَقَالَ النَّبِيُّ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏لَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ‏ ‏حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ فَقَالَ لَهُ ‏ ‏عُمَرُ ‏ ‏فَإِنَّهُ الْآنَ وَاللَّهِ لَأَنْتَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي فَقَالَ النَّبِيُّ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏الْآنَ يَا ‏ ‏عُمَرُ ‏

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ছিলাম। তিনি ওমর ইবনুল খাত্তাব-এর হাত ধরে রেখেছিলেন। তখন ওমর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয়ই আমার জীবন ছাড়া সবকিছু থেকে আপনি আমার নিকট বেশি প্রিয়। তখন নবীজী বললেন, না, হবে না। যাঁর নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন, সেই সত্তার কসম! যতক্ষণ আমি তোমার নিকট তোমার জীবন থেকেও অধিক প্রিয় না হই। তখন ওমর (রা.) বললেন, তা এখন হয়েছে। আল্লাহ তাআলার কসম! আমার জীবনের চেয়েও আপনি আমার কাছে অধিক প্রিয়। এবার নবীজী বললেন, এখন হে ওমর! (অর্থাৎ এখন ঈমান পরিপূর্ণ হয়েছে।)—সহীহ বুখারী, হাদিস : ৬২৬৩

উহুদ যুদ্ধের কথা। যুদ্ধের একপর্যায়ে যখন কাফেররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চারদিক থেকে ঘিরে নিয়েছিল তখন সাহাবীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে রাসুলকে হেফাজত করেছিলেন। রাসুলের দিকে কোনো তীর ছুটে এলে হজরত আবু দুজানা আনসারী (রা.) নিজের শরীর দিয়ে তা রক্ষা করছিলেন। দুশমনদের তলোয়ারের আঘাত হজরত তলহা (রা.) নিজের হাতেই প্রতিহত করছিলেন। এভাবেই তাঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে রাসুলকে হেফাজত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।

মদীনা হিজরতের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সওর গুহায় আশ্রয় নিলেন, তখন তাতে ছিল অনেক পুরনো গর্ত, যাতে বিষাক্ত সাপ ও পোকা-মাকড় থাকার সম্ভাবনা ছিল। তাই আবু বকর (রা.) সব গর্তের মুখে কাপড় এঁটে দিয়েছিলেন। কিন্তু কাপড়ের অভাবে একটি গর্ত খোলা ছিল। তখন আবু বকর (রা.) নিজ হাত দিয়ে তার মুখ আটকে রাখলেন। ঘটনাক্রমে তাতে ছিল একটি বিষাক্ত সাপ, যা বার বার তাঁকে দংশন করে যাচ্ছিল। এদিকে ক্লান্ত নবীজী তার কোলে মাথা রেখে নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন। নড়াচড়া করলে নবীজীর ঘুম ভেঙে যাবে এ ভয়ে তিনি কষ্ট সহ্য করে স্থির হয়ে রইলেন।

এ হলো রাসুলের প্রতি সাহাবীদের ভালোবাসার দুয়েকটি দৃষ্টান্ত। ইতিহাসে এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে, যা তাদের জীবনের চেয়েও রাসুলকে বেশি ভালোবাসার প্রোজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করে। সুতরাং প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য অপরিহার্য হলো রাসুলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা। ধন-সম্পদ ও দুনিয়ার সব বস্তুর চেয়ে অধিক মহব্বত। সন্তান-সন্ততি, পিতামাতা, পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও সব মানুষের চেয়েও অধিক মহব্বত। নিজ জীবনের চেয়েও বেশি মহব্বত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাঁর ও রাসুলের প্রতি সত্যিকার ভালোবাসা পোষণ ও আনুগত্য প্রকাশের তাওফিক দান করুন এবং আমাদের পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১০৯৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

257886
২৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১৪
মাটিরলাঠি লিখেছেন :
Rose Rose Rose Rose
জাজাকাল্লাহু খাইরান। Good Luck Good Luck
২৫ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:০৫
201623
ব১কলম লিখেছেন : আল্লাহ সকলকে উত্তম জাযা দান করুন
257889
২৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১৬
আজিম বিন মামুন লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।আপনাকে আল্লাহ উত্তম জাযা দান করুন।অনেক খুশী হলাম পবিত্র একটি লেখা পড়তে পেরে।
২৫ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:০৫
201624
ব১কলম লিখেছেন : আল্লাহ সকলকে উত্তম জাযা দান করুন
257897
২৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৪৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সাহাবায়ে কেরাম রা.দের মত ঈমান ও ভালোবাসা দান করুক। ধন্যবাদ
২৫ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:০৫
201625
ব১কলম লিখেছেন : আমীন
257904
২৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৫৩
আবু সাইফ লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ....
ঈমানের তেজবর্ধক পোস্ট

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর আদর্শকে ধারণ করা এবং সেটির মর্যাদা যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিত ও সুরক্ষিত রাখতে সাহাবায়ে কিরামের মত সর্বোচ্চ ত্যাগস্বীকার ছাড়া এ ভালোবাসার দাবী প্রশ্নবিদ্ধ!

হাশরের ময়দানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর মুখে "দূর হও, দূর হও.." শোনা থেকে আল্লাহতায়ালা আমাদের রক্ষা করুন!
২৫ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:০৫
201626
ব১কলম লিখেছেন : আমীন
258000
২৫ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:১৬
মামুন লিখেছেন : আমীন... সুন্দর লেখাটির জন্য আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম বদলা প্রতিদান করুন। ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা। Rose Rose
২৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১৫
201877
ব১কলম লিখেছেন : আল্লাহ সকলকে উত্তম জাযা দান করুন
258099
২৫ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৫২
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : ধন্যবাদ
২৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১৫
201878
ব১কলম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
284875
১৬ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৫
আফরা লিখেছেন : সুন্দর লেখার জন্য আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন আমীন ।
284949
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩০
ব১কলম লিখেছেন : আল্লাহ যেন আপনাকেও সে জাঝার অংশীদার বানান অ আমীন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File